প্রিয়ন্তী-০১ (সংস্কারের প্রাচীর ভাঙ্গা তরুণী)

Prionti
প্রিয়ন্তীর সঙ্গে সুশান্তর বিয়ে হয়েছে তিনবার। একই বর-কনে তিনবার বিয়ের বিষয়টি অনেকের মনে কৌতুহলের সৃষ্টি করল, কারো অবিশ্বাস্য মনে হলো, কারো কারো মনে হাস্য রসের সৃষ্টি করল, কারো কারো হৃদয়কে আহত করল। কিন্তু একই বর-কনের মধ্যে তিনবার বিয়ে হবে কেন? এই কেন-এর উত্তর দিতে গেলে সমাজের যে অসঙ্গতি ফুটে উঠবে তা অনেকের বিবেককে দংশন করবে আর পরের ঘটনাগুলো মানুষের হৃদয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করবে।
প্রিয়ন্তী, প্রিয়ন্তী চক্রবর্তী তখন রাজশাহী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। এ-প্লাস পেয়ে এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি পাস করেছে। ক্লাসের লেখাপড়ার বাইরে সে প্রচুর বই পড়ে। ইংরেজি সাহিত্য, বাংলা উপন্যাস, কবিতা, ছোটগল্প এমনকি যে কোন একটা বই হাতের কাছে পেলেই সে খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ে। বলা যায় প্রিয়ন্তী একজন জ্ঞান পিপাসু মেয়ে। ক্লাসের মাঝে একটু অবসর পেলে অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীরা যখন কলেজের মাঠে গোল হয়ে বসে চিনাবাদাম খায়, কেউ কেউ তাদের ভালোবাসার মানুষের চোখে চোখ রেখে কথা বলে, প্রিয়ন্তী তখন লাইব্রেরীতে বসে বই পড়ে। তার চালচলন সবকিছুই একেবারে ব্যতিক্রম।
প্রথম বর্ষে প্রিয়ন্তী ভালো রেজাল্ট করেছে। প্রিয়ন্তীএত ভালো রেজাল্ট করবে আশা করেনি, তাই তার আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে গেছে, সে আরো ভালো রেজাল্ট করার জন্য আরো বেশি করে লেখাপড়া শুরু করেছে। আজকাল সে কলেজের ক্লাস শেষ করেই মেসে ফিরে না, লাইব্রেরীতেই সময় কাটায়। কলেজ চালু থাকলে তার দু’টো ঠিকানা, ক্লাস আর লাইব্রেরী, কলেজ বন্ধ থাকলে মেস।
একদিন প্রিয়ন্তী ক্লাসের ফাঁকে লাইব্রেরীতে বসে একটা বই পড়ছিল। বই পড়া তো নয় যেন ধ্যানে মগ্ন থাকা। প্রিয়ন্তীর ক্লাসফ্রেণ্ড সুশান্ত, সেও ভালো ছাত্র তবে প্রিয়ন্তীর মতো নয়। প্রথম কয়েকদিন ক্লাস করার পর একদিন প্রিয়ন্তীর সঙ্গে সুশান্তর দৃষ্টি বিনিময় হলো। প্রিয়ন্তী লক্ষ্য করেছে সুশান্ত তার সঙ্গে কথা বলার অজুহাত খুঁজে। প্রিয়ন্তীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে যেন কিছু বলতে চায় কিন্তু বলতে গিয়েও যেন থেমে যায়। প্রিয়ন্তীরও প্রায় মনে হয় সুশান্ত যেন তার চেনা, কোথায় যেন দেখেছে কিন্তু মনে পড়ে না।
সেদিন প্রিয়ন্তী ক্লাসের ফাঁকে লাইব্রেরীতে একটা বই পড়ছিল। সুশান্ত একটা বই খোঁজার অজুহাতে প্রিয়ন্তী যেখানে বসে বই পড়ছিল ঠিক তার কাছের একটা বই ইচ্ছা করে র্যাক থেকে ফেলে দিল।
প্রিয়ন্তী বই থেকে মুখ তুলে তাকাল। সুশান্তর গায়ের রং শ্যামলা, লম্বা, নামের সঙ্গে আচরণের একটা অদ্ভুত মিল আছে। তার চেহারায় সরলতার ছাপ আছে যা সহজে কারো মধ্যে পাওয়া যা না। কখনো সুযোগ পেলে প্রিয়ন্তীর দিকে তাকিয়ে থাকে, কখনো প্রিয়ন্তীর চোখে চোখ পড়লে সুশান্ত আগে চোখ নামায়।
প্রিয়ন্তীর চোখে-মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠল কিন্তু সে কিছু বলল না।
সুশান্ত সরি প্রিয়ন্তী বলে বইটা তুলে রাখল। তার ধারণা ছিল প্রিয়ন্তী হয়ত কিছু বলবে আর সে অজুহাতে সুশান্ত তার সঙ্গে কথা বলবে কিন্তু প্রিয়ন্তী কিছু না বলায় সুশান্ত কিছুটা নিরাশ হলো।
