(মূল লেখা এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী থেকে সংক্লিত)
যেটা নেই (স্রষ্টা) তাকে মানুষ সেই প্রাক-ঐতিহাসিক সময়ে কল্পনা কোরে নিলো, শুধু কল্পনা কোরে নিলো না, সেটা কী রকম তার একই রকম বি¯তৃত বিবরণ পৃথিবীর এধার থেকে ওধার পর্য্যন্ত বিশ্বাস কোরে নিলো- কিন্তু যেটা আছে (মাধ্যাকর্ষণ) সেটাকে মানুষ হাজার হাজার বছরেও আবিষ্কার কোরতে পারলো না- এ কেমন কথা? এর জবাব হোচ্ছে- স্রষ্টা তার প্রেরিতদের দিয়ে সেই প্রথম মানুষটি থেকেই তার অস্তিত্ব ও গুণাবলী অর্থাৎ তিনি কেমন তা মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন বোলেই মানুষ তার সম্পর্কে জানে, আর মধ্যাকর্ষণ সম্বন্ধে নিউটনের আগে কাউকে জানান নি বোলেই মানুষ তা জানতে পারে নি। স্রষ্টা যদি মানুষ সৃষ্টি কোরে, তাকে পৃথিবীতে ছেড়ে দিয়েই ক্ষান্ত হোতেন, প্রেরিতদের দিয়ে নিজের সম্বন্ধে কিছু না জানাতেন তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে মানুষ আজও তার সম্বন্ধে কিছু জানতো না- কিংবা স্রষ্টা কেউ একজন হোতে পারেন ভাবলেও তার গুণাবলী, সিফত সম্বন্ধে কোন ধারণা কোরতে পারতো না। নাস্তিকরা স্রষ্টার অস্তিত্বের যে প্রত্যক্ষ বা চাক্ষুষ প্রমাণ চান, ওরকমের প্রমাণহীন বহু লক্ষ জিনিষকে, ব্যাপারকে তারা সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করেন। তারা যার যার বাপকে বাপ বোলে বিশ্বাস করেন, কিন্তু এর কোন প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই- প্রতিবেশীর ছেলের চেহারা বাপের মত, শুধু এইটুকুর উপর নির্ভর কোরেই তারা তাদের সত্যই বাপ ও ছেলে বোলে বিশ্বাস করেন। এ বিশ্বাসগুলো সব অবস্থাগত, আনুষাঙ্গিক । কিন্তু স্রষ্টার প্রমাণ তারা চান প্রত্যক্ষ, চাক্ষুষ।
আসল কথা – স্রষ্টা আছেন কিন্তু তিনি আমাদের সামনে এসে দাঁড়াবেন না বা তার ইচ্ছা শক্তি প্রয়োগ কোরে মানুষকে তার প্রতি বিশ্বাস এনে দেবেন না। কারণ তা কোরলে মানুষকে বিচার কোরে শাস্তি বা পুরস্কার দেবার আর কোন অর্থ থাকবে না। মানুষ তা হোলে গাছ-পাথর, পাহাড়-পর্বতের মত তার আরেকটি সৃষ্টি মাত্র হতো, তার নিজের হাতের তৈরী যুক্তি, বুদ্ধিসহ সর্বশ্রেষ্ট সৃষ্টি হতো না।
স্রষ্টার অস্তিত্ব স্বীকার কোরে নেওয়া হলো। প্রশ্ন হোচ্ছে আমরা কি তাকে ধারণা কোরতে পারি? তিনি নিজে বোলেছেন- না, তোমরা পারো না। কেন পারি না? পারি না- কারণ আমরা সৃষ্ট, আমাদের সমস্ত শক্তি সীমিত। ধারণার শক্তিও সীমিত; স্রষ্টা অসীম। স্রষ্টাকে কেন, এই মহাসৃষ্টির একটা সামান্য অংশকেও আমরা ধারণায় আনতে পারি না। স্থান (ধারণা কোরতে চেষ্টা কোরলে মোটামুটি আমরা কয়েক মাইলের দুরত¦ ধারণা কোরতে পারি। আমাদের পৃথিবীরই এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশের দূরত্ব চিন্তা কোরতে গেলে মাথা গুলিয়ে যেতে চায়। আর এই সৌর জগত, তারপর এধষধীু তারপর মহাশূণ্যের অগণ্য আলোক-বর্ষের দূরত্ব ধারণা করা মানুষের অসাধ্য। ঠিক তেমনি