নিজের গাছ (বড় সাইজ) কাটতেও সরকারের অনুমতি নিতে হবে। এ মর্মে একটি নিউজ আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন। “বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন আইন ২০২১” এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইন অনুযায়ি নিজের বাগানের গাছ কাটতেও সরকারের অনুমতি লাগবে।
এই সংবাদে বিস্মিত হয়েছেন সিংহভাগ মানুষ। তবে আমি কিন্তু কম বুঝলেও এই আইনের পক্ষে অবস্থান করছি যদি আইনটাকে হাত করে অসাধুরা সম্রাট নবম হালাকু খা সেজে না বসে। মানে এই আইনকে পুজি করে যেন কর্তৃপক্ষ চাঁদাবাজি করতে না পারে।
#আমি কেন এ আইনের পক্ষে?
বৃক্ষ নিধন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। আমরা যে হারে গাছ কাটি সেই হারে লাগাই না। অন্যদিকে প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বাড়ছে, পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, উত্তর মেরুর বরফ গলে যাচ্ছে। ফলে পৃথিবী ক্রমাগত ভাবে ঝুঁকির মুখে পড়ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ,মালদ্বীপ সেই তালিকায় প্রথম দিকে থাকছে। এ থেকে রক্ষার জন্য অবশ্যই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার নিমিত্তে বৃক্ষনিধন যে কোনো ভাবেই হোক বন্ধ করতে হবে। নিজের গাছ কাটার আগে সরকারের অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি তাই এক দিক থেকে ইতিবাচক।
এটুকু শুনেই ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। বাকিটুকু শুনুন। একজন মানুষ গাছ কেন কাটে? নিশ্চয়ই এর পিছনে কয়েকটি যুক্তি আছে। প্রথমত তার অর্থের প্রয়োজন তাই সে গাছ কাটে, দ্বিতীয়ত তার ফার্নিচার বানানো দরকার ফলে গাছ কাটে। তৃতীয়ত সে ওই স্থানে এমন একটি স্থাপনা নির্মাণ করতে চায় যা ওই গাছ থাকায় সম্ভব নয়। এখন সে গাছ কাটার আগে সরকারের অনুমতি নিতে গেলে সরকার যদি সত্যি সত্যি তার গাছ কাটার মূল কারণ খুঁজে বের করে এবং সেটা নিজ উদ্যোগে সমাধান করে দেয় তবে একই সাথে তার সমস্যাও সমাধান হবে আবার গাছটাও রক্ষা পাবে। তার অর্থের প্রয়োজন হলে সরকার তাকে লোন দিবে, ফার্নিচার কেনার দরকার হলে সে ক্ষেত্রেও সরকার লোন দিবে। স্থাপনা নির্মাণের দরকার হলে ডিজাইনাররা এমন ভাবে ইকো ফ্রেন্ডলি ডিজাইন করে দিবে যেন ওই গাছ না কেটেও স্থাপনা নির্মাণ করা সম্ভব হয়। বিশ্বের অনেক স্থানেই এমন আছে যা আপনি গুগলে সার্চ দিলেই দেখতে পাবেন।
কথা এখনেই শেষ নয়। আমি জানি আপনাদের মনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জেগেছে তা হলো কারো ব্যক্তিগত গাছ কাটায় হস্তক্ষেপ করার আগে সরকারী বনাঞ্চল এবং অন্যান্য স্থান থেকে ব্যপক হারে যেভাবে গাছ কাটা হয় সেগুলো আগে বন্ধ করা উচিত। আপনাদের এই ভাবনার সাথে আমিও একমত। এসব যদি সঠিক ভাবে পালন করা যায় এবং যাকে আপনি নিয়মের বেড়াজালে বাঁধতে চান তার সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন (শুধু মুখে দিলেই হবে না বরং তা বাস্তবায়ন করতে হবে) তাহলে ব্যক্তিগত গাছ কাটার আগে সরকারের অনুমতি নিতে বোধহয় একজনও দ্বিমত হবে না।
যারা এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছেন আমি জানিনা তারা এসব দিক চিন্তা করেছেন কি না। যদি না করে থাকেন তবে আমি তাদের বলবো এগুলো নিয়ে চিন্তা করতে। আর যদি এসব বিষয়ে সুরাহা সহ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তবেই কেবল আমি এই মতের পক্ষে থাকবো।
এর বাইরে আরও কিছু বিষয়ে নজর দিতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত গাছ থাকাই যথেষ্ট নয় বরং পাশাপাশি আরও নানা বিষয়ে নজর দিতে হবে। পাতিলে ছিদ্র রেখে পানি যতই ঢালুন পাতিল একসময় খালি হবেই। আপনি যতই গাছ লাগান যদি কলকারখানাকে ইকো ফ্রেন্ডলি না করেন, যানবাহনকে ইকো ফ্রেন্ডলি না করেন তবে কিছুতেই কিছু হবে না।
হুট করে যে কোনো কিছুতে আইন করা শোভনীয় নয় বরং তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করা দরকার। আলোচনা হওয়া দরকার। অভিজ্ঞদের মতামত নেওয়া দরকার। এই যেমন এই সিদ্ধান্ত যারা নিলেন এবং যারা এটিকে পাশ করতে চলেছেন তারা কি একবারও আমাদের মতামত নিয়েছেন? একবারও আমাদের সাথে আলোচনা করেছেন? করেননি। হুট করে নিজেদের যখন যা খুশি তাই করে বসেন। যে সব বিষয়ের সাথে সমাজ, পরিবেশ, সাধারণ মানুষের হক ও অধিকার যুক্ত সে সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই জনমত জরিপ আবশ্যক এবং পাশাপাশি বিজ্ঞদের পরামর্শ যেমন জরুরী তেমনি গবেষণাও জরুরী। প্রবাদে আছে উঠলো বাই চললো বু দরগার যাই হলে চলবে না। হুটহাট নিয়ম আইন হিতে বিপরীত হয়। আপনারা ঠ্যালা তো সামলান নি তাই বুঝবেন না।
#আমার_কিছু_বলার_আছে
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২
loading...
loading...
আলোচনা এবং বিশ্লেষণের সাথে পূর্ণমত জ্ঞাপন করছি। ধন্যবাদ এবং স্বাগতম।
loading...