মহাভারত ও মৎস্যপুরাণে বৈবস্বত মনু নামে একজন মহর্ষীর উল্লেখ রয়েছে। বাংলা মনুষ্য শব্দটির উৎপত্তি এই মনু শব্দ থেকেই। কেন তা বলছি। বিষ্ণুর দশজন অবতারের মধ্যে মৎস্য অবতার অন্যতম। তিনি মলায়চলের একদেশে গিয়ে বিপুল তপস্যা করেন।
বহু বর্ষ অতীত হলে ব্রহ্মা তাঁর তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে বর প্রদান করতে চাইলেন। প্রণিপাত করে মনু বললেন, ‘হে পিতামহ! আমি আপনার নিকট একটিমাত্র বর ইচ্ছা করি। যখন প্রলয়কাল উপস্থিত হবে, তখন আমি যেন জীবসকলসহ সমগ্র জগতের রক্ষা করতে সমর্থ হই।’ ব্রহ্মা ‘তথাস্তু’ বলে অদৃশ্য হলেন।
কিছুদিন পর ভগবান বিষ্ণু মাছের রূপ নিয়ে আবির্ভূত হয়ে বলেন ‘হে নিষ্পাপ! শুনুন, এখন একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটার সময় উপস্থিত। পাহাড়, বনসহ সমস্ত পৃথিবী অচিরেই জলমগ্ন হবে। আপনি সুদৃঢ় একখানি নৌকা নির্মাণ করাবেন আর সপ্তর্ষীগণসহ যাবতীয় জীবের বীজ নিয়ে ঐ নৌকায় আরোহণ করে আমার জন্য প্রতীক্ষা করবেন।”
এরপর শুরু হোল শতবর্ষব্যাপী প্রবল খরা। দারুণ দাবদাহে পৃথিবী ছাইবর্ণ হয়ে গেল। কোথাও এক ফোটা পানি নেই। এরপর এলো সেই প্রচণ্ড ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাতসহ মহাপ্লাবন। বিশ্বচরাচর প্লাবিত হয়ে এক মহাসমুদ্রের রূপ নিল।
শিংবিশিষ্ট মৎস্যরূপে ভগবান বিষ্ণু আসলেন। মনু তাঁর শৃঙ্গে রজ্জু বন্ধন করলেন। তিনি তখন মহাবেগে নৌকাকে টেনে নিয়ে সমুদ্রে বিচরণ করতে লাগলেন। মহাপ্লাবনে সকল মানুষে বিলীন হোয়ে গেল, কেবল সপ্তর্ষিগণ, মনু ও মৎস্যই দৃশ্যমান থাকলেন।
মৎস্য এইভাবে অনেক বৎসর সাগরসলিলে নৌকাসহ বিচরণ করতে লাগলেন। অতঃপর একটি পর্বতের চূড়া দৃশ্যমান হলে মৎস্য সেদিকে নৌকা নিয়ে চললেন। সেখানে নৌকা বাঁধা হল।
.
এরপর মৎস্য নৌকারোহীদের বললেন, ‘হে মহর্ষিগণ! আমি মৎস্যরূপ নিয়ে এই বিপদ থেকে তোমাদেরকে উদ্ধার করলাম। এখন এই বৈবস্বত মনু সকল প্রকার জীবজন্তু ও মানুষ সৃষ্টি করবেন।’ বন্যার পানি কমতে লাগলো। পৃথিবী পুনর্ণিমাণের জন্য মনু ও তাঁর পরিবার পাহাড় থেকে ভূমিতে নেমে এলেন এবং পুনরায় পৃথিবীতে বংশবিস্তারের মাধ্যমে মানব প্রজাতি টিকিয়ে রাখলেন।
নূহ (আ.) এর জীবনের সঙ্গে মৎস্যপুরাণের এই ঘটনাটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাম্য দেখা যায়। যেমন:
১। স্রষ্টার নির্দেশে বিরাট নৌকা নির্মাণ।
২। স্রষ্টার পূর্বঘোষিত মহাপ্লাবনে ও বারিবর্ষণে সমগ্র পৃথিবী প্লাবিত হওয়া।
৩। নৌকায় চোড়ে স্রষ্টার সহায়তায় মনু ও ঋষিদের উদ্ধার পাওয়া। উদ্ধারপ্রাপ্তদের সংখ্যা ছিল অতি অল্প।
৪। সকল প্রাণীর প্রজাতি (বীজ) নৌকায় তোলা ও বন্যার পরে আবার সেসব প্রজাতির বিস্তার ঘটানো।
৫। সকল মানুষ ধ্বংস হওয়ার পর কয়েকজন থেকে আবার মানবজাতির বংশবিস্তার ঘটানো।
প্রশ্ন হলো, অধিকাংশ মুসলিম মনে করেন হিন্দু ধর্ম কাল্পনিক। তাহলে কোর’আনের হাজার হাজার বছর আগের এই পুরাণে প্রায় হুবহু ঘটনার বিবরণ কীভাবে ঠাঁই পেল? এই বৈবস্বত মনু আসলে কে?
loading...
loading...
হযরত আদম প্রথম নবী আল্লাহর বানী তখন থেকেই আছে। নূহ কে বলা হয় দ্বিতীয় আদম। এই ঘটনা কথা ইয়াহুদী খ্রিষ্টানরা জানে। বাইবেলে আছে ২০০০ বছর আগেই কোরআন আল্লাহর বানী সর্বসম্মতি ক্রমে তাই সন্দেহ নাই কিন্তু বিষ্ণু পূরসণের লেখক আছ তাই এগুলোর সাহায্যের কথা উড়িয়ে দেয়া যায় না। সব জনজনপদে নবী আসছে বলা হয়, এত নবীদের কেউ আসতেও পারেন। খালি মনু গঠনা নয় আরও কথা কোরআনের সাথে মিলে। রামানন্দের সিরিয়ালে দেখেছি।
loading...
ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থের বর্ণনায় হযরত নূহ (আ.) এর উপর অনুরূপ ঘটনার বিবরণ জানা বা পড়া ছিলো। কিন্তু আপনার প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নাই। তবে বিষ্মিত হয়েছি যে মহাভারত ও মৎস্যপুরাণে এমনটা উল্লেখ আছে। শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ মি. সালজার রহমান সাবু। শুভ সকাল।
loading...
মগজের জট খুলি। অসাধারণ শিরোনাম।
loading...
বাংলা মনুষ্য শব্দের উৎপত্তি থেকে মনু শব্দ। বৈবস্বত মনু একজন মহর্ষী।
loading...
পড়লাম দাদা। আপনার প্রতিটি লেখাই অসাধারণ।
loading...
পড়ে রাখলাম।
loading...