প্রথম পর্ব পড়ে না থাকলে এইখানে ক্লিক করুন, ২য় পর্ব পড়ে না থাকলে এইখানে ক্লিক করুন,
যে ধর্ম মানবসমাজে শান্তি দিতে পারে না, সেটা প্রকৃত ধর্ম নয়, সেটা ধর্মের লাশ। আজ সারা বিশ্বে যে ধর্মগুলি চালু আছে সেগুলোকে প্রাণহীন লাশ বানিয়ে রাখা হয়েছে এবং সেই লাশকে নিয়েই ব্যবসা করছেন কথিত আলেম ও পুরোহিত গোষ্ঠী। মানুষের পেটে যখন ভাত নেই, উপাসনালয় থেকেও যখন জুতা চুরি হয়, যেখানে চার বছরের শিশুও ধর্ষিত হয় তখন সেই অন্যায় অবিচার বন্ধ না করে, তার ন্যূনতম প্রতিবাদও না করে যারা মসজিদে-মক্কায় গিয়ে মনে করছেন আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট, মন্দিরে গিয়ে দুধ-কলা দিয়ে, গয়া-কাশিতে গিয়ে মনে করছেন দেবতা বুঝি স্বর্গ থেকে তাদের উপর পুষ্পবৃষ্টি করছেন, তারা ঘোর ভ্রান্তির মধ্যে আছেন। চলমান …
পর্ব তিন শুরু…
আল্লাহর রসুল বলেছেন, ‘যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ, কোন মানুষের ঈমান সঠিক হতে পারবে না যতক্ষণ না সে সৎ ও বিশ্বাসী হয়। আমি তোমাদেরকে হেদায়েত করছি যে তোমরা কোন ব্যক্তির অধিক নামাজ ও অধিক রোজা দেখে ভুল করো না, বরং লক্ষ্য করো সে যখন কথা বলে সত্য বলে কি না, তার কাছে রাখা আমানত বিশ্বস্ততার সাথে ফিরিয়ে দেয় কিনা এবং নিজের পরিবার পরিজনের জন্য হালাল উপায়ে রোজগার করে কিনা।’ (সিরাত বিশ্বকোষ – ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।
একই শিক্ষার প্রতিধ্বনী করে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, “কেহ ধার্মিক কি অধার্মিক পরীক্ষা করিতে হইলে দেখিতে হইবে, সে ব্যক্তি কতদূর নিঃস্বার্থ। যে অধিক নিঃস্বার্থ সে অধিক ধার্মিক। সে পণ্ডিতই হউক, মূর্খই হউক, সে শিবের বিষয় জানুক বা না জানুক সে অপর ব্যক্তি অপেক্ষা শিবের অধিকতর নিকটবর্তী। আর যদি কেহ স্বার্থপর হয়, সে যদি পৃথিবীতে যত দেবমন্দির আছে, সব দেখিয়া থাকে, সব তীর্থ দর্শন করিয়া থকে, সে যদি চিতা বাঘের মতো সাজিয়া বসিয়া থাকে, তাহা হইলেও সে শিব হইতে অনেক দূরে অবস্থিত (রামেশ্বর-মন্দিরে প্রদত্ত বক্তৃতা)।
আমাদের এই অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ বলতে কিছু ছিল না। ব্রিটিশদের শাসনযুগের আগে এখানে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা একটিও হয় নি। হ্যাঁ, রাজনৈতিক সংঘাত অনেক হয়েছে, তবে সাম্প্রদায়িক সংঘাত একটাও নয়। ব্রিটিশ বেনিয়ারা ভারত দখল করার পরই চালিয়ে দিল Divide and rule নীতি। তারা হিন্দু ও মুসলিমদের জন্য আলাদা স্কুল-কলেজ বানালো, আলাদা রাজনৈতিক দল বানালো, আলাদা হোটেল বানালো, কলেজে আলাদা হোস্টেল বানালো। তারা হিন্দুদেরকে শেখালো মুসলিমরা বিদেশী আগ্রাসনকারী