দেবদাস কে আমার কোন কাল্পনিক বা উপন্যাসের চরিত্র মনে হয় না, হয়নি কখনো। সব সময় মনে হয় সে আমার পাশের বাড়ির কিম্বা পাড়া মহল্লার খুব পরিচিত কেউ। কখনো নিকট আত্মীয়, স্বজন বন্ধু বলেও মনে হয়। শরৎ বাবুর এক অসাধারন সৃষ্টি। অথচ লেখক নিজেই একে তুচ্ছ ভেবে ফেলে রেখেছিলেন দীর্ঘ ১৭ বছর কিন্তু বেলা শেষে সেই সৃষ্টি তাকে দিয়ে গেছে অমরত্ব। তাই বন্ধুরা আপনার কোন সৃষ্টিই ফেলবেন না। রেখে দিন। হউক তা কোন লিখা, পেইন্টিংস কিম্বা ফটোগ্রাফি। কে জানে সময়ের টানে তা হয়ত আলোও ছড়াতে পারে।
“দেবদাস শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত একটি প্রণয়ধর্মী বাংলা উপন্যাস। দেবদাস শরৎচন্দ্রের প্রথমদিককার উপন্যাস। রচনার সমাপ্তিকাল সেপ্টেম্বর ১৯০০ কিন্তু প্রকাশনার বছর ১৯১৭। উপন্যাসটি নিয়ে শরৎচন্দ্রের দ্বিধা ছিল বলে দীর্ঘ ১৭ বছর প্রকাশ করা থেকে বিরত ছিলেন। উপন্যাসটি তিনি রচনা করেছিলেন মাতাল হয়ে এবং বন্ধু প্রমথনাথ ভট্টাচার্যকে ১৯১৩-তে লেখা এক চিঠিতে শরৎচন্দ্র লিখেছেন, ‘ওই বইটা (দেবদাস) একেবারে মাতাল হইয়া বোতল খাইয়া লেখা।
ভারতীয় উপমহাদেশের প্রধান প্রধান ভাষায় উপন্যাসটি অনূদিত হয়েছে। পারুর জন্য দেবদাসের বিরহ উপজীব্য করে রচিত এই উপন্যাস অবলম্বনে ভারতীয় উপমহাদেশে ১৯টি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। দেবদাস বিরহকাতর চিরায়ত প্রেমিকের ধ্রুপদী নিদর্শন হিসেবে গণ্য।
দেবদাস মোড়ক। দেবদাস উপন্যাস – বাংলা বইয়ের প্রচ্ছদ। লেখকঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ভাষা : বাংলা। ধরন : উপন্যাস। প্রকাশক : জিসিএস। প্রকাশনার তারিখ : ৩০ জুন, ১৯১৭।
কাহিনীর সংক্ষিপ্তসার
উপন্যাসে দেবদাস (সম্পুর্ন নাম দেবদাস মুখার্জি) বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে তৎকালীন ব্রাহ্মন জমিদার বংশের সন্তান, পার্বতী(পারো) এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। বাংলার তালসোনাপুর গ্রামে এই দুই পরিবারের পাশাপাশি বাস। ছোটবেলা থেকেই দেবদাস ও পার্বতীর অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব যা পরবর্তীতে প্রেমের রূপ নেয়। দেবদাস বয়সে পার্বতীর চেয়ে কিছু বড়ো। দেবদাস ও পার্বতী একে অপরকে ‘পারো’ ও ‘দেবদা’ বলে ডাকে। বিদ্যালয়ে পড়াশোনা থেকে পুকুরে মাছ ধরা পর্যন্ত প্রত্যেকটি কাজই তারা এক সঙ্গে করত। পার্বতী কিছু ভুল করলে দেবদাস তাকে মারতো, তবুও এদের সম্পর্ক বন্ধুর মতই ছিল৷ঘটনা পরম্পরায় দেবদাসকে কলকাতা শহরে পাঠানো হয় পড়াশোনা করার জন্য। কয়েক বছর পর ছুটির সময় সে তার গ্রামে ফিরে আসে। কৈশোরে উত্তীর্ণ দুজন হঠাৎই অনুভব করে, তাদের বাল্যকালের বন্ধুত্ত্ব আরও গভীর কিছুতে উত্তীর্ণ হয়েছে। দেবদাস দেখে যে তার ছোটবেলার পারো বদলে গেছে। পার্বতী তাদের কৈশোরের প্রেম বিবাহবন্ধনে পরিস্ফুটনের কথা ভাবে। প্রচলিত সামাজিক রীতি অনুযায়ী, পার্বতীর বাবা-মাকে দেবদাসের বাবা-মায়ের কাছে তাদের বিবাহের প্রস্তাব আনতে হবে।