তাকদীর (ভাগ্য!) পূর্ব নির্ধারিত – তথ্যটির প্রচলিত ও প্রকৃত ব্যাখ্যা
-প্রফেসর ডাঃ মোঃ মতিয়ার রহমান (এফ আর সি এস)
শুরুর কথা
‘তাকদীর পূর্বনিধারিত’ তথ্যটি কুরআন ও হাদীসে অনেকবার এসেছে। আবার তাকদীরে বিশ্বাস করা মুসলিমদের ঈমানের অংশ। তাই তাকদীর বলতে কুরআন ও হাদীসে কী বুঝান হয়েছে তা প্রতিটি মুসলিমের সঠিকভাবে জানা এবং তা বিশ্বাস করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘তাকদীর পূর্বনির্ধারিত’ তথ্যটি সম্বন্ধে বর্তমান বিশ্বের প্রায় সকল মুসলিমের ধারণা হচ্ছে
সকল কাজের ভাগ্য তথা ফলাফল আল্লাহ্ পূর্বে নির্ধারিত করে রেখেছেন,
মানুষের চূড়ান্ত ভাগ্য তথা বেহেশত বা দোযখ প্রাপ্তির বিষয়টিও পূর্বনির্ধারিত,
ঐ ভাগ্য পরিবর্তন করার মতা মানুষের নেই।
তাকদীর সম্বন্ধে প্রচলিত এ ধারণার বাস্তব যে ফল মুসলিম সমাজে ঘটেছে বা ঘটছে তা হল
১. দুষ্ট লোকেরা খারাপ কাজ করার যুক্তি খুঁজে পেয়েছে। তারা বলে আমাদের ভাগ্যতো আল্লাহ্ পূর্বে নির্ধারণ করে রেখেছেন। তাই আমরা খারাপ কাজ করলে ফল যা হবে ভাল কাজ করলেও ফল তাই হবে।
২. সাধারণ মুসলিমরা কষ্টসাধ্য বা ত্যাগ স্বীকার করা লাগে এমন কাজ করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। কারণ তারা মনে করে নিয়েছে- কষ্ট করে বা ত্যাগ স্বীকার করে একটি কাজ করার পরও আল্লাহ্ ঐ কাজের যে ফল নির্ধারণ করে রেখেছেন তাতো পরিবর্তন করা যাবে না। তাই অযথা কষ্ট করার বা ঝুঁকি নেয়ার দরকার কী?
৩. বিজ্ঞানের সকল দিকের এক সময়ের শ্রেষ্ঠ মুসলিম জাতি গবেষণা বন্ধ করে দিয়ে আজ বিজ্ঞানের সকল েেত্র বিশ্বের অন্য জাতিদের তুলনায় ব্যাপকভাবে পিছিয়ে পড়েছে। যেমন-
ডাক্তারী বিদ্যায় গবেষণার ব্যাপারে তারা মনে করেছে কষ্ট করে গবেষণা করে নতুন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি বা ঔষধ আবিষ্কার করার কী দরকার? রোগ ভাল হবে কি হবে না এটিতো আল্লাহ্ পূর্বে নির্ধারণ করে রেখেছেন।
কষ্ট করে গবেষণা করে উন্নতমানের যুদ্ধাস্ত্র তৈরী করা মুসলিমরা বেদরকারী মনে করেছে। কারণ যুদ্ধের ফলাফলতো পূর্বনির্ধারিত। তাই উন্নত মানের যুদ্ধাস্ত্র থাকলে ফলাফল যা হবে, না থাকলেও ফলাফল তাই হবে।
৪. কোন কোন মু’মিনের বুঝ তাকদীরের প্রকৃত অর্থ ও ব্যাখ্যার কাছাকাছি হলেও বিষয়টি তারা ভালভাবে বুঝে নেননি। ফলে বিষয়টিকে যেমন তারা মনের প্রশান্তিসহকারে বিশ্বাস করতে পারেন না তেমনই অন্য মানুষকে তা যুক্তিগ্রাহ্য করে বুঝাতে পারেন না।
তাই, ইসলামের সকল মূলনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবং মানব সভ্যতার বর্তমান পর্যায়ের বিজ্ঞানের জ্ঞানের সহায়তায়, তাকদীরের প্রকৃত অর্থ ও ব্যাখ্যা বোধগম্য এবং যুক্তিগ্রাহ্য করে উপস্থাপন করা বর্তমান প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য। আশা করি এর মাধ্যমে তাকদীরের উপর মুসলমানদের বিশ্বাস দৃঢ় হবে এবং তাকদীরে বিশ্বাসের মাধ্যমে আল্লাহ্, মানুষ বা মুসলমানদের দুনিয়া ও আখিরাতে যে কল্যাণ দিতে চেয়েছিলেন তা পাওয়া সম্ভব হবে।
মূল বিষয়
তাকদীর সম্পর্কে নির্ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হলে প্রথমে কুরআন ও হাদীসে উল্লিখিত তাকদীরের সঙ্গে প্রত্য (উরৎবপঃ) বা পরো (ওহফরৎবপঃ) ভাবে সম্পর্কযুক্ত নিুোক্ত বিষয়সমূহ জানতে, বুঝতে ও সম্পূরক ব্যাখ্যা করতে হবেÑ
১. মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর উদ্দেশ্য।
২. উদ্দেশ্যটির বাস্তবায়ন ইনসাফের ভিত্তিতে হওয়ার নিমিত্তে মানুষের জন্যে আল্লাহপ্রদত্ত নিম্নোক্ত সুযোগ সুবিধাসমূহÑ
ক. করণীয় বা নিষিদ্ধ (সঠিক বা ভুল) বিষয়সমূহ নির্ভুলভাবে মানুষকে জানিয়ে দেয়া,
খ. করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করতে প্রয়োজনীয় জিনিসসমূহ মানুষকে যোগান দেয়া বা মানুষ যাতে তা যোগাড় করে নিতে পারে তার ব্যবস্থা রাখা,
গ. করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করার ইচ্ছা করা এবং সে ইচ্ছা বাস্তবায়ন করার জন্যে চেষ্টা-সাধনা করার ল্েয মানুষকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া।
ঘ. জন্মগতভাবে বা বিনা প্রচেষ্টায় কেউ সুযোগ-সুবিধা বেশি বা কম পেয়ে থাকলে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার সময় তা হিসেবে আনা।
৩. কর্মফল বা পরিণতির জন্যে মানুষই দায়ী।
৪. তাকদীর, সৃষ্টির পূর্বে নির্ধারিত করে রাখা হয়েছে এবং তা অপরিবর্তনীয়।
৫. তাকদীর পরিবর্তন হওয়ার উপায় ও কারণ।
৬. মানুষের বা মহাবিশ্বের সকল কিছুর পরিণতি আল্লাহ সৃষ্টির পূর্বে একটি কিতাবে লিখে রেখেছেন। সবকিছুর পরিণতি ঐ কিতাবে থাকা লিখা অনুযায়ী হবে।
মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর উদ্দেশ্য
তাকদীরের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা বুঝার জন্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর উদ্দেশ্যটি নির্ভুলভাবে জানা ও বুঝা। তাই চলুন প্রথমে সে উদ্দেশ্যটি আল-কুরআন থেকে নির্ভুলভাবে জেনে ও বুঝে নেয়া যাকÑ
তথ্য – ১
اَلَّذِى خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَوةَ لِيَبْلُوَكُمْ اَيُّكُمْ اَحْسَنُ عَمَلأ.
অর্র্থ: তিনি (মহান আল্লাহ) মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যেন পরীা করে নিতে পারেন কে কাজে-কর্মে উত্তম (শ্রেষ্ঠ)। (মুলক : ২)
তথ্য – ২
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلاَئِفَ الْأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ.
অর্র্থ: তিনি তোমাদের পৃথিবীতে তাঁর খলীফা করে পাঠিয়েছেন এবং একজনকে অন্য জনের উপর (বিভিন্ন দিক দিয়ে) শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন, যাতে তোমাদের যাকে যা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী পরীা (যাচাই) করে নিতে পারেন।
(আন’আম : ১৬৫)
তথ্য – ৩
أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُوْلُوْا آمَنَّا وَهُمْ لاَ يُفْتَنُوْنَ.وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِيْنَ.
