অঞ্জনার মেয়ে হয়েছে, খবরটা শোনার পর থেকে দীপক বাবুর বাড়িতে আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করেছে, দীপক বাবু আত্মীয়-স্বজনদেরসবাইকে মোবাইল করে আনন্দের খবর জানাতে শুরু করল। অঞ্জনার মেয়ে হওয়ার খবর শুনে প্রিয়ন্তীও খুব আনন্দ পেল। সে মনে মনে নানান কিছু ভাবতে শুরু করল। তার চোখের সামনে একটা অষ্পষ্ট শিশুর ছবি ভেসে উঠল। তার আর অপেক্ষা সইছে না। প্রিয়ন্তীকে যখন তার বাবা মোবাইল করে তখন রাত প্রায় দশটা বাজে, সে তার বাবাকে জানিয়ে দিল, বাবা আমি কাল সকালের তিতুমীর এক্সপ্রেস ট্রেনে আসছি, তোমরা আমাকে ছেড়ে দিদির বাড়িতে যেও না কিন্তু।
সে কি মা তুই কিভাবে ভাবলি যে আমরা তোকে ছাড়া অঞ্জনার বাড়িতে যাবো, তুই চলে আয়, তারপর এখান থেকে কাল সন্ধ্যার ট্রেনে অঞ্জনার বাড়িতে যাবো।
প্রিয়ন্তী আগামীকাল বিরামপুর যাবার খবরটা সঙ্গে সঙ্গে সুশান্তকে জানালো, সুশান্ত আমি কাল সকালের তিতুমীর এক্সপ্রেসে বিরামপুর যাচ্ছি। মনে হয় কয়েকদিন থাকবো।
হঠাৎ করে বিরামপুর কেন?
বাবা মোবাইল করেছে, দিদির মেয়ে হয়েছে, কাল সন্ধ্যার ট্রেনে আমরা দিদির বাড়িতে যাবো।
তুই দু’য়েকদিন থেকে চলে আসিস।
সুশান্ত তুই বুঝতেই পাচ্ছিস, দিদির মেয়ে হয়েছে, মেয়ে দেখতে বাবা-মা যাবে, ঠাকুরগাঁও থেকে আমার মাসী পার্বতীপুর আসবে। আসতে তো দেরি হতেই পারে।
সুশান্তর ধীর, শান্ত কণ্ঠস্বরভেসে এলো, প্রিয়ন্তী তুই না থাকলে আমার খুব খারাপ লাগে, এমনিতেই দিনে কয়েকবার মোবাইলে কথা না বললে আমার মুড অফ হয়ে যায়। পর পর দু’দিন দেখা না হলে যেন মনের মধ্যে একটা অপরিপূর্ণতা থেকে যায়। আর তুই বিরামপুর অনেক দিন থাকলে-
সুশান্ত শুধু তোর না, তোকে ছেড়ে থাকতে আমারো খুব খারাপ লাগবে। আমি সুযোগ পেলেই তোকে ফোন করব, আমি তোকে বুঝতে দিব না যে আমি রাজশাহী নেই।
আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিস ভালো কথা কিন্তু হঠাৎ করে যেন ভুলে যাস না, আর আমি কাল সকালে তোকে ট্রেনে তুলে দিতে যাবো।
থ্যাংক ইউ সুশান্ত, আমিও তোকে একথা বলতে চাচ্ছিলাম, তুই একেবারে আমার মনের কথা বলেছিস।
পরদিন সকালবেলা সুশান্ত প্রিয়ন্তীকে ট্রেনে তুলে দিতে এলো। ট্রেন ছাড়তে কিছুক্ষণ দেরি। রাজশাহী স্টেশনের প্লাটফরমের একটা বেঞ্চে বসে দু’জনে কিছুক্ষণ গল্প করল। সুশান্তর বার বার একটাই কথা, প্রিয়ন্তী যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলে আসিস।
এ কথার উত্তরে প্রিয়ন্তী সুশান্তর চোখের দিকে কয়েক সেকেণ্ড তাকিয়ে রইল, শুধু তোর কষ্ট হবে? আমার কষ্ট হবে না, না? একটা কথা তোকে বার বার বলতে হবে, বলে প্রিয়ন্তী হেসে ফেলল।
সুশান্তও হাসল, তবে চিরাচরিত সহজ সরল হাসি না, একটা কষ্ট মিশানো শুষ্ক হাসি।
কিছুক্ষণ পর ট্রেন প্লাটফরমে দাঁড়ালো। প্রিয়ন্তীর ব্যাগ ট্রেনে তুলে দিতে দিতে দু’জনের চোখ ছল্ছল করে উঠল। ট্রেন দৃষ্টিসীমা অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত প্রিয়ন্তী বার বার করে সুশান্তর দিকে তাকাতে লাগল কিন্তু সুশান্ত হাত নেড়ে বিদায় জানালো না, সে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
অঞ্জনার মেয়ে হওয়ার খবর শুনে বজ ঠাকুর খুশি হয়েছে তবে কথা বার্তায় মনে হলো ছেলে হলে সে আরো বেশি খুশি হতো। দীপক বাবুর কাছ থেকে কথাটা শোনার পর বজ ঠাকুর বলল, প্রথম বাচ্চা মেয়ে হইল!
দীপক বাবু বজ ঠাকুরের কথায় কিছুটা রাগ করল, ঠাকুর মশাই কিছু মনে করবেন না, অঞ্জনার মেয়ে হবে নাকি ছেলে হবে এটা নির্ধারণ করবে ভগবান, এখানে কারো হাত নেই। অঞ্জনার মেয়েই হোক আর ছেলেই হোক আমরা সবাই খুশি হয়েছি।
বজ ঠাকুর তার কথা ফিরিয়ে নিল, তা তুমি ঠিকই বলিয়াছ দীপক। তোমরা যাইবে কবে?