সময় সম্বন্ধে ধারণা কোরতে চেষ্টা করলে আমরা কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিনের সময় আমাদের ধারণার মধ্যে আনতে পারি। একটা সম্পূর্ণ মাসের সময়টাও আমার মনে হয় কেউ সম্যকভাবে ধারণার ভেতর আনতে পারবে না। বিগত এবং ভবিষ্যতের কোটি কোটি বৎসরের সময় ধারণার মধ্যে আনা অসম্ভব। যদি সৃষ্টির একটা অতি, অতি ক্ষুদ্র অংশই মানুষের ধারণা করার শক্তি না থাকে তবে সেই সৃষ্টির স্রষ্টাকে ধারণা করা যে যাবে না তা অতি পরিষ্কার।
তাহলে পৃথিবীতে মানব জাতির যে চিরন্তন সমস্যা- অন্যায়, অবিচার, যুদ্ধ-বিগ্রহ, রক্তারক্তি, না কোরে শান্তিতে বসবাস করার পথ খুঁজে বার কোরতে যেয়ে প্রথম যে প্রশ্নের সমাধান অর্থাৎ স্রষ্টা আছেন কিনা, এর জবাব আমরা এখন নিশ্চয়ই ধোরে নিতে পারি যে- স্রষ্টা আল্লাহ, আছেন। এখন থেকে এ কথাটা সর্বক্ষণ মনে রাখতে হবে যে স্রষ্টার অস্তিত্ব এবং তার গুণাবলী, সিফতসমূহ হবে এরপর থেকে সমস্ত চিন্তাধারার ভিত্তি, সিদ্ধান্ত সূত্র। এই সিদ্ধান্ত-সূত্র থেকে যেখানেই পদস্খলন হবে সেখানেই সিদ্ধান্ত ভুল হবে। চিন্তা-ধারার মধ্যে যেখানেই এই ভিত্তিকে ভুলে যাব সেখানেই পথ হারিয়ে যাব এবং ভুল সিদ্ধান্তে যেয়ে পৌঁছব। উদাহরণ স্বরূপ ধরা যাক, আজ-কালকার মহাশূন্য গবেষণা বা যাত্রা । যে সব অংক কোষে মানুষ ঠিকমত চাঁদে গেছে, সেখান থেকে ফিরেও এসেছে- সে সব হিসাবপত্রের মূল ভিত্তি, সিদ্ধান্ত-সূত্র হলো এলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব । কোন মহাশুন্য বিজ্ঞানীকে প্রশ্ন কোরে দেখুন যে এই আপেক্ষিক তত্ত্বকে বাদ দিয়ে হিসাব কোরলে কি ফল হবে? তার সোজা জবাব হবে- সমস্ত বিপর্যস্ত হোয়ে যাবে। এই যে প্রায় কয়েক হাজার কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এই যে রকেটগুলো মঙ্গলগ্রহ, শুত্র“গ্রহ পর্য্যন্ত ঠিকমত পৌঁছে পৃথিবীতে নানারকম বৈজ্ঞানিক তথ্য পাঠাচ্ছে- এর কোন কিছুই সম্ভব হোত না যদি আইনস্টাইনের এই GB E=Mc2 কে ভিত্তি হিসাবে না নেয়া হোত। অর্থাৎ যে কোন হিসাবপত্র বা চিন্তাধারাতে আসল ভিত্তি সিদ্ধান্ত সূত্র কে যখনই ভুলে যাওয়া বা অগ্রাহ্য করা হবে, তখনই হিসাবে বা চিন্তাধারাতে ভুল হোতে বাধ্য। আপেক্ষিক তত্বের উপর নির্ভর না কোরে হিসাব কোরে চাঁদ অভিমুখে রকেটে চড়ে রওনা হোলে যেমন মানুষ চাঁদে না পৌঁছে মহাশূণ্যে হারিয়ে যাবে, তেমনি স্রষ্টার অস্তিত্বকে হিসাবে না রেখে মানুষ তার জীবন ব্যবস্থা নির্দ্ধারণ বা তৈরী কোরে নিলে সে অবশ্যম্ভাবীরূপে বিপর্যস্ত হবে- যেমন আজ হোচ্ছে।
(*** শেষ ***)
loading...
loading...
সংকলনটি শেয়ার করার জন্য সম্মানিত এমামুযযামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী’র প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আপনাকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি মি. সালজার রহমান সাবু।
loading...
ধন্যবাদ। লেখাটি শেয়ার করেছেন বলে পড়তে পারলাম।
loading...