লেখকঃ জাজাফী
আহসান সাহেবের বাসা টিকাটুলির শাহ সাহেব লেনে।গায়ে কালো গাউন জড়িয়ে রোজ যখন তিনি বাসা থেকে বের হন তখন একটি ছেলে তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে।ছেলেটির বয়স বারো বছরের বেশি হবে বলে মনে হয়না।গায়ে নোংরা পোশাক,মাথার চুল এলোমেলা।দেখেই বুঝা যায় রাস্তার মানুষ সে।আহসান সাহেবের তাড়া থাকায় কখনো ছেলেটিকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করতে পারেনি ওর নাম কি, কোথায় থাকে, কি করে।তবে ছেলেটি যে টোকাই শ্রেণীর কেউ তা তিনি খুব সহজেই অনুমান করতে পারেন।হাতে একটা বস্তা থাকেই সারাক্ষণ।নিশ্চই সে ওটাতে কুড়িয়ে পাওয়া বোতল এটা সেটা রাখে।আহসান সাহেব মনে মনে ভাবেন কোন এক ছুটির দিনে নিশ্চই সময় করে ছেলেটার সাথে কথা বলবেন।যাওয়া আসার সময় দূর থেকে ছেলেটি তাকে এমন ভাবে কেন দেখে সেটাও জানার খুব আগ্রহ।
সেদিন হঠাৎ সব বদলে গেল।তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে রিকশা নিবেন বলে অপেক্ষা করছেন এমন সময় ছেলেটি গুটিগুটি পায়ে তার সামনে এসে দাড়ালো।এই প্রথম খুব কাছ থেকে ওকে দেখলেন আহসান সাহেব।যতটা ময়লা মনে হয়েছিল তার থেকেও বেশি ময়লা মনে হলো তবে ওর ভিতরে যে উজ্জল একটি মানুষ লুকিয়ে আছে তাও টের পাওয়া যাচ্ছে।শুধুমাত্র যত্নের অভাবে সেই ঔজ্জল্য দেখা যাচ্ছেনা।ছেলেটি সামনে আসতেই আহসান সাহেব জানতে চাইলেন তোর নাম কিরে?আহসান সাহেব খুব অবাক হয়ে দেখলেন ছেলেটি কোন উত্তর দিলো না।ওর কপালের রেখায় রাগ রাগ ভাব ফুটে উঠেছে।আহসান সাহেব কিছুটা আহত হলেন কিছুটা বিরক্তও হলেন।আবার জানতে চাইলেন কিরে কথা বলিসনা কেন?তোর নাম কি?ছেলেটি উত্তর না দিয়ে হনহন করে চলে গেল।তিনি অবাক হলেন ঠিকই আবার ভাবলেন হতে পারে ছেলেটি কথাই বলতে পারেনা।একটা রিকশা তখন টুংটাং শব্দ করে ওদিক দিয়েই যাচ্ছিল আহসান সাহেব হাত নেড়ে সেটাকে থামালেন তার পর গন্তব্যের দিকে রওনা দিলেন।
দিন শেষে ঘরে ফেরার পথে সেই ছেলেটির সাথে আবার দেখা হলো।সকালে প্রশ্ন করে কোন উত্তর না পেয়ে তাই আহসান সাহেব আর আগ্রহ দেখালেন না।তবে তিনি দেখলেন ছেলেটি এগিয়ে আসছে।কাছে এসে জানতে চাইলো আপনার ছেলে মেয়েকে আপনি কিভাবে ডাকেন?তুমি করে না তুই তুই করে?আহসান সাহেব বললেন অবশ্যই তুমি করে ডাকি।তুই তুই করে ডাকাটা কেমন যেন অসভ্যতামী।ময়লা জামার ছেলেটি বললো আপনার নিজের ছেলে মেয়েকে আপনি তুই বলতে পারেন না, সেটাকে অসভ্যতামী মনে করেন, তাহলে আমাকে কেন তুই তুই করে সম্মোধন করেছিলেন ?আমাকে তুই তুই করে বললে সেটা কি অসভ্যতামী হয় না?
