অফিসের রেস্ট হাউজে শুয়ে শুয়ে জয় চোখ বন্ধ করে সেই গান শুনছে আমারও পরাণও যাহা চায়… আর তার মন চলে গেছে জয়পুরহাটের তাদের সেই ছোট্ট বাসায়। যেখানে জয় আর ইরা ঘর বেঁধেছিলো। তাদেও সেই ঘরে দু’জনে সুখেই ছিলো। প্রতিদিন কোনো না কোনো বিষয়ে দু’জনে ঝগড়া করতো, হাসতো, কাঁদতো। আবার এক হয়ে যেতো। ইরার অভিমানটা ছিলো একটু বেশি। শুধু অভিমানই নয়, রাগ, ক্ষোভ, জিদ আর সন্দেহপ্রবণতা সবকিছু যেনো একটু বেশিই ছিলো। আর জয় ছিলো বরাবরই শান্ত, তাতেও ইরার সন্দেহ ছিলো, আচ্ছা তুমি আমার রাগ করো না কেনো বলোতো?
জয় বলতো, ইরা দু’জনে রেগে গেলে কি চলে? একজন রেগে গেলে আরেকজনকে তো শান্ত হতে হবে।
ইরার সেই রাগান্বিত কণ্ঠ স্বরটাও যদি জয় একবার শুনতে পেতো। মোবাইল ফোনে কতদিন থেকে ইরার কোনো ম্যাসেজ আসে না। অথচ আগে সবসময় জয়ের ফোনে ইরার ম্যাসেজ আসতো, কী করছো?
এই তো লিখছি।
নাস্তা খেয়েছো?
না, খাবো এখন।
কেনো তোমাকে না বলেছি সকাল সকাল নাস্তা খাবে। তুমি তো লিখতে বসলে আর সময়জ্ঞান থাকে না। তারপর হঠাৎ করে দেখো অফিসের সময় হয়ে গেছে। তখন তাড়াহুড়ো করে সব ফেলেটেলে অফিসের কাজে লেগে যাও। সেদিন আর নাস্তা করাই হয় না। সারাজীবন নিজের দিকে খেয়াল রাখলে না। অন্যের জন্য নিজেকে বিসর্জন দিলে।
আামি নিজেকে বিসর্জন দিলাম, একথা তুমি বললে, তুমি না আমাকে সবসময় স্বার্থপর বলো, আজ আবার নতুন সুর শুনছি।
আরে ওগুলো তো আমার রাগের কথা। আমি তো তোমাকে চিনি। তুমি জীবনে কোনোদিন নিজের কথা ভাবোনি।
জয়ের মোবাইল ফোনে তখনো বেজেই চলেছে,
আমারও পরাণও যাহা চায়, তুমি তাই, তুমি তাই গো
আমারও পরাণও যাহা চায়।
তোমা ছাড়া আর এজগতে মোর কেহ নাই কিছু নাই গো
আমারও পরাণও যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো
আমারও পরাণও যাহা চায়।
তুমি সুখ যদি নাহি পাও,
যাও সুখেরও সন্ধানে যাও,
আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়ও মাঝে
আর কিছু নাহি চাই গো।
আমারও পরাণও যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো
আমারও পরাণও যাহা চায়।
জয় তন্ময় হয়ে গানটা শুনছিলো আর গণ্ডদেশ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিলো। সেদিন ইরা জয়কে গানটা শুনতে বলছিলো আর জয় না শুনেই বলেছিলো, আমি তোমাকে পেয়েছি, তুমি আমার ছন্দ, কবিতা, গান, তুমিই আমার সব। আমার আর নতুন করে আমারও পরাণও যাহা চায় শুনতে হবে না। ওসব তুমি শোনো।
অথচ আজ ইরা চলে যাবার পর জয় গানটা শুনছে আর আমার দু’চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে, হায় অভিমানী, কেনো, গানে গানে তোমার চলে যাবার কথা জানিয়েছিলে। আমি সেদিন যদি পুরো গানটা মনোযোগ দিয়ে শুনতাম আর তোমার চলে যাওয়ার কথা জানতাম তবে সবকিছু অন্যরকম হতো ইরা। আমি তোমাকে কোনোভাবে যেতে দিতাম না।
জয়ের মোবাইল ফোনে একটা ম্যাসেজ আসার রিংটোন বেজে উঠলো, জয় মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে দেখলো, না ইরার ম্যাসেজ না, হেল্প লাইনের কমার্সিয়াল ম্যাসেজ।
ফোনটা এভাবেই জয়কে যন্ত্রণা দিচ্ছে। জয় আপনমনে বিলোপ করে আবার বলতে শুরু করলো, কেনো দিয়েছিলে তুমি মোবাইল ফোনটা? প্রথমে একবার কিনে দিলে সখের বশে, জিদের বশে, ফোনটা হাতে দিয়ে বললে, আজ থেকে এই ফোন দিয়ে শুধু আমার সঙ্গে কথা বলবে, না, সরি, শুধু আমার সাথে না, আমার সাথে ফ্যামিলির সবার সাথে আর অফিসের কাজে।
আমি জানতাম এর পরের কথাটা তুমি কী বলবে, তবু জিজ্ঞেস করছিলাম তাহলে কার সাথে কথা বলতে পারবো না?
