তৃষ্ণা এক রাত্রিরের চাপা আবেগ; আর্তনাদ-আত্মদণ্ড
গভীর রাত্রিরে ঠোঁট চেপে তৃষ্ণার্ত অন্তর্দাহকে আরো চুল্লিতে ডুবিয়ে রাখি,
যতক্ষণ না ভেতরটা কেটলিতে টগবগ করে ফুটতে থাকে রক্ত!
সকালে একটি কাক, শিশির মেখে উড়ে এসেছিল নালায় মুখ গুজে জল টানতে,
হাড়ের মালা বসন পালক ঝলসে উঠেছে পঙ্কে এঁটো ত্রাণ,
গিলে খানিক ছুড়ে ফেলে, তারপর অদৃশ্য!
আমি বুক চেপে করুণ তৃষিত সত্বাকে বিসর্জন দেবার চেষ্ঠা করি।
তবু তৃষ্ণা-তৃষ্ণা,
ভালবাসি, আমার হাতের তালুতে আজব কারুকার্য, মৃত্যু অমোঘ সত্য,
ভালবাসি বুঝবার এবং বোঝাবার পর মনে হয় আমি সহস্র বৎসর অব্দি গলাকে শুদ্ধ করতে চাইছি,
প্রাণ কণ্ঠে একটি বিলাপ বার্তার মতো করে ছুটছে,
বিপুল সমারোহে প্রারম্ভিক কুঁজো হৃদয়টাকে হাতুরি পিটিয়ে ওই কামারশালায় সাঁটিয়ে দিয়েছি,
ধূপছায়ার মতো,
স্বপ্নকাতরতা থেকে খসে পড়লে যেমন হয়, তেমনি ফ্যাকাশে।
অস্পষ্ট থেকে বেরিয়ে ছোট গলিটার ভেতরে দাড়িয়ে দেখি সময়টা বিগ্রহসেবা করছে,
তথাপি অপেক্ষা করি, এই গলিতে আরেকজন পথিকের,
স্বপ্নদ্রষ্টা হেসে চলেছে, ভারিক্কি তার সুর মূর্ছনা,..
আমি সোজা সাপটাই বলতে জানি…
আমি বুকে কিন্তু, তোমার বুকে,আঁকতে পারি
গলিটার মুমূর্ষু চিত্র, স্তন-অধস্তন
সব যদি এক ঘেয়ে, তৃষ্ণার কাঠে আগুন জ্বলে আমি তবু দণ্ডায়মান
দেখি কে আসে আগে!
দূর, না,
কিছু নেই,
জনকাতারে
দৃঢ় অবস্থান
নিখুঁত বললে, আমি দুঃখিত!
আমার দণ্ড; হৃদয় ফাঁসিতে।
কষ্ট বেলুন
আকাশের স্তরে স্তরে স্তুপাকৃত ধবল মেঘ, গভীরে নীল বেদনার ঔরস
খুঁড়ে দেখি গাঢ় অতি বিষণ্ন অম্ল; হৃদয়ের পক্ষাঘাত
অনেক ব্যালাডের মাঝ থেকে তুলে এনেছি সবুজ রঙা কষ্টের বেলুন।
কৃষ্ণ পক্ষের আধুলি মেপে রাখি শিকেয় তুলে, চগোয় জং ধরা কাঠের পেড়েকে ঝুলে
থাকি ক্রুশবিদ্ধ বুক নিয়ে; নখের ভেতরে ছেঁড়া চামড়া তত্ত্ব
নেল পলিশে ডোরাকাটা চির, থকথকে চর্বি অথবা ভগাঙকুর কষ্ট অর্জিত এক বখে যাওয়া দিন।
নীল জল পুকুরে ছুঁয়েছি মদ্যপ শাপলা, দুঃস্বপ্নের বিগত দিনে ঠোঁটের শাসন!
