Breaking Bad শহরের জীবন

Breaking Bad শহরের জীবন

পৃথিবীর অনেক দেশের অনেক শহর নিয়ে লিখেছি। পাঠকদের সাথে শেয়ার করেছি নগর জীবনের অভিজ্ঞতা। সে তালিকায় যেমন আছে তারুণ্যের দীর্ঘ ১২ বছর কাটানো রুশ দেশের সেন্ট পিটার্সবার্গ, তেমনি আছে পাঁচ বছরের সিডনীর জীবন যুদ্ধ। নিউ ইয়র্কের ছয় বছরই ছিল ভার্চুয়াল দুনিয়ায় স্থায়ী হওয়ার লগ্ন। এ লগ্নেই পাঠকদের পরিচিত করেছি অধুনা বিশ্বের অর্থনৈতিক রাজধানী হিসাবে পরিচিত এ শহরের সাথে। কথার ফাঁকে ফাঁকে নিয়ে গেছি এন্ডিসের দেশ পেরু, বলিভিয়া, কলোম্বিয়া ও ইকুয়েডোরে। কিন্তু গেল ১২ বছর ধরে যে শহরটায় আছি তার দিকে ভাল করে চোখে ফেরানো হয়নি।

আলবুকেরকে, নিউ মেক্সিকো, ইউএসএ। ২০০৭ সালে প্রথম যখন এ শহরটায় পা রাখি মনে হয়েছিল রাজধানী ঢাকা হতে কর্ম উপলক্ষে নওগাঁয় চলে যাওয়ার মত। নব্বইয়ের দশকের প্রথমদিকে নওগাঁর প্রথম রাতটা ছিল ঝড় তুফানের রাত। শহরের যে হোটেলটায় ঠাঁই নিয়েছিলাম সারা রাত মনে হয়েছিল তা কাঁপছে এবং যে কোন মুহূর্তে উড়াল দেবে। অবশ্য তেমন কিছু হয়নি। এক সময় পোটলা পুটলি গুটিয়ে চলে যেতে বাধ্য হই আরও গভীরে। শেষ গন্তব্য পত্নীতলা, ধামুইরহাট এবং বদলগাছি। জন্মভূমিকে কাছ দেখার ও আবিষ্কার করার এ ছিল সোনালী ২টা বছর।

হিসাবে ভুল হওয়ায় হঠাৎ করেই নিউ ইয়র্ক শহরে নিজকে আবিষ্কার করি বেকার হিসাবে। যদিও তা ছিল জাস্ট ফর ব্রীফ পেরিয়ড অব টাইম। কিন্তু সেই যে মন উঠে গিয়েছিল তা আর ঠিকমত জোড়া লাগেনি। প্রফেশন বদলে পা রাড়ালাম টেলিকমের দিকে। শুরুটা টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের সান আন্তোনিও হলেও ফুল স্কেলে তা প্রস্ফুটিত হয়ে মিউ মেক্সিকোতে।

আলবুকেরকে। শহরের প্রতিষ্ঠাতা ফ্রান্সিসকো ফার্নান্দেজ দ্যা কুয়েভা দ্যা ডিউক অব আলবুকেরকের নামে নাম রাখা হয় শহরের। স্প্যানিশদের দখল হতেই উত্থান এ শহরের। মার্কিন-মেক্সিকো যুদ্ধের শেষদিকে এ অঞ্চলটা কেড়ে নিয়ে মার্কিনীরা তাদের ইউনিয়নে যুক্ত করে এবং নাম দেয় নোয়াভো মেহিকো। অর্থাৎ নিউ মেক্সিকো। হিস্পানিকদের সংখ্যা এ রাজ্যে আমেরিকার যে কোন রাজ্যের চাইতে বেশী। স্প্যানিশ ভাষার ব্যবহার এখানে সার্বজনীন। অন্যদিকে আলাস্কার পর সংখ্যায় আদিবাসী আমেরিকানদের বাস। মরু এই এলাকা আমেরিকার হিংস্র পশ্চিমের অংশ। জীবন এখানে খুব একটা সহজ নয়। বেচে থাকার জন্যে রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়। একদিক রুক্ষ প্রকৃতি, অন্যদিকে সামাজিক সমস্যা। তার অন্যতম হচ্ছে প্রতিবেশী মেক্সিকো হতে পালিয়ে আসা অবৈধ অভিবাসীরা। এবং স্বভাবতই ড্রাগ।

