টাইম-মেশিনে চড়ে চলুন ত্রিশ বছর পরের বাংলাদেশ হতে একটু ঘুরে আসি। বৃহত্তর ময়মনসিংহ’এর ছোট গ্রাম আশাগঞ্জই হোক আমাদের গন্তব্য। গ্রামটার মোট কতজন মানুষ বাস করে তার হিসাব কষার মত রকেট সাইন্স এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। যদিও বলা হচ্ছে দেশটার মোট জনসংখ্যা এখন ২০ কোটির উপর। আশাগঞ্জে এক টুকরো খালি জমি বলতে এখন আর কিছু নেই। মানুষ ঘর বাঁধছে জলে, স্থলে এবং অন্তরীক্ষে। জ্বালানি সংকটের কাছে পরাজিত হয়ে গ্রামে তাবৎ গাছপালা অকালে বিদায় নিয়েছে। মাটির তলার গ্যাসও এখন ইতিহাস। অথবা ঠাঁই নিয়েছে শিশুদের ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসির গল্পে। ঘুম ভেঙ্গে কোন এক ভোরে গ্রামের মানুষ দেখলো মাথা হতে চুল খসে খসে পরছে। চোখ জ্বালা-পোড়া করছে। কাশির সাথে রক্ত বের হচ্ছে। গ্রামের অবুঝ শিশুরা জোরে চীৎকার করার আগেই লুটিয়ে পরছে মাটিতে। বৃদ্ধরা শ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছে। ওরা একে একে ঢলে পরছে মৃত্যুর কোলে। আপনার বিশ্বাসী মনের প্রথম জিজ্ঞাসা হবে, কেয়ামত কি তাহলে এসেই গেল!
হ্যাঁ এক অর্থে অবশ্যই কেয়ামত। তবে এ কেয়ামত ধর্মে বর্ণীত সে কেয়ামত নয়। এ কেয়ামত মনুষ্য সৃষ্টি কেয়ামত। এর উৎস উন্নতির হাইওয়েতে জন্ম নেয়া লাভ-চাইল্ড রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। আশাগঞ্জের বাসিন্দা আপনি আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা কি ঘটছে। কেন ও কোথায় ঘটছে।
এবার আসুন বাইরের পৃথিবীর দিকে চোখ ফেরাই।
বিশ্ব মিডিয়া ফলাও করে ছাপছে বাংলাদেশের বিপর্যয়। দুর্ঘটনা ঘটেছে এর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। রিয়েক্টর হতে বিকিরণ হচ্ছে এবং দ্রুত ছড়িয়ে পরছে গ্রাম, গঞ্জ, শহর বন্দরে। মানুষ মরছে হাজারে হাজার। চেহারা বিকৃত হয়ে যাচ্ছে নাগরিকদের। হাত-পা বেঁকে যাচ্ছে। চোখ কান গলে খসে খসে পরছে। কিন্তু আশাগঞ্জের মানুষ সহ দেশের জনগণ ধারণাই করতে পারছে না সমস্যর উৎসটা কোথায়। কারণ স্থানীয় প্রচার মাধ্যম এ সব প্রচার আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বন্দুকের নলের মুখ বাস করা দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ জান বাঁচাতে ৭’১’এর মত চৌকির তলায় আশ্রয় নিচ্ছে। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছেনা। পারমাণবিক বিকিরণের হাত পা, শরীর বলতে কিছু নেই। সরকারের পেটোয়া বাহিনী দিয়ে একে থামানোর কোন উপায় নেই। এই ত্রিশ বছরেও এ ধরণের দুর্ঘটনা হতে মানুষকে বাঁচানোর কোন উপায় আবিষ্কৃত হয়নি।
চলুন রূপপুরে ফিরে গিয়ে দেখার চেষ্টা করি কি ঘটছে ঐ রাক্ষসপুরীতে।