আহসান সাহেব ভীষণরকম শক খেলেন।তিনি কখনোই বিষয়টি এভাবে ভেবে দেখেননি।সত্যিইতো নিজের ছেলে মেয়েকে যদি তুইতোকারি করাটা অসভ্যতামী মনে হয় তাহলে অন্য একটা ছেলেকে একটা মেয়েকে কি করে তুইতোকারি করি ভেবে তিনি কিছুটা লজ্জাও পেলেন।তিনি অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ বিধায় নিজের ভুল সাথে সাথে বুঝতে পেরে ভাবলেন ছোট হোক বড় হোক তাতে কি ক্ষমা চাইতোতো মানসম্মান চলে যাবেনা।নিজের ভুলটুকু না হয় স্বীকার করে নিবেন।এই ভেবে তিনি যখন ওর দিকে চোখ ফেরালেন তখন দেখলেন ছেলেটি নেই।আসলে ছেলেটির চমকপ্রদ কথা শুনে তিনি এতোটাই চমকে গিয়েছিলেন যে ভাবনার জগতে হারিয়ে গিয়েছিলেন।সম্বিত ফিরে পেতেই দেখলেন ছেলেটি ততোক্ষণে কোথাও চলে গেছে।
রাতে খাবার টেবিলে বসে পরিবারের সবার সাথে ঘটনাটি শেয়ার করলেন।শুনে অন্যরাও খুব বিমোহিত হলো।এমন করেতো কখনো ভেবে দেখা হয়নি।কেন একটি ছেলেকে একটি মেয়েকে তুইতোকারি করা হবে?তার সাথে যদি এমন মধুর কোন সম্পর্ক থাকতো যার টানে তাতে তুই তুই করে বলা যেত তাহলে কোন কথাই ছিলনা কিন্তু আমরা হরহামেশাই রাস্তায় টোকাই ছেলে মেয়েগুলোকে ফুলওয়ালা বাদামওয়ালা ছেলে মেয়েদেরকে তুই তোকারি করি।ঘরের কাজের ছেলে মেয়েদেরকে তুই তোকারী করি।সবাই যখন এসব নিয়ে গল্প করছিল তখন পাশে দাড়িয়ে ছিল ঝুনু।আহসান সাহেবের বাসার কাজের মেয়ে।আহসান সাহেব বললেন ঝুনু তুমি কিচেন থেকে একটা কাচা মরিচ নিয়ে আসোতো। আহসান সাহেব কথা শেষ করতেই বাকিদের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।তিনি যাকে রোজ তুই তুই করে সম্বোধন করতেন আজ তাকে তুমি করে বলছেন।ঝুনুরও খুব ভালো লেগেছে।তারও নিশ্চই ইচ্ছে করতো তাকে যেন অন্যদের মত তুমি তুমি করে বলা হয়।
আইন পেশায় জড়িত আহসান সাহেব উকিল হিসেবে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন তার সততা আর নিষ্ঠার কারণে।তিনি কোন মামলা হাতে নিয়ে যদি যাচাইবাছাই করতে গিয়ে দেখেন তার মক্কেলেরই দোষ তাহলে তিনি সেই মামলা নিয়ে আইনি লড়াই করতে রাজি হন না।যদিও তার মত উকিলের পক্ষে ওই মামলায় জেতাটা খুবই সামান্য ব্যপার কিন্তু তিনি কখনোই চাননা অন্যায়কে ন্যায় বলে প্রতিষ্ঠিত করতে।আহসান সাহেব ঘুমোতে যাবার আগে ভাবলেন কালকে যদি ছেলেটির সাথে দেখা হয় তাহলে ওর সাথে সুন্দর করে কথা বলবেন এবং দুঃখ প্রকাশ করবেন।পরদিন কোর্টে যাওয়ার পথে তিনি ছেলেটিকে দেখতে পেলেন না এমনকি ফেরার পথেও দেখতে পেলেন না।মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।
