কেন জীবন থেকে মানবতা হারিয়ে গেল?

যখন থেকে মূল্য কেবল অর্থ দ্বারা নির্ধাণ করা শুরু হলো তখন থেকে কিছু অমূল্য সম্পদ মূল্যহীন হতে থাকলো। সত্যবাদিতা, আতিথেয়তা, সেবাপরায়ণতা, ন্যায়পরায়ণতা, দয়া, মায়া, ভালোবাসা, বিশ্বাস ইত্যাদি অমূল্য সম্পদ তার দ্যুতি হারিয়ে নিষ্প্রভ হয়ে যাচ্ছে, অর্থ দ্বারা এগুলির মূল্যায়ন সম্ভব নয় বলে মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছে।
.
মায়ের ভালোবাসা, পিতার অপার স্নেহ, শিক্ষকের জীবনগড়া শাসন ইত্যাদি মহামূল্যবান সম্পদগুলোও আজ সমাজ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। শিক্ষকের মর্যাদা আজ বেতনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। আমরা যে পাশ্চাত্যদের অন্ধ অনুকরণ করে চলেছি সেই পাশ্চাত্য সমাজে মা-বাবার ভালোবাসা প্রায় অনুপস্থিত। শুধু অর্থ দিয়েই সন্তানের প্রতি কর্তব্য পালন করে তারা। সন্তানও তাই সে ঋণ অর্থ দ্বারাই পরিশোধ করে, কখনো বা সেটাও করে না। আমাদের সমাজও দিন দিন সেদিকেই যাচ্ছে।
.
তরুণীরা এখন টাকাওয়ালা স্বামী পেতে চায়, মেয়ের বাবা-মায়ের দৃষ্টিও জামায়ের পকেটের দিকেই। ভালোবাসা, সচ্চরিত্র- এগুলোর কোনো মূল্য নেই এখন। ছেলেরাও টাকাওয়ালা শ্বশুর খোঁজে।
.
সমাজে তারই সম্মান বেশি যার অর্থ বেশি। ভোটে জিতে বিত্তশালী ব্যক্তিগুলোই জনপ্রতিনিধি হচ্ছে, চরিত্রবান লোকগুলো সর্বত্র তিরস্কৃত হচ্ছে। লেখকরা লিখছে অর্থের জন্য, ছাত্ররা পড়ছে অর্থ উপার্জনের জন্য, ডাক্তাররা অর্থের জন্য চিকিৎসা করছে (রোগীরা তাদের খদ্দেরে পরিণত হয়েছে), নামের সাথে অনেকের সমাজসেবক, দানশীল ইত্যাদি বিশেষণ যুক্ত করা হলেও দেখা যাচ্ছে মূলত আর্থিক স্বার্থেই সে এগুলো করছে।
.
যখনই কোনো জিনিসের মূল্য কেবল অর্থ দ্বারা নির্ধারণ করা হয় তখন সেটা পণ্যে পরিণত হয়। সেবাগুলো যখন পণ্যে পরিণত হয় সমাজ থেকে তখন মানবতা হারিয়ে যায়। এখন সাধারণ জনগণ খদ্দেরে পরিণত হয়েছে। পুলিশের কাছে তারা খদ্দের, ধর্মজীবীদের কাছে তারা খদ্দের, ডাক্তারের কাছে খদ্দের, আইনজীবি, রাজনীতিবিদ সকলের কাছেই তারা কেবল খদ্দের। এভাবে পাশ্চাত্যের কনজিউমারিজম সমস্ত কিছুকে পণ্য বানিয়ে ফেলেছে আর সাধারণ মানুষকে খদ্দেরে পরিণত করেছে।
.
এই সিস্টেমের কারণে আমাদের সমাজ এখন চরম স্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছে। সমাজ থেকে নীতি-নৈতিকতা সব হারিয়ে যাচ্ছে, চরমভাবে অন্যায়, অবিচার, অশান্তি, হত্যা, ধর্ষণ, রাহাজানি ইত্যাদি বেড়ে যাচ্ছে, সমাজ ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছে। এ থেকে মুক্তি দিতে পারত যে ধর্ম সেই ধর্মকেই বানিয়ে ফেলা হয়েছে পণ্য। ধর্ম বলতে মানুষ এখন বোঝে মোল্লাকে টাকা দেওয়া, মসজিদ-মাদ্রাসায় দান করা, হজ্জ করা, নামাজ-রোজা করা।
.
এখন সমাজকে বাঁচাতে হলে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে- ধর্ম এসেছে মানুষে কল্যাণে, নিঃস্বার্থভাবে মানুষের কল্যাণ করা, মানুষের দুঃখ, কষ্ট হৃদয়ে ধারণ করা ও সেটা দূর করবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করাই ধর্মের মূল কাজ। স্বার্থপর মানুষ কখনো জান্নাতে যেতে পারবে না।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৮ টি মন্তব্য (লেখকের ৪টি) | ৪ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২৯-০১-২০১৭ | ২১:৪৩ |