জাতি, তারা এ মাটির সন্তান নয়। এতদিন যে দেশে হিন্দু মুসলিম শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করেছে, একই বাজারে সদাই করেছে, একই পুকুরের পানি খেয়েছে, হিন্দু ডাক্তার মুসলমান রোগীর চিকিৎসা করেছে, মুসলমানদের চাষ করা ফসল হিন্দুরা খেয়েছে সেই দেশেই সৃষ্টি হলো জাতিগত দাঙ্গার। রায়টে লক্ষ লক্ষ হিন্দু মুসলমানের লাশ পড়ল, বাড়ি পুড়ল, উদ্বাস্তু হলো। শেষতক এক দেশে থাকাও তাদের পক্ষে সম্ভব হলো না, তারা দুই জাতির জন্য দেশ ভাগ করে ফেলল। এ সবই হলো ব্রিটিশদের কূটবুদ্ধির ফল। আজ হিন্দুদের উগ্রবাদী একটি গোষ্ঠী ইসলাম ধর্মের মহামানবদেরকে, কেতাবকে গালি দেয়, মুসলমানদের উগ্রবাদী ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠী হিন্দুদের উপাস্যদেরকে, অবতারগণকে গালি দেয়। তাদের এই পারস্পরিক বিদ্বেষ সাধারণ ধর্মবিশ্বাসী মানুষের মধ্যে ছড়ায়। তখন সৃষ্টি হয় দাঙ্গা। এই দাঙ্গার পরিণতি কী তা ভারতবাসী গত দেড়শ বছরে প্রত্যক্ষ করেছে, সেটা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। ব্রিটিশরা এভাবে দুই ভাইকে শত্রুতে পরিণত করে দিয়ে গেছে। এইসব সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে ধান্ধাবাজ রাজনৈতিক গোষ্ঠী কীভাবে কাজে লাগায় সে তথ্যও সকলের জানা।
কিন্তু এই শত্রুতা আর কতদিন? এখনও কি সময় হয় নি শত্রুতা ভুলে নিজেদের সত্যিকার পরিচয়কে স্বীকৃতি দিয়ে আবার ভাই ভাই হয়ে যাওয়ার? এটা করার জন্য প্রয়োজন কেবল মানসিকতার পরিবর্তনের, প্রয়োজন সত্য সম্পর্কে জানার। আমরা এই দুটো জাতির মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি, তাদের উভয়ের ধর্মের মূল সত্য যে এক সেটাকে উভয়ের ধর্মগ্রন্থ থেকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। আমরা বলছি, ধর্ম কোনো আচার অনুষ্ঠানের নাম নয়, ধর্ম হচ্ছে একটি বৈশিষ্ট যা কোনো বস্তু ধারণ করে। আগুনের ধর্ম হলো পোড়ানো, পানির ধর্ম ভেজানো, চুম্বকের ধর্ম আকর্ষণ করা। আগুন যদি না পোড়ায়, পানি যদি না ভেজায়, চুম্বক যদি না টানে তাহলে সে তার ধর্ম হারালো। তেমনি মানুষের প্রকৃত ধর্ম হচ্ছে মানবতা। এই মানবতাবোধে মানুষকে জাগ্রত করার জন্যই নবী-রসুল-অবতারগণ যুগে যুগে আবির্ভূত হয়েছেন। তারা সত্য নিয়ে এসেছেন, যারা সেই সত্যকে ধারণ করেছেন তারাই হয়েছে ধার্মিক। যদি মানুষ সত্যকেই ধারণ না করে, মানবতাবোধে পূর্ণ না হয়, সে যতই উপাসনা করুক সে ধর্মহীন। ইসলামের একটি নাম হচ্ছে দীনুল হক যার অর্থ সত্য জীবনব্যবস্থা। যে জীবনব্যবস্থা মানবজাতিকে সত্যে পূর্ণ করবে সেটাই তো প্রকৃত ধর্ম। শেষ নবী আরবে এসেছেন, তাই কোর’আনও এসেছে আরবিতে। কিন্তু ভারতবর্ষের অবতারগণ কথা বলেছেন সংস্কৃতিতে বা এ অঞ্চলের কোনো ভাষায়। তাঁদের উপর যে শাস্ত্রবাণী এসেছে সেগুলো এ অঞ্চলের মানুষের ব্যবহৃত ভাষাতেই এসেছে। ভাষার পার্থক্য থাকলেও সত্যের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। খালের পানি, নদীর পানি, সাগরের পানি, বৃষ্টির পানি সব পানিরই আণবিক গঠন অভিন্ন।