সিদ্ধান্ত নিয়েছি আজকেই যাবো।
তা বেশ ভালো, বেশ ভালো, যাইবার আগে একবার ঠাকুর ঘরে আসিও।
হ্যাঁ আসবো।
প্রিয়ন্তী ট্রেনে ওঠার পর বাসন্তী একবার মোবাইল করে প্রিয়ন্তী ট্রেনে উঠেছে কি না জেনে নিয়েছে তারপর থেকে দীপক বাবু বার বার করে মোবাইল করে প্রিয়ন্তীর অবস্থানের খোঁজখবর নিচ্ছে। প্রিয়ন্তীর মোবাইলের রিং বেজে উঠল, হ্যালো বাবা।
মা তুই এখন কোথায়?
বাবা আমি এখন শান্তাহার, এত তাড়া কেন বাবা? আমি তো আসছিই।
একটু আগে অঞ্জনা মোবাইলে জিজ্ঞেস করল, আমরা রওয়ানা দিয়েছি কি না?
বাবা তুমি না বলেছ সন্ধ্যার ট্রেনে যাবে।
হ্যাঁ তা বলেছিলাম কিন্তু তোর মা আর ধৈর্য ধরছে না, খালি তাড়াহুড়া করছে।
প্রিয়ন্তী জানে আসলে তার মা ধৈর্য হারায়নি তার বাবাই অসহিঞ্চু হয়ে পড়েছে।
প্রিয়ন্তী বলল, একটু ধৈর্য ধরো বাবা, আমি তো আসছিই, প্রিয়ন্তীর কথায় বিরক্তি ফুটে ওঠার মতো হলেও আসলে সে মনে মনে খুশি হলো, সে আপন মনে বলল, আমার বাবা যেমন আমাকে ভালোবাসে সবার বাবা কি তাদের মেয়েদের এত বেশি ভালোবাসে?
মা তাহলে একটা কাজ করি, আমরা বিরামপুর রেলস্টেশনে অপেক্ষা করি, তোর আর ট্রেন থেকে নামার প্রয়োজন নেই আমরা ট্রেনে তোকে খুঁজে নিবো।
ঠিক আছে বাবা।
সুশান্তর একটা মানসিক রোগ আছে যে কোন কাজ পরদিন সকালে করার জন্য সময় নির্ধারণ করা থাকলে সারারাত তার মাথায় একটাই চিন্তা কাজ করে কখন রাত শেষ হবে আর কখন সে তার কাজ শেষ করবে। গতকাল প্রিয়ন্তী কথার সময় তাকে ট্রেনে উঠিয়ে দেওয়ার কথা বলেছে তাই তার রাতে ভালো ঘুম হয়নি। আজ কলেজে ক্লাস নেই, সকালবেলা প্রিয়ন্তীকে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে এসে সুশান্ত বিছানায় শুয়ে পড়ল। কিন্তু চোখে ঘুম নেই, একটু করে ঘুমের ভাব আসতেই প্রিয়ন্তীর কথা মনে পড়ছে আর তার ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে।
ট্রেন রাজশাহী থেকে বিরামপুর পৌঁছাতে সুশান্ত তিন বার ফোন করেছে। পার্বতীপুর সবার সঙ্গে গাড়ি থেকে নেমে প্রিয়ন্তী একটু আড়ালে গিয়ে সুশান্তকে মোবাইল করে তার পৌঁছার খবর দিল, সেই সঙ্গে বলল, সুশান্ত আমি তো কখনো গ্রামের বাড়ি, কখনো দিদির বাড়িতে থাকবো। আমিই মাঝে মাঝে তোকে মোবাইল করব।
মোবাইলে সুশান্তর একটা বাষ্পনিরুদ্ধকণ্ঠস্বরভেসে এলো, ঠিক আছে তুই যখন আমাকে-
প্রিয়ন্তী সুশান্তর কথা শেষ হওয়ার আগেই বলল, সুশান্ত তুই বুঝতে চেষ্টা কর, আমি যদি বাবা-মা বা দিদি-জামাইবাবুর সঙ্গে থাকি আর তুই বার বার করে মোবাইল করিস তবে কি কাজটা ঠিক হবে?
সুশান্ত কোন কথা বলল না।
সুশান্ত আমি সুযোগ পেলেই তোকে মোবাইল করব, তুই দেখিস আমার ভুল হবে না। তুই বুঝছিস না কেন আমারো তো সব সময় তোর কথা মনে পড়ে?
ঠিক আছে, আমি আর তোকে মোবাইল করব না, সুশান্তর কণ্ঠে অভিমানের সুর ভেসে এলো।
প্লিজ সুশান্ত ডণ্ট মাইণ্ড।
চলবে…
আমার এই লেখাটি প্রথম থেকে পড়তে ক্লিক করুন:প্রিয়ন্তী-০১
loading...
loading...
উপন্যাস অথবা বড় গল্পের এই পর্বটি পড়লাম প্রিয় জিল্লুর রহমান ভাই।
নিয়মিত ভাবে চলুক।
loading...
এটা উপন্যাস মুরুব্বী। আমার লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
loading...
ভাই সব সময় আপনার লেখার সাথেই আছি,,,,যতটা সময় পই আপনার লেখা আমার ডেস্কটপে থাকবেই,,,,,, মাঝে মাঝে পরে শেষ করতে পারি আবার পারিনা
loading...
ধন্যবাদ রাসেল মিরাজ। তুমি আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু আশা করি দীর্ঘদিনের এই যাত্রা আরো দীর্ঘায়িত হবে। ভালো থেকো।
loading...