বিদ্যুৎ তৈরীর বহুমুখী পথ আছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে। পানি, কয়লা সহ অনেক ধরণের জ্বালানী ব্যবহার করা হয় এই কাজে। ইউরেনিয়াম নামের খনিজ পদার্থ তার অন্যতম। ইউরেনিয়ামের এটমকে বিভক্ত করলে তা হলে এনার্জি রিলিজ হয়। এবং এই বিভক্তি হয় চেইন রি-একশনে। অনেকটা ডমিনো এফেক্টের মত। সোজা বাংলায় বুঝাতে চাইলে বুঝতে হবে, শত শত ইটা একটার পেছনে আরেকটাকে দাঁড় করিয়ে প্রথম ইটায় ধাক্কা দিলে যা হবে ওটাকেই বলতে হবে চেইন রিয়েকশন। ইউরেনিয়ামের এটম একই কায়দায় ভাঙ্গা হয়। প্রচণ্ড তাপমাত্রার এটমের শক্তিকে রূপান্তরিত করা হয় বাষ্পীয় শক্তিতে। ঐ বাষ্প দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জেনারেটরের টারবাইন ঘুরানো হয়। এবং ওখান হতেই বেরিয়ে আসে পরিষ্কার ও এফিসিয়েন্ট বিদ্যুৎ।
কেন ঘটল এই দুর্ঘটনা?
এর আসল কারণ উদঘাটন করতে আমাদের আবারও ফিরে যেতে হবে ত্রিশ বছর আগের বাংলাদেশে। উঠে পরুন টাইম মেশিনে…
মনে আছে দুইশত টাকার বালিশ দালানের আ্ট তলায় উঠাতে ৬০ হাজার টাকা খরচের কেচ্ছা? দলীয় কৃতদাস না হলে এসব ভুলার কথা না। রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র নির্মাণকালীন সময়েই ঘটেছিল এ কাহিনী। অথবা মোহম্মদ নাসিম নামের একজন ভূতপূর্ব মন্ত্রীর লুঙ্গি ধরে টানলেই বেরিয়ে আসবে রূপপুর বিপর্যয়ের সার্বিক চিত্র। বাংলাদেশের যে কোন মেঘা প্রকল্পই হচ্ছে সরকারী কোষাগারের চাবি হাতিয়ে নেয়ার একটা উপলক্ষ। তা রূপপুর হোক অথবা মহাশূন্যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হোক। চৌদ্দ পুরুষের আর্থিক সচ্ছলতা নিশ্চিত করতে এই রূপপুর প্রকল্পেও ছয়কে নয় বানিয়ে বিশাল অংকের ভাগ্য হাতিয়ে নিয়েছে সরকারের চেলা-চামুণ্ডরা। ঠাণ্ডা করার পানিতে ভেজাল মিশিয়ে বছরের পর বছর চালিয়ে গেছে মিথ্যার বেসাতি। জাফর ইকবালের মত চৌকির তলায় লুকানো মুক্তিযোদ্ধারা বলবেন, আরে এতো স্বদেশীদের নিয়ন্ত্রণে থাকবেনা, থাকবে নির্মাতা রশদের হাতে। কথা একেবারে মিথ্যা না। অবশ্যই রুশরা দেখভাল করবে রিয়েকটরের সবকিছু।
কথা হচ্ছে কারা এই রাশান? তারা কি ঈশ্বর প্রদত্ত দৈব কোন শক্তি, যাদের হাতে নিরাপদ থাকবে আশাগঞ্জের মানুষের জীবন? এ হচ্ছে অন্য এক অধ্যায়। মানব সভ্যতার অলিখিত কলঙ্কিত অধ্যায়। রুশরা হচ্ছে বাংলাদেশি লুটেরা দলেরই উন্নত সংস্করণ। চেরনোবিল দুর্ঘটনার কথা যারা ভুলে গেছেন তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই আর্কটিক সাগরে গত রোববারের দুর্ঘটনার কথা। ক্রুস মিসাইলে পারমানবিক ফুয়েল চালিত মটর বসানোর গবেষণায় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। তাতে প্রাণ হা্রিয়েছে পাঁচজন বিশিষ্ট বৈজ্ঞানিক। চেরনোবিলের মত এখানেও রুশরা ধরে রেখেছে তাদের মিথ্যা ও প্রতারণার রেকর্ড। তারা বলছে কিছুই ঘটেনি, সামান্য ঘটনায় পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছে! সেটা আর এমন কি!!