পার্বতীর মা দেবদাসের মা হরিমতির কাছে বিয়ের প্রস্তাব আনলে তিনি আনন্দিত হলেও পাশের বাড়ির সাথে এই সম্পর্ক রাখতে তিনি বিশেষ উৎসাহী হননা। তাছাড়া পার্বতীর পরিবারে দীর্ঘকাল থেকে বরের পরিবার থেকে ‘পণ’ গ্রহনের প্রথা চলে আসছে। দেবদাসের মা তাই পার্বতীর পরিবারকে “বেচা-কেনা ছোটঘর” মনে করে এই সম্পর্কে অসম্মত হন। দেবদাসের বাবা, নারায়ণ মুখার্জিও এই যুক্তি সমর্থন করেন। এতে পার্বতীর পিতা নীলকন্ঠ চক্রবর্তী অপমানিত বোধ করেন ও পার্বতীর জন্য আরও ধনী গৃহে বিয়ে ঠিক করেন। পার্বতী একথা জানলে দেবদাস অন্তত তাকে গ্রহন করবে এই আশায় রাতের অন্ধকারে তার সাথে দেখা করে। দেবদাস মনস্থির করে তার বাবাকে বললে, তিনি অরাজি হন। বিভ্রান্ত অবস্থায়, দেবদাস বাড়ি থেকে কলকাতায় পালিয়ে যায়। সে চিঠি লিখে পার্বতীকে জানায় যে সে এই সম্পর্ক আর রাখতে চায় না। পার্বতী বিয়ের জন্য প্রস্তুত হয়। এরপর দেবদাস বললেও আর সে ফিরে যেতে চায় না ও কাপুরুষতার জন্য তাকে ধিক্কার জানায়। তবুও, সে দেবদাসকে বলে যে তার মৃত্যুর আগে যেন সে দেবদাসকে অন্তত একবার দেখতে পায়। দেবদাস এই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। দেবদাস কলকাতায় ফিরে যায় ও পার্বতীর হাতিপোতা গ্রামে ভুবন চৌধুরী নামে এক জমিদারের সাথে বিয়ে হয়। ভুবন চৌধুরীর পূর্বের স্ত্রী মারা গেছেন ও তার তিনজন সন্তান রয়েছে, যারা পার্বতীর প্রায় সমবয়সী বা তার চেয়ে বড়ো।কলকাতায় গিয়ে দেবদাসের চুনীলালের সাথে বন্ধুত্ব হয় ও তার মাধ্যমে সে চন্দ্রমুখী নামে এক বাঈজীর সাথে পরিচিত হয়। সে দেবদাসের প্রেমে পড়ে, যদিও দেবদাস তাকে ঘৃণা করতে থাকে। হতাশাগ্রস্ত দেবদাস অত্যধিক মদ্যপান শুরু করলে তার শরীর ক্রমশ ভেঙে পড়ে। চন্দ্রমুখী তার দেখভাল করতে থাকে। দেবদাস তার মনে প্রতিনিয়ত পার্বতী ও চন্দ্রমুখীর তুলনা করতে থাকে ও চন্দ্রমুখীকে সে পারোর কথা বলে। দুঃখ ভুলতে দেবদাস ক্রমশ মদ্যপানের মাত্রা বাড়াতে থাকে ও তাতে তার স্বাস্থ্যের চরম অবনতি ঘটে। চন্দ্রমুখী বুঝতে পারে যে দেবদাসের ভিতরের আসল মানুষটির আজ পতন ঘটেছে। লক্ষ্যশূন্য দেবদাস শেষপর্যন্ত চন্দ্রমুখীর প্রেমে পড়তে বাধ্য হয়। শীঘ্র আসন্ন মৃত্যুর কথা অনুভব করতে পেরে দেবদাস, পারোকে দেওয়া তার পূর্বের প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করতে হাতিপোতা গ্রামে পার্বতীর কাছে রওনা হয়। পার্বতীর বাড়ির সামনে পৌঁছে, এক অন্ধকার শীতের রাতে দেবদাসের মৃত্যু হয়। দেবদাসের মৃত্যুর খবর শুনে পার্বতী সেখানে ছুটে যায়, কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগেই, বাড়ির লোকজন তাকে বাড়ির চৌকাঠ অতিক্রম করতে দেয়না।
শরৎচন্দ্র তার অন্যান্য অনেক উপন্যাসগুলির মতো এটিতেও তৎকালীন বঙ্গসমাজের নিষ্ঠুরতার চিত্র কঠোরভাবে তুলে ধরেছেন, যে সমাজব্যবস্থা এক সত্যিকারের প্রেমের শুভ পরিণতির এক বৃহৎ বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।
loading...
loading...
দেবদাসের রিভিউটি বেশ ভালোভাবেই করেছেন।
আশা করছি আরও কিছু তথ্য সমৃদ্ধ লেখা আপনার কাছ থেকে পাব।
আপনার পথচলাতে সব সময় শুভকামনা রইল।
loading...
দারুণভাবে লিখেছেন, ভালো লাগলো।
loading...
দেবদাস বিরহকাতর চিরায়ত প্রেমিকের ধ্রুপদী নিদর্শন হিসেবে গণ্য।
কথা গুলোন একজন পাঠক এবং চিত্রায়িত অংশ স্বচক্ষে দেখে আমিও আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি। শব্দ ঘরে আগমনকে স্বাগতম জানাই বন্ধু জিয়া রায়হান। গুড।
loading...
ভাল লেখেছেন দাদা
loading...
পুরাতন এক বস্তাপঁচা উপন্যাস নিয়ে বস্তাবন্দি আলোচনা।
এখানে শরত বাবু নিজে মদ খাইয়া মদ মাগীবাজির উপাখ্যান তুলে ধরছেন।
loading...
আমি তো এখনো নিজেকে দেবদাস মনে করি।
loading...
বিনম্র শ্রদ্ধা জানুন প্রিয় গুরুজন
দেবদাস নিয়ে অনেক রিভিউ পড়েছি, দেবদাস পড়া হয়েছে কয়েকবার…
কিন্তু এটি আপনার করা রিভিউ
অক্ষরে অক্ষরে মমতা
না পড়ে উপায় ছিলো না।
ভালোবাসা নিবেন।
loading...