ধিক আপনাকে!

আপনি ক্ষমতার রাজনীতি করেন, খুবই প্রশংসনীয় কাজ। ধরে নেব আপনি সমাজ সংসার তথা ধরণী নিয়ে খুবই সচেতন একজন মানুষ। তা না হলে রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন কেন! এই আপনি যখন জীবিকার সন্ধানে বটতলার মোড় হতে বাসে চেপে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন, লাশ হয়ে যে বাড়ি ফিরবেন না তার কি কোন নিশ্চয়তা আছে? যদি হায়াত মউত আল্লাহর হাতে এই বিশ্বাসে নিজের বাচা-মরা সপে দিয়ে পথ চলতে শুরু করেন তাহলে এখানেই থামতে পারেন। আমার এ লেখা পড়া আপনার জন্য জরুরি নয়। পথ চলুন এবং মৃত্যুর জন্য নিজকে প্রস্তুত রাখুন। আর আমার মত আপনি যদি বিশ্বাস করেন জীবন-মৃত্যু কোন দৈব ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত পথচলার শুরু ও শেষ। তাতে সৃষ্টিকর্তার যেমন হাত রয়েছে তেমনি রয়েছে মনুষ্য ফ্যাক্টর। এবং এই জাগতিক ফ্যক্টরগুলোকে ড্রাইভ করার জন্যই সভ্যতার ধাপে ধাপে মানুষকে এগিয়ে আসতে হয়েছে বিভিন্ন সমাধান নিয়ে। রাজনৈতিক ক্ষমতা সে সমাধানেরই অংশ। আপনি বাসে বসে আছেন। মাধবদী পেরিয়ে পুরিন্দার দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। বাসের ড্রাইভিং সীটে বসে আছেন চৌদ্দ বছর বয়সী এক তরুণ। তার লাইসেন্স নেই। অভিজ্ঞতা নেই। নেই সামাজিক তথা বিচারিক দায়বদ্ধতা। তার মাথায় একটাই দায়িত্ব; দিনশেষে মালিককে সন্তুষ্ট করে ঘরে নগদ কিছু নিয়ে যাওয়া। কারণ ঘরে মা-বাবা, ভাই-বোন সহ অনেকে এই নগদের উপর নির্ভরশীল। এবার ঘাড় ঘুরিয়ে বাসের সামনে, পেছনে, ডানে অথবা বামে তাকান। আপনার বাসের মত আরও অনেক বাস একই কায়দায় ঢাকার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পথে পথে যাত্রীরা অপেক্ষা করছে যানবাহনের। যে বাস আগে যাবে তার ভাগ্যেই জুটবে এসব যাত্রী। এবার শক্ত করে সামনের সীটের হাতলটা ধরুন। কারণ মৃত্যুর ফেরেশতা আজরাইল আপনার ঘাড়ের কাছে নিশ্বাস ফেলছে। পুরিন্দা আর পাচরুখীর মাঝামাঝি কোথাও আপনার বাস হলিউড মুভি ‘মিশন ইম্পসিবল’ কায়দায় দশটা পলটি দিয়ে ছিটকে পরল রাস্তা হতে। সাথে থেঁতলে গেল আপনার মগজ। আপনি এখন মৃত। মুখ দিয়ে লালা বেরুচ্ছে। একদল বুনো মাছি আপনার লাশকে ঘিরে নৃত্য শুরু করে দিয়েছে। অথচ আপনার তো এভাবে মরার কথা ছিলনা। আপনি তো ক্ষমতার রাজনীতি করেন। আপনার দাপটে থানার ওসি পর্যন্ত কেঁপে উঠে। অন্দরমহল হতে গৃহবধূকে উঠিয়ে আনতে আপনার অসুবিধা হয়না। এমন অসহায়ভাবে আপনাকে মরতে হবে এমনতো কথা ছিলনা! একজন চৌদ্দ বছর বয়সী বাচ্চা আপনাকে হত্যা করবে এমনটা কি স্বপ্নেও কল্পনা করে ছিলেন? মোটেও না। আর যদি এ যাত্রায় আপনি আজরাইলকে পরাস্ত করে বাস হতে আস্ত শরীরে বেরিয়ে আসতে পারেন তাহলে চলুন রাস্তার পাশে একটু বসি এবং কথা বলি।

যে চৌদ্দ বছর বয়সী বাচ্চা ড্রাইভিং সীটে বসে আপনাকে খুন করতে চেয়েছিল তাতে নিশ্চয় বিএনপি-জামাতের উস্কানি ছিলনা। ঐ ড্রাইভার আপনার দলের মন্ত্রী জনাব শাহজাহান খানের পোষ্য। প্রতিদিন নিজের জীবন তথা বাকি যাত্রীদের জীবন বাজি রেখে যা আয় করে তার একটা অংশ চলে যায় ঐ মন্ত্রীর পকেটে। যে জরাজীর্ণ রাস্তার কারণে বাসটা ছিটকে পরল সে রাস্তা মেরামতের কথা যোগাযোগ মন্ত্রী জনাব আব্দুল কাদেরের। তেনার এসব দেখার সময় নেই। তিনি সাজগোজ করে গায়ে আতর মেখে বিএনপি বিষয়ক ছবক নিয়ে সময় কাটান। লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর অপরাধে জন্য ড্রাইভারকে বিচারের মুখোমুখি করলে সেখানে মধু খাওয়ার মত জমা হবে আপনার দলের দাদারা, আসবে থানার পুলিশ, হাত পাতবে আদালতের বিচারক সহ আরও অনেকে। এবার ভাবতে চেষ্টা করুন যাদের সন্তান, মা-বাবা, ভাই-বোন এই ড্রাইভারের কারণে নিহত হল তারা রাস্তায় নামছে…প্রতিবাদ করছে…দাবি জানাচ্ছে আইনি শাসনের…চাইছে স্বাভাবিক জন্ম-মৃত্যুর নিশ্চয়তা। খুব কি অন্যায় করছে? মান এবং হুশের সমন্বয়েই মানুষ, যতদিন এগুলো থাকবে মানুষ প্রতিবাদ করবেই। এবার আয়নায় নিজের চেহারা দেখুন। লাঠি হাতে আপনি তাড়া করছেন প্রতিবাদকারীদের…আপনি ক্ষমতার রাজনীতি করেন। এ রাজনীতিতে টিকে থাকতে চাইলে আপনাকে হাতে লাঠি নিতেই হবে। মানব সভ্যতার সব সংজ্ঞায় আপনি একজন নিকৃষ্ট মানব। আপনি সভ্য পৃথিবীর অসভ্য সৃষ্টি।

ধিক আপনাকে!

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৫ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ৫ জন মন্তব্যকারী

  1. সৌমিত্র চক্রবর্তী : ১১-০৮-২০১৮ | ২০:৪৮ |

    আইনের শাসন গরুর গোয়ালে থাকলে আইন নিজের হাতে নেয়াই ভালো। ধিক মেনে নিচ্ছি। Frown

    GD Star Rating
    loading...
  2. মুরুব্বী : ১১-০৮-২০১৮ | ২১:০৩ |

    নিজের মনের মধ্যে ঠিক এই কথা গুলোই চেপে রেখেছিলাম। আকার প্রকার ইঙ্গিতে ইনিয়ে বিনিয়ে এখানে সেখানে রূপকে বলারও চেষ্টা করেছি তারপরও গিলটি ফিল করি।

    GD Star Rating
    loading...
  3. রীতা রায় মিঠু : ১১-০৮-২০১৮ | ২১:৫১ |

    সাম্প্রতিক ঘটনা বাংলাদেশের জন্য দুঃখজনক অধ্যায়। উত্তরণ জরুরী।

    GD Star Rating
    loading...
  4. রিয়া রিয়া : ১১-০৮-২০১৮ | ২২:১২ |

    বাক্ স্বাধীনতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমার মনে হয় না বাংলাদেশে এর চর্চা অব্যহত আছে। সরি।

    GD Star Rating
    loading...
  5. ইলহাম : ১১-০৮-২০১৮ | ২২:৫২ |

    প্রিয় ওয়াচ ভাই, আপনার লেখাগুলো আমি মনযোগ দিয়ে না পড়ে পারি না।

    ক্ষমতা, টাকা, অস্ত্র এবং খ্যাতি এই চারটি জিনিষের একটা কামড় আছে, সেই কামড় অত্যান্ত মারাত্নক যা সবাই সয্য করতে পারে না।

    প্রথম তিনটার জন্য মানুষ শয়তানের চেয়ে খারাপ এবং হিংস্র পশুর চেয়ে ভয়ানক হতে পারে, প্রয়োজনে মানুষ মারতেও দ্বিধা বোধ করে না।

    অবশ্য সবাই না কেউ কেউ এমন হয়।

    এদের চিহ্নিত করে রাখার জন্য চোক কান খোলা রাখা প্রয়োজন এবং অনেকেই এই চোক কান খোলা রেখে চুপচাপ আছেন।

    সময় একটা ফ্যাক্টর বটে! সময়ের সময় হলে সময় এবং প্রকৃতি এক হয়ে এইসব লোকদের অ্যাকশন শুরু করে দেয়।

    GD Star Rating
    loading...