পথের একটি শিশুর জন্য তার মন খারাপ হচ্ছে জানলে হয়তো অনেকেই হাশিতামাশা করবে কিন্তু তিনি তাতে পরোয়া করেন না।তিনি মনে করেন ভুল হলে দুঃখপ্রকাশ করাটাই উত্তম এবং দুঃখ প্রকাশ না করে যদি মারা যাই তাহলে জীবনটার একাংশ ব্যর্থ বলেই বিবেচিত হবে।তাছাড়া খুব কম মানুষ নিজেরা ভুল করলে সেটা অনুধাবন করে সত্যটা স্বীকার করতে পারে।রাতে খাবার টেবিলে আহসান সাহেবের ছোট ছেলে রিহাম জানতে চাইলো বাবা সেই ছেলেটির সাথে কি তোমার দেখা হয়েছিল।আহসান সাহেব বললেন ছেলেটির সাথে দেখা হয়নি।এভাবে দুই তিনদিন ছেলেটিকে আর দেখা গেলনা।তিনি ভাবলেন পথের ছেলে কখন কোথায় রাত কাটায় তার কি কোন ঠিক ঠিকানা আছে।ওর সাথে আর দেখা হবে কি হবেনা সেটা তার জানা নেই তবে কিছুটা আক্ষেপ থেকেই গেল যে ছেলেটির কাছে দুঃখপ্রকাশ করা হলো না।
এক রবিবার ছুটির দিনে আহসান সাহেব হাটতে বেরিয়েছিলেন।হাটতে হাটতে বেশ ক্লান্ত হয়ে পার্কের বেঞ্চিতে বসেছিলেন এমন সময় দেখলেন সেই ছেলেটি আসছে।তিনি যতটা সম্ভব মিষ্টি করে ছেলেটিকে ডাকলে এই ছেলে তুমিকি একটু আমার কাছে আসবে?তোমার সাথে আমার কথা আছে।ছেলেটি আহসান সাহেবের কথা শুনে এগিয়ে আসলো তার পর বললো বলুন কি বলতে চান।না এমন নয় যে ছেলেটি আমাদের মত প্রমিত বাংলায় কথা বলেছে।সে তার মত করে আঞ্চলিক ভাবে কথা বলেছে কিন্তু ওর ভাষাকে লিখিত ভাষায় রুপ দিতে গেলে ঘটনাটি সেভাবে উল্লেখ করা যাবেনা বলেই আমাদের মত করে বলতে হচ্ছে।
ছেলেটি কাছে এসে দাড়াতেই আহসান সাহেব বললেন আমি খুবই দুঃখিত যে তোমাকে তুমি করে না ডেকে তুই তুই করে ডেকেছি। সে জন্য আমি খুবই লজ্জিত।তুমি ঠিকই বলেছ নিজের ছেলে মেয়েকে যদি তুই তুই করে ডাকা না যায় তাহলে অন্যের ছেলেকে কি করে তুই তুই করে ডাকি।আহসান সাহেবের কথা শুনে ছেলেটির মুখে হাসি ফুটলো না।তিনি জানতে চাইলেন তুমিকি তার পরও আমার উপর রেগে থাকবে?ছেলেটি বললো না আপনার উপর রাগ করিনি।যা রাগ ছিল তা চলে গেছে। তবে অন্য একটা কারণে খুব রাগ হয়েছে।আহসান সাহেব ছেলেটির কাধে হাত রেখে বললেন তোমার সময় থাকলে আমার পাশে বসো এবং বলো কি কারণে তোমার রাগ হচ্ছে।তার আগে বলো তোমার নাম কি।ছেলেটি পাশে বসতে বসতে বললো আমার নাম মিহির।থাকি কমলাপুর রেলস্টেশানে।
আহসান সাহেব দেখলেন মিহির নামের ছেলেটি তার পাশে বসলেও বেশ দূরত্ব বজায় রেখে বসেছে।তিনি বললেন আমার গা ঘেসে বসো এতো দূরে বসেছ কেন?মিহির বললো সেটা হয়না।আমার গায়ে ময়লা আছে সেটাতো আপনার গায়ে লেগে যাবে।ওর কথা শুনে আহসান সাহেবের মনটা খারাপ হয়ে গেল।নিশ্চই ছেলেটা অন্যদের থেকে এমন আচরণ পেয়েছে যে ও খুব সাবধান হয়ে দূরে বসেছে।তিনি বললেন আমার গায়ে ময়লা লাগলে লাগুক তবুও তুমি কাছে এসে বসো।
কথাগুলো শুনে মিহির যেন ভীষন রকম মু্গ্ধ হলো।আহসান সাহেবের উপর সে মুগ্ধ ছিল অনেক আগে থেকেই।সে জানতো তাকে এবং সে জন্যই তার কাছে কিছু একটা বলবে বলে রোজই আসতে চেষ্টা করতো কিন্তু কখনো কথাটা বলা হতো না।এবার যেহেতু খুব কাছে এসেছে তাই কথাটা সে বলতেই পারে।তার আগে সে বললো মানুষ আমাদেরকে খুব নোংরা মনে করে।আমাদের শরীর যেন বিষে ভরা,যেন শরীরের সাথে ছোয়া লাগলে পচে যাবে।তাই সবাই চায় আমরা যেন দূরে দূরে থাকি।অথচ বাসে যে সিটে বসে যাওয়া আসা করে সেটাতেও অনেক ময়লা থাকে।তখন কিন্তু সেখানে বসলে তাদের শরীরে সমস্যা হয়না শুধু সমস্যা আমাদের বেলাতে।আহসান সাহেব খুব অবাক হন এবং আহতও হন ওর কথা শুনে।মনে মনে ভাবেন সমাজে আমাদের কত সমস্যা।আমরা ওদের কথা মোটেই ভাবিনা।
আহসান সাহেব ওর সাথে একমত পোষণ করলেন এবং জানতে চাইলেন তুমি আজ কেন রেগে আছ আর তুমি কমলাপুর থাকো তাহলে এতো দূরে কেন আসো?মিহির তখন জানালো এক বছর আগে রেল স্টেশানে একটা টোকাই ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙেছিল।সেদিন একটু দুরে মিহিরও ছিল আর দেখেছিল কেউ যখন এগিয়ে আসেনি তখন আহসান সাহেব ছেলেটিকে কোলে তুলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন।সেদিন থেকেই মিহির আহসান সাহেবকে চেনে এবং খুবই ভালো মানুষ বলে মনে করে।সে মনে করে তারও যদি কখনো বিপদ হয় নিশ্চই আহসান সাহেব তাকে বাঁচাবে। আহসান সাহেবের মনে পড়ে এক বছর আগের সেই ঘটনা।মির্জাপুর থেকে ফিরছিলেন তিনি।ট্রেন থেকে নেমে সবে মাত্র প্লাটফর্মে দাড়িয়েছেন তখন ঘটনাটা ঘটেছিল।এতোদিন ধরে মিহির তার সেই ঘটনাটিকে মনে রেখেছে এবং বিশ্বাস করে বসে আছে যে তারও কোন বিপদ হলে তিনি রক্ষা করবেন এটা ভাবতেই তিনি মুগ্ধ হলেন।ওর মাথার চুলে বিলি কেটে বললেন তা তুমি এখন বলো তোমার কি সেরকম কোন বিপদ?আমার কোন সাহায্য করা লাগবে?
এবার মিহির নড়েচড়ে বসলো।বললো বিপদ ঠিক না তবে সমস্যা।কিছু লোক আছে যারা গায়ে পড়ে ঝামেলা করে তাদের নিয়ে সমস্যা।আমি তাদের বিরুদ্ধে কেস করতে চাই!!আপনি যেহেতু উকিল তাই আপনাকেই কাজটা করতে হবে!তাছাড়া আমিতো খুবই ছোট মানুষ তার উপর রাস্তার ছেলে।এমনিতেই ছোটদের কথাকে আমাদের দেশে কেউ গুরুত্বই দিতে চায় না আর সেখানে সেই ছোট মানুষ যদি পথের ছেলে হয় তাহলেতো কোন কথাই নেই।মিহিরের জ্ঞানগর্ভ কথা শুনে আইন বিশেষজ্ঞ আহসান সাহেব আরো বেশি চমকে গেলেন।
তিনি জানতে চাইলেন তুমি এতো সুন্দর কথা কি করে শিখলে?কার কাছ থেকে শিখলে?মিহির জানালো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটো আপু আর একটা ভাইয়া কমলাপুর রেলওয়েস্টিশানে এসে আমাদেরকে পড়ায় অনেক গল্প করে।তাদের থেকেই শিখেছি জেনেছি।তবে তাদেরকেও আমার রাগের কথাটা বলিনি কারণ তারাতো আর উকিল না।ছোট্ট মিহিরের মুখে কেস করার কথা শুনে বেশ ইন্টারেস্টিং কিছু নিশ্চই হবে ভেবে নিলেন আহসান সাহেব। বেলা বেশ হয়েছে,বাসায় ফেরা দরকার কিন্তু ফিরতে ইচ্ছে হচ্ছেনা।ওর কথাগুলো শোন দরকার।তিনি জানতে চাইলেন কি কারণে তুমি কেস করতে চাও সেটা বিস্তারিত বলো।মিহির তখন যতটা সম্ভব ওর মত করে গুছিয়ে বলতে শুরু করলো।
শুরুটা বেশ আগের।রোজ কারো না কারো সাথে ঝগড়া লাগতো মিহিরের।ঝগড়ার বিষয়বস্তু তেমন কিছু না এই থু থু ফেলা নিয়ে।কেউ একজন থুথু ফেলছে সেটা দেখে মিহির নামের ছেলেটি রেগে উঠতো আর বলতো আপনি এখানে থু থু ফেললেন কেন?যে থুথু ফেলেছে সে অবাক হতো।জানতে চাইতো এখানে থুথু ফেললে সমস্যা কি?মিহির বলতো এটাতো আমার বিছানা এখানে কেন থুথু ফেলছেন?লোকটা তখন চারপাশ ভালো করে দেখেনিতেন।সেখানে কোথাও কোন বালিশ নেই তোশক নেই পাটি নেই।সুতরাং সেটা কি করে বিছানা হয়?মিহিরকে যখন বলা হতো এটাতো প্ল্যাটফর্ম এলাকা এখানে থুথু ফেললে সমস্যারতো কিছু নেই।ছোট্ট মিহিরের একটাই ক্ষোভ আমরাকি আপনার বিছানায় কখনো থুথু ফেলেছি যে আপনি আমাদের বিছানায় থুথু ফেলছেন।লোকটা ক্ষেপে উঠতো।মিহির তখন বলতো জানেন না এখানেই আমরা ঘুমাই তাই এটাই আমাদের বিছানা।
এসব কথা শুনে যে থুথু ফেলেছিল সে রেগে হয়তো একটা চড় বসিয়ে দিয়ে নিজের পথে চলে যেত।এভাবে রোজ চলতো কিন্তু একবার এক লোক যে প্রতিদিন উত্তরা থেকে মতিঝিলে অফিসে আসতো ট্রেনে সেও এসে থুথু ফেলতো।আসার সময় একবার যাওয়ার সময় একবার।তাকে কয়েকবার বলার পরও সে আমলে নেয়নি বরং এসেই ওখানে থু থু ফেলতো।যেন মিহিরের সাথে ইয়ার্কি করে শত্রুতা করেই থুথু ফেলছে।সেই লোকটার বিরুদ্ধেই মিহির মামলা করতে চায়।
ছোট্ট মিহিরের সব কথা শুনে আরো একবার চমকে উঠলেন আইনের সেবক আহসান সাহেব।মিহির যা বলেছে তাতেতো অবশ্যই যুক্তি আছে।ওরাতো সবাই রাস্তায়,ফুটপাথে ঘুমায় সুতরাং ওটাইতো ওদের বিছানা আর আমরা যাওয়া আসার পথে যখন যেখানে যেভাবে পারছি থুথু ছিটাচ্ছি।সুতরাং এক অর্থেতো আমরা মিহিরদের বিছানাতেই থুথু ছিটাচ্ছি।এটা নিয়ে মামলা হতেই পারে।তিনি মিহিরকে কথা দিলেন অবশ্যই তিনি মিহিরের হয়ে মামলা করবেন।তবে তিনি এও জানালেন যে লোকটি থুথু ফেলে শুধু তার নামে মামলা করাটা ঠিক হবে না তাই তিনি নিজের মত করে মামলা করবেন।মিহির খুশি মনে নিজের পথে চলে গেল আর আহসান সাহেব বাসায় ফিরলেন।বাসার সবাই খুব চিন্তিত ছিলো তিনি ফিরছেন না দেখে।
মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় ফোনটাও বন্ধ ছিল তাই সবার চিন্তা আরও বাড়ছিল।গোসল সেরে সকালের নাস্তা দুপুরে করতে হলো।তখনই তিনি মিহিরের কথাটা তুললেন।সবাই সব শুনে বেশ অবাক হলো এবং আহসান সাহেবের মেয়ে আরিয়ানা বললো বাবা ওই ছেলেটি কোনো স্কুলেই পড়েনা তার পরও ওর মাথায় এতো সুন্দর সব চিন্তা কি করে এলো?আহসান সাহেব উত্তর দিতে পারেন না।পরদিন কোর্টে গিয়ে তিনি একটি মামলা করেন।সব শুনে মামলা নিতেই রাজি ছিলনা কেউ কিন্তু আহসান সাহেবের মত মানুষকে দমিয়ে রাখা যায় না।অনেক হাসাহাসি হলো,কথা চালাচালি হলো তবে মামলা নেওয়া হলো এবং শেষ পযর্ন্ত অবশ্য সেই মামলার রায়ও হলো আর সেটা মিহিরের পক্ষেই গেল।স্থানে স্থানে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেওয়া হলো যত্রতত্র থু থু ছিটানো যাবে না।কেউ থুথু ফেললেই তাকে জরিমানা করা হবে।
একসপ্তাহ পর আবার যখন মিহিরের সাথে দেখা হলো তখনো মিহিরের মুখটা কালো হয়ে আছে।আহসান সাহেব জানতে চাইলেন কি হয়েছে আবার?তোমার মন খারাপ কেন?মিহির বললো মামলা করে লাভ কি হলো?কেউতো শুনছেনা মানছে না।আসলে যাদের পরিবার থেকেই শিক্ষার অভাব আছে তাদেরকে কি আর মামলা দিয়ে আইন করে শেখানো যায়।আহসান সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন আর ভাবলেন এই পথের শিশুটি যতটা ভাবছে তার কিয়দাংশও যদি আমরা ভাবতে পারতাম দেশটা সোনার বাংলাই হতো,তাতে কোন খাদ থাকতো না।
জাজাফী
২০ এপ্রিল ২০১৮
loading...
loading...
শেখা অথবা জানার শেষ নেই। শিক্ষণীয় লিখাটি পড়ে মুগ্ধ হলাম মি. জাজাফী। লিখার কিছু জায়গায় যতিচিহ্ন এবং পরবর্তী শব্দ যুক্ত হয়ে গেছে। শব্দনীড় এ শেয়ার করার জন্য অভিনন্দন জানবেন। ধন্যবাদ।
loading...
ভাল লেখা পড়লাম।
loading...