সিদ্ধান্ত-সূত্র – পর্ব -০২

আমরা কোটি কোটি নয় অসংখ্য আচম্বিত ঘটনার মধ্যে মাত্র দশটির প্রতীক নিয়েছিলাম। তাতেই এই সংখ্যার সম্ভাবনা পাচ্ছি। তাহলে কোটি কোটি নিলে দেখা যাবে, যে সৃষ্টি আচম্বিতে হোয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অসীম সংখ্যার, অর্থাৎ যে সংখ্যার শেষ নেই, তার মধ্যে একবার- অর্থাৎ অসম্ভব। এখন- দু’টো সম্ভাবনার মধ্যে একটি অসম্ভব বোলে বাদ পড়লে বাধ্য হোয়ে দ্বিতীয়টিকে গ্রহণ কোরতে হবে, এবং সেটা পরিকল্পিত এবং পরিকল্পিত মানেই স্রষ্টা। তৃতীয় আর কোন থিওরীর সম্ভাবনা কিছুই নেই। এই একই হিসাব ঠিক উল্টো দিক থেকেও করা যায়। যেমন যে কোটি কোটি আচম্বিত ঘটনা ধারাবাহিকভাবে ঘটে আসার দরুণ আজ আমরা এই বর্ত্তমান অবস্থায় এসে পৌঁছেছি- ঠিক তেমনি কোটি কোটি অন্য রকম আচম্বিত ঘটনা (অপপরফবহঃ) এই মহাকালের মধ্যে ঘোটতে পারতো। যার একটি মাত্র ঘটনাও সমস্ত লণ্ডভণ্ড কোরে দিতে পারতো। কিন্তু তেমন একটি মাত্র ঘটনাও ঘটেনি। যেমন ধরুন- উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর জমানো বরফ যদি গলে যেতো বা যায় তবে বিজ্ঞানীদের মতে, পাহাড়-পর্বত ছাড়া সমস্ত পৃথিবী পানিতে ডুবে যাবে। ঘোটতে পারতো, ঘটেনি।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, অংকের হিসাবে, স্রষ্টার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। যে কোন চিন্তাশীল মানুষ এই বিশাল সৃষ্টির দিকে চেয়ে দেখলে এর মধ্যে এক বিরাট পরিকল্পনা দেখতে পাবেন যেটাকে অস্বীকার করা অসম্ভব। জ্ঞানের অভাবে যারা স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না, অর্থাৎ নাস্তিক, তারা ধারণা করেন যে, মানুষকে অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখতে, ভয় দেখাতে, স্রষ্টাকে সৃষ্টি করা হোয়েছে। এই ধারণাটা বিশ্লেষণ করা যাক। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, স্রষ্টার ধারণা আজকের নয়। ইতিহাসের অনেক আগে, যখন থেকে মানুষ সম্বন্ধে জানা যায় তখন থেকেই মানুষ একজন স্রষ্টার ব্যাপারে সচেতন ছিলো। প্রতœতাত্বিকেরা মাটি খুড়ে হাজার হাজার বছর আগের যে সব জনবসতির খোঁজ পেয়েছেন, দেখেছেন সবখানেই ধর্মের অর্থাৎ স্রষ্টার কোন না কোন রকমের ধারণা ছিলো। বিভিন্ন মহাদেশে, পৃথিবীর যেখানেই কোন প্রাক-ঐতিহাসিক জনপদের সন্ধান পেয়েছেন সেখানেই তারা পেয়েছেন উপাসনার, ধর্মের চিহ্ন। অর্থাৎ স্রষ্টা সম্বন্ধে একটা ধারণা, একটা চেতনা পৃথিবীময় ছড়িয়ে ছিলো এটা সন্দেহাতীত। পৃথিবীর প্রধান ভূ-ভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন আমেরিকা ও অষ্ট্রেলিয়াতেও যেসব প্রাক-ঐতিহাসিক মানুষের সন্ধান পাওয়া গেছে সে সবগুলিতেও তাই। যখন এইসব বিভিন্ন জনসমষ্টির মধ্যে কোন সংযোগ, আদান-প্রদান ছিলো না, ভাষা, সংস্কৃতি সব কিছুই ছিলো ভিন্ন, একে অন্যের অস্তিত্ব পর্য্যন্ত জানতো না, তখন ঐ একটি ব্যাপারে সবাই সচেতন ছিলো এটা কেমন কোরে হলো? পৃথিবীময় ছড়িয়ে থাকা এই জনসমষ্টিগুলি শুধু যে স্রষ্টার ব্যাপারে সচেতন ছিলো তাই নয়- তারা ঐ স্রষ্টার গুণাবলী- আমরা যেটাকে বলি সিফত- একই বোলে কেমন কোরে স্থির কোরল? অর্থাৎ স্রষ্টা মহা-শক্তিশালী, সর্বব্যাপী, দয়ালু, যা ইচ্ছা কোরতে পারেন ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে দেখা যাচ্ছে, মানুষ যদি স্রষ্টার ধারণাকে সৃষ্টি কোরে থাকে তবে স্বীকার কোরে নিতে হবে যে বহু আগে- কত আগে কেউ বোলতে পারবে না, তবে প্রাক-ঐতিহাসিক যুগে, সমস্ত পৃথিবীময় বিছিন্ন, বিভিন্ন স্থানে মানুষ একটা জুজুর ভয় সৃষ্টি করলো, যে জুজুটার গুণাবলী অকস্মাৎ কেমন কোরে একই হোয়ে গেলো- অর্থাৎ ঐ জুজুটা সর্বশক্তিমান, সর্বত্র বিরাজমান, সর্বজ্ঞানী, অসীম ক্ষমাশীল, দয়াময়, ইত্যাদি। এবার দেখা যাক এটা কতখানি সম্ভব।
পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তি আছে এ কথা প্রতিষ্ঠিত সত্য- এবং এটা আছে পৃথিবীর সৃষ্টির একদম প্রথম থেকে এ কথাও প্রতিষ্ঠিত সত্য। এ পৃথিবী স্রষ্টাই তৈরী কোরে থাকেন আর আচম্বিতে নিজেই সৃষ্টি হোয়ে থাক, এই মধ্যাকর্ষণ পৃথিবী সৃষ্টির প্রথম মুহূর্ত্ত থেকে আজ পর্য্যন্ত এই পৃথিবীর সমস্ত জিনিষের, পাহাড়-পর্বত, নদী, সমুদ্রের এক কথায় প্রত্যেক জিনিষের প্রতিটি অণুপরমানুকে নিচের দিকে টেনে রাখছে। আপনার আমার দেহের প্রতিটি অণু-পরামাণুকেও টেনে পৃথিবীতে ধোরে রেখেছে। সৃষ্টির প্রথম থেকে আজ পর্য্যন্ত এক সেকেণ্ডের এক ভগ্নাংশের জন্যও কখনো বিরতি দেয়নি। যে মস্তিষ্ক দিয়ে মানুষ চিন্তা করে, অনুভব করে, সেই মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষ কেও সেই অনাদিকাল থেকে এই মধ্যাকর্ষণ অবিরতভাবে টেনে রেখেছে। কিন্তু মানুষ এই সর্বব্যাপী শক্তির কথা জানতো না। কোনদিন একে আবিষ্কার কোরতে পারে নি, একে ধারণাও কোরতে পারে নি। মাত্র সেদিন নিউটন একে আবিষ্কার কোরলেন। কেন? এতদিন কি মানুষ তার মগজ মস্তিষ্ক ব্যবহার করে নি? নিশ্চয় কোরেছে। নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আবিষ্কারের আগে মানুষ বহু কিছু আবিষ্কার কোরেছে, পিরামিডের মত কালজয়ী সৌধ তৈরী কোরেছে, কিন্তু যে শক্তির অধীনে থেকে তার জীবনের প্রতি মুহূর্ত্তে কাটছে, যে শক্তি এক মুহূর্ত্ত বিরতি দিলে সে পৃথিবীর বহির্মূখ, অপকেন্দ্রীক শক্তির ফলে ছিটকে মহাশূণ্যে নিক্ষিপ্ত হবে সে শক্তি সম্বন্ধে সে ছিলো সম্পূর্ণ অজ্ঞ- মাত্র কয়েক বছর আগে পর্য্যন্ত।

