সাফায়াত উল্লাহ সেফুর গল্প!

সাফায়াত উল্লাহ সেফুর গল্প!

অস্ট্রিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি সাফায়াত উল্লাহ সফি, যার অনলাইন পরিচিতি সেফুদা হিসাবে। তাকে নিয়ে ঘৃণার উন্মাদনা এখন অতীতের সব উন্মাদনাকে ম্লান করে দিয়েছে। টগবগ করছে অনেকের রক্ত। দফায় দফায় ফাঁসির দাবি আসছে। ওমানের জনৈক বাংলাদেশি সাফায়াত উল্লাকে যিনি দায়ের কোপে মৃত্যুর কাছাকাছি পাঠাতে পারবে, তাকে তার একবছরের বেতন সেক্রিফাইস করার কথা ঘোষণা দিয়েছেন। অনেক হিজাবী মহিলারা ঘোমটার আড়াল হতে দুটো চোখা বের করে হাতে দা নিয়ে হুমকি দিচ্ছেন। কোন কায়দায় তাকে টুকরা টুকরা করবেন তারও বিশদ বর্ণনা থাকছে হুমকিতে।

সাফায়ত উল্লার অপরাধ তিনি মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থের অবমাননা করেছেন। শতকোটি মানুষের বিশ্বাসে আঘাত হেনেছেন। তাই তার বিচার ও শাস্তির আদালত এখন বাংলাদেশের ঘরে ঘরে। যার ঢেউ আছড়ে পরছে পৃথিবীর দেশে দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের ঘরে।

এই সেফুদাকে যারা চেনেন তাদের ভুলে যাওয়ার কথা নয় তার উত্থান পর্ব। হাতে মদের বোতল আর মুখে কুৎসিত গালাগালিতে কাউকেই তিনি ছাড় দেননি। দেশের রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার সহ সবাইকে তিনি সমানভাবে ধোলাই করতে অভ্যস্ত। ধর্মও ওনার মেনুর বাইরে ছিলনা। আমাদের অনেকেই ওনার গালাগালি এন্টারটেইন্টমেন্ট হিসাবে উপভোগ করেছি। কিন্তু ধর্মীয় আঘাত উলটে দিয়েছে আমাদের বিনোদন। আমরা এখন সেফুদার ফাঁসির দাবিতে উত্তাল।

ব্যপারটা ভেবে দেখার মত। একজন হদ্দ মাতালের বেসামাল প্রলাপ কি তাহলে আমাদের বিশ্বাসের গোঁড়াকে টলিয়ে দিয়েছে? আমার তো মনে হয় সাফায়াত উল্লার এই কটূক্তি আমাদের ধর্মীর বিশ্বাসের ভীত কতটা দুর্বল তা আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কেবল। শাস্তি কেবল সাফায়াত উল্লার প্রাপ্য নয়, শাস্তি আমাদেরও প্রাপ্য। কারণ আমাদের বিশ্বাস নড়বড়ে। একটু ধাক্কা লাগলেই তা হুড়মুড় করে লুটিয়ে পরে।

ধর্ম যদি আত্মশুদ্ধির আয়না হয়ে থাকে সে আয়নায় প্রথমে আমাদের নিজেদের চেহারা ভাল করে দেখা উচিৎ। খুন, গুম, ধর্ষণ আর লুটেরার দেশে ধর্ম কোন বিবেচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে তা যাচাই বাছাই করা উচিৎ। ধর্মের শুরু হওয়া উচিৎ নিজের বিবেক হতে, যার ছায়া প্রসারিত হওয়া দরকার নিজ ঘরে, পরিবারে। সেফুদা অনেক দূরের মানুষ।

অস্ট্রিয়া ইউরোপের একটি দেশ। সে দেশে ধর্ম চর্চা যেমন স্বাধীন তেমনি স্বাধীন এর বৈরিতা। ধর্ম নিয়ে গালাগালি সে দেশে আইনি কোন অপরাধ নয়। বরং নাগরিকদের জন্মগত অধিকার। বাংলাদেশে বসে সাফায়ত উল্লাকে জবাই করার হুমকি বরং অপরাধ। কাছে পেলে সে দেশের সরকার হুমকি দাতাকে বিচারের আওতায় আনবে। পাশাপাশি সে দেশে নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করবে সাফায়াত উল্লার। বলে রাখা ভাল এ মুহূর্তে অস্ট্রিয়ায় ধর্ষণের সুনামি বইছে না। সে দেশের শিক্ষকরা শিক্ষাঙ্গনে নাবালক শিশুদের বলাৎকার করছেনা। নাগরিকদের পা হতে মাথা পর্যন্ত নেই ঘুষ আর দুর্নীতির কালিমা। প্রথমে ওরা মানুষ, তারপর ধার্মিক।

আসুন আমরাও প্রথমে রক্ত মাংসের মানুষ হওয়ার চেষ্টা করি। আর তা করতে পারলেই কেবল নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলংকার মত রক্তক্ষরণগুলো থামানো যাবে।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

১১ টি মন্তব্য (লেখকের ৪টি) | ৬ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২২-০৪-২০১৯ | ৯:১১ |

    ধর্ম যদি আত্মশুদ্ধির আয়না হয়ে থাকে সে আয়নায় প্রথমে আমাদের নিজেদের চেহারা ভাল করে দেখা উচিৎ। ধর্মের শুরু হওয়া উচিৎ নিজের বিবেক হতে, যার ছায়া প্রসারিত হওয়া দরকার নিজ ঘরে, পরিবারে। সেফুদা অনেক দূরের মানুষ। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

     

    GD Star Rating
    loading...
  2. সুমন আহমেদ : ২২-০৪-২০১৯ | ১০:২১ |

    আগে পরে সাফায়ত উল্লাকে মিডিয়ায় আমি জেনেছি। তার অপরাধ তিনি মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থের অবমাননা করেছেন। শতকোটি মানুষের বিশ্বাসে আঘাত হেনেছেন। বাকিটা আপনি আপনার পোস্টে ভালোই আলোচনা করেছেন। 

    GD Star Rating
    loading...
  3. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ২২-০৪-২০১৯ | ১০:৩৮ |

    আপনার আলোচনায় দ্বিমত করছি না। একটি প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

    তিনি ভীষণ আলোচিত একজন ব্যক্তি। যদিয় তাঁর সকল কর্মকে জাস্টিফাই করা সম্ভবপর নয়। অস্ট্রিয়া ইউরোপের একটি দেশ হলেও তিনি এখন যেখানে আছেন সে দেশের ধর্ম চর্চা নিয়ে পক্ষপাতদুষ্ট কোন বক্তব্য তিনি দিতে পারলে বুঝতে পারতাম, কেমন স্বাধীন সেই দেশ। কেমন স্বাধীন সেখানকার বাক্ স্বাধীনতা। ধর্মীয় বাক্ বৈরিতায় তিনি থাকলে তার অবস্থান যে আর অস্ট্রিয়া হতো না সেটা সহজে বলা যেতে পারে। ঠিক ভাবছি কিনা জানাবেন। ধন্যবাদ। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_smile.gif

    GD Star Rating
    loading...
    • ওয়াচডগ : ২৩-০৪-২০১৯ | ১১:০৯ |

      সেফুদা আলোচনায় এসেছেন নোংরামীর মাধ্যমে। একজন নোংরা মানুষের নোংরামীতে এত বিশাল একটা ধর্মের ভীত নড়ে যাবে তা বুঝতে একটু কষ্ট হয়। অস্ট্রিয়ার রাজধানীকে বলা হয় ইউরোপের সংস্কৃতিক রাজধানী। ওখানে সাংস্কৃতিক চর্চাই প্রাধান্য পায়। ধর্ম চর্চা অথবা এর নিন্দা নিয়ে অস্ট্রিয়ানরা অতটা মাথা ঘামায় বলে জানা নেই। সাফায়েত উল্লাকে ওখানে একজন অভিবাসী। হয়ত ইমিগ্রেশন সমস্যা সমাধানের প্লান হিসাবে ধর্ম নিন্দার কৌশল বেছে নিয়েছে। এ নিয়ে আমরা নিজেদের সূস্থ বলে দাবি করি তাদের কেন উতাল হতে হবে সেটাও বুঝতে একটু কষ্ট হয়!
       

      GD Star Rating
      loading...
    • সৌমিত্র চক্রবর্তী : ২৩-০৪-২০১৯ | ২২:২২ |

      বুঝেছি।

      GD Star Rating
      loading...
  4. রিয়া রিয়া : ২২-০৪-২০১৯ | ১১:৫৮ |

    সাফায়াত উল্লাহ সেফু আমার কাছে খুব জানা শোনার নাম নয়। যতটুকু পড়লাম তাতে তো ভদ্রলোক বিপদেই আছেন মনে হলো। Frown

    GD Star Rating
    loading...
    • ওয়াচডগ : ২৩-০৪-২০১৯ | ১১:১০ |

      ঐ লোক ঐ দেশে ততটা বিপদে নেই, যতটা না বাংলাদেশে!

      GD Star Rating
      loading...
  5. উদাসী স্বপ্ন : ২২-০৪-২০১৯ | ১২:১৪ |

    ধর্ম নিয়ে কথা বললেই যদি কল্লা নামাতে হয় তাহলে আমাদের দেশের প্রতিটা ওয়াজে হুজুর মাদ্রাসার পোলাপানরা মুখে হিন্দু ধর্মের নামে যে খিস্তি খেউড় করে, হিন্দুরা চাইলে নিমিষে রক্তের বন্যা বইয়ে যেতে পারে। সবচে বড় কথা কোরানে খ্রিস্টান ইহুদী জুরুস্থ্রু ও প্যানথিওনদের যে অভিশম্পাত ও তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে অবমাননা করা হয়েছে( ক্বাথীর, তাবারীর তাফসীর ও জ্বালাইলান/তাইমিয়া দ্রস্টব্য) তাতে যদি বিধর্মীরাও আঙ্গুল তোলে সেক্ষেত্রে পৃথিবীতে ইসলামের নাম ও নিশানা থাকার কথা না। তবু সবাই যখন অসহিষ্ণুতার পরিচয় দিচ্ছে সেখানে আমাদের এমন আচরন জঙ্গিবাদী ভাবাদর্শকে লালন করাটাই ইঙ্গিত দেয়।

    GD Star Rating
    loading...
    • ওয়াচডগ : ২৩-০৪-২০১৯ | ১১:১২ |

      নিজেদের ধর্মই সেরা ধর্ম আর বাকিরা সব উচ্ছিষ্ট, এমন একটা মনোভাবই আমাদের সর্বনাশ করছে!

      GD Star Rating
      loading...
  6. শাকিলা তুবা : ২২-০৪-২০১৯ | ২২:২২ |

    ইচ্ছাকৃত ভাবে কারু ধর্মানুভূতিতে আঘাত করাকে আমি ভালো দৃষ্টিতে দেখি না। Frown

    GD Star Rating
    loading...
    • ওয়াচডগ : ২৩-০৪-২০১৯ | ১১:১৩ |

      একজন মাতালের মাতলামিতে মনোযোগ না দেওয়াই উত্তম। পশ্চিম গোলার্ধে একজন মাতাল অবস্থায় খুন করলে সে খুনেরও জাষ্টিফিকেশন আছে! আর এতো কেবল ধর্ম মাত্র!

      GD Star Rating
      loading...