    ‘ধর্ম এসেছে মানুষে কল্যাণে, নিঃস্বার্থভাবে মানুষের কল্যাণ করা, মানুষের দুঃখ, কষ্ট হৃদয়ে ধারণ করা ও সেটা দূর করবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করাই ধর্মের মূল কাজ।’

    কোন দ্বিমত নেই মি. সালজার রহমান সাবু। ধন্যবাদ।

    GD Star Rating
    loading...
  2. মোঃ খালিদ উমর : ২৯-০১-২০১৭ | ২২:০৫ |

    সম্পূর্ণ লেখাতেই বর্তমান মূর্তমান কিন্তু এর থেকে পরিত্রানের উপায় অত্যন্ত কঠিন কাজ। কে করবে এই অসাধ্য সাধন?
    চমতকার অনুভূতি প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ।

    GD Star Rating
    loading...
  3. নাজমুন নাহার : ২৯-০১-২০১৭ | ২২:৫৭ |

    তার পরেও আলো আছে । অর্থ না হলে তো বিনিময় ব্যবস্থা হবে না ।।
    অর্থ অনর্থের মূল যেমন সত্য আবার অর্থ ছাড়া তো মৌলিক চাহিদাগুলো সম্পন্ন হয় না । জীবন যেখানে মিথ্যে হয়ে যায় অর্থ সেখানে জীবনকে নতুন জীবন দান করে । মানুষ অর্থের কাছে যখন বিক্রি হয়ে যাচ্ছে তখনই অর্থ অনর্থের মূল হয়ে দাড়ায় । এই যে আপনি পোস্ট দিলেন এমন দুর্বিসহ অবস্থার প্রেক্ষিতে সেখানে আপনি অর্থের সন্ধান করেন নি কিন্তু আপনার মূল্যবান সময় এর পেছনে দিয়েছেন ।সুতরাং আশাহত হবার কিছু নেই । এর মধ্যেই গোলাপ ফুটবে আর যা নষ্ট তা বাতিলের খাতায় যাবে ।
    শুভেচ্ছা জানবেন ।

    GD Star Rating
    loading...
  4. মামুন : ২৯-০১-২০১৭ | ২৩:৪৫ |

    মায়ের ভালোবাসা, পিতার অপার স্নেহ, শিক্ষকের জীবনগড়া শাসন ইত্যাদি মহামূল্যবান সম্পদগুলোও আজ সমাজ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। শিক্ষকের মর্যাদা আজ বেতনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। আমরা যে পাশ্চাত্যদের অন্ধ অনুকরণ করে চলেছি সেই পাশ্চাত্য সমাজে মা-বাবার ভালোবাসা প্রায় অনুপস্থিত। শুধু অর্থ দিয়েই সন্তানের প্রতি কর্তব্য পালন করে তারা। সন্তানও তাই সে ঋণ অর্থ দ্বারাই পরিশোধ করে, কখনো বা সেটাও করে না। আমাদের সমাজও দিন দিন সেদিকেই যাচ্ছে।

    GD Star Rating
    loading...