চলবে……….

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৫ টি মন্তব্য (লেখকের ২টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ০৯-০৩-২০১৭ | ২২:৪৬ |

    সিদ্ধান্ত-সূত্র দ্বিতীয় পর্ব পড়লাম। জ্ঞানগর্ভ আলোচনাটির সম আলোচনা করা মুশকিল। পড়ে চলেছি। ক্ষুদ্র এই মস্তিষ্কে জানার পরিধি সামান্য বাড়িয়ে নেবার চেষ্টা নিচ্ছি।

    লিখাটি শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

    GD Star Rating
    loading...
  2. ফকির আবদুল মালেক : ১০-০৩-২০১৭ | ৭:৪১ |

    দ্বিতীয় পর্বও পড়লাম।

    একটু জটিল আর অগোছালো উপস্থাপনার কারণে লেখাটি বুঝতে সমস্যা হয়েছে আমার। অনেক জটিল বিষয়ও উপস্থাপনার কারণে সহজবোধ্য হয়।

    পোষ্ট চলুক।

    GD Star Rating
    loading...
    • সালজার রহমান সাবু : ১০-০৩-২০১৭ | ১১:০৯ |

      আমি দুঃখিত একটু জটিল আর অগোছালো উপস্থাপনার জন্য।

      GD Star Rating
      loading...
  3. খেয়ালী মন : ১০-০৩-২০১৭ | ১৫:০৯ |

    অনেক চমৎকার বিষয় উপস্থাপন করেছেন…
    ভালোলাগা রেখে গেলাম , সাথে থাকবো….

    ও ভালো কথা
    ঘোটতে কথাটা বেশ কয়েক স্থানে দেখা গেছে বানান টা ঠিক করেন।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gifhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    GD Star Rating
    loading...