পবিত্র কোর’আনে আল্লাহর বাণীকে, সত্যকে গোপন (conceal) করার ক্ষেত্রে আল্লাহ ব্যবহার করেছেন ‘তাক্তুমু, ইয়াকতুমুনা’ এই শব্দগুচ্ছ। আর ধর্মের কাজ করে মানুষের কাছ থেকে তার বিনিময়ে তুচ্ছ পার্থিব মূল্য, বৈষয়িক স্বার্থ small price, a gain) হাসিল করার ক্ষেত্রে আল্লাহ ব্যবহার করেছেন ‘সামানান কালিলান’। এই শব্দ দুটো কোর’আনে বার বার এসেছে। এ কাজটি যে কেবল হারামই নয়, এটা যে কুফর, যারা এ কাজ করবে তারা যে আগুন খাচ্ছে, পরকালেও তারা যে জাহান্নামে যাবে, তারা যে আলেম নয় পথভ্রষ্ট, পবিত্র কোর’আনের সুরা বাকারার ১৭৪-১৭৫ নম্বর আয়াতে এই সবগুলো কথা আল্লাহ দ্ব্যর্থহীন ও সরল ভাষায় উল্লেখ করেছেন যা বোঝার জন্য কোনো তাফসির বা ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয় না, সরল অনুবাদই যথেষ্ট। এ আয়াতে আল্লাহ বলেন,“বস্তুত, যারা আল্লাহ কেতাবে যা অবতীর্ণ করেছেন তা গোপন করে এবং এর বিনিময়ে পার্থিব তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করে, তারা তাদের পেটে আগুন ছাড়া আর কিছুই ঢুকায় না। এবং আল্লাহ হাশরের দিন তাদের সঙ্গে কথাও বলবেন না, তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না। এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব। এরাই হচ্ছে সেই সমস্ত মানুষ যারা সঠিক পথের (হেদায়াহ) পরিবর্তে পথভ্রষ্টতা (দালালাহ) এবং ক্ষমার পরিবর্তে শাস্তি ক্রয় করে নিয়েছে। আগুন সহ্য করতে তারা কতই না ধৈর্যশীল।”
এই দীনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নীতি এই আয়াতে ঘোষিত হয়েছে। যারা আল্লাহর অবতীর্ণ কেতাবের বিধিবিধান ও শিক্ষাকে গোপন করে এবং দীনের বিনিময়ে অর্থ বা স্বার্থ হাসিল করে তারা-
১। “আগুন ছাড়া কিছুই খায় না।” অর্থাৎ তারা যা কিছু খায় তা সমস্তই জাহান্নামের আগুন। তাদের এই অপকর্ম, গর্হিত কাজ তাদের ভক্ষিত সকল হালাল বস্তুকেও হারামে পরিণত করে, যেভাবে আগুন সব কিছুকেই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়।
২। “হাশরের দিন আল্লাহ তাদের সঙ্গে কথাও বলবেন না”। এ থেকে বোঝা যায় আল্লাহ তাদের উপর কতটা ক্রোধান্বিত। আল্লাহ যার সাথে কথাও বলবেন না তার সেই মহাবিপদের দিন কী দুর্দশা হবে কল্পনা করা যায়?
৩। “তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না।” মানুষ মাত্রই পাপী, আল্লাহর ক্ষমার সরোবরে স্নান করেই মানুষ পাপমুক্ত হয়ে জান্নাতে যেতে পারে। আল্লাহর এই ক্ষমার হকদার হচ্ছে মো’মেনগণ। কিন্তু যারা ধর্মব্যবসায়ী তারা গাফুরুর রহিম, আফওয়ান গফুর, গাফুরুন ওয়াদুদ, সেই অসীম প্রেমময় ক্ষমাশীল আল্লাহর ক্ষমা থেকেও বঞ্চিত হবে। আল্লাহ তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না।
৪। “তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব”। এ হচ্ছে চূড়ান্ত কথা যা সব অস্পষ্টতাকে নস্যাৎ করে দেয়। ধর্মের কাজ করে স্বার্থহাসিলকারীরা জাহান্নামী এ নিয়ে আর কোনো সন্দেহের বা দ্বিমত পোষণের অবকাশ থাকে না।
৫। “তারা হেদায়াতের বিনিময়ে পথভ্রষ্টতা ক্রয় করেছে”। খুবই দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য। আমরা আলেম সমাজের কাছে কেন যাই, কেন তাদের ওয়াজ, খোতবা নসিহত শ্রবণ করি? নিশ্চয়ই পরকালীন মুক্তির পথ জানার জন্য? হেদায়াহ শব্দের মানেই হচ্ছে সঠিক পথনির্দেশ। আল্লাহ বলেই দিচ্ছেন, যারা ধর্মের কাজের বিনিময় গ্রহণ করে তারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট।
একজন পথভ্রষ্ট মানুষ কী করে আরেক ব্যক্তিকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে পারে? এ কি সম্ভব?
loading...
loading...
পবিত্র আল- কোরআন নিয়ে আপনার লেখায় গুরুত্বপূর্ণ পোস্টখানি প্রসংশার দাবি রাখে।
loading...
একজন পথভ্রষ্ট মানুষ আরেক ব্যক্তিকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে পারে না। এবং না।
loading...
পড়লাম দাদা।
loading...