যতটা না প্রকৃতি অথবা রাজনীতি, শহর আলবুকেরকে বেশী পরিচিত করেছে ওয়ালটার হোয়াইট’এর নাম ভূমিকা সহ সফল মার্কিন টিভি সিরিজ ব্রেকিং ব্যাড। ২০০৮ হতে ১৩ পর্যন্ত এই টিভি সিরিজ অনেক ঘরে মার্কিনীদের দম আটকে রাখতো এর ঘটনা প্রবাহ দিয়ে। আমার অফিসটা তখন ডাউন-টাউনে। পাঁচতলার জানালা হতে লক্ষ্য করলে প্রায়ই দেখতাম নীচের রাস্তায় শুটিং হচ্ছে। অফিসের ঠিক উলটো দিকে অবস্থিত পুলিশ ষ্টেশনটাকে নিয়মিত ব্যবহার করা হতো সিরিজের পুলিশ অফিস হিসাবে। পাশের ক্যাফেটেরিয়া, রেস্টুরেন্ট, বিভিন্ন জাঙ্ক ফুডের দোকান, কোন কিছুই বাদ যায়নি তালিকা হতে। গোটা আমেরিকার মত এই পাঁচ বছর আমার শহরও মেতে থাকতো ব্রেকিং ব্যাড’এর এপিসোড নিয়ে। এ টিভি সিরিজ আলবুকেরকে এনে দিয়েছে আন্তর্জাতিক পরিচিতি। এমনকি বাংলাদেশেও আলবুকেরকে অনেকের কাছে এখন পরিচিত একটি নাম।

মরিচের বিশ্ব-রাজধানী হিসাবে ধরা হয় নিউ মেক্সিকোকে। এখানে শিশু বয়স হতে মানুষ ঝাল খাওয়া অভ্যাস করে। মরিচ হচ্ছে অঙ্গরাজ্যের সিম্বল। অবৈধ মেক্সিকান অভিবাসীদের জন্যে এ অঙ্গরাজ্য অভয়ারণ্য। আইন-আদালতের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এ অঙ্গরাজ্যে লুকিয়ে থাকা তাদের জন্যে কোন সমস্যা নয়। অনেকক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারও তাতে উৎসাহ দেয়।

আমার গন্তব্য-হীন চলমান জীবনের অনিশ্চয়তা এখন অনেকটাই কেটে গেছে। ব্যাপক কোন পরিবর্তন না হলে এ শহরেই বোধহয় কাটাতে হবে জীবনের বাকিটা সময়। মেগা শহরের জীবন নিয়ে আর কোন আগ্রহ নেই। এখন জানালা খুললে চোখে পরে বিশাল আকাশ। তার নীল নীল রঙ। মরু এলাকার উত্তপ্ত বাতাস এসে দোল খায় ঘরের আঙ্গিনায়। এসব ভাল না লেগেই যায়না। দূরের সান্দিয়া পাহাড় আর আদিবাসীদের জীবনের সাথে কখন একাত্ম হয়ে গেছি টেরই পাইনি।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৯ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ৯ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২৬-০৮-২০১৯ | ১৯:৫৮ |

    তন্ময় হয়ে পড়লাম মি. ওয়াচডগ। শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। Smile

    GD Star Rating
    loading...
  2. সাজিয়া আফরিন : ২৬-০৮-২০১৯ | ২১:০০ |

    খুব সুন্দর বর্ণনা। পড়লাম ভাই। Smile

    GD Star Rating
    loading...
  3. সুমন আহমেদ : ২৬-০৮-২০১৯ | ২১:১৫ |

    ছবি আর জীবনের গল্প পড়লাম। আরও নিয়মিত আপনাকে চাই। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
  4. রিয়া রিয়া : ২৬-০৮-২০১৯ | ২১:২৫ |

    Breaking Bad শহরের জীবন। ভীষণ ইন্টারেস্টিং। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...
  5. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ২৬-০৮-২০১৯ | ২১:৪৭ |

    একটি ভ্রমণ কাহিনীতে যত যা কিছু থাকা উচিত সবই পাই আপনার লিখায়। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    GD Star Rating
    loading...
  6. শাকিলা তুবা : ২৬-০৮-২০১৯ | ২৩:১২ |

    পড়লাম ভাই। 

    GD Star Rating
    loading...
  7. নিতাই বাবু : ২৭-০৮-২০১৯ | ১৩:৫২ |

    পড়লাম। অনেক ভালো লাগলো।  আলবুকের শহর বলতে আগে তেমন 

    জানা ছিল না, শোনাও ছিল না। জানলাম আর শুনলাম আপনার লেখা পড়ে।     

    GD Star Rating
    loading...
  8. ছন্দ হিন্দোল : ২৭-০৮-২০১৯ | ১৪:২০ |

    পড়লাম জানলাম,https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    দেওয়াল এর খবর 

    GD Star Rating
    loading...
  9. শান্ত চৌধুরী : ২৭-০৮-২০১৯ | ১৫:৫৫ |

     

    শুভ কামনা সতত https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...