অর্থ: মানুষ কি মনে করেছে যে, ‘ঈমান এনেছি এটুকু বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে? আর তাদের (কর্মের মাধ্যমে) পরীা করা হবে না?’ অথচ আমিতো পূর্বে গত হওয়া সকলকে (কর্মের মাধ্যমে) পরীা করে নিয়েছি। আল্লাহকে তো অবশ্যই (কর্মের মাধ্যমে) জেনে নিতে হবে কে ঈমান আনার দাবীর ব্যাপারে সত্যবাদী, আর কে সে ব্যাপারে মিথ্যাবাদী। (আন-কাবুত : ২,৩)
আল-কুরআনের এ সকল তথ্য এবং তথায় উল্লেখ থাকা এ ধরনের আরো অনেক তথ্য থেকে নিঃসন্দেহে জানা ও বুঝা যায় মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর উদ্দেশ্যটি হচ্ছেÑ‘মানুষকে কর্মের মাধ্যমে তথা করণীয় কাজ করা এবং নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে পরীা নিয়ে ইনসাফ সহকারে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া’।
মহাবিশ্ব সৃষ্টির উদ্দেশ্যটি ইনসাফ ভিত্তিক বাস্তবায়ন হওয়ার নিমিত্তে বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী মানুষের যে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া উচিত
সাধারণ বিবেক-বুদ্ধির আলোকে সহজেই বলা যায় যে, পরীা নেয়ার ভিত্তিতে দেয়া পুরস্কার বা শাস্তি যদি ইনসাফ ভিত্তিক হতে হয়, তবে সে পরীা নেয়া এবং পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার আগে নিুের সুযোগ-সুবিধা চারটি অবশ্যই পূরণ করতে হবেÑ
ক. সঠিক বা ভুল উত্তর কোন্টি তা সঠিকভাবে জানিয়ে দেয়া
কোন্ উত্তরটি সঠিক আর কোন্টি ভুল অর্থাৎ কোন্ কাজটি করণীয় আর কোন্টি নিষিদ্ধ, পরীা নেয়ার আগে সেটি পরীার্থীকে কোন না কোনভাবে অবশ্যই জানিয়ে দিতে হবে। কারণ কোনভাবেই জানতে না পারার দরুন যদি কেউ কোন সিদ্ধ কাজ না করে বা নিষিদ্ধ কাজ করে তবে তাকে শাস্তি দেয়া সাধারণ বিবেক-বিরুদ্ধ।
খ. উত্তর লিখার জন্যে প্রয়োজনীয় সকল জিনিস যোগান (ঝঁঢ়ঢ়ষু) দেয়া
সঠিক বা ভুল উত্তর দিতে তথা করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করতে যে সকল উপায়-উপকরণ লাগে সেগুলো ব্যক্তিকে যোগান দিতে হবে বা সে যেন তা যোগাড় করে নিতে পারে তার সকল সুযোগ বা ব্যবস্থা থাকতে হবে। কারণ তা না হলে সেতো সঠিক বা ভুল উত্তর লিখতে তথা করণীয় বা নিষিদ্ধ কোন কাজ করতে পারবে না।
গ. সঠিক বা ভুল উত্তর দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া ও বাস্তবে তা কার্যকর করার জন্যে চেষ্টা করার ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া
পরীা নিয়ে দেয়া পুরস্কার বা শাস্তি ইনসাফ ভিত্তিক হতে হলে পরীার্থীকে অবশ্যই সঠিক বা ভুল উত্তর দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া এবং সে অনুযায়ী উত্তর লিখার ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। কারণ, কাউকে যদি সঠিক বা ভুল উত্তর লিখতে বাধ্য করা হয়, তবে সেটিকে পরীা নেয়া না বলে বাধ্য করা বলতে হবে। আর বাধ্য হয়ে করা কাজের ভিত্তিতে কাউকে পাস বা ফেল করানো তথা পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া কোন মতেই ইনসাফ সম্মত হতে পারে না। অর্থাৎ মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে থাকা আল্লাহর মহাপরিকল্পনাটি ইনসাফ ভিত্তিক হতে হলে করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া ও সে অনুযায়ী চেষ্টা-সাধনা করার ব্যাপারে মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকতে হবে।
ঘ. জন্মগতভাবে বা বিনাপ্রচেষ্টায় কেউ সুযোগ-সুবিধা বেশী বা কম পেয়ে থাকলে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার সময় তা হিসেবে আনা
একটি পরীায় কিছু পরীার্থীর যদি এমন কিছু দুর্বলতা থাকে যেটি এড়ানো তাদের পে কোনমতেই সম্ভব ছিল না এবং কিছু পরীার্থী যদি ঐ বিষয়গুলোয় বিনা প্রচেষ্টায় শক্তিশালী হয়ে গিয়ে থাকেতবে সাধারণ বিবেক-বুদ্ধি বলে ঐ সকল পরীার্থীকে একই মানদণ্ডে বিচার করে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া কোনমতেই ইনসাফ হবে না। অর্থাৎ বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী ঐ বিষয়গুলো যথাযথভাবে পর্যালোচনায় এনে ফলাফল নির্ণয় করে পুরস্কার বা শাস্তি দিলেই শুধু সে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া ইনসাফ ভিত্তিক হবে।
মানুষের জীবনে এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো মানুষের নিজ ইচ্ছা ও চেষ্টা অনুযায়ী হয় নাই, অর্থাৎ যেগুলো পরিবর্তন করা মানুষের কর্তৃত্বের বাইরে, যেমন
জন্মের স্থান, কাল, বংশ;
লিঙ্গ,
শারীরিক মূল গঠন, চেহারা ও রং,
মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক মূল গঠন।
এ বিষয়গুলো মানুষ নিজ ইচ্ছা বা চেষ্টা ছাড়া তথা জন্মগতভাবে (ঐবৎরফরঃধৎরষু) পেয়ে থাকে। আবার তা পরিবর্তন করাও তার সাধ্যের (মতার) বাইরে। এ বিষয়গুলোর উপস্থিতি বা অভাবকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন না করে, কর্মের জন্যে সকল মানুষকে একই ল্েয (এড়ধষ) পৌঁছানো নির্দিষ্ট করে দিলে এবং তাতে সফল হওয়া বা না হওয়ার জন্যে একই ধরনের পুরস্কার বা শাস্তি দিলে, সে পুরস্কার বা শাস্তি ইনসাফের ভিত্তিতে দেয়া হবে না। অর্থাৎ কর্মের মাধ্যমে পরীা নিয়ে মানুষকে ইনসাফের ভিত্তিতে পুরস্কার বা শাস্তি দিতে হলে জন্মগতভাবে যে সকল বিষয় সে পেয়েছে বা পায় নাই, তা খেয়াল রেখেই সফল হওয়া না হওয়াকে বিচার করতে হবে এবং সে অনুযায়ী পুরস্কার বা শাস্তি নির্ধারণ করতে হবে। দুনিয়ায় পরীা নিয়ে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে সাধারণত এটি হিসেবে আনা হয় না।
মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে থাকা আল্লাহর উদ্দেশ্যটি ইনসাফ ভিত্তিক বাস্তাবায়ন হওয়ার জন্যে সাধারণ বিবেক-বুদ্ধি নির্ণিত সুযোগ-সুবিধা তিনটি আল্লাহ্ মানুষকে দিয়েছেন তার প্রমাণ
ক. করণীয় ও নিষিদ্ধ কাজ (সঠিক ও ভুল উত্তর) কোন্গুলো তা নির্ভুলভাবে মানুষকে জানিয়ে দেয়া
তথ্য- ১
لآاِكْرَاهَ فِى الدِّيْنِ قَدْ تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَىِّ فَمَنْ يَّكْفُرْ باِلطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ باِللهِ فَقَدِاسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثقَى.
অর্র্থ: ইসলামে কোন জোর-জবরদস্তি নেই। কোন্টা সত্য (করণীয়) আর কোন্টা মিথ্যা (নিষিদ্ধ) তা স্পষ্ট করে (জানিয়ে) দেয়া হয়েছে। এখন যে ব্যক্তি খোদাদ্রোহী শক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহর ওপর ঈমান আনলো, সে একটা নির্ভরযোগ্য আশ্রয় গ্রহণ করলো। (বাকারা : ২৫৬)
ব্যাখ্যা: এ আয়াতে মহান আল্লাহ পরিষ্কারভাবে বলেছেন কোনটি ন্যায় ও কোনটি অন্যায় অর্থাৎ কোন্টি করণীয় ও কোন্টি নিষিদ্ধ তা মানুষকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
তথ্য – ২
وَهَدَيْنهُ النَّجْدَيْنَ.
অর্র্থ: আর উভয় (সঠিক ও ভুল) পথ কি তাকে (মানুষকে) দেখাই নাই?
(বালাদ : ১০)
ব্যাখ্যা: এখানেও আল্লাহ প্রশ্ন করার মাধ্যমে স্পষ্ট করে বলেছেন তিনি মানুষকে সঠিক ও ভুল উভয় পথ তথা উভয় ধরনের বিষয়ই জানিয়ে দিয়েছেন।
তথ্য – ৩
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِىْ اُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِِّلنَّاسِ وَبَيِّنتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ.
অর্থ: রমযান মাস। এ মাসেই কুরআন নাযিল হয়েছে। তা গোটা মানব জাতির জীবন-যাপনের পথনির্দেশ (দানকারী গ্রন্থ)। তা স্পষ্ট পথনির্দেশ এবং (সত্য ও মিথ্যার) পার্থক্যকারী (গ্রন্থ)। (বাকারা : ১৮৫)
ব্যাখ্যা: এখানে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে আল-কুরআন গোটা মানব জাতির জন্যে স্পষ্ট পথনির্দেশ ও সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী। অর্থাৎ কুরআনের মাধ্যমে মানুষকে সকল মূল করণীয় ও নিষিদ্ধ তথা সকল প্রথম স্তরের মৌলিক করণীয় ও নিষিদ্ধ বিষয় জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
অনেক আল-কুরআনের এ ধরনের তথ্য থেকে পরিষ্কারভাবে জানা ও বুঝা যায়, মহান আল্লাহ মানুষকে করণীয় ও নিষিদ্ধ কাজ কোন্গুলো তা জানিয়ে দিয়েছেন। আর তা জানিয়েছেন বা জানার ব্যবস্থা করেছেন নিুোক্ত তিনটি উৎসের মাধ্যমে Ñ
ক. আল-কুরআন,
খ. সুন্নাহ বা হাদীস এবং
গ. মানুষের বিবেক-বুদ্ধি
কুরআনের মাধ্যমে সকল মূল তথা প্রথম স্তরের মৌলিক, অনেক দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক ও কিছু অমৌলিক বিষয় জানানো হয়েছে। সুন্নাহের মাধ্যমে সকল প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক ও অনেক অমৌলিক বিষয় জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আর মানুষের প্রয়োজনীয় যে সকল অমৌলিক বিষয় কুরআন-সুন্নাহের মাধ্যমে স্পষ্ট করে জানানো হয়নি সে গুলিকে বিবেক-বুদ্ধি খাটিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে, আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক নিয়ম হতে, কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে বের করে নেয়ার জন্যে মহান আল্লাহ কুরআন ও সুন্নাহের মাধ্যমে বারবার তাগিদ দিয়েছেন।
খ. করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করতে (সঠিক বা ভুল উত্তর লিখতে) প্রয়োজনীয় সকল জিনিস মানুষকে যোগান দেয়া বা মানুষ যাতে তা যোগাড় করে নিতে পারে তার ব্যবস্থা রাখা
বাস্তব জগতে দেখা যায় ইসলাম সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ যে কোন কাজ করার জন্যে যত জিনিসের প্রয়োজন, প্রকৃতিগতভাবে আল্লাহ তা তৈরী করে রেখেছেন অথবা তৈরী করার সকল উপাদান সৃষ্টি করে রেখেছেন। মানুষ বিবেক-বুদ্ধি বা জ্ঞান-বুদ্ধি খাটিয়ে তা তৈরী করে নিতে পারে। আর এ বিষয়টি মহান আল্লাহ আল-কুরআনের মাধ্যমে নিুোক্তভাবে জানিয়ে দিয়েছেন Ñ
তথ্য – ১
هُوَ الَّذِىْ خَلَقَ لَكُمْ مَافِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا.
