ক’দিন থেকে জয় একটা গানই শুনছে, আমারও পরাণও যাহা চায়, তুমি তাই, তুমি তাই গো… কিন্তু এই একটা গানের মধ্যে কী আছে যে যে দিনরাত জয় একটা গানই শুনছে। কোনো কোনো দিন গভীর রাতে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে, শিশুর মতো, কখনো কখনো কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিড়বিড় করে বলতেই থাকে, কেনো চলে গেলে অভিমানী, কেনো এভাবে চলে গেলে। তুমি জানো না, আমি তোমাকে কত ভালোবাসি, আমি বলতাম আমি তোমাকে ভালোবাসি, খুব সহজভাবে, হাসতে হাসতে, আর তুমি ভাবতে আমি বুঝি কথার কথা, বলতে হয় তাই বলছি।
তুমি বলতে এভাবে বলতে হয় না, তুমি ভালোবাসি কথাটা এমনভাবে বলো যে মনে হয় হাল্কাভাবে, কৃত্রিমভাবে, আমাকে খুশি করার জন্য বলছো, যার মধ্যে কোনো গভীরতা নেই।
আমি তখন সত্যিই কৃত্রিমভাবে কণ্ঠস্বর গম্ভীর করার চেষ্টা করতাম, বলতাম, আমি তোমাকে ভালোবাসি ইরা।
তুমি বলতে তবুও হয়নি।
তখন আমি তোমাকে বুকে জড়িয়ে বলতাম, একবার আমার হৃদয়ের স্পন্দন অনুভব করো, বুঝতে পারবে আমি তোমাকে কত ভালোবাসি।
তুমি নিবীড়ভাবে আমার হৃৎপিণ্ডের সঙ্গে মিশে যেতে, দু’জন অনেকক্ষণ পরস্পরের হৃদয়ের স্পন্দন অনুভব করতাম, আমি বিশ্বাস করতাম তুমি আমাকে ভালোবাসো কিন’ তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে না।
আমি আবারো জিজ্ঞেস করতাম, কী বুঝতে পেরেছো?
তুমি বলতে, পেয়েছি, তুমি আমাকে অনেক অনেক ভালোবাসো, তবে শুধু আমাকে না। আরো অনেককে।
ইরা মার খাবে কিন’…
তুমি হেসে বলতে, পারবে, তুমি আমাকে মারতে পারবে, মারো না গো, একটু মার দাও, বলে রান্নাঘরে একরকম দৌড়ে যেতে, তরকারি কাটার চাকু এনে হাতে দিতে, এই নাও, এই নাও চাকু, আমাকে মারো, কাটো, আমার শরীর ক্ষত-বিক্ষত করে দাও, যেনো সারাজীবন হৃদয়ে তোমার স্মৃতি, আমার সমস্ত শরীরে তোমার স্মৃতি বয়ে বেড়াতে পারি, সেটাই হবে আমার জন্য সবচেয়ে সুখের জীবন।
আমিও হেসে ফেলতাম আবার তোমাকে বুকে জড়িয়ে ধরতাম, আমি তোমাকে মারতে পারবো না ইরা, আমি তোমাকে কষ্ট দিতে পারবো না।
মুহূর্তে তুমি গম্ভীর হয়ে যেতে, তুমি কষ্ট দিতে পারবে না কিন’ আমি তো কষ্ট পাচ্ছিই জয়।
কেনো? তুমি কষ্ট পাচ্ছো কেনো? আমি তো এমনকিছু করছি না যাতে তুমি কষ্ট পাও?
এই যে তুমি ফোনে হাজার জনের সাথে কথা বলো, তোমার কত ফ্যান, ফ্রেন্ড। তোমার হৃদয়ে এতো মানুষের ভিড়ে জায়গা করে নেয়া আমার জন্য কঠিন। আমি পারবো না।
পারবো না মানে? পেরেছো, আমার সমস্ত হৃদয় জুড়ে তো এখন তুমিই ইরা।
এটা তুমি বলতে পারো কিন’ আমি তো তোমার মাঝে আমাকে খুঁজে পাই না জয়। একসাথে সারাজীবন থাকার মানে এই না যে একজন আরেকজনকে পেয়েছে। স্বামী-স্ত্রী একসাথে থাকার পরও কেউ কাউকে নাও পেতে পারে কিন’ আশ্চর্যের বিষয় কি জানো?
কী?
কোনোদিন কোনো স্বামী বা স্ত্রী বোঝার চেষ্টাও করেনা যার সঙ্গে সে সারাজীবন সংসার করছে, একঘরে থাকছে, এক বিছানায় রাত্রি যাপন করছে সে আদৌ তাকে পেয়েছে কী না। কোনোদিন জানার চেষ্টাও করে না। তুমি একবার চোখ বন্ধ করো আমাকে ফিল করো, দেখবে আমাকে তুমি ষোলো আনা পেয়েছো, আমার ভালোবাসায় কোনো খাত নেই।
আমি চোখ বন্ধ করলাম, হ্যাঁ সত্যি সত্যি আমি তোমাকে পেয়েছি ইরা।
কিন’ আমি তো তোমাকে পাইনি জয়। আমি দু’চোখ বন্ধ করে যখন তোমাকে খুঁজি…
আমি ইরার দু’বাহুতে ঝাঁকি মেরে বললাম, থামলে কেনো ইরা? থামলে কেনো বলো?
মিথ্যা কথা বলবো না, পেয়েছি, আমিও তোমকে পেয়েছি, খণ্ডিত, আমি তোমার কাছে পেয়েছি খণ্ডিত প্রেম। আর দিয়েছি নিখুঁত ভালোবাসা।
আমি ইরাকে জড়িয়ে ধরতে গেলাম, ইরা রান্নাঘরে চলে গেলো। যেতে যেতে বললো, আমি নাস্তা তৈরি করি, তুমি রেডি হও। তোমার অফিসের সময় হয়নি?
আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে জোরে বললাম, না, এখনো আমার অফিসের সময় হয়নি।
তাহলে শুয়ে শুয়ে এই গানটা শোনো বলে তুমি গানটা চালু করে দিয়ে চলে গেলে, আমারও পরাণও যাহা চায়…
চলবে…
পরবর্তী পর্ব আগামীকাল।
(বন্ধুগণ, জয়-ইরার জীবনের আনন্দ-বেদনা নিয়ে ৫৩ টি ছোটগল্প নিয়ে লেখা আমার একটি বই প্রকাশিত হবে আমার ৫৩ বছর বয়সে অর্থাৎ অমর একুশে বইমেলা-২০২১/২০২২ এ। আশা করি সঙ্গে থাকবেন)
আমার সব লেখা এক সাথে পড়তে ভিজিট করুন: www.writerzillur.com
ফেসবুকে আমার সাথে সার্বক্ষণিক থাকতে আমাকে এ্যাড করুন: https://www.facebook.com/profile.php?id=100000449437795
যাত্রার একঘেঁয়েমি কাটাতে আমার বই পড়ুন: https://sheiboi.com/Pages/BookDetails.html?/Dag/285
loading...
loading...
loading...
ধন্যবাদ।
loading...
কোনোদিন কোনো স্বামী বা স্ত্রী বোঝার চেষ্টাও করেনা যার সঙ্গে সে সারাজীবন সংসার করছে, একঘরে থাকছে, এক বিছানায় রাত্রি যাপন করছে সে আদৌ তাকে পেয়েছে কী না। কোনোদিন জানার চেষ্টাও করে না।
মূল উপপাদ্য হিসেবে এই লাইনদ্বয় উল্লেখ করলাম। ধন্যবাদ প্রিয় জিল্লুর রহমান ভাই।
loading...
আমার লেখা মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ মুরুব্বী। আপনার প্রেরণা আমাকে আরো উৎসাহিত করবে। আমার জন্য দোয়া করবেন।
loading...
আপনার গল্পগুলো আমার সব সময় ভাল লাগে। এই গল্পে সংলাপগুলো বেশ পছন্দ হয়েছে। শুভেচ্ছা নিবেন প্রিয়।
loading...
আমার লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আশা করি এই গল্পের সবগুলো পর্ব পড়বেন।
loading...
loading...
ধন্যবাদ।
loading...