বেলা গড়াচ্ছিল তাই পশ্চিম বার্লিনে যা কিছু করার তা শেষকরার তাগাদা অনুভব করলাম। দুপুর ২টার দিকে প্রথম ট্রেন। ওটা ধরতে পারলে হোক ভ্যান হল্যান্ড হতে রাতের ফেরী ধরা যাবে। এবং ইংল্যান্ডের হারউইচ পোর্টে পৌঁছানো যাবে খুব সকালে।
বন্ধু আসাদকে ফোন করলাম। কথা ছিল নেমেই ফোন করে জানাব আমার অবস্থান। এবং দুজনের সময় মিলে গেলে দেখা করবো কোথাও। আসাদ চৌধুরী আমার সোভিয়েত জীবনের বন্ধু। একই ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করেছি। একবছর আগে কোর্স শেষ করে ও চলে এসেছে জার্মানিতে। পশ্চিম বার্লিনের স্থানীয় একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু একটা পড়ছে।
ফোনের অপর প্রান্তে ওর গলা শুনে মনেহল আমি ওর ঘুম ভাঙ্গিয়েছি। আমি জানি ও রাতে কাজ করে। এবং বাসায় ফিরে অনেক রাত করে। ক্ষমা চাইলাম অসময়ে ঘুম ভাঙ্গানোর জন্যে। এ যাত্রায় দেখা না হলেও ফেরার পথে একরাত তার অতিথি হওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে ফোন রেখে দিলাম।
দুপুরের খাবার স্থানীয় এক ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রওয়ানা দিলাম ওদিকে। সকাল ১১টায় খুলে দুপুর ৩টায় বন্ধ করে শহরের একমাত্র ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্ট হলেও কোন জৌলুষ নেই ওখানে। নেই প্রয়োজনীয় গ্রাহক সার্ভিস। নড়বড়ে ২/৩টা টেবিল সাথে বাঁশের তৈরি টুল। হাতে সময় থাকলে প্রতিবার এখানেই দুপুরের খাবার সেরে নেই।
প্রতিবারের মত এবারও গ্রাহকদের কমতি দেখলাম না। জায়গা না পেয়ে অনেকে দাঁড়িয়েও খাচ্ছে। টেবিলের অপেক্ষায় থাকলে ট্রেন মিস করার সম্ভাবনা আছে, তাই লাইন ধরে অন্যদের সাথে দাঁড়িয়ে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। তবে ভারতীয় মালিক তা করতে দিলেন না। খাবার হাতে নিতে রান্নাঘরের দিকে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালেন। ওখানে বসার জায়গা ছিল। রেস্টুরেন্টের স্টাফদের সাথে অনেকদিনের পরিচয়। এখানটায় আসলে বেশ-ভাল খাতির করে সবাই। খুটিয়ে খুটিয়ে জানতে চায় এ শহরে আগমনের হেতু। এ যাত্রায়ও ব্যতিক্রম হলনা।
রেল স্টেশন ততক্ষণে গিজগিজ করছে যাত্রীদের ভিড়ে। লোকাল ট্রেনগুলো হতে দলে দলে যাত্রীরা নামছে এবং আন্তঃ ইউরোপীয় ট্রেনের সন্ধানে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এক প্ল্যাটফর্ম হতে অন্য প্লাটফর্মে।
আমার ট্রেনের সময়সূচী ভাল করে যাচাই বাছাই করে প্লাটফর্ম চেঞ্জ করলাম। পশ্চিম জার্মান শহর হ্যানোভার ও নেদারল্যান্ডের রটোরড্রাম হয়ে হোক ভ্যান হল্যান্ড পোর্ট পর্যন্ত পৌঁছতে রাত হয়ে যাবে।
পূর্ব ইউরোপ হতে আসলে পশ্চিম ইউরোপের এ ট্রেন-জার্নি উপভোগ না করে উপায় নেই। মাইলের পর মাইল গ্রাম গঞ্জ শহর বন্দরের বুক চিড়ে ছুটে চলে দ্রুত গতির এ ট্রেন। হরেক রকম মানুষ, বিচিত্র সব ভাষা, সাথে বিভিন্ন দেশের সীমান্ত অতিক্রমের বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা, সব মিলিয়ে বিশাল ক্যানভাসের এ জার্নি সহজে ভুলার নয়।
টিকেটের সাথে বগির নাম্বার মিলিয়ে উঠে পরলাম ট্রেনটায়।
চলবে
loading...
loading...
পড়ে চলেছি স্যার। চলুক।
loading...
শুভ কামনায়
loading...