এবার চলুন ফিরে যাই বাস্তবে…
রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র নিয়ে যাদের উচ্ছ্বাসের শেষ নাই, তাদের একবারের জন্যে হলেও অনুরোধ করবো আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখে নিতে। দুর্নীতি আর ভেজালের লীলাভূমিতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কি ঘটতে যাচ্ছে তার কিছুটা হলেও নমুনা পাওয়া গেছে ২০০ টাকার বালিশ ৬০ হাজার টাকায় আট তলায় উঠানোর ঘটনা হতে। বাকিটা আন্দাজ করে নিতে হবে। মহাশূন্যে নিক্ষিপ্ত স্যাটেলাইট হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পরলে তাৎক্ষণিক কেউ মারা যাবেনা। কিন্তু রূপপুর কেন্দ্রের রিয়েক্টর বিগড়ে গেলে তা দাবানলের মত গ্রাস করে নেবে ৫৫ হাজার বর্গমাইলের ছোট এই দেশ। একশ বছর ধরে চলবে এর রেশ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম জন্ম নেবে পঙ্গু ও বিকলাঙ্গ হয়ে।
আশাগঞ্জের মানুষ আশায় ঠিকই বুক বাধবে। সে আশা স্বাভাবিক জন্ম-মৃত্যুর, সে আশা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, বাসস্থানের আশা। এবং আশায় নিশ্চয় বড় ফ্যাক্টর হবে বিদ্যুৎ। পৃথিবীর অনেক দেশ গুটিয়ে আনছে তাদের পারমাণবিক প্রকল্প। কিন্তু রাজনৈতিক ঘাত-সংঘাতে বিভক্ত বাংলাদেশে কেবল উন্নয়নের লাভ-চাইল্ড জন্ম দেয়ার মানসে বর্তমান সরকার যা করছে তা সর্বগ্রাসী হয়ে ফিরে আসতে পারে। যারা এসব করছে তারা দুর্যোগ মুহূর্তে নিশ্চয় পাড়ি জমাবে নিজ নিজ নিরাপদ আশ্রয়ে। সেটা হবে উন্নত বিশ্বের কোন দেশ, কানাডার বেগম পাড়ার বাড়ি অথবা মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম। ভেবে দেখুন ব্যপার গুলো…
loading...
loading...
এক অর্থে অবশ্যই কেয়ামত। তবে এ কেয়ামত ধর্মে বর্ণীত সে কেয়ামত নয়। এ কেয়ামত মনুষ্য সৃষ্টি কেয়ামত। এর উৎস উন্নতির হাইওয়েতে জন্ম নেয়া লাভ-চাইল্ড রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
loading...
এমন দুর্ঘটনার ভয়াবহতা যে কতটা অমানবিক হবে সেটার উত্তর কেউ দেবে না।
loading...
কাল্পনিক সত্য। দূর্ঘটনা ঘটলে পরিস্থিত বুঝতে অতি প্রোটিনের প্রয়োজন হয় না।
loading...
বহুল আলোচিত বিষয়। কুম্ভকর্ণের চেতনার দণ্ড কবে দাঁড়াবে ?
loading...
loading...
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র একটি আতংকের নাম।
loading...
দু:খ আর করিনা। জানি আল্লাহর ইচ্ছাতেই এই অরাজকতা নেমে এসেছে, দ্রুত আলোর দেখাও পাবো আমরা।

loading...