অর্থ: তিনি (আল্লাহ) পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা সবই তোমাদের (ব্যবহারের) জন্যে সৃষ্টি করেছেন (করে রেখেছেন)। (বাকারা : ২৯)
তথ্য – ২
وَسَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي السَّموَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مِنْهُ.
অর্র্থ: মহাকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার সবকিছুকে তিনি (আল্লাহ) নিজের প থেকে (নিজ ইচ্ছায়) তোমাদের (কল্যাণের জন্যে) কর্মে নিয়োজিত করে রেখেছেন। (জাসিয়া : ১৩)
তথ্য – ৩
أَلَمْ تَرَوْا أَنَّ اللهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي السَّموَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَأَسْبَغَ عَلَيْكُمْ نِعَمَهُ ظَاهِرَةً وَبَاطِنَةً.
অর্র্থ: তুমি কি ল্য করনি নভোমণ্ডল ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা সবই আল্লাহতায়ালা তোমাদের কল্যাণের জন্যে নিয়োজিত করে রেখেছেন এবং নিজ থেকে প্রকাশ্য ও গোপন নিয়ামতসমূহ (কল্যাণকর জিনিসসমূহ) তোমাদের জন্যে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন? (লোকমান : ২০)
আল-কুরআনের উল্লিখিত তথ্যসমূহ এবং তথায় উল্লেখ থাকা এ ধরনের আরো অনেক তথ্য এবং বিবেক-বুদ্ধির আলোকে নির্দ্বিধায় বলা যায়Ñ
মহাবিশ্বের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য সকল কিছু আল্লাহ মানুষের ব্যবহারের জন্যে সৃষ্টি বা তৈরী করে রেখেছেন,
ঐ জিনিসগুলি হয় ব্যবহার করার উপযোগী করে আল্লাহ তৈরী করে রেখেছেন অথবা আল্লাহর সৃষ্টি করে রাখা উপাদান ব্যবহার করে তা তৈরী করে নেয়ার মতো জ্ঞান-বুদ্ধি মানুষকে তিনি দিয়েছেন,
ঐ জিনিসগুলি মানুষ ইসলাম সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ যেকোন কাজ করার জন্যে ব্যবহার করতে পারে।
গ. করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করার ইচ্ছা করা এবং সে ইচ্ছা বাস্তবায়ন করার ল্েয চেষ্টা-সাধনা করার ব্যাপারে মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকা
বাস্তবে আমরা দেখি ইসলাম সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ যেকোন কাজ করার ইচ্ছা করা বা সিদ্ধান্ত নেয়া এবং সে ইচ্ছা বা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার জন্যে চেষ্টা-সাধনা করার ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন। আর মহান আল্লাহ যে মানুষকে এ স্বাধীনতা দিয়েছেন তা তিনি আল-কুরআনের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন নিুোক্তভাবেÑ
ঈমান আনার ব্যাপারে মানুষ স্বাধীন
তথ্য – ১
وَقُلِ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكُمْ قف فَمَنْ شَاءَ فَلْيُؤْمِنْ وَّمَنْ شَاءَ فَلْيَكْفُرْ.
অর্থ:বলে দাও এ মহাসত্য এসেছে তোমাদের রবের নিকট থেকে। এখন যার ইচ্ছা ঈমান আনতে পার, আর যার ইচ্ছা অস্বীকার করতে পার। (কাহাফ : ২৯)
তথ্য – ২
وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَآمَنَ مَنْ فِي الْأَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيْعًا أَفَأَنْتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتَّى يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ.
অর্থ: তোমার রব যদি ইচ্ছা করতেন তবে পৃথিবীর সকলেই ঈমান আনত। তুমি কি লোকদের মু‘মিন হওয়ার জন্যে জবরদস্তি করবে? (ইউনুস:৯৯)
আল-কুরআনের এ সকল তথ্য এবং এ ধরনের আরো অনেক তথ্য থেকে নিঃসন্দেহে জানা ও বুঝা যায় ঈমান আনার ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন। অর্থাৎ ঈমান আনা বা না আনা সম্পূর্ণ মানুষের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।
সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ উভয় ধরনের কাজ করার ব্যাপারে মানুষ স্বাধীন
তথ্য – ১
اِنَّا هَدَيْنَ السَّبِيْلَ اِماَّ شَاكِراً وَّ اِماَّكَفُوْراً.
অর্র্থ: আমি তাদের (মানুষদের) সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছি। এখন ইচ্ছা করলে তারা (তা অনুসরণ করে কল্যাণপ্রাপ্ত হয়ে) শোকরকারী হতে পারে, অথবা তা অস্বীকার করতে পারে (অস্বীকার করে ভুল পথ অনুসরণ করতে পারে)।
(দাহার:৩)
তথ্য – ২
اِنَّ هَذِهِ تَذْكِرَةٌ ج فَمَنْ شَاءَ اتَّخَذَ اِلَى رَبِّهِ سَبِيْلاً.
অর্র্থ: এটা (আল-কুরআনের বক্তব্য) একটি নসিহত বিশেষ। এখন যার ইচ্ছা নিজের রবের পথ অবলম্বন করুক। (দাহার : ২৯)
তথ্য – ৩
فَمَنْ شَاءَ اتَّخَذَ اِلى رَبِّهِ سَبِيْلأ.
অর্র্থ: যার ইচ্ছা হয় আপন প্রতিপালকের পথ অবলম্বন করবে। (মুজাম্মেল : ১৯)
তথ্য – ৪
إِنَّ اللهَ لاَ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ.
অর্র্থ: আল্লাহ অশ্লীল কার্যকলাপ করার নির্দেশ দেন না। (আরাফ : ২৮)
ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ এখানে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন ইসলামের কোন নিষিদ্ধ কাজ তাঁর নির্দেশে হয় না। অর্থাৎ মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী তা সংঘটিত হয়।
তথ্য – ৫
وَمَااُمِرُوْا اِلاَّ لِيَعْبُدُوااللهَ.
অর্র্থ: আল্লাহর ইবাদাত করা ছাড়া তাদেরকে আর কিছু করতে নির্দেশ দেয়া হয়নি। (বাইয়েনা : ৫)
ব্যাখ্যা: এখান থেকেও স্পষ্টভাবে জানা ও বুঝা যায় আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত (দাসত্ব) তথা ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ আল্লাহর নির্দেশে হয় না, মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী হয়।
তথ্য – ৬
وَلَوْشَاءَ اللهُ ماَاَشْرَكُوْا.
অর্র্থ: আল্লাহ যদি চাইতেন কেউ শিরক করতো না। (আনয়াম : ১০০)
ব্যাখ্যা: এখানেও আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি চাইলে মানুষ শিরক করতে পারতো না। অর্থাৎ শিরক (ইসলামের নিষিদ্ধ কাজ) আল্লাহর ইচ্ছা বা আদেশ অনুযায়ী হয় না। তা মানুষের ইচ্ছা ও চেষ্টা অনুযায়ী সংঘটিত হয়।
তথ্য – ৭
وَيَهْدِى اِلَيْهِ مَنْ اَنَابَ.
অর্র্থ: আর যে (ইচ্ছা করে) তাঁর (আল্লাহর) দিকে ফিরে যেতে চায় তাকে তিনি পথ দেখান। (রা’দ : ২৭)
তথ্য – ৮
اِنَّ سَعْيَكُمْ لَشَتَّى. فاَماَّ مَنْ اَعْطَى وَاتَّقَى. وَصَدَّقَ بِالْحُسنَى. فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسرَى. وَاَمَّامَنْم بَخِلَ وَاسْتَغْنَى. وَكَذَّبَ بِالْحُسنَى. فَسَنُيَسِّرُهُ لِلعُسْرَى.