মুসলমানেরা যদি মনে করে আরবভূমি তাদের, হিন্দুরা যদি মনে করে ভারত কেবল তাদের, খ্রিষ্টানরা যদি মনে করে ইউরোপ শুধু তাদের, ইহুদিরা যদি মনে করে ফিলিস্তিন কেবল তাদের, বৌদ্ধরা যদি মনে করে মিয়ানমার কেবল তাদের তাহলে সেটা হবে চরম মূর্খতা। কারণ পৃথিবী আল্লাহর, সমস্ত ভূমি আল্লাহর। মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, মাটিতেই আবার তাকে ফিরে যেতে হবে। তাই এই মাটির উপর অধিকার রয়েছে প্রত্যেক বনি আদমের। কোর’আন মোতাবেক মাটির মানুষের ভিতরে আল্লাহর রূহ রয়েছে (সুরা হিজর -৯)। সনাতন ধর্মমতে প্রতিটি মানুষের মধ্যেই পরমাত্মার অংশ রয়েছে। প্রতিটি মানুষ স্রষ্টার প্রতিভূ। সেই মানুষের অধিকারকে অস্বীকার করে কেউ আল্লাহর, পরমাত্মার, ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করতে পারবে না।
একই ভাবে খ্রিষ্টধর্ম, ইহুদিধর্ম, জরোথুস্ত্রীয় ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্মও একই স্রষ্টা থেকে আগত, যদিও তাদের ধর্মের প্রকৃত শিক্ষাকে বিকৃত করে ফেলা হয়েছে। এদের সকলকেই তাদের স্ব স্ব ধর্মগ্রন্থের শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করে এক মহাজাতিতে পরিণত করা সম্ভব। সেটা কীভাবে তা পরবর্তী কোনো এক সময় আলোচনা করার ইচ্ছা রইল। তবে সকল ধর্মের অনুসারীদেরকে একটা কথা উপলব্ধি করতে হবে যে, আল্লাহ, ঈশ্বর, গড, এলি, ভগবান, পরমব্রহ্ম চান মানবজাতির ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব। আর ইবলিস, শয়তান, এভিল স্পিরিট, ডেভিল, লুসিফার, আসুরিক শক্তি চায় মানুষে মানুষে অনৈক্য, শত্রুতা, বিদ্বেষ। প্রকৃত যারা ধার্মিক তারা বিশ্বাস করেন, আল্লাহর এই চাওয়াকে পূরণ করাই হলো ধর্ম।
এত কথা, এত লেখার উদ্দেশ্য কী? উদ্দেশ্য পরিষ্কার, তা হলো এই- এ অঞ্চলে অন্তত মধ্যপ্রাচ্যের মতো জঙ্গিবাদী তা-ব সেভাবে এখনও বিস্তার লাভ করে নি, তবে সেই ষড়যন্ত্র চলছে। আর এই তা-বকে রুখে দিতে হলে হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়কে পরস্পরের দিকে ঐক্যের হাত প্রসারিত করতে হবে। কেবল ঈদের দিনে মুসলমানে মুসলমানে কোলাকুলি আর পূজার দিনে হিন্দুতে হিন্দুতে আলিঙ্গন করলে হবে না। তাদের উভয়ের সঙ্গে উভয়েরই কোলাকুলি ও আলিঙ্গন করতে হবে। এতে কারো জাত যাবে না। এজন্যই নজরুল লিখেছিলেন,
ছুঁলেই তোর জাত যাবে?