কষ্ট ভর্তি বেলুন ওড়াবো বেদখলি আকাশে
বাতাসের আছে মিত্রতা ভাব, কেউ জানেনা-রাত কাটে দিবালোকের মুমূর্ষুতায়।
স্বাদ কিনবো তবু ঠোঁটের ডগায়
গাইবো গান বেসুর সাধনে তবু ফুৎকার দেবে শাব্দিক অন্তরা, সখ্যতা শুভ্র
মার্জিত বেহালায় কনকনে শীত আছড়ে পড়বে দেয়ালে,
মুক্ত করবো নিজেকে নিজের থেকে
বেলুন এক ছত্রে উড়ে যাবে গৃহত্যাগী সন্ন্যাসীর বেশে; ওড়ানো আমার কালজয়ী উপাখ্যান।
রঙের পর্দা
সোনালী আখরে ঢুকে যাবে কিন্নর প্রজাতি, মেছোপট্টি থেকে চিল উড়ে খুঁড়ে আনবে
ধবল মাটি। সবুজ পাতা ঘিরে আমার বসবাস, ক্লান্ত নগরী-চোখে মেরুন রঙের
পর্দাটা সরে গেলে বেঁচে যাবে তাবৎ বিপ্লবী।
শোন তবে, গভীর রাত্রিরে ডাক আউটে সফেন তুমুল ঝড়, খড়ের আলুথালু
প্রশাখাবৃত্তে ফুলেল প্রচ্ছন্ন কর, লাল আভায় অগ্নি ফুৎকারে, মানব এবার এগোও
তবে!ভিড় ঠেলে শকুন ফের উড়ে এলো ভাগাড়ে, ক্রমশ কালো পর্দা খুলে মুখোশ
উন্মোচিত হলে অপরাহ্ণে সবাই ভালবাসা বয়কট করল। মরে গেলে ছাইচাপা কুলোয়
সন্ধি আঁটে মগজে কৃমি। ক্রন্দন শোনা যায় স্বহাস্যে।
রঙিন মঞ্চে নিত্যকার নাটক।
নিঃসীম
শ্যামলিমা দুরন্ত পাথারে ডুবে গেছে রসে, সন্নিকটে সাজঘর ফিরে তাকাবার এই
এক মোক্ষম সময়, যখন এসেছিল, ভালবাসা তখন তৃতীয় বিশ্বের মতো ক্ষুধার্ত
কিম্বা ন্যাংটো নয়!
হৈরৈ শব্দের মাঝ থেকে তুলে আনা হলো থলে পুরে ব্যক্তিগত দুঃখ, সে রকম
শুন্যগর্ভ থলে থেকে ভালবাসা কিপটের মতো কবাট বন্ধ করে ঘুমোয় শহুরে
মধ্যবিত্ত বাঙালির মতো ভরদুপুরে।
ভিক্ষে এখন দূর্ভিক্ষের টান, এখানে ত্রাণের বিপরীতে পরিত্রাণ পাওয়া ঢের
ভালো, মুরমুরে দুটো কথা কওয়া যায়, সওয়া যায় তার দ্বিগুন। কান্ত বাবুর স্টেশন
বেহাল, কলের জলে নমঃ নমঃ অতিমাতাল তবু তার তাঁবুতে মেগাশিশি, সেই যে কিনা
বেরিয়েছিল ভালবাসা কুড়োতে, বকুল তলা থেকে মিশিগান অব্দি! ভাবো। যেখানে
দিগন্ত ছুঁয়ে চুঁয়ে পড়ছে পাথারের গায়, সেখানে সীমাহীন ভালবাসা খুঁজতে
হারিয়ে যাই কান্ত বাবুর মতো।অতলে।
থলেটা আদিকালের মতোই ঝোলানো।ঝোলানো।
loading...
loading...
মুক্ত করবো নিজেকে নিজের থেকে
বেলুন এক ছত্রে উড়ে যাবে গৃহত্যাগী সন্ন্যাসীর বেশে;
ওড়ানো আমার কালজয়ী উপাখ্যান।
__ অসামান্য কবিতা গুচ্ছের উপাখ্যান পড়লাম কবি। শব্দনীড়ে আপনাকে স্বাগতম।
loading...
অসামান্য সুন্দর বিন্যাস
loading...
ধন্যবাদ সকলকে। আপনাদের উৎসাহই আমার প্রেরণা
loading...