দেশ হতে মহাদেশে ... সাগর হতে মহাসাগরে!

fft

সেন্ট পিটার্সবার্গ, রাশিয়া।
সামার ব্রেকের পর পুরো-দমে ক্লাস চলছে। প্রকৃতিতে শরতের আগমনী বার্তা। একদিকে পাতা ঝরছে, অন্যদিকে দিনগুলো ছোট হয়ে আসছে। তেমনি এক দিনে ডিন অফিস খবর দিল আরও ৫জন বাংলাদেশি আসছে আমাদের কলেজে। ইউক্রেইনের ঝাপারোজিয়া শহর হতে রেলে করে আসছে ওরা। ষ্টেশনে কলেজের বাস যাচ্ছে ওদের আনতে। আমাদের কেউ যাবে কিনা জানতে চাইলে আমি রাজি হয়ে গেলাম।

ষ্টেশনেই পরিচয় ওদের পাঁচজনের সাথে। এই পরিচয় একে একে গড়াবে অনেক বছর। পাড়ি দেবে অনেক পথ, অতিক্রম করবে অনেক দেশ মহাদেশ। এবং সম্পর্ক তুই তুকারিতে গড়িয়ে চিরদিনের জন্যে স্থায়ী হবে।

সে পাঁচজনেরই একজন। ৪ বছরের তিন বছর একই কলেজে একই ডর্মে থেকে এক সময় ছিটকে যাই। ৩ বছর [পর আবারও দেখা হয় সেন্ট পিটার্সবার্গে। আমি যে বছর মাস্টার্স শেষ করে দেশে ফিরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছি সে তখন কম্যুনিকেশনের উপর ডক্টরেট করছে।
এরপর দুজনের পথ দুদিকে গড়িয়ে যায়…

ভাগ্যচক্রে আবারও আমাদের দেখা হয়। এ যাত্রায় খোদ বাংলাদেশে। ও আমারই মত ইউরোপের লম্বা পর্ব শেষ করে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে এসেছে। নতুন পরিবেশ পরিস্থিতিতে বন্ধুত্বের শিকড় আরও লম্বা হয়।

প্রফেশনাল তাগিদে ও চলে যায় মধ্যপ্রাচ্যের আবু ধাবিতে। আমিও পাড়ি জমাই তাসমান পাড়ের দেশ অস্ট্রেলিয়ায়। যোগাযোগ অনেকটাই ফিকে হয়ে আসে।

আমাদের চলমান জীবন যেন কোথাও যেন স্থায়ী হতে চায়না…ভাগ্য আমাকে নিয়ে আসে প্রশান্ত মহাসাগরের ওপারের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এক সময় জানতে পারি সে সপরিবারে মাইগ্রেট করেছে কানাডায় এবং চাকরি নিয়ে চলে গেছে যুক্তরাষ্ট্রে।

গোলাকার পৃথিবীর কক্ষপথ ধরে আমরাও হাঁটছি। এবং সে পথ আমাকে একসময় টেনে আনে মেগা শহর নিউ ইয়র্কে। কোন এক সুন্দর সকালে ও হাজির হল আমার দরজায়। দরজা খুলতে বাঁধভাঙ্গা আবেগ এসে আমাদের নিয়ে গেল কৈশোরে। কত বছর পর দেখা! শুরু হল নতুন এক জীবন। ওখানে আগ হতে যোগাযোগের মধ্যমণি রহমান ছিল। তিন জনই কাজ করি। কর্মদিন সহ প্রায় প্রতিদিনই দেখা হত আমাদের। আড্ডা হত কুইন্সে আমার বাসায়। এভাবে কেটে যায় একে একে ৫টা বছর…

এবার আমার পালা। ওদের দুজনকে নিউ ইয়র্কে রেখে আমি চলে আসি আমেরিকার বুনো পশ্চিমে। মাঝে মধ্যে কথা হলেও দেখা হয়না।

অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্ট নবায়ন করতে যে যাত্রায় নিউ ইয়র্ক যেতে হয়েছিল। তখন মধ্যরাত। শান্ত হয়ে গেছে মেগা শহর নিউ ইয়র্ক। ফ্লাইট হতে বেরুতেই দেখি ওরা দুজন দাঁড়িয়ে আছে। আবারও দেখা, আবারও সেলিব্রেশন।

শেষপর্যন্ত সেও ছেড়ে যায় নিউ ইয়র্ক। এ যাত্রায় তার গন্তব্য ছিল সূর্যস্নাত ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের অর্লান্ডো। আগে হতেই বাড়ি কেনা ছিল, তাই গুছিয়ে নিতে অসুবিধা হয়নি।

রাত প্রায় ১১টার উপর। আমি জানি সে সকাল সকাল বিছানায় যায়। এ যাত্রায় কথা ছিল গাড়ি নিয়ে আমাদের জন্যে বাইরে অপেক্ষা করবে। নিউ ইয়র্কের মতই ফ্লাইট হতে বেরিয়ে কিছুটা পথ আগাতে দেখি সে দাঁড়িয়ে আছে। সেই আগের মত…যেমনটা ছিল সেন্ট পিটার্সবার্গে, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের সাউথ ডেভনে, নিউ ইয়র্কে।

তিনটা দিন হুট করেই পার হয়ে গেল। এ যাত্রায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে চষে বেড়ালাম ইউনিভার্সাল স্টুডিও, ডিজনি এনিমেল কিংডম, ড্রিম পার্ক সহ অনেক জায়গা। ডেইটনা বীচের আটলান্টিক মহাসাগরের পাড়ে আসতেই মনে হল আমাদের বিদায়ের এটাই পারফেক্ট ভেন্যু। এটাই যেন আমাদের শেষ দেখা না হয় তেমন প্রতিজ্ঞা করেই বিদায় জানিয়েছি একে অপরকে। আমি জানি বেঁচে থাকলে আবারও দেখা হবে…কে জানে হয়ত আফ্রিকার কোন গহীন জঙ্গল অথবা দক্ষিণ আমেরিকার আমাজনে।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
দেশ হতে মহাদেশে ... সাগর হতে মহাসাগরে!, 5.0 out of 5 based on 1 rating
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৩ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০৯-০৫-২০২৩ | ২২:৫৮ |

    আপনার বর্ণনা পাঠের সাথে সাথে পাঠক হিসেবে আমিও যেন বেড়িয়ে এলাম। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    GD Star Rating
    loading...
  2. নিতাই বাবু : ২৯-০৫-২০২৩ | ১৯:০৬ |

    বাহ্! দেশ হতে দেশান্তরে, পৌঁছেছেন সাগরপাড়ে।

    GD Star Rating
    loading...
  3. মুহাম্মদ দিলওয়ার হুসাইন : ৩০-০৫-২০২৩ | ১:১৪ |

    সুন্দর প্রকাশ!

    GD Star Rating
    loading...