অর্র্থ: আসলে তোমাদের (মানুষের) চেষ্টা বিভিন্ন ধরনের। তাই যে ব্যক্তি (নিজ ইচ্ছায়) সম্পদ দান করল, (আল্লাহর নাফরমানী হতে) আত্মরা করল এবং ন্যায়কে সত্য বলে মেনে নিল, তাকে আমি সঠিক পথে (ইসলামের পথে) চলা সহজ করে দেই (তার ইসলামের পথে চলা সহজ হয়ে যায়)। আর যে (স্বেচ্ছায়) কৃপণতা করল, (আল্লাহ হতে) বিমুখ হল এবং কল্যাণ ও মঙ্গলকে মিথ্যা মনে করল, তাকে আমি বক্র (ভুল) পথে চলা সহজ করে দেই (তার অনৈসলামিক পথে চলা সহজ হয়ে যায়)। (লাইল:৪-১০)
ব্যাখ্যা: আল্লাহ এখানে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন সঠিক বা ভুল পথে চলার সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন। আর মানুষ যখন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজ ইচ্ছামতো কাজ আরম্ভ করে তখন মহান আল্লাহ মানুষকে তার ইচ্ছাকৃত পথে চলা সহজ করে দেন।
আল-কুরআনের এ সকল তথ্য এবং তথায় উপস্থিত থাকা এরকম আরো অনেক তথ্য থেকে পরিষ্কারভাবে জানা ও বুঝা যায় ঈমান আনা বা না আনা এবং ইসলাম সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া (ইচ্ছা করা) ও বাস্তবে সে অনুযায়ী চেষ্টা-সাধনা করার ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন।
ঘ. জন্মগতভাবে বা বিনা প্রচেষ্টায় কেউ সুযোগ-সুবিধা বেশী বা কম পেয়ে থাকলে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার সময় তা হিসেবে আনা
পরকালে মানুষের কর্ম বিচার করে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার সময় আল্লাহ যে এ বিষয়টি হিসেবে আনবেন তা তিনি জানিয়ে দিয়েছেন নিম্নোক্ত ভাবে-
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلاَئِفَ الْأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ.
অর্থ: তিনিই (আল্লাহ) তোমাদের পৃথিবীতে প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন এবং একজনকে অন্যজনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন; যেন যাকে যা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী পরীা নিতে পারেন। (আন আম : ১৬৫)
ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ এখানে প্রথমে এ তথ্য জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি জন্মগতভাবে (ঐবৎরফরঃধৎরষু) বিভিন্ন দিক দিয়ে (পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে) একজন মানুষকে অন্য একজন মানুষের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। এরপর তিনি জানিয়ে দিয়েছেন মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে থাকা তাঁর উদ্দেশ্যটি বাস্তবায়ন (কর্মের মাধ্যমে পরীা নিয়ে সকলকে ইনসাফের ভিত্তিতে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া) ইনসাফভিত্তিক হওয়ার জন্যে জন্মগতভাবে যাকে যে যে বিষয় তিনি বেশী বা কম দিয়েছেন সেগুলোকে অবশ্যই যথাযথভাবে বিবেচনায় রাখবেন।
আল-কুরআনের অনেক জায়গায় আল্লাহ বলেছেন তিনি একজন ন্যায় বিচারকারী সত্তা। আর তিনি যে কতবড় ন্যায় বিচারকারী তা পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় উপরের আয়াতখানি হতে।
কর্মফল বা পরিণতির জন্যে মানুষই দায়ী হবে কিনা?
বিবেক-বুদ্ধি
বাস্তব জগতে আমরা দেখতে পাই উল্লিখিত তিনটি সুযোগ-সুবিধাসহকারে যে সকল পরীা নেয়া হয় সেখানে ফলাফল তথা পরিণতির জন্যে পরীার্থীই দায়ী থাকে। পরীা গ্রহণকারী কর্তৃপ নয়। আর এটি ১০০% যুক্তিসঙ্গতও।
মহান আল্লাহ যেহেতু কর্মের মাধ্যমে পরীা নেয়ার নিমিত্তে উল্লিখিত সুযোগ-সুবিধা তিনটি যথাযথভাবে মানুষকে দিয়েছেন, তাই ঐ পরীার ফলাফল বা পরিণতির জন্যে মানুষ দায়ী থাকবে- এ কথাটি ১০০% বিবেক বা যুক্তি সংগত। অর্থাৎ কৃত কাজের ফলাফল তথা পুরস্কার বা শাস্তির জন্যে মানুষ দায়ী হবে বা দায়ী থাকবেÑ এ কথাটি ১০০% বিবেক বা যুক্তিসংগত।
আল-কুরআন
তথ্য – ১
وَمَااَصَابَكُمْ مِّنْ مُّصِيْبَةٍ فَبِمَاكَسَبَتْ اَيْدِيْكُمْ.
অর্র্থ: তোমাদের ওপর যে বিপদ আসে, তা তোমাদের নিজ হাতের অর্জন (নিজ কর্মের দোষেই আসে)। (শুরা : ৩০)
তথ্য – ২
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ.
অর্র্থ: জলে ও স্থলে অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে মানুষের নিজেরই কর্মের দোষে।
(রুম : ৪১)
তথ্য – ৩
وَمَا اَصَابَكَ مِنْ سَيِّئَةٍ فَمِنْ نَفْسِكَ.
অর্র্থ: যা কিছু অশুভ )অকল্যাণ( তোমার হয় তা তোমার নিজের কারণেই (কর্মদোষেই) হয়। (নিসা : ৭৯)
তথ্য – ৪
اِنَّ اللهَ لاَيَظْلِمُ النَّاسَ شَيْئاً وَّلَكِنَّ النَّاسَ اَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُوْنَ .
অর্র্থ: আল্লাহ কখনো মানুষের ওপর জুলুম করেন না বরং মানুষ নিজেই নিজের উপর জুলুম করে (নিজের কর্মদোষেই নিজের উপর জুলুম ডেকে আনে)। (ইউনুস : ৪৪)
তথ্য – ৫
اِنَّ اللهَ لاَيُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوْا مَا بِاَنْفُسِهِمْ.
অর্র্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতণ পর্যন্ত জাতির লোকেরা (কর্মের মাধ্যমে) নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন না করে। (রাদ : ১১)
আল-কুরআনের এ সকল এবং তথায় উল্লেখ থাকা এ ধরনের আরো অনেক তথ্য এবং বিবেক-বুদ্ধির আলোকে তাহলে নিশ্চয়তা দিয়েই বলা যায়, কর্মফল বা পরিণতির জন্যে (দুনিয়ায় ও আখিরাতে) মানুষই দায়ী। আর সে দায়ী করা ১০০% যুক্তিসংগত।
সুধী পাঠক
এ পর্যন্ত আমরা আল-কুরআনের যে তথ্যসমূহ জানলাম তা অত্যন্ত স্পষ্ট এবং সম্পূর্ণ বিবেক-বুদ্ধিগ্রাহ্য। আল-কুরআনের এ তথ্যগুলোর একটিরও উল্লিখিত অর্থ বা ব্যাখ্যা যদি পাল্টিয়ে দেয়া হয় বা অন্যরূপ করা হয় তবেÑ
ইসলামী জীবন বিধান সম্পূর্ণ উল্টে যাবে,
মহান আল্লাহর কর্মের মাধ্যমে মানুষকে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া
ইনসাফ ভিত্তিক হবে না,
মানুষসহ মহাবিশ্ব খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে সিদ্ধান্ত
দেয়া হবে।
তাই তাকদীরের সাথে প্রত্য বা পরো ভাবে সম্পর্কযুক্ত অথবা অন্য যে কোন কুরআনের আয়াত বা হাদীসের অর্থ ও ব্যাখ্যা অবশ্যই এ পর্যন্তকার উল্লিখিত আল-কুরআনের আয়াতসমূহের অর্থ ও ব্যাখ্যার সম্পূরক হতে হবে, বিরোধী হওয়া চলবে না। অর্থাৎ আল-কুরআনের কোন আয়াত বা কোন নির্ভুল হাদীসের অর্থ বা ব্যাখ্যা অবশ্যই এমন হওয়া চলবে না যেখান থেকে এ ধারণা হয় যে, কৃত কাজের ফলাফল বা পরিণতির ব্যাপারে Ñ
মানুষের ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার কোন গুরুত্ব নেই বা
মানুষ দায়ী নয়।
অন্য কথায় আল-কুরআনে অন্য সকল আয়াত বা সকল নির্ভুল হাদীসের অর্থ ও ব্যাখ্যা এমন হতে হবে যেন কৃত কাজের ফলাফল বা পরিণতির জন্যেÑ
মানুষের ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার যথাযথ গুরুত্ব থাকে এবং
সে জন্যে মানুষকে দায়ী করে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া যুক্তিসঙ্গত হয়।
‘তাকদীর সৃষ্টির পূর্বে নির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছে এবং তা অপরিবর্তনীয়’Ñকুরআন ও হাদীসের এ ধরনের বক্তব্য এবং তার সরল অর্থ
চলুন প্রথমে কুরআন ও হাদীসের এ ধরনের বক্তব্য এবং তার সরল অর্থ সরাসরি জেনে নেয়া যাক Ñ
আল-কুরআন
তথ্য – ১
وَخَلَقَ كُلَّ شَىْءٍ فَقَدَّرَه تَقْدِيْرًا.
সরল অর্র্র্থ: এবং তিনি সকল জিনিস সৃষ্টি করেছেন এবং তার তাকদীর নির্দিষ্ট করেছেন। (ফোরকান : ২)
তথ্য – ২
وَالَّذِىْ قَدَّرَ فَهَدَى.
সরল অর্থ: তিনি কদর (তাকদীর) নির্দিষ্ট করেছেন। পরে পথ দেখিয়েছেন (জানিয়ে দিয়েছেন) (আল’আলা : ৩)
তথ্য – ৩
إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ.
