ব্রেকফাস্ট ইন জেরুজালেম।
কেবল জেরুজালেম কেন, গোটা ইসরায়েলই জীবনযাত্রা খুব কস্টলি। এখানে আসার আগে অনলাইনে হোটেল খুঁজতে গিয়ে তার ধারণা পেয়েছি। একটু ভাল হোটেলে থাকতে গেলে দৈনিক ১৫০ হতে ২০০ ডলার পে করতে হয়। অবশ্য অনেক হোস্টেল আছে নাম মাত্র মূল্যে। কিন্তু আমার মত প্রথমবার ঘুরতে আসা পর্যটকদের জন্যে ওগুলো নিরাপদ নয়। তবে এখন পর্যন্ত এমন কাউকে দেখিনি বা মোকাবেলা করিনি যার দরুন এ দেশে চলাফেরায় নিরাপত্তা নিয়ে অভিযোগ করা যাবে। বিশেষকরে পশ্চিম তীরের আরব প্যালেষ্টাইনিরা খুবই ফ্রেন্ডলি। পথ খুঁজতে তাদের সাহায্য চাইলে কেবল দু’হাত না, বরং বুক বাড়িয়ে এগিয়ে আসে।
ব্রেকফাস্টের জন্য গতকাল দামাস্ক গেইট পেরিয়ে জেরুজালেমের ওপাশে গিয়েছিলাম। রাতে কিছু খাইনি। পেটের তাগাদাটা ছিল অনেকটা অ্যাম্বুলেন্সের জরুরি সিগন্যালের মত। চত্বরের গোড়াতেই মিলল হোটেলটা। দেখতে অনেকটা মগবাজার মোড়ের ব্যস্ত হোটেলের মত। ঘড়িতে ঠিক কটা বাজে তা নির্ধারণ করার উপায় ছিলনা। আমার স্মার্ট ফোনে তখনও নিউ মেক্সিকোর টাইম। মেনু আরবী ও হিব্রু ভাষায়। বুঝার উপায় নেই। তেল আবিবের মত এখানেও মেনুর ছবির সাহায্য নিলাম। ডিমের অমলেটের সাথে লবনাক্ত শসা ও জলপাই। সাথে তাদের ট্রাডিশনাল রুটি। এ পর্যন্ত এ রুটি খাওয়ার প্রক্রিয়া আবিস্কার করতে পারিনি। তবে তা করার ইচ্ছাটা তব সময়ই ছিল। পাশের টেবিলে একটা আরব পরিবার প্রায় একই রকম খাবার নিয়ে খেতে শুরু করল। চোখটা ওদিকেই খোলা রাখলাম। রহস্যটা আবিস্কার করতে সময় লাগল না। রুটির ভেতরটা খোলা। এবং শসা ও জলপাইয়ের ওখানে ঢুকিয়ে অনেকটা স্যান্ডউইচ বানিয়ে খেতে হয়। এবং রুটির কোন লিমিট নেই। যত খাওয়া যায়!
সকালের কফিটা খাওয়া হয়নি। তাই ওয়েটারকে প্রথমে কফিটা দিতে অনুরোধ করলাম। কিন্তু তা সে করতে গেলনা। অনেকটা শুনেও না শোনার ভান করে পাশ কাটিয়ে গেল। সময় মত নাস্তা এলো। ডিমের ওমলেট। খেতে বেশ সুস্বাদু। খাবার অপচয়ের অভ্যাসটা আরবদের বোধহয় জন্মগত। একজনের পক্ষে সকালের নাস্তা এতটা খাওয়া কি করে সম্ভব তার অংক মেলাতে পারলাম না। খাবার শেষের দিকে কফি দিয়ে গেল। প্রথম চুমুকে মুখ বিকৃত করে টেবিলের নীচে লুকানোর চেষ্টা করলাম। মানুষের পক্ষে এ ধরণের কফি খাওয়া সম্ভব বুঝতে পারলাম না। মনে হল এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ সহ হরেক রকম হার্ব রীতিমত রান্না করে এনেছে। সাথে চিনির নামগন্ধ নেই। হতাশাটা লুকানোর চেষ্টা করলাম না। ওয়াটারকে চিনি দিতে অনুরোধ করলাম। চিনিতে কাজ না হওয়ায় বিরক্ত মনে বেরিয়ে এলাম। বলাই বাহুল্য নাস্তাটা খুব একটা সস্তা ছিলনা।
রাস্তায় বেরুতেই দেখলাম ইতিমধ্যে বদলে গেছে জেরুজালেমের চেহারা। মানুষ কিলবিল করছে। পাশের বাস ষ্টেশনটা লোকে লোকারণ্য। পর্যটকরাও বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। দামাস্ক গেইট পেরিয়ে পূর্ব জেরুজালেমের আরব সেক্টরে প্রবেশ করতেই জীবনের স্পন্দন পেতে সময় লাগলো না। দোকানীদের দল পসরা সাজাচ্ছে। এক ইঞ্জিনের ছোট ছোট ট্রাকগুলো মালামাল নিয়ে সরু গলিতে ঢুকে পরছে। ওরা সবাই কথা বলছে। এবং উচ্চস্বরে। উঁচু গলায় কথা বলা আরবদের বোধহয় জন্মগত অভ্যাস। বিরক্তবোধ না করলে খারাপ লাগে না। অন্তত জীবন বলতে যে একটা চলমান গাড়ি আছে তা টের পাওয়া যায়।
হোটেলে ঢুকতেই রিসেপশন ডেস্কের মহিলা জিজ্ঞেস করল নাস্তা খেয়েছি কিনা। হ্যাঁ বলতে একটু অবাক হল। বলল, আমি তো তোমাকে ব্রেকফাস্ট রুমে যেতে দেখিনি! ব্রেকফাস্ট রুম! আকাশ হতে পড়লাম। আঙ্গুল উচিয়ে ইঙ্গিত করল গ্রাউণ্ড ফ্লোরের দিকে। ওখানে একটা এরো সাইন সহ লেখাটা জ্বলজ্বল করছে; BREAKFAST ROOM। এবং তা ফ্রী।
.
২৫শে জুলাই। পূর্ব জেরুজালেম। ইসরায়েল।
loading...
loading...
পোস্ট পড়ে অভিভূত হলাম ভাই। খুঁটিনাটি সব দিকেই দেখছি আপনার নজর ছিলো। খালি হোটেলের ব্রেকফাস্ট রুম ছাড়া।
loading...
Watchdog
loading...
loading...
thanks for being with me
loading...
এই রে !! যাকগে বাইরের অভিজ্ঞতা তো হলো।
loading...
পূর্ব জেরুজালেমের মুসলিম কোয়ার্টার হতে পশ্চিমের ইহুদি কোয়ার্টারে আজ নতুন একটা হোটেলে উঠতে হল। আগেরটা মিস করছি।
loading...
মনে হয় আপনার পোস্টের অপেক্ষায় ছিলাম। পেয়ে গেলাম। গুড পোস্ট।
loading...
সাথে থাকার জন্যে অনেক ধন্যবাদ
loading...
আহা ব্রেকফাস্ট !!
loading...
গেল দুই সকাল আর ফ্রী ব্রেকফাস্ট মিস করিনি
loading...
জেনে আনন্দিত হলাম স্যার।
loading...
loading...
পড়লাম ভাই।
loading...
প্রিয় পূর্বের পোস্টে ৩ টি মন্তব্যের জবাব পাইনি।
loading...
আর মাফ করবেন ভাই লেখক,পোস্টের শিরোনামটি এমন হলে কি হতো? ব্রেকফাস্ট ইন জেরুজালেম, ফিলিস্তীন। আমি মনে করি শিরোনামে ভুল।
Jerusalem belong to pelestine.
loading...
আমাদের চাওয়া ও বাস্তবতা দুটো দুই জিনিষ। আপনার মত আমিও চাই প্যালেষ্টাইন স্বাধীন হয়ে জেরুজালেমকে তার রাজধানী হিসাবে বেছে নিক। সেদিন জেরুজালেমে ফিরে আসলে নিশ্চয় এমন টাইটেলে লিখবনা। আপাতত যে দেশের নাগরিক হয়ে যে দেশে বেড়াতে এসেছি তাতে এমন টাইটেল সাংঘষিক নয়। অন্তত আমার বিচারে।
loading...
দারুণ একটা পোস্ট। চমৎকার বর্ণনা।
loading...
দুঃখিত কবি,আপনার বিচার মেনে নিতে পারলাম না। জেরুজালেম কখনোই ইসরাঈলের ছিলো না,ভবিষ্যৎে হবেও না। জোরপূর্বক দখল করে কেউ বেশীদিন টিকেনি আর টিকবেও না। যুদ্ধে যাওয়ার আগেই যদি খাতা কলমে পরাজয়ের কথা তুলে ধরে তাহলে যুদ্ধে জয়ী হবার আশা করা বোকামী। Jerusalem belong to pelestine
loading...
শেষ ছবিতে হলুদ হলুদ জিনিসগুলোকে কি বলা হয়?
loading...