তুমি বললে, তোমার ভক্তদের সাথে।
আমি একটা দুষ্টুমীর হাসি হেসে বললাম, যদি কোনো ছেলে ভক্ত হয়?
তুমি রেগে বললে, তুমি বোঝোনি কার সাথে কথা বলতে নিষেধ করছি, তোমার মেয়ে ভক্ত, মেয়ে বন্ধু, মেয়ে কলিগদের সাথে। বুঝেছো বৎস।
আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম।
আমি তো তোমার কথামতো কোনো মেয়ের সাথে সাথে কথা বলছিলাম না। সেদিন রাতে তোমার সাথে ঝগড়া হলো, তুমি রাগ করে পাশের ঘরে গিয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়লে, আমি তোমাকে তুলে আনার চেষ্টা করলাম, তুমি এলে না। তোমাকে ছাড়া কি আমার ঘুম আসে….
আমি বিছানায় ছটফট করছিলাম, তাই ফেসবুকে বসেছিলাম। তুমি দৌড়ে এলে পাশের ঘর থেকে, ছোঁ মেরে আমার কাছ থেকে মোবাইল ফোনটা নিয়ে মেঝেতে আছাড় মারলে, ফোনের স্ক্রিনটা ফেটে গেলো কিন’ তোমার রাগ কমলো না, মাটি কাটার সময় লোকেরা যেমন কোদাল দিয়ে মাটিতে কোপ মারে সেভাবে মোবাইল ফোনটা সজোরে আঘাত করলে মেঝেতে। ফোনটা ভেঙ্গে গেলো, আমি অসহায়ের মতো তোমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। আমার মুখ থেকে অষ্ফুট স্বরে বেরিয়ে এলো, ফোনটা ভেঙ্গে দিলে!
তারপর তুমি আমার বুকে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লে, তুমি আমার কাছ থেকে ফোনটা কেড়ে নিলে না কেনো? আমাকে মারলে না কেনো? অন্য কেউ হলে, মোশা হলে মেরে আমার হাড় ভেঙ্গে দিতো। আর তুমি কী না ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলে, তুমি ভালো, খুব ভালো জয়।
চলবে…
(বন্ধুগণ, জয়-ইরার জীবনের আনন্দ-বেদনা নিয়ে ৫৩ টি ছোটগল্প নিয়ে লেখা আমার একটি বই প্রকাশিত হবে আমার ৫৩ বছর বয়সে অর্থাৎ অমর একুশে বইমেলা-২০২১/২০২২ এ। আশা করি সঙ্গে থাকবেন)
এই লেখাটি প্রথম থেকে পড়তে ক্লিক করুন:
https://www.shobdonir.com/writerzillur/106638
আমার সব লেখা এক সাথে পড়তে ভিজিট করুন:
http://www.writerzillur.com
ফেসবুকে আমার সাথে সার্বক্ষণিক থাকতে আমাকে এ্যাড করুন:
Zillur Rahman.
loading...
loading...
জয় আর ইরা’র এই পর্বের গল্পের খণ্ডাংশ বেশ স্পর্শী হয়েছে।
জীবনের একটি সময়ে এমন কিছু নস্টালজিক সময়ের মুখোমুখি হতে হয়।
মনে পড়ে অনেক কিছু। আনন্দ ব্যাথা বেদনায় ভরা আমাদের এইসব দিনরাত্রি।
loading...
নস্টালজিয়া হলেও ৫৩ টি ছোটগল্প আর একটি উপন্যাস লিখবো এই দম্পতিকে নিয়ে মুরুব্বী। আগে মাথা যা আসে লিখে যাই তারপর এডিট করবো পাঠকদের মতামত অনুযায়ী। তারপর অমর একুশে বইমেলা-২০২১/২০২২ এ প্রকাশিত হবে এই ছোটগলেপর বই। আশা করি ভুলত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিবেন মুরুব্বী।
loading...
চলুক। সাথে আছি।
loading...
ধন্যবাদ
loading...