জেরুজালেম হয় রামাল্লা ... ঘুরে এলাম পশ্চিমে তীরের প্যালেস্টাইন পর্ব ২

2726

পেশায় আমি একজন প্রকৌশলী। কিন্তু ইতিমধ্যে জেনে গেছি লোকাল ডিগ্রী অথবা অভিজ্ঞতা ছাড়া প্রফেশনাল লাইনে চাকরি পাওয়া খুব সহজ না। আমি মেনে নিয়েছিলাম এ বাস্তবতা।

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় প্রথম প্রজন্মের ইমিগ্রেন্টদের জন্যে এ সমস্যা নতুন কিছু না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের বিভিন্ন দেশ হতে যারা এ দেশে এসেছিল তাদের সবার ভাগ্য একই পথে গড়িয়েছিল। এ কাহিনী কেবল আমেরিকার কাহিনী নয়, অস্ট্রেলিয়ার মাইগ্রেন্টদেরও একই পথে হাটতে হয়েছে। তাই অবাক হইনি সময় গড়ানোর সাথে নিউ ইয়র্ক শহরে এমন অনেক বাংলাদেশির সাথে পরিচয় হয়েছে যারা দেশে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এমনকি সংসদ সদস্য হয়েও এ দেশে ইয়োলো ক্যাব চালানোর প্রফেশন বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন।

সৎপথে ভাগ্য গড়া নিয়ে কোনদিন আমার কোন দ্বিধা ছিলনা। হোক তা ইয়েলো ক্যাব ড্রাইভিং অথবা হ্যান্ডিম্যান সাপোর্ট। চাকরির প্রথম বছর শেষ হতেই মনে হল সময় হয়েছে বেরিয়ে পরার। ব্যাংকে যৎ সামান্য যা জমা হয়েছে তা পৃথিবীর যে কোন দেশ ঘুরে আসার জন্যে যথেষ্ট। পকেটে অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্ট থাকায় আমার জন্যে গোটা পৃথিবী ছিল উন্মুক্ত। বাকি ছিল কেবল গন্তব্য স্থল পছন্দ করা।

ইউরোপে ১২ বছর কাটিয়ে এসেছি, তাই ওদিকে যাওয়ার কোন কারণ খুঁজে পাইনি। এশিয়ার বহু দেশে ঘুরে বেরিয়েছি। অস্ট্রেলিয়া ছিল আমার নিজের দেশ। বাকি ছিল আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা। আফ্রিকা ঘুরতে যাওয়ার সময়টা ভাল ছিলনা। কি একটা ভাইরাস ঘুরে বেড়াচ্ছে মহাদেশের আকাশে বাতাসে। তাই দক্ষিণ আফ্রিকা অথবা কেনিয়া যাওয়ার ইচ্ছাটা উঠিয়ে রাখতে হল। বাকি ছিল দক্ষিণ আমেরিকা।

বলিভিয়া যাওয়ার ইচ্ছাটা হঠাৎ করে জন্ম নেয়নি। অস্ট্রেলিয়া থাকাকালীন স্থানীয় টিভি চ্যানেলে দেখেছিলাম পেরু হয়ে এন্ডিসের অলি গলি পেরিয়ে বলিভিয়া যাওয়ার ট্রেইলটা ছিল রোমাঞ্চকর, নিরাপদ ও তুলনামূলক সস্তা। ততদিনে ঘরে বসে অনলাইনে টিকেট কাটার রাস্তাও পৌঁছে গেছে বেডরুমে। কিছু অনুসন্ধান ও সামান্য কিছু কেনাকাটা সেরে আগস্টের সুন্দর এক চেপে বসলাম পেরুর রাজধানী লিমা গামী ফ্লাইটে। ওখান হতে বাসে করে এন্ডিসের বুক চিড়ে বলিভিয়ার রাজধানী লা পাস।

আমার এ লেখা পেরু অথবা বলিভিয়া ভ্রমণ নিয়ে নয়। এই দুটো দেশ ভ্রমণের কাহিনী নিয়েই আমার প্রথম বই ‘এন্ডিস পর্বতমালার বাঁকে বাঁকে’। পাঠকদের অনেকেরই হয়ত পড়া যাছে। বিশেষকরে যারা আমার সাথে বিভিন্ন ব্লগে সময় কাটিয়েছেন। এবারের লেখা পৃথিবীর অন্য কোনা নিয়ে। এমন কোনা যেখানে সাধারণত বাংলাদেশিদের যাওয়া হয়না। চাইলেও যেতে পারেনা। কারণ যাওয়ার বৈধতা নেই।

ইসরায়েল। বাংলাদেশ সরকার তার নাগরিকদের যে দুটো দেশে পাওয়ার অনুমতি দেয়না ইসরায়েল তার একটি (ইদানিং পরিবর্তন এসেছে এ সিদ্ধান্তে)।

ইসরায়েল যাওয়ার ইচ্ছাটারও একটা ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। তার জন্যে আমাকে ফিরে যেতে হবে আমার চাকরি জীবনে। প্যালেষ্টাইনিদের অবিসংবাদী নেতা ইয়াসির আরাফাত ১৯৮১ সালে প্রথম বাংলাদেশে এসেছিলেন। আমি তখন স্থানীয় একটা কনসাল্টিং ফার্মে কাজ করি। প্রতিদিন পুরানা পল্টনস্থ বাসা হতে ধানমন্ডির ২৭ নং রোডের অফিসে যাই। প্রতিদিনের মত সেদিনও যাচ্ছি। হঠাৎ করে বেইলি রোডের কাছে আসতেই দেখি রাস্তা আটকানো। বুঝতে পারলাম না কেন এ অবস্থা।

বেশকিছুটা সময় অপেক্ষা করার পর ব্যপারটা পরিষ্কার হল। কালো রংয়ের একটা গাড়িতে করে হেভি গার্ড নিয়ে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের প্রধান, চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত যাচ্ছেন। রিক্সায় বসে ভাল করে দেখা হয়নি চেয়ারম্যান আরাফাতের চেহারা। সুযোগটা নষ্ট হওয়ায় কষ্ট পেয়েছিলাম। মনের গভীরে কোথায় যেন একটা ইচ্ছা জন্ম নিয়েছিল; যদি কোনদিন সুযোগ আসে নিশ্চয় চেয়ারম্যানকে দেখতে প্যালেষ্টাইনে যাব।

চলবে।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
জেরুজালেম হয় রামাল্লা ... ঘুরে এলাম পশ্চিমে তীরের প্যালেস্টাইন পর্ব ২, 5.0 out of 5 based on 1 rating
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

১টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ১ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১৮-০৩-২০২২ | ৮:৩১ |

    লিখার পাতায় জীবন ভ্রমণে আপনার সাথে ঘুরে ফিরতে ভালোই লাগছে স্যার। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...