জাত ছেলের হাতের নয় তো মোয়া।
সমস্ত বনি আদমকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রাণের তাগিদে, সেই তীব্র আকুতি নিয়ে দেশজুড়ে সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি স্থাপনের লক্ষ্যে আমরা হাজার হাজার সভা-সমাবেশ, সেমিনার, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, সর্বধর্মীয় সম্মেলন করেছি। ধর্মব্যবসায়ীদের ফতোয়াবাজি, নিন্দাবাদ, অপপ্রচার আর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে, শত নির্যাতন সহ্য করে, নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে আমরা এই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। আমাকে এজন্য ভয়াবহ মাশুল দিয়ে হয়েছে। আমার নিজ বাড়িতে বহুবার হামলা চালানো হয়েছে, বাড়ি ঘর আগুনে ভস্মীভূত করে ফেলা হয়েছে, সবকিছু লুটপাট করা হয়েছে, আমাদের দুই ভাইকে গরু জবাই করা ছুরি দিয়ে জবাই করেছে ধর্মব্যবসায়ীদের অনুসারীরা। হামলা হয়েছে হেযবুত তওহীদের আরো বহু সদস্য-সদস্যার উপরও। জানি না কবে আমরা ধর্মের নামে দাঁড়িয়ে থাকা অধর্মের এই প্রাচীরকে ভাঙতে পারবো, তবে এটা জানি সত্যের মোহনায় একদিন সকল জাতি, ধর্ম, বর্ণের মানুষ এসে মিলিত হবেই হবে ইনশাল্লাহ। সেদিন পরাজিত হবে ইবলিস শয়তান, সেদিন আল্লাহর বিজয় হবে। আল্লাহর বিজয় মানেই মানবতার বিজয়।
loading...
loading...
আপনার লেখা ভালো লাগলো । আপনি হিজবুত তাওহীদের সদস্য হয়তো । তবে তাদের যদি এই আদর্শ হয় তবে আমার ভালো লাগছে আপনাদের
আদর্শ ।
সমগ্র মানবজাতির কল্যানের জন্যই ধর্ম কিন্তু ধর্মের জন্য মানুষ না এই আপ্তবাক্য বোঝার ক্ষমতা মানুষের হোক / আপনারা যদি সেই লক্ষ্যে কাজ করে থাকেন সেটা খুবই ভালো । আপনাদের প্রতি আমার অকুন্ঠ সমর্থন রইলো । আমরা হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিষ্টান সবাই মিলেমিশে ভালো থাকতে চাই ।
ভালো থাকবেন ।

loading...
ধর্নবাদ আপনার মন্তব্যর জন্য। হ্যাঁ আমি হেযবুত তওহীদের সদস্য।
loading...
নবী-রসুল-অবতারগণ যুগে যুগে যে সত্য নিয়ে এসেছেন, যারা সেই সত্যকে ধারণ করেছেন তারাই হয়েছে ধার্মিক। যদি মানুষ সত্যকেই ধারণ না করে, মানবতাবোধে পূর্ণ না হয়, সে যতই উপাসনা করুক সে ধর্মহীন।
যে জীবনব্যবস্থা মানবজাতিকে সত্যে পূর্ণ করবে; আমরা সেই ধর্মকেই মানতে চাই। যা আমাদের স্বচ্ছ রাখবে। ব্যানার বুঝি না; ব্যানারের নেতৃত্ব যারাই দিক কিছু যায় আসে না; যুগের ইতিহাস পর্যালোচনায় সৎ এবং সুন্দরের বিকল্প নেই। সত্য ধারণ করতে চাই।
loading...
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয়….
loading...
মানুষের ভালোবাসার বন্ধন অটুট থাকুক। হিংসা, বিদ্বেষ চাই না।
loading...
হিংসা, বিদ্বেষের উদ্ধে ভালোবাসার বন্ধন অটুট রাথতে হবে। ধন্যবাদ প্রিয় আপা।
loading...
সত্যের মোহনায় একদিন সকল জাতি, ধর্ম, বর্ণের মানুষ এসে মিলিত হবেই হবে ইনশাল্লাহ। সেদিন পরাজিত হবে ইবলিস শয়তান, সেদিন আল্লাহর বিজয় হবে।
আল্লাহর বিজয় মানেই মানবতার বিজয়।
loading...
অবশ্যই আল্লাহর বিজয় মানেই মানবতার বিজয়। ধন্যবাদ প্রিয় দাদা।
loading...
অবশ্যই ধর্মীয় অন্ধত্বকে না বলতে হবে। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যর জন্য।
loading...