সরল অর্থ: আমি প্রতিটি জিনিসকে কদর (তাকদীর) সহ সৃষ্টি করেছি।
(কামার:৪৯)
তথ্য – ৪
اِنَّ اللهَ بَالِغُ اَمْرِهِ , قَدْ جَعَلَ اللهُ لِكُلِّ شَىءٍ قَدْراً .
সরল অর্থ: আল্লাহ স্বীয় কাজকে সম্পন্ন না করে ান্ত হন না। আল্লাহ সকল জিনিসের কদর (তাকদীর) নির্ধারিত করে রেখেছেন। (তালাক: ৩)
তথ্য – ৫
وَلَكِنْ يُنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَا يَشَاءُ.
সরল অর্থ: এবং তিনি (রিজিক) নিজ ইচ্ছামত তৈরী করা কদর (তাকদীর) অনুযায়ী অবতীর্ণ করেন। (শুরা:২৭)
তথ্য-৬
وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ. وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتَّى عَادَ كَالْعُرْجُونِ الْقَدِيمِ. لاَ الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلاَ اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ.
সরল অর্থ: সূর্য স্বীয় গন্তব্যস্থলের দিকে এগিয়ে চলেছে। এটি মহাপরাক্রান্ত মহাজ্ঞানীর নির্ধারিত তাকদীর। চাঁদের কদরের মনজিলও আমি ঠিক করে দিয়েছি; এক সময় সে আবার তার প্রথম বক্র দশায় প্রত্যাবর্তন করে; সূর্যের সাধ্য নেই যে চাঁদকে ধরে। রাতেরও সাধ্য নেই সে দিনের আগে চলে আসে। সকলেই পরিক্রম করছে একই শূন্যলোকে। (ইয়াসিন:৩৮-৪০)
আল-হাদীস
তথ্য – ১
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ كَتَبَ اللهُ مَقَادِيْرَ الْخَلاَئِقِ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ قَالَ وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ.
(رواه مسلم)
সরল অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির পাঁচ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তাঁর সকল সৃষ্টির ‘তাকদীর’ লিখে রেখেছেন, হুজুর (সা.) বলেন তখন আল্লাহর আরশ ছিল পানির উপর। (মুসলিম)
তথ্য – ২
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (ص) : اِنَّ اَوَّلَ مَا خَلَقَ اللهُ الْقَلَمَ، فَقَالَ لَهُ اُكْتُبْ ، قَالَ : مَااَكْتُبُ؟ قَالَ: اُكْتُبِ الْقَدَرَ، فَكَتَبَ مَا كَانَ وَماَ هُوَ كَائِنٌ اِلَى الْاَبَدِ. رواه الترمذى وقال هَذا حديثٌ غريبٌ اِسنادًا.
অর্থ: হজরত উবাদা বিন ছামেত (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন আল্লাহ তায়ালা প্রথমে যে বস্তু সৃষ্টি করেছেন তা হল কলম। এরপর তিনি কলমকে বললেন, লিখ। কলম বলল, কী লিখব? আল্লাহ বললেন, ‘কদর’ (তাকদীর) লিখ। সুতরাং কলম যা ছিল এবং যা অনন্তকাল ধরে হবে তা লিখল।(তিরমিজী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন হাদীসটি গরীব)
তথ্য – ৩
وَعَنْ اِبْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (ص) كُلُّ شَىْءٍ بِقَدَرٍ حَتَّى الْعَجْزَ وَالْكَيِّسَ . رواه مسلم.
সরল অর্থ: ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন- সকল জিনিস কদর (তাকদীর) সহকারে (সৃষ্টি) হয়েছে, এমনকি বুদ্ধি দুর্বল ও প্রখর হওয়ার বিষয়টিও। (মুসলিম)
তথ্য – ৪
وَعَنْ اَبِىْ خُزَامَةَ عَنْ اَبِيْهِ قَالَ قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! اَرَأَيْتَ رُقَىً نَسْتَرْقِيْهَا وَدَوَاءً نَتَدَاوَى بِهِ وَتُقَاةً نَتَّقِيْهَا هَلْ تَرُدُّ مِنْ قَدَرِ اللهِ شَيْئًا؟ قَالَ: هِىَ مِنْ قَدَرِ اللهِ. رواه احمد والترمذى وابن ماجة.
সরল অর্থ: হজরত আবু খোজামা তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। আমি একদিন রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম : হুজুর, আমরা যে মন্ত্র পাঠ করে থাকি, ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করে থাকি বা বিভিন্ন উপায়ে আমরা যে আত্মরার চেষ্টা করে থাকি, তা কি তাকদীরের কিছু প্রতিরোধ করতে পারে? হুজুর বললেন, তোমাদের ঐ সকল চেষ্টাও আল্লাহ (নির্ধারিত) তাকদীরের অন্তর্গত।
(আহমদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
তথ্য – ৫
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَسْأَلِ الْمَرْأَةُ طَلاَقَ أُخْتِهَا لِتَسْتَفْرِغَ صَحْفَتَهَا وَلْتَنْكِحْ فَإِنَّ لَهَا مَا قُدِّرَ لَهَا.رواه البخارى
সরল অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, নিজে বিয়ে করার জন্যে কোন নারী যেন তার বোনের (অপর নারীর) তালাক না চায়। কেননা তার জন্যে তাকদীরে যা নির্ধারিত আছে তাই সে পাবে। (বুখারী)
তাকদীর বা কদর শব্দ ধারণকারী এধরনের আরো অনেক বক্তব্য কুরআন ও হাদীসে থাকতে পারে বা আছে।
কুরআন ও হাদীসের তাকদীর বা কদর শব্দ ধারণকারী বক্তব্য- সমূহের প্রচলিত অসতর্ক অর্থ ও ব্যাখ্যা এবং তার পর্যালোচনা
প্রচলিত অর্থ বা ব্যাখ্যায় তাকদীর বা কদর শব্দের অর্থ ধরা হয়েছে ভাগ্য, ফলাফল, নিয়তি বা পরিণতি। আর এ অর্থ ধরে বক্তব্যসমূহের যে ব্যাখ্যা মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে চালু হয়েছে তা হল, মানুষের
কৃত সকল কাজের একটিমাত্র ফলাফল বা পরিণতি,
মৃত্যুর একটিমাত্র সময় ও কারণ এবং
একটিমাত্র চূড়ান্ত পরিণতি তথা বেহেশত বা দোযখ প্রাপ্তি,
এক কথায় মানুষের সকল বিষ।
মানুষের ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার কোনই গুরুত্ব থাকে না,
কর্মের ফলাফল বা পরিণতির জন্যে মানুষকে দায়ী করা যায় না,
বেহেশত বা দোযখ প্রাপ্তি মানুষের আমলের উপর নির্ভরশীল থাকে না,
আমল তথা কাজের ভিত্তিতে মানুষকে বেহেশতের পুরস্কার বা দোযখের শাস্তি দেয়া ইনসাফ বা যুক্তিভিত্তিক হয় না। অর্থাৎ মানুষসহ মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর মহাপরিকল্পনাটি ইনসাফ ভিত্তিক হয় না।
আল্লাহর মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য (আল্লাহর সন্তুষ্টিকে সামনে রেখে কুরআনে বর্ণিত সকল ন্যায়ের বাস্তবায়ন ও অন্যায়ের প্রতিরোধের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ করা) বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। কারণÑ
দুষ্ট লোকেরা ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ করবে এবং ইসলাম সিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকবে এটি বলে যে- আমরা যা করছি ভাগ্যে আছে বলেইতো করছি।
সাধারণ মু’মিনরা কষ্টসাধ্য, বিপদসংকুল বা ত্যাগ স্বীকার করা লাগে, এমন ধরনের আমল থেকে ভাগ্যের দোহাই দিয়ে দূরে থাকবে।
কোন কোন আয়াতের বক্তব্য অর্থবোধক হয় না। যেমন
সূরা আল-আলার ৩ নং আয়াতের বক্তব্য হবে আল্লাহ ভাগ্য নির্দিষ্ট করেছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন। তথ্যটি বাস্তবভিত্তিক নয়। কারণ আল্লাহ ভাগ্য জানিয়ে দেননি।
সূরা ইয়াসিনের ৩৮ ও ৩৯ নং আয়াতের বক্তব্য হবে সূর্য ও চাঁদের ভাগ্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। সূর্য ও চাঁদের ভাগ্য কথাটি অর্থবোধক হয় না।
বক্তব্যসমূহের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা
আরবী কদর (تقدير) বা তাকদীর (قدر) শব্দের অনেক অর্থ হয়। তবে তার মধ্যে পুস্তিকার আলোচ্য বিষয়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত দু’টি অর্থ হচ্ছে-
ফলাফল, নিয়তি, পরিণতি বা ভাগ্য এবং
কোনকিছু পরিচালিত বা সংঘটিত হওয়ার বিধি-বিধান, আইন কানুন, নিয়ম-নীতি বা পদ্ধতি।
