স্যার উইলিয়াম ম্যুর

পুঁজিবাদী ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল মস্কো গিয়েছিলেন, কমিউনিস্ট রাশিয়ার রাষ্ট্রনেতা জোসেফ স্ট্যালিনের সাথে যুদ্ধের ব্যাপারে বুদ্ধি পরামর্শ করার জন্য। ক্রেমলিনের বিরাট প্রাসাদে বসে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করতে করতে গভীর রাত্রে চার্চিলের ক্ষিদে পেয়ে গেলো, যদিও রাত্রের প্রথম দিকে তারা যে ভোজ খেয়েছিলেন তা রাশিয়ার সাধারণ মানুষ, শ্রমিক, কৃষক জীবনেও দেখেনি। যাই হোক, ক্ষিদে চাপতে না পেরে চার্চিল বলেই ফেললেন যে কিছু না খেলে আর চলছে না। খাওয়া-দাওয়ার পাট আগেই চুকে গিয়েছিলো বলে স্ট্যালিন আর কাউকে ডাকাডাকি না করে উঠে গিয়ে ফ্রিজ খুলে ভেড়ার একটি আস্ত রানের রোস্ট বের করে এনে টেবিলে রাখলেন।

চার্চিল তো চার্চিলই, এক হাত নেবার লোভ সামলাতে পারলেন না। রোস্ট চিবুতে চিবুতে বললেন “ইস! কবে আমি এমন কোরতে পারবো যে ইংল্যান্ডের প্রতিটি ঘরে ফ্রিজের মধ্যে এমনি ভেড়ার রানের রোস্ট থাকবে”। স্ট্যালিনের গালে এটা ছিল একটা মারাত্মক চড়। অর্থনৈতিক সাম্যবাদের দেশে রাশিয়ার ঘরে ঘরে ফ্রিজের মধ্যে রানের রোস্ট নেই, স্ট্যালিনের প্রাসাদের ফ্রিজে আছে। কিন্তু বলার কিছু ছিল না। স্ট্যালিনকে চুপ কোরে চড়টা হজম করতে হয়েছিল। স্ট্যালিন যখন চার্চিলকে রানের রোস্ট খাওয়াচ্ছিলেন ও খাচ্ছিলেন, তখন তুমুল যুদ্ধ চলছে। হিটলারের বাহিনী মস্কোর কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। লক্ষ লক্ষ রাশিয়ান অর্ধাহারে অনাহারে থেকে প্রাণপণে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার সৈনিক প্রচণ্ড শীতে জমে মারা পড়ছে।

অনেকটা অনুরূপ অবস্থায় এই শেষ জীবন-ব্যবস্থার নেতারা কি করেছেন তার একটা তুলনা দেয়া দরকার। এই ইসলাম যখন ইসলাম ছিল- অর্থাৎ বিশ্বনবীর কাছ থেকে যারা সরাসরি শিক্ষা-গ্রহণ করেছিলেন, তাদের অন্যতম, দ্বিতীয় খলিফা ওমরের (রাঃ) সময় দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। যতদিন দুর্ভিক্ষ ছিলো ততদিন দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষ যেমন অর্দ্ধাহারে অনাহারে থাকে তিনিও তেমনি থাকতেন। ওমর (রাঃ) প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যতদিন না জনসাধারণ এমন অবস্থায় পৌঁছবে যে তারা ভালো কোরে খাবার পরও উদ্বৃত্ত থাকবে ততদিন তিনি গোশত-মাখন এমনকি দুধ পর্যন্ত খাবেন না এবং খানও নি, যা ছিল তখনকার আরবের প্রধান খাদ্য।

তিনি বলতেন “আমি যদি ঠিকমত খাই তবে আমি কী করে বুঝবো আমার জাতি কী কষ্ট সহ্য করছে?” এই অর্ধাহারে অনাহারে থেকে খলিফা ওমরের (রাঃ) মুখ রক্তশূন্য ও চুপসে গিয়েছিল। এই ঘটনা ও ওমরের (রাঃ) ঐ কথা গুলো ঐতিহাসিক সত্য (ইসলামের কঠোর বিরুদ্ধবাদী, মহানবীকে প্রতারক, ভণ্ড বলে প্রমাণ করা চেষ্টায় প্রথম সারির লেখক স্যার উইলিয়াম ম্যুর এর দ্যা আর্লি খেলাফাত বইয়ের এর ২৩২-২৩৩ পৃঃ দেখুন)।

16427802_1385392278187098_7691136718687080291_n

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৫ টি মন্তব্য (লেখকের ২টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. মনা পাগলা : ০৭-০২-২০১৭ | ২৩:৫৬ |

    হুম….বিষয়টা উপলব্ধি করার মতো…শুভেচ্ছা রইলো বন্ধুhttps://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...
  2. মুরুব্বী : ০৮-০২-২০১৭ | ৬:৩৭ |

    যুগে যুগে ইসলামের আদর্শ এবং নৈতিকতা বোধকে এভাবেই কটাক্ষ করা হয়েছে।

    GD Star Rating
    loading...
  3. মামুন : ০৮-০২-২০১৭ | ২০:১৪ |

    বিশ্বনবীর কাছ থেকে যারা সরাসরি শিক্ষা-গ্রহণ করেছিলেন, তাদের অন্যতম, দ্বিতীয় খলিফা ওমরের (রাঃ) সময় দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। যতদিন দুর্ভিক্ষ ছিলো ততদিন দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষ যেমন অর্দ্ধাহারে অনাহারে থাকে তিনিও তেমনি থাকতেন। ওমর (রাঃ) প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যতদিন না জনসাধারণ এমন অবস্থায় পৌঁছবে যে তারা ভালো কোরে খাবার পরও উদ্বৃত্ত থাকবে ততদিন তিনি গোশত-মাখন এমনকি দুধ পর্যন্ত খাবেন না এবং খানও নি, যা ছিল তখনকার আরবের প্রধান খাদ্য।- আমাদের নেতৃবৃন্দ যদি এর একটুকুও অনুসরণ করতেন, সমাজের চেহারাটাই পালটে যেতো।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    GD Star Rating
    loading...