আজ সুশান্ত দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে করেই হোক আজ সে প্রিয়ন্তীর সঙ্গে কথা বলবেই। সে বইটা তুলে রেখে প্রিয়ন্তীর মুখোমুখি একটা চেয়ারে বসল, প্রিয়ন্তী।
প্রিয়ন্তী কিছু বলল না।
সুশান্ত মনে মনে বলল, কী আনকালচার্ড মেয়ে রে বাবা, আমি কথা বললাম আর সে কোন কথাই বলল না। সে যেমন ছিল তেমন করেই বইয়ে মনোযোগ দিল।
সুশান্ত একটু নড়েচড়ে বসল।
না, প্রিয়ন্তীর কোন কথা নেই।
সুশান্ত প্রিয়ন্তী, প্রিয়ন্তী বলে দু’বার ডাক দিল।
তারপরও কোন কথা নেই।
সুশান্ত আপন মনে আস্তে আস্তে বলল, প্রিয়ন্তী কি কানে শোনে না নাকি? ক্লাসে তো কোনদিন এমন মনে হয়নি?
প্রিয়ন্তী বইটা বন্ধ করে রেখে বলল, একটা বই পড়ছিলাম, খুব ইন্টারেস্টিং তো।
আমি তিনবার ডাক দিয়েছি।
শুনেছি।
কথা বললি না যে! খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলি বুঝি?
হ্যাঁ, আমি কোন কাজ করলে খুব মনোযোগ দিয়ে করি আর কোন কাজ না করলে তার ধারের কাছেও যাই না।
সুশান্ত কিছু বলল না।
সুশান্ত কেমন আছিস?
ভালো, তুই?
ভালো আছি।
প্রিয়ন্তী একটা খবর শুনেছিস?
কী খবর?
আজ আর ক্লাস হবে না।
কেন?
স্যার অসুস্থ।
ও আমি পরের ক্লাসটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তাহলে তো আজ আর থেকে লাভ নেই, বলে প্রিয়ন্তী চেয়ার থেকে উঠল।
সুশান্ত মিষ্টি হাসি হেসে বলল, আমি বুঝি তোকে বলে ভুল করলাম।
কেন?
এই যে তুই উঠছিস, আমি যদি কিছু না বলতাম তবে তুই আরো কিছুক্ষণ লাইব্রেরীতে বসতিস।
হ্যাঁ তা অবশ্য ঠিক, প্রিয়ন্তী একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আবার বসল।
প্রিয়ন্তী সুশান্তর দিকে তাকাতেই সুশান্ত হাসল।
সুশান্তর হাসিটা অদ্ভুত। একেবারে সহজ-সরল, নিষ্পাপ একটা হাসি। আজ প্রিয়ন্তীর মনের মধ্যে যেন সুশান্তর ছবিটা গেঁথে গেল, সুশান্ত তুই কি হোস্টেলে থাকিস?
না একটা মেসে।
হোস্টেলে সিট পাসনি?
না, অবশ্য কোন রাজনৈতিক দলে যোগ দিলে পেতাম।
দিলে ভালো করতিস।
রাজনীতিতে যোগ দিলে মিছিলে যেতে হবে।
যাবি।
তুই যেতে বলছিস?
বাঃ আমি যেতে বললে তুই যাবি?
সুশান্ত খুব সরলভাবে বলল, হ্যাঁ।
সুশান্ত এটা কিন্তু ঠিক না, আমি যেতে বললেই তুই যাবি?
সুশান্ত কিছু বলতে গিয়ে যেন আটকে গেল। হয়ত বলতে চেয়েছিল, তোকে আমার ভালো লাগে তাই কিন্তু প্রিয়ন্তীর গম্ভীর শান্ত মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারলো না।
চলবে…

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৫ টি মন্তব্য (লেখকের ২টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১৬-০৩-২০১৭ | ১৩:০১ |

    প্রিয়ন্তী উপন্যাসটি আমার পছন্দের উপন্যাস।
    ধারাবাহিকভাবে শব্দনীড় এ পড়তে পেরে ভালো লাগছে।
    ধন্যবাদ মি. জিল্লুর রহমান ভাই।

    GD Star Rating
    loading...
    • রাসেল মিরাজ : ১৬-০৩-২০১৭ | ১৯:৪৪ |

      এই সাইটে এই লেখাটাই আমার প্রথম পড়া

      GD Star Rating
      loading...
    • জিল্লুর রহমান : ২১-০৩-২০১৭ | ২০:৫০ |

      ধন্যবাদ মুরুব্বী।

      GD Star Rating
      loading...
  2. রাসেল মিরাজ : ১৬-০৩-২০১৭ | ১৯:৪৫ |

    https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_dance.gif

    GD Star Rating
    loading...
  3. জিল্লুর রহমান : ২১-০৩-২০১৭ | ২০:৫১ |

    এই দুষ্টু তুমি আবার লাফাচ্ছো কেনো? মগো লগে তামাশা করো মনু।

    GD Star Rating
    loading...