কদর বা তাকদীর শব্দের এ দুটি অর্থের কোন্টি, কুরআন ও হাদীসের আলোচ্য তথ্যগুলোতে উল্লিখিত কদর বা তাকদীর শব্দটির অর্থ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে তা নির্ভর করবে কোন্ অর্থটি গ্রহণ করলে বক্তব্যগুলো হতে বের হয়ে আসা তথ্য কুরআন ও হাদীসের অন্য সকল বক্তব্যের সম্পূরক হবে, বিরোধী হবে না তার উপর।
বক্তব্যসমূহে উল্লিখিত কদর (قدر) বা তাকদীর (تقدير) শব্দের অর্থ যদি পরিচালিত বা সংঘটিত হওয়ার বিধি-বিধান, আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি বা পদ্ধতি ধরা হয় তবে যে তথ্য বের হয়ে আসে তা হচ্ছে Ñ
১. মানুষের কৃত সকল কাজের ভাল বা মন্দ ফলাফল, জীবন-মৃত্যু, বেহেশত বা দোযখ প্রাপ্তি এবং
২. মহাবিশ্বের অন্য সকল সৃষ্টির মধ্যে সংঘটিত হওয়া সকল ঘটনাÑদুর্ঘটনার ব্যাপারে,
মহান আল্লাহ্, সৃষ্টির শুরুতে পৃথক পৃথক বিধি-বিধান আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি তথা প্রাকৃতিক আইন (ঘধঃঁৎধষ খধ)ি তৈরী করে রেখেছেন এবং তা মানুষ বা অন্যকোন সৃষ্টির পে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। মানুষের জীবনে এবং মহাবিশ্বে সংঘটিত হওয়া সকল ঘটনা-দুর্ঘটনা আল্লাহর তৈরী ঐ প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী সংঘটিত হয়। মানুষের কৃত কাজের ব্যাপারে ঐ প্রাকৃতিক আইনে যথাযথ গুরুত্বসহকারে অন্তর্ভুক্ত আছে Ñ
১. মানুষের ইচ্ছা, কর্মপ্রচেষ্টা, ধৈর্য, দৃঢ়তা, নিষ্ঠা, সাহসিকতা, ত্যাগ, একতা, সংঘবদ্ধতা ইত্যাদি সহ,
২. আল্লাহর নির্দিষ্ট ও জানা কিন্তু মানুষের অজানা বা জানা অসংখ্য বিষয়।
তাই মানুষের কোন কাজ করে সফল বা ব্যর্থ হওয়ার সামগ্রিক পদ্ধতি হচ্ছে Ñ
সফল হওয়ার পদ্ধতি
নিজ ইচ্ছায়, জেনে বা না জেনে ঐ কাজে আল্লাহর তৈরী করে রাখা সফল হওয়ার প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী চেষ্টা-সাধনা করা।
ব্যর্থ হওয়ার পদ্ধতি
নিজ ইচ্ছায়, না জেনে বা জেনে ঐ কাজে আল্লাহর তৈরী করে রাখা ব্যর্থ হওয়ার প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী চেষ্টা-সাধনা করা।
তাই কুরআন ও হাদীসের আলোচ্য বক্তব্যসমূহকে তথায় উপস্থিত থাকা কদর (قدر) বা তাকদীর (تقدير) শব্দের অর্থ, আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন (ঘধঃঁৎধষ খধ)ি ধরে ব্যাখ্যা করলে, যে তথ্য বের হয়ে আসে, তা কুরআন ও হাদীসের পূর্বে উল্লিখিত তথ্যসমূহ ও অন্য সকল তথ্যের সম্পূরক বা পরিপূরক হয়, বিরোধী হয় না। কারণ সে তথ্যে Ñ
১. কার্য সম্পাদনের ব্যাপারে মানুষের ইচ্ছা, কর্মপ্রচেষ্টা, ধৈর্য, দৃঢ়তা, নিষ্ঠা, ত্যাগ, সাহসিকতা, একতা, সংঘবদ্ধতা ইত্যাদির যথাযথ ভূমিকা বা গুরুত্ব থাকে,
২. কর্মফলের জন্যে মানুষকে দায়ী করা যাবে বা মানুষ দায়ী থাকবে,
৩. আমলের ভিত্তিতে পরীা নিয়ে বেহেশতের পুরস্কার বা দোযখের শাস্তি দেয়া ইনসাফ ভিত্তিক হবে। অর্থাৎ মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর মহাপরিকল্পনা ইনসাফ ভিত্তিক হবে,
৪. সকল ঘটনা-দুর্ঘটনা আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন (যা অন্য কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না) অনুযায়ী হবে বলে আল্লাহর ইচ্ছার শ্রেষ্ঠত্ব থাকবে।
সুতরাং কুরআন ও হাদীসে কদর (قدر) বা তাকদীর(تقدير) শব্দ ধারণকারী বক্তব্যসমূহের অর্থ ও ব্যাখ্যা করতে হবে শব্দ দুটির অর্থ, আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন ধরে। অন্য কথায় ঐ বক্তব্যসমূহের সেই অর্থ বা ব্যাখ্যাই শুধু ইসলামে গ্রহণযোগ্য হবে যেখানে কদর বা তাকদীর শব্দের অর্থ ধরা হবে আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন।
তাকদীর শব্দের অর্থ আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন ধরলে পূর্বোল্লিখিত কুরআন ও হাদীসের শব্দদু’টি ধারণকারী ও আরো কিছু বক্তব্যের যে অর্থ ও ব্যাখ্যা দাঁড়াবে
আল-কুরআন
وَخَلَقَ كُلَّ شَىْءٍ فَقَدَّرَهُ تَقْدِيْرًا.
অর্থ: এবং তিনি সকল জিনিস সৃষ্টি করেছেন এবং তার প্রাকৃতিক আইন নির্দিষ্ট করেছেন।
তথ্য-২
وَالَّذِىْ قَدَّرَ فَهَدَى.
অর্থ: তিনি প্রাকৃতিক আইন নির্দিষ্ট করেছেন। পরে পথ দেখিয়েছেন (জানিয়ে দিয়েছেন)। (আল’আলা : ৩)
ব্যাখ্যা: তিনি সকল জিনিসের জন্যে প্রাকৃতিক আইন পূর্ব থেকেই নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। ঐ প্রাকৃতিক আইনের অনেকগুলো কুরআন ও সূন্নাহের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। আর বাকিগুলো চিন্তা-গবেষণার মাধ্যমে বের করে নেয়ার জন্যে মহান আল্লাহ্ কুরআন ও সূন্নাহের মাধ্যমে বারবার তাগিদ দিয়েছেন।
তথ্য-৩
إِنَّا كُلَّ شَىْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ.
অর্থ: আমি প্রতিটি জিনিসকে প্রাকৃতিক আইনসহ সৃষ্টি করেছি। (কামার:৪৯)
তথ্য-৪
إِنَّ اللهَ بَالِغُ اَمْرِهِ، قَدْ جَعَلَ اللهُ لِكُلِّ شَىْءٍ قَدْرًا.
অর্থ: আল্লাহ স্বীয় কাজকে সম্পন্ন না করে ান্ত হন না। আল্লাহ সকল জিনিসের প্রাকৃতিক আইন নির্ধারিত করে রেখেছেন। (তালাক : ৩)
তথ্য-৫
وَلَكِنْ يُّنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَّايَشَاءُ.
অর্থ: এবং তিনি (রিজিক) নিজ ইচ্ছামত তৈরী করা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী অবতীর্ণ করেন। (শুরা:২৭)
তথ্য-৬
وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ذَلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ. وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتَّى عَادَ كَالْعُرْجُوْنِ الْقَدِيْمِ. لاَ الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلاَ اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُوْنَ.
অর্থ: সূর্য স্বীয় গন্তব্যস্থলের দিকে এগিয়ে চলেছে। এটি মহাপরাক্রান্ত মহাজ্ঞানীর নির্ধারিত প্রাকৃতিক আইন। চাঁদের মনজিলও আমি প্রাকৃতিক আইনের মাধ্যমে ঠিক করে দিয়েছি এক সময় সে আবার তার প্রথম বক্র দশায় প্রত্যাবর্তন করে; সূর্যের সাধ্য নেই যে চাঁদকে ধরে। রাতেরও সাধ্য নেই সে দিনের আগে চলে আসে। সকলেই পরিক্রম করছে একই শূন্যলোক। (ইয়াসিন : ৩৮-৪০)
আল-হাদীস
তথ্য-১
অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির পাঁচ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তাঁর সকল সৃষ্টির প্রাকৃতিক আইন লিখে রেখেছেন। হুজুর (সা.) বলেন তখন আল্লাহর আরশ ছিল পানির উপর।
(মুসলিম)
তথ্য-২
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ قَالَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللهُ الْقَلَمَ فَقَالَ اكْتُبْ فَقَالَ مَا أَكْتُبُ قَالَ اكْتُبِ الْقَدَرَ مَا كَانَ وَمَا هُوَ كَائِنٌ إِلَى الْأَبَدِ.
অর্থ: হজরত উবাদা বিন ছামেত (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন আল্লাহ তায়ালা প্রথমে যে বস্তু সৃষ্টি করেছেন তা হল কলম। এরপর তিনি কলমকে বললেন, লিখ। কলম বলল, কী লিখব? আল্লাহ বললেন, প্রাকৃতিক আইন লিখ। সুতরাং কলম যা ছিল এবং যা অনন্তকাল ধরে হবে তা লিখল (তার সবকিছুর প্রাকৃতিক আইন)।
(তিরমিজী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন হাদীসটি গরীব)
তথ্য – ৩
وَعَنْ اِبْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (ص) كُلُّ شَىْءٍ بِقَدَرٍ حَتَّى الْعَجْزَِ وَالْكَيِّسَ . رواه مسلم.
অর্থ: ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন সকল জিনিস প্রাকৃতিক আইনসহকারে (সৃষ্টি) হয়েছে। এমনকি বুদ্ধি দুর্বল ও প্রখর হওয়ার বিষয়টিও।
(মুসলিম)
তথ্য – ৪
وَعَنْ اَبِىْ خُزَامَةَ عَنْ اَبِيْهِ قَالَ قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! اَرَأَيْتَ رُقَىً نَسْتَرْقِيْهَا وَدَوَاءً نَتَدَاوَى بِهِ وَتُقَاةً نَتَّقِيْهَا هَلْ تَرُدُّ مِنْ قَدَرِ اللهِ شَيْئًا؟ قَالَ: هِىَ مِنْ قَدَرِ اللهِ. رواه احمد والترمذى وابن ماجة.
অর্থ: হজরত আবু খোজামা তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। আমি একদিন রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম : হুজুর, আমরা যে মন্ত্র পাঠ করে থাকি, ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করে থাকি বা বিভিন্ন উপায়ে আমরা যে আত্মরার চেষ্টা করে থাকি, তা কি ফলাফলের কিছু প্রতিরোধ করতে পারে? হুজুর বললেন, তোমাদের ঐ সকল চেষ্টাও আল্লাহ (নির্ধারিত) প্রাকৃতিক আইনের অন্তর্গত।
(আহমদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
ব্যাখ্যা: এ হাদীসখানির মাধ্যমে রাসূল (সা.) জানিয়ে দিয়েছেন মানুষের বিভিন্ন ধরনের চেষ্টার ফলাফল নির্ভর করবে ঐ চেষ্টা প্রচেষ্টা আল্লাহ নির্ধারিত সফল, না ব্যর্থ হওয়ার প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী করা হচ্ছে তার উপর।
তথ্য – ৫
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ يَقُولُ قَالَ رَجُلٌ يَارَسُولَ اللهِ أَعْقِلُهَا وَأَتَوَكَّلُ أَوْ أُطْلِقُهَا وَأَتَوَكَّلُ … … … رواه الترمذى
অর্থ: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলÑ হে আল্লাহর রাসূল! আমি উটকে বেঁধে রেখে তাওয়াক্কুল করব, না ছেড়ে দিয়ে তাওয়াক্কুল করব? তিনি বললেন, উটকে আগে বেঁধে রাখ, তারপর (আল্লাহর উপর) তাওয়াক্কুল (ভরসা) কর। (তিরমিযী)
ব্যাখ্যা: রাসূল (সা.) এখানে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন উট হারিয়ে না যাওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর উপর ভরসা করতে হলে তথা আল্লাহর সাহায্য পেতে হলে প্রথমে উটকে ভালভাবে বাঁধতে হবে। অর্থাৎ রাসূল (সা.) এ হাদীসখানির মাধ্যমে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, কোন কাজ বা বিষয়ে সফল হতে হলে প্রথমে আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন অনুসরণ করে কাজটি যথাসাধ্যভাবে পালন করতে হবে। তারপর আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইতে হবে। আর আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া দরকার এজন্যে যে তাঁর করে রাখা প্রাকৃতিক আইন যথাযথভাবে অনুসরণে ছোটখাট কোন ভুল-ভ্রান্তি থাকলে (যা সাধারণত থাকে) আল্লাহ যেন তা শুধরিয়ে দেন।
তথ্য – ৬
عَنْ عُمَرَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ (ص) يَقُوْلُ لَوْ اَنَّكُمْ تَتَوَكَّلُوْنَ عَلَى اللهِ حَقَّ تَوَكُّلِهِ لَرُزَِْقْتُُمْ كَمَا يُرْزَقُ الطَّيْرُ تَغْدُوخِمَاصًا وَتَرُوْحُ بِطَانًا.(رواه الترمذى)
অর্থ: উমার (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি, তোমরা যদি আল্লাহর উপর এমনভাবে ভরসা কর যেমনটি করা উচিত, তবে তিনি এমনভাবে তোমাদের জীবিকা দিবেন যেমনভাবে দেয়া হয় পাখীদের। সকালে পাখীরা খালি পেটে বের হয়ে পড়ে আর সন্ধ্যায় ফিরে আসে ভরা পেটে। (তিরমিযি)
ব্যাখ্যা: খাবার পাওয়ার জন্যে পাখীরা সকালে চেষ্টায় বেরিয়ে পড়ে এবং আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী চেষ্টা করে। ফলে বিকালে তারা ভরা পেটে বাসায় ফিরে। এ হাদীসখানির মাধ্যমে রাসূল (সা.) পাখীদের উদাহরণ দিয়ে তাই জানিয়ে দিয়েছেনÑ এ পৃথিবীতে জীবিকা পাওয়া তথা কোন কাজে সফল হওয়ার পদ্ধতি হচ্ছে আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী প্রথমে যথাসাধ্য চেষ্টা করা; তারপর সে চেষ্টায় থাকা ভুল-ভ্রান্তি শুধরিয়ে দেয়ার জন্যে আল্লাহর উপর ভরসা করা তথা আল্লাহ নিকট সাহায্য চাওয়া।
তথ্য – ৩
ক. হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার ঔষধ সৃষ্টি করেননি। (বুখারী, মুসলিম)
খ. হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন Ñ রাসূল (সা.) বলেছেন, সকল রোগের জন্যে চিকিৎসা (ঔষধ) আছে। যখন সঠিক ঔষধ রোগের জন্যে প্রয়োগ করা হয় তখন রুগী আল্লাহর ইচ্ছায় সেরে ওঠে। (মুসলিম)
গ. উসমান ইবনে শারীক (রা.) বলেন, একদিন আমি রাসূল (সা.) এর সাথে ছিলাম। তখন কিছু আরব এসে রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করল ‘হে আল্লাহর রাসূল, আমরা কি রোগের জন্য ঔষধ গ্রহণ করব?’ উত্তরে রাসূল (সা.) বলেন, ‘হে আল্লাহর বান্দারা, তোমরা ঔষধ গ্রহণ করবে। আল্লাহ এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার ঔষধ সৃষ্টি করেননি, শুধু একটি রোগ ব্যতীত।’ তারা জিজ্ঞাসা করল ‘সেটি কী?’ তিনি বললেন ‘সেটি হল বার্ধক্য।’ (আবুদাউদ, তিরমিজি, নাসাই, ইবনে মাজাহ)
ঘ. যায়েদ ইবনে আসলাম (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) এর সময় একব্যক্তি আহত হয় এবং তার তে পচন ধরে। রাসূল (সা.) লোকটির চিকিৎসার জন্যে বনি আনসার গোত্র থেকে দু‘জন ডাক্তারকে ডেকে পাঠান। রাসূল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে কে অপোকৃত ভাল চিকিৎসক? তারা উত্তরে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সা.), চিকিৎসায় কি ভালÑখারাপ আছে?’ যায়েদ (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বললেন Ñ ‘যিনি রোগ পাঠিয়েছেন তিনি ঔষধও পাঠিয়েছেন’।
(মুয়াত্তা)
সম্মিলিত ব্যাখ্যা
রোগ, ঔষধ, চিকিৎসা নেয়া বা না নেয়া, ভাল-খারাপ ডাক্তার ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কিত রাসূল (সা.) এর উল্লিখিত হাদীসসমূহ থেকে জানা ও বুঝা যায়Ñ আল্লাহ প্রত্যেক রোগের সাথে তার ঔষধও সৃষ্টি করে রেখেছেন। আর একটি রোগ, কোন্ ঔষধ, কী মাত্রায় প্রয়োগ করলে নিরাময় হবে তা আল্লাহ নির্ধারিত করে, চিকিৎসার প্রাকৃতিক আইনে তথা চিকিৎসার তাকদীরে অন্তর্ভুক্ত করে রেখেছেন। ডাক্তার যদি নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয় (উরধমহড়ংরং) করে সঠিক ঔষধটি প্রয়োজনীয় মাত্রায় প্রয়োগ করতে পারে তবে রোগ অবশ্যই নিরাময় হবে। যে ডাক্তার ঐ কাজগুলো যতো নিুর্র্ভুলভাবে করতে পারবে সে তত ভাল ডাক্তার হবে। তাই রোগ হলে যেমন ভাল ডাক্তারের নিকট যেয়ে চিকিৎসা নিতে হবে, তেমনই আল্লাহর নিকট দোয়া করতে হবে তিনি যেন ঐ ডাক্তারের প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী রোগ নির্ণয় ও সঠিক ঔষধ প্রয়োগ করার পদ্ধতিতে ছোট-খাট ভুল থাকলে তা শুধরিয়ে দেন।
তাকদীর তথা আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন জানা, বুঝা বা বের করার উপায়
মহান আল্লাহ হচ্ছেন মানুষের সর্বাধিক কল্যাণকামী সত্তা। মহাবিশ্বের সকল কিছু তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষের কল্যাণের জন্যে। মানুষের জীবনের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য, বিচার, ব্যবসা-বাণিজ্য, যুদ্ধ, সন্ধি, আন্তর্জাতিক ইত্যাদি সকল দিকের তৈরী করে রাখা প্রতিটি প্রাকৃতিক আইন যদি আল্লাহ মানুষকে নিজ জ্ঞান-বুদ্ধি বা গবেষণার মাধ্যমে বের করে নিয়ে পালন করতে বলতেন তবে মানুষের দুঃখের কোন সীমা থাকত না। তাই মহা দয়ালু আল্লাহ মানুষের জীবনের সকল দিকের তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে স্পষ্ট করে বলেছেন নিুোক্তভাবেÑ
তথ্য -১
وَالَّذِىْ قَدَّرَ فَهَدَى.
অর্থ: তিনি (আল্লাহ) প্রাকৃতিক আইন (কদর বা তাকদীর) নির্দিষ্ট করেছেন। এর পর পথ দেখিয়েছেন (জানিয়ে দিয়েছেন)। (আলÑআলা : ৩)
তথ্য -২
وَهَدَيْنَاهُ النَّجْدَ يْنِ .
অর্থ: আর উভয় (সঠিক ও ভুল) পথ আমি কি তাদের (মানুষকে) দেখাই নাই? (বালাদ : ১০)
ব্যাখ্যা: এখানে আল্লাহ প্রশ্নের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন যে তাঁর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী একটি কাজে সফল হওয়া ও ব্যর্থ হওয়ার উভয় পথই মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
আল-কুরআনের এ ধরনের আরো অনেক তথ্যের মাধ্যমে আল্লাহ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন তিনি মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন। আর এই জানানোর কাজটি তিনি করেছেন তিনভাবে, যথাÑ
ক. কিতাবের মাধ্যমে
কিতাবের মাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন মানুষের জীবনে প্রতিটি দিকের সকল প্রথম স্তরের মৌলিক বিষয়, কিছু দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক বিষয় ও দু-একটি অমৌলিক বিষয়। প্রথম স্তরের মৌলিক বিষয় হচ্ছে আল্লাহর কিতাবের মূল বিষয়গুলো। এর একটিও বাদ গেলে মানুষের পুরো জীবন সরাসরি ব্যর্থ হবে। দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক বিষয় হচ্ছে প্রথম স্তরের মৌলিক বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন পদ্ধতির মৌলিক বিষয়। এর একটি বাদ গেলে তার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রথম স্তরের মৌলিক বিষয়টি ব্যর্থ হবে। তাই আবার মানুষের পুরো জীবন ব্যর্থ হয়। অমৌলিক বিষয় হচ্ছে সেগুলো যার সবকটিও বাদ গেলে মানুষের জীবন ব্যর্থ হবে না তবে তাতে কিছু অপূর্ণতা থাকবে। আল্লাহর কিতাবের সর্বশেষ সংস্করণ হচ্ছে আল-কুরআন।
খ. নবী-রাসূল (সা.) গণের সূন্নাহের মাধ্যমে
সুন্নাহ এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বাকী থাকা দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক বিষয় ও অসংখ্য অমৌলিক বিষয়। তবে এখানে আল্লাহর কিতাবে উল্লিখিত সকল বিষয়ও উপস্থিত আছে।
গ. মানুষের বিবেক ও জ্ঞান-বুদ্ধির মাধ্যমে
যে সকল প্রাকৃতিক আইন আল্লাহর কিতাব বা রাসূলের সুন্নাহে সরাসরি উল্লিখিত হয় নাই, সেগুলোকে কিতাব ও সুন্নাহের আলোকে বিবেক-বুদ্ধি খাটিয়ে তথা চিন্তা-গবেষণা করে বের করে নিয়ে কাজে লাগানোর জন্যে, কুরআন ও সুন্নাহের মাধ্যমে আল্লাহ বারবার মানুষকে তাকিদ দিয়েছেন।
মানুষের কর্মপদ্ধতিতে ত্র“টি থাকার কারণে তাকদীর অনুযায়ী যে পরিণতি হওয়ার কথা তা পরিবর্তন হওয়া বা করা সম্ভব কি না
কোন কাজের ১০০% সঠিক ফলাফল হওয়ার জন্যে আল্লাহর জানা কিন্তু মানুষের অজানা ও জানা অসংখ্য বিষয় (ঋধপঃড়ৎ) রয়েছে। তাই মানুষ দ্বারা যে কোন কাজ সম্পাদনে ত্র“টি থাকাটাই স্বাভাবিক। ঐ ত্র“টির জন্যে আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইনে স্বাভাবিকভাবে একটি ফল নির্ধারিত বা লিখা আছে। ঐ ফলাফলটি অধিকাংশ েেত্র কাজটির ১০০% সঠিক ফলাফলের নিচে থাকবে। চলুন এখন কুরআন ও হাদীসের আলোকে পর্যালোচনা করা যাক, মানুষের ত্র“টির কারণে প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী কৃত কাজের স্বাভাবিক যে ফল হওয়ার কথা ছিল তা পরিবর্তন হওয়া বা করা সম্ভব কি না
আল-কুরআন
তথ্য-১
إِنَّ رَبَّكَ فَعَّالٌ لِّمَا يُرِيْدُ.
অর্থ: নিশ্চয়ই তোমার রব যা ইচ্ছা তা করার মতা রাখেন। (হুদ : ১০৭)
ব্যাখ্যা: আল-কুরআনের অনেক জায়গায় মহান আল্লাহ এই বক্তব্যটি রেখেছেন। এ বক্তব্য থেকে বুঝা যায়, যেকোন বিষয় পরিবর্তন করার মতা আল্লাহর আছে এবং দরকার হলে তিনি তা করেন। আর ‘যে কোন বিষয়ের মধ্যে’ তাকদীর, কর্মফল বা পরিণতিও অন্তর্ভুক্ত।
তথ্য-২
وَمَا اَصَابَكُمْ مِّنْ مُصِيْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ اَيْدِيْكُمْ وَيَعْفُوْا عَنْ كَثِيْرٍ.
অর্থ: তোমাদের উপর যে সকল বিপদ-আপদ আসে তা তোমাদের নিজেদের কর্মফল এবং অনেক বিপদ তিনি নিজে মা করে দেন (সংঘটিত হতে দেন না)। (শুরা-৩০)
ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ প্রথমে এখানে পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন দুনিয়ায় মানুষের উপর যে বিপদ-আপদ আসে তা তাদের নিজেদের কৃত কর্মের ফল হিসেবে আসে। অর্থাৎ আল্লাহ এখানে প্রথমে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, না জানার কারণে পদ্ধতিতে ত্র“টি রেখে কাজ করার জন্যে অথবা নিজ ইচ্ছায় ভুল বা খারাপ কাজ করার কারণে তাঁর তৈরী প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী যে সকল বিপদ আসার কথা, তার অনেকগুলো তিনি মাফ করে দেন তথা আসতে দেন না। তাই এখান থেকেও বুঝা যায় কর্মের ফল বা পরিণতি আল্লাহ দ্বারা পরিবর্তন হওয়া সম্ভব।
ব্লগ অনুসন্ধান
Search
সহযোগিতা
ফকির আবদুল মালেক
৮৩
Home Banner
সকল পোস্ট
নির্বাচিত পোস্ট
নোটিশ বোর্ড
অনুসারিত ব্লগ
ফকির আবদুল মালেক ব্লগ
নতুন ব্লগ লিখুন
পোস্টটি যিনি লিখেছেন
তাহান তাহান
অনুসরণ করুন
Understanding the Glorious Quran
মির্জা ফখরুলের ওপর হামলার বিচার হবে কী করে?
পাহাড় এখন বারুদের স্তূপ
শুরু হলো গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম
ট্রাম্প এর আমলে কেমন থাকবে বাংলাদেশ?
ট্রাম্প আসার পর ব্যবসা না বাড়ায় হতাশ এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট
from: dw.com
তাকদীর (ভাগ্য!) পূর্ব নির্ধারিত – তথ্যটির প্রচলিত ও প্রকৃত ব্যাখ্যা
০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
তাকদীর (ভাগ্য!) পূর্ব নির্ধারিত – তথ্যটির প্রচলিত ও প্রকৃত ব্যাখ্যা
-প্রফেসর ডাঃ মোঃ মতিয়ার রহমান (এফ আর সি এস)
শুরুর কথা
‘তাকদীর পূর্বনিধারিত’ তথ্যটি কুরআন ও হাদীসে অনেকবার এসেছে। আবার তাকদীরে বিশ্বাস করা মুসলিমদের ঈমানের অংশ। তাই তাকদীর বলতে কুরআন ও হাদীসে কী বুঝান হয়েছে তা প্রতিটি মুসলিমের সঠিকভাবে জানা এবং তা বিশ্বাস করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘তাকদীর পূর্বনির্ধারিত’ তথ্যটি সম্বন্ধে বর্তমান বিশ্বের প্রায় সকল মুসলিমের ধারণা হচ্ছে
সকল কাজের ভাগ্য তথা ফলাফল আল্লাহ্ পূর্বে নির্ধারিত করে রেখেছেন,
মানুষের চূড়ান্ত ভাগ্য তথা বেহেশত বা দোযখ প্রাপ্তির বিষয়টিও পূর্বনির্ধারিত,
ঐ ভাগ্য পরিবর্তন করার মতা মানুষের নেই।
তাকদীর সম্বন্ধে প্রচলিত এ ধারণার বাস্তব যে ফল মুসলিম সমাজে ঘটেছে বা ঘটছে তা হল
১. দুষ্ট লোকেরা খারাপ কাজ করার যুক্তি খুঁজে পেয়েছে। তারা বলে আমাদের ভাগ্যতো আল্লাহ্ পূর্বে নির্ধারণ করে রেখেছেন। তাই আমরা খারাপ কাজ করলে ফল যা হবে ভাল কাজ করলেও ফল তাই হবে।
২. সাধারণ মুসলিমরা কষ্টসাধ্য বা ত্যাগ স্বীকার করা লাগে এমন কাজ করার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। কারণ তারা মনে করে নিয়েছে- কষ্ট করে বা ত্যাগ স্বীকার করে একটি কাজ করার পরও আল্লাহ্ ঐ কাজের যে ফল নির্ধারণ করে রেখেছেন তাতো পরