৪০ বছর পর ৪০ কোটি মানুষের দেশ! বাংলাদেশ!

১৬ কোটি মানুষ আর চারদিকে খাল-বিল নদী-নালা নিয়েই বাংলাদেশ। ৭১’সালে দেশটার জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। আজকে ১৬ কোটি। অর্থাৎ ৪৭ বছরে তা দ্বিগুণেরও বেশি। সহজেই অনুমেয় আগামী ৪০ বছরে এই সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বেড়ে ৪০ কোটির কাছাকাছি চলে যাবে। দেশটার আয়তন ও অর্থনীতির উপর যাদের সম্যক জ্ঞান আছে তাদের জন্যে এ হবে বিশাল এক ধাঁ ধাঁ। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশে ৪০ কোটি মানুষ! থাকবে কোথায়? খাবে কি? আলট্রা ন্যাশনালিষ্ট ও অতি-দেশপ্রেমিকরা নিজ নিজ থিওরি দাঁড় করাবেন স্ব স্ব রাজনৈতিক বিশ্বাস হতে। আল্লাহয়ালারা বলবেন রিজিকের মালিক উপরওয়ালা। সবই হবে স্পেকুলেটিভ; তথ্যভিত্তিক প্রোগনজ করার মত বিশেষজ্ঞ আজকের বাস্তবতায় নেই বললেই চলে। ৪০ বছর অনেক সময়। অতদূর না গিয়ে সমসাময়িক বাস্তবতায় ফিরে আসুন দেশটার অর্থনীতির একটা চিত্র আকার চেষ্টা করি।

আসলেই আমাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি কি? কিসের উপর চলছে আমাদের দেশ? পরিসংখ্যান মতে আমাদের মাথাপিছু আয় বাড়ছে, বাড়ছে গড় আয়ু। তারপরও কি ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ থাকতে পারে? ভয়টা এখানেই। আমাদের অর্থনীতির দুটো মাত্র খাত। এক, মানব সম্পদ, দুই পোশাক শিল্প। বলা হয় এক কোটির মত স্বদেশী প্রবাসে শ্রম দিচ্ছে এবং আয়ের প্রায় সবটাই দেশে পাঠাচ্ছে। এক কথায় দেশ চলছে প্রবাসীদের আয়ে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন শুরু হয়েছিল পোশাক শিল্পের মাধ্যমে। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে সস্তা শ্রমই ছিল তাদের মূল অস্ত্র। একটা সময় এই খাতের আয় বিনিয়োগ পূর্বক স্ব স্ব সরকার বহুমুখী খাতের জন্ম দিয়েছে এবং সময়ের চাহিদায় বস্ত্র-খাত ঠাঁই নিয়েছে ইতিহাসে। বাংলাদেশ কি একই পথে হাঁটছে? বোধহয় না।

গেল ৬-৭ বছর উন্নত বিশ্বকে কঠিন অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে এগুতে হয়েছে। এর ঢেউ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও লেগেছে। বাংলাদেশের মানব সম্পদ রফতানিও মারাত্মকভাবে ব্যহত হয়েছে। গোটা মধ্যপ্রাচ্যকে বলা হয় ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি। যে কোন সময় এর বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। বাংলাদেশের জন্য এর ফলাফল কি হবে তা আন্দাজ করতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। ধ্বসে পরবে দেশটার অর্থনীতি। একটা নির্দিষ্ট সময় পর পৃথিবীর কোন দেশেই সস্তা শ্রম সহজলভ্য থাকেনা। বাংলাদেশ এখন সেই সময়টা পার করছে। শ্রমিক শোষণ কোন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নয় যা পুঁজি করে আজীবন ব্যবসা করা যাবে। সুতরাং বাংলাদেশের পোশাক খাতও শক্ত ফাউন্ডেশনের উপর দাঁড়িয়ে নেই। দেশে কোন বৈদেশিক বিনিয়োগ নেই যা শ্রমবাজার সৃষ্টি করতে পারে। কারণ বিদেশীরা স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী সরকারের অধীনে বিনিয়োগ করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেনা। এ ধরণের শাসন ব্যবস্থায় যে কোন সময় রাজনৈতিক অস্থিরতার আশংকা থাকে। বিনিয়োগে বিপদের ঝুঁকি থাকে। বাংলাদেশ সরকার স্পষ্টতই একনায়ক-তান্ত্রিক স্বৈরাচারী সরকার। এ ধরনের সরকার ব্যাপক ধরণের লুটপাট নিশ্চিত রাখতে হত্যা, গুম, খুন আর দমন পীড়নের পথে হাটে। বাংলাদেশে যতদিন গণতান্ত্রিক সু-শাসন চালু না হবে বিদেশী বিনিয়োগ শূন্যের কোঠায় নেমে আসতে বাধ্য।

আজকের হিন্দুস্থান টাইমসের খবরটা হয়ত চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের ভিড়ে হারিয়ে যাবে। কিন্তু ছোট্ট এই খবরটার সিগনিফিকেন্স কতটা গভীর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার দাবি রাখে। যেখানে আমাদের ১ কোটি প্রবাসী নিজেদের স্বাভাবিক জীবন সেক্রিফাইস করে পশুর মত শ্রম দিয়ে বছর ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে, সেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারতের অবৈধ ১০ লাখ কর্মজীবী বাংলাদেশ হতে বছরে ১০ বিলিয়ন ডলার নিজ দেশে পাচার করে দিচ্ছেন। অর্থাৎ মালয়েশিয়ার জংগলে যে স্বদেশী তার ভিটামাটি বিক্রি করে সকাল-সন্ধ্যা কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজ পরিবার তথা দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখছে…যে গৃহবধূ স্বামী সংসার ফেলে মধ্যপ্রাচ্যের আরব পশুদের নির্যাতন সহ্য করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে তার অর্ধেকেরও বেশি সজ্ঞানে আমরা আমাদের প্রতিবেশী দেশে পাচার করতে দিচ্ছি। তাও অবৈধ পথে। এই সেই প্রতিবেশী যারা আমাদের সীমান্তে সামান্য গরু পাচারের অভিযোগে ইতিমধ্যে কয়েক হাজার স্বদেশীকে হত্যা করেছে।

পদ্মাসেতুর স্প্যান বসছে। দলকানা কৃতদাসদের এ নিয়ে আনন্দের শেষ নেই। অথচ আমরা একবারও ভেবে দেখছিনা এ সেতুতে দেশি বিনিয়োগ আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে কতটা হুমকি হিসাবে কাজ করবে। এ মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যে একটা যুদ্ধ বাঁধলে লাখ লাখ বাংলাদেশিকে দেশ ফিরতে হবে। ধ্বস নামবে রেমিটেন্সে। লালবাতি জ্বলে উঠবে আমাদের রিজার্ভে। জ্বালানি আমদানি দানব হয়ে খেয়ে ফেলবে আমাদের রিজার্ভ। হাহাকার উঠবে সবখাতে। পদ্মাসেতুর দানবীয় রূপ তখন প্রকটভাবে ফুটে উঠবে। অথচ বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এর সুদ হতে পারত মাত্র ১%। একদল সংঘবদ্ধ চোরের দল চাঁদার তালিকা নিয়ে হাজির হয়েছিল বিশ্বব্যাংকের দরবারে। যারা এই অভিযোগ বিশ্বাস করেনি তাদের মগজ দলকানা জীবাণুতে আক্রান্ত তা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

৪০ বছর পর ৪০ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশের কি অবস্থা হবে তা ভেবে দেখার কোন প্রয়োজন নেই ফ্যাসিবাদী সরকারের। কারণ সরকার প্রধান হতে শুরু করে তার উজির নাজির কোতোয়াল ডাজ্ঞার দল ইতিমধ্যে কামিয়ে নিয়েছে ১০ প্রজন্ম লালন করার মত অর্থ। সময় হলে আস্তে ওরা ভেগে যাবে বিদেশে। এক মোহম্মদ নাসিমের কলেজ পড়ুয়া ছেলেই নিউ ইয়র্কে বিনিয়োগ করেছে ৫০০ কোটি টাকা।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৮ টি মন্তব্য (লেখকের ৩টি) | ৫ জন মন্তব্যকারী

  1. সাইদুর রহমান১ : ০৪-০৭-২০১৮ | ১৪:৩৬ |

    “এ মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যে একটা যুদ্ধ বাঁধলে লাখ লাখ বাংলাদেশিকে দেশ ফিরতে হবে। ধ্বস নামবে রেমিটেন্সে। লালবাতি জ্বলে উঠবে আমাদের রিজার্ভে। জ্বালানি আমদানি দানব হয়ে খেয়ে ফেলবে আমাদের রিজার্ভ। হাহাকার উঠবে সবখাতে।”

    দারুণ বাস্তবতা তুলে ধরলেন। শুভেচ্ছা রইলো প্রিয় লেখক। আপনার প্রথম লেখার আমি গর্বিত পাঠক। গঠনমূলক সমসাময়িক লেখায় সত্যিই আসল ইতিহাস উন্মোচিত হবে, এ আমার বিশ্বাস। আপনার লেখা নিঃসন্দেহে পাঠকদের খোরাক হবে।

    GD Star Rating
    loading...
    • ওয়াচডগ : ০৪-০৭-২০১৮ | ১৮:৫৯ |

      ধন্যবাদ আপনাকে…

      GD Star Rating
      loading...
  2. আলমগীর সরকার লিটন : ০৪-০৭-২০১৮ | ১৫:২৩ |

    ভাল লেখেছেন অনেক শুভেচ্ছা রইল———

    GD Star Rating
    loading...
    • ওয়াচডগ : ০৪-০৭-২০১৮ | ১৮:৫৯ |

      শুভেচ্ছা আপনাকেও…

      GD Star Rating
      loading...
  3. মুরুব্বী : ০৪-০৭-২০১৮ | ১৬:২৮ |

    "৪০ বছর পর ৪০ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশের কি অবস্থা হবে তা ভেবে দেখার কোন প্রয়োজন নেই ফ্যাসিবাদী সরকারের।" ওরা ওদের নিজেদের ভবিষ্যত জানে। দরদ কেবল কণ্ঠে; অন্তরে নয়। আম মানুষের ভাবনা ওদেরকে স্পর্শও করবে না। কখনই না। Frown

    GD Star Rating
    loading...
    • ওয়াচডগ : ০৪-০৭-২০১৮ | ১৯:০০ |

      সাথে রাখার জন্য অনেক ধন্যবাদ

      GD Star Rating
      loading...
  4. রিয়া রিয়া : ০৪-০৭-২০১৮ | ২০:৪২ |

    শ্রমিক শোষণ কোন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নয় যা পুঁজি করে আজীবন ব্যবসা করা যাবে। বাংলাদেশের পোশাক খাতও শক্ত ফাউন্ডেশনের উপর দাঁড়িয়ে নেই। দেশে কোন বৈদেশিক বিনিয়োগ নেই যা শ্রমবাজার সৃষ্টি করতে পারে। সত্য কথা বলেছেন।

    GD Star Rating
    loading...
  5. ইলহাম : ০৪-০৭-২০১৮ | ২১:২৩ |

    মানতেই হবে আপনার ওয়াচিং (Watching) অসাধারণ। আমি মুগ্ধ! ওয়াচিং এর পাশাপাশি সাম্ভাব্য অলটার্নেটিভ সলিউশন মূলক পোষ্ট দেয়ার মেধা আপনার আছে তা আপনার লেখা থেকেই স্পষ্ট অনুমেয়। অশেষ ধন্যবাদ এবং শুভকামনা প্রিয় ওয়াচ।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...