ট্রানজিট ভিসা নিয়ে ভ্রমণের এই এক সুবিধা; ঝামেলা যত তা ইমিগ্রেশন পুলিশেই সীমাবদ্ধ থাকে। কাস্টম পুলিশদের বিশেষ কোন মাথাব্যথা দেখা যায়না। কারণ তারা জানে সাথে যাই থাকুক তা নিয়ে বেশিদূর যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ট্রেন জার্নির ট্রানজিট অবশ্য আকাশ পথের চাইতে

ধীরে ধীরে অন্ধকার গ্রাস করে নিচ্ছে হ্যানোভারের আকাশ। শহরের বাতিগুলো জানান দিচ্ছে রাত নামছে পৃথিবীর এ প্রান্তে। গ্রীষ্মের রাত এদিকটায় এমনিতেই ছোট। নৈশ জীবনের সবটুকু নিংড়ে নিতে ভিড় জমছে শুঁড়িখানায়, ডিস্কো সহ বিনোদনের সবকটা ভেনুতে। ট্রেনের জানালায় বসে এসব দৃশ্যও

আসুন ছবিটার দিকে একটু ভাল করে তাকাই। বিশেষকরে পাহাড়ের বুকে চলমান পিক-আপ ট্রাক সহ ছবিটার দিকে। এ ছবি আমার নিজের নয়, নেট হতে নেয়া। এন্ডিসের অন্য কোন বাঁকে তোলা এ ছবিই কথা বলবে। Churin রিসোর্টে দু’দিন কাটিয়ে গিন্নীর সিদ্ধান্ত মোতাবেক

ভ্রমণ মানেই উপভোগ। অজানাকে জানার অচেনাকে চেনার হাতছানি। সীমিত সামর্থ্যের ভেতর যতটুকু সম্ভব ততটুকুই আমি ঘুরে বেড়াই। অন্যদের তুলনায় এই ঘুরে বেড়ানোর পরিসরটা আমার বেলায় একটু প্রসারিত সুযোগ ও সময়ের কারণে। উপভোগ করি বলেই ভ্রমণ করি। কিন্তু এই উপভোগ মাঝে

চলন্ত ট্রেনে বসে বাইরের দিকে তাকালে মনে হবে ট্রেন নয়, যেন বাইরের পৃথিবীটাই ছুটছে। বাড়িঘর, মাঠ ঘাট, গাছপালা সবকিছু ক্ষণিকের জন্যে উঁকি দিয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে দিগন্তরেখায়। পড়ন্ত বিকেলের দৃশ্যপট হঠাৎ করে দেখলে মনে হবে বিশাল ক্যানভাসে আঁকা শিল্পীর নিপুণ কোন

ঝামেলা পিছনে ফেলে Hook Van Holland গামী ট্রেনটায় চেপে বসতে মাথা হতে পাহাড় সমান কিছু একটা নেমে গেল যেন। নিঃশ্বাসে অক্সিজেনের মাত্রাও যে বেড়ে গেছে তা টের পেতে অসুবিধা হলনা। লন্ডন পর্যন্ত জার্নিতে আমার আর কোন বাধা নেই। উপলব্ধিটা স্বস্তির

পূর্ব ইউরোপ হতে আসা ট্রেনগুলোর মত এসব ট্রেনে ঘুমের ব্যবস্থা নেই। বসার জন্যে আরামদায়ক চেয়ারই একমাত্র সম্বল। প্রায় সাত/আট ঘণ্টার জার্নি। লম্বা সময় বসে থাকলে ক্লান্তি এসে ভর করে। সেলুলয়েডের ফিতার মত বাইরের দৃশ্য দেখতে গেলে তন্দ্রা এসে যায়। তখন

বেলা গড়াচ্ছিল তাই পশ্চিম বার্লিনে যা কিছু করার তা শেষকরার তাগাদা অনুভব করলাম। দুপুর ২টার দিকে প্রথম ট্রেন। ওটা ধরতে পারলে হোক ভ্যান হল্যান্ড হতে রাতের ফেরী ধরা যাবে। এবং ইংল্যান্ডের হারউইচ পোর্টে পৌঁছানো যাবে খুব সকালে। বন্ধু আসাদকে ফোন করলাম।

পশ্চিম বার্লিনে ওটাই ছিল আমার শেষ আসা। কোথায় যেন একটা লুকানো কষ্ট বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছিল কেবল জার্মানি নয়, বরং ইউরোপকে বিদায় জানানোর সময় হয়েছে। মস্কো অথবা সেন্ট পিটার্সবার্গ হতে ট্রেনে করে লন্ডন যাত্রার পথে পোল্যান্ড, পূর্ব ও পশ্চিম

বার্লিন দেয়াল। দেশ, মহাদেশ, এমনকি সংসার বিভক্তির দেয়াল দেখেছি। সময়ের প্রবাহে সবই মেনে নিয়েছি। অভ্যস্ত হয়ে গেছি এসব বিবর্তনে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাসের সাক্ষী এই বার্লিন দেয়ালের সামনে যতবার দাঁড়িয়েছি ততবার শিরদাঁড়া বেয়ে বয়ে গেছে অদ্ভুত একটা শীতল শিহরণ।

ইউরোপ তুলনামূলক ছোট মহাদেশ। দেশ অনেক, কিন্তু একদেশ হতে অন্যদেশ আকাশ পথে রওয়ানা দিলে ভ্রমণ খুব একটা দীর্ঘ হয়না। ট্রেন জার্নির অবস্থাও একই রকম। ঘাটে ঘাটে সীমান্ত অতিক্রম করার ঝামেলা না থাকলে এক কোনা হতে অন্য কোনায় যেতে খুব একটা

পোল্যান্ড হতে রওয়ানা দিয়ে ট্রেনে খুব একটা ঘুমাতে পেরেছি তা নয়। চার বিছানার কম্পার্টমেন্টে দুটোই ছিল খালি। একমাত্র সহযাত্রী ওয়ারশ হতে যোগ দিয়েছে। প্রয়োজনীয় কিছু কথা ছাড়া তেমন কোন বাক্যালাপ হয়নি। উঠার সাথে সাথে ব্যাগ হতে ভদকার বোতল নামিয়ে বসে

প্রকৃতির পরিবর্তন কত দ্রুত ঘটতে পারে পূর্ব ইউরোপের ঐ অংশে বাস না করলে হয়ত বুঝতে পারতাম না। শীতের রাজত্ব এ অঞ্চলে প্রশ্নাতীত। সেই যে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে তুষারপাত শুরু হয় তার শেষ কবে কেউ জানেনা। ডিসেম্বরের শুরুতে বরফ এসে জায়গা

গল্প আমাকে দিয়ে হয়না। তাই যদি হতো তাহলে পৃথিবীর যত গলিতে পা রেখেছি, যত মানুষের সাথে মিশেছি তাদের সবাইকে নিয়ে লিখতে গেলে জমজমাট গল্প লেখা যেতো। এসব গল্পের প্রেক্ষাপট ছিল। ছিল পার্শ্ব চরিত্র। স্মৃতির গলি হাতড়ালে খুঁজে পাওয়া যাবে নায়িকাদেরও।

ভিলনিউস। পূর্ব ইউরোপ হতে যাত্রা করে পশ্চিম ইউরোপে যাওয়ার পথে প্রথম বিরতি। সেন্ট পিটার্সবার্গ হতে প্রায় ৭২৫ কিলোমিটার পথ। দু’দিন দু’রাত্রির বিরামহীন ট্রেন জার্নির প্রথম পর্বে সাধারণত কোন বৈচিত্র্য থাকেনা। জানালার বাইরে তাকালে শুধু মাইলের পর মাইল সোভিয়েত জনপদ। কোথাও