এক নিশিকন্যার সাথে স্বপ্ন
সে রাতটা ছিল অন্যরকম
এক নিশিকন্যার সাথে স্বপ্ন আলাপন
শীতের রাত
অফিসে বেশ খানিকটা রাত হয়ে গিয়েছিল কাজে
রাস্তাটা ঢেকেছিল ঘন কুয়াশার সাজে
অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরও কোন রিক্সা না পেয়ে
অগত্য পথ হাঁটা,
বেশ খানিকটা এগোনোর পর গলিপথ থেকে শীর্ণ এক যুবতী
বেরিয়ে এসে পা মেলালও পথের সাথে
স্যার কি একা?
একটু চমকে তাকালাম
বুঝে গেলাম নিশিকন্যা,
বেশ মজাই পেলাম
উত্তর দিলাম
হ্যাঁ, গো মা;
সম্ভাষণে একটু চমকে গেল বোধহয়
মুহূর্তে সামলে নিলো
স্যার যে কি বলেন!
আজ কোন রোজগার হয় নি,
আমার ঘর আছে
কিছু সময় কিনতে চাইলে চলেন;
বড্ড রাগ হলো
এবার ভালো করে তাকালাম
জীর্ণ শীর্ণ কাপড়
কৈশোর পার হয়ে মাত্র যৌবনে পা দিয়েছে হয়তো
এ বয়সেই?
কি জানি!
পরিস্থিতি? পেটের দায় নয়তো!
পকেট হাতড়ে দেখলাম মাত্র একশ টাকা দুটি আর কিছু খুচরা নোট
দুশো টাকা বাড়িয়ে দিয়ে বললাম
এটা রাখ, আমার কাছে আর নাই
থমকে দাঁড়িয়ে বলল,
ভিক্ষা করি না স্যার
শরীর বেচি, ভাত খাই;
এবার থমকানোর পালা আমার
আসলে চমকালাম,
মনে মনে বললাম
বাহ! বেশ তো!
আমার কাজের বিনিময়ে খাদ্য
নিশিকন্যার কামের,
সে শরীর বেঁচে
আমি শ্রম,
ধ্যাত!
কি সব উল্টোপাল্টা ভাবছি!
মনের ভ্রম;
আমি চুপ করে আমার পথে হাঁটা ধরলাম
লক্ষ্য করলাম সেও আসছে পেছন পেছন
এবার দাঁড়িয়ে পড়ে বললাম
টাকা নাও, পিছু ছাড়
সে হেসে দিয়ে বলল
ভয় পাবেন না স্যার
এ রাস্তাটা বড্ড ফাঁকা
আমি ঐ সামনের মোড়টা পর্যন্ত যাব
আপনার সাথে
একটু ভয় ভয় লাগে এ রাস্তায় একা;
হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞাসা করলাম
বাড়িতে কে আছে তোমার?
উত্তর দিলো
ভাঙা চৌকি, মাটির উনুন
দুটো হাড়ি, একটা প্লেট
একটা গ্লাস
আর পেটে রাজ্যের ক্ষুধা;
বাবা-মা, ভাই-বোন?
হেসে উত্তর দিল
তারা তো কবেই দিয়েছে আমায় বিসর্জন!
বড্ড মন খারাপ হলো
বড় রাস্তার মোড়ে চলে এসেছি
রিক্সা পেয়ে উঠে বসলাম
আবার টাকা সাধলাম, নিলো না;
পেছন থেকে বললো
সাবধানে যাবেন স্যার
ভালো থাকবেন;
এগিয়ে চলছে রিক্সার চাকা
কুয়াশার রাত
রাস্তাঘাট বড্ড ফাঁকা;
অনেক রাতে বাড়ি ফিরলাম
খাওয়া দাওয়া করে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুম;
…………………
হঠাত দেখলাম
চাঁদের রাত
বিশাল ফাঁকা মাঠে একটা বেঞ্চ
আমি বেঞ্চে বসা
সামনে মাটিতে বসা, নিশিকন্যা ;
স্বপ্নে স্বপ্নে দুজনার কথোপকথন –
নিশিকন্যা! তুমি স্বপ্ন দেখ?
বাবু! লাল পানির নেশায় রঙিন স্বপ্ন দেখা তোমাদের অধিকার
আমি শুধু দেখি প্রতিদিন নতুন নতুন খরিদ্দার;
প্রেম হয় নি কখনো কারো সাথে?
না গো বাবু,
প্রেম তো মনের
প্রেম শুধু তোমাদের,
নিশিকন্যারা শরীরের
আমাদের কিছু হলে পেটে ক্ষুধা হয়, অনাকাঙ্ক্ষিত বাচ্চা হয়
আর খুব বেশী কিছু হলে, এইডস হয়;
কখনো ভালোবাসো নি কাওকে?
বেসেছি তো বাবু!
শরীর’কে
পেটকে
ক্ষুধাকে,
তোমরা আমাদের ভালোবেসে যাও আঁচড়ে আঁচড়ে, কামড়ে কামড়ে
আমরা শুধু পেট ভরাই, ক্ষুধা ভালোবেসে;
ধ্যাত! আমি সব ভালো ভালো কথা জিজ্ঞাসা করছি
আর তোমার সব উল্টোপাল্টা উত্তর
ভালো করে কথা বলতেও পার না?
যাও তোমার সাথে আর কথাই বলব না;
নিশিকন্যা হেসে উত্তর দেয়
প্রেম?
ভালোবাসা?
না গো বাবু, না!
ওসব আমাদের থাকে না
ওসব আমাদের থাকতে হয় না,
আমার কি আছে জানো?
আমার আছে একটি পেট, আর একরাশ ক্ষুধা
পুরুষের লালসা দেখার দুটি চোখ
তাদের শীৎকার আর অশ্রাব্য গালি শোনার দুটি কান
বোবা তিনটি মুখ
আর দুটি স্তন
এইটুকু নিয়েই নিশিকন্যাদের জীবন;
আচ্ছা বাবু, আমি গেলাম, তুমি ঘুমাও
বলে সে বিদায় নিলো;
তারপর আমিও ঘুমিয়ে গেলাম রাতের কোলে,
স্বপ্নগুলো বড্ড অদ্ভুত, তাই না!
loading...
loading...
অতিবাস্তব এক জীবনের অণু গাঁথা। সম্মান প্রিয় নির্বাসনের মানুষ যাযাবর জীবন।
loading...
অসাধারণ কথা কাব্য যাযাবর ভাই। মুগ্ধ হলাম।
loading...
জীবন-গল্পটি পড়ে স্তম্ভিত হলাম কবি জীবন বাবু।
loading...
গুড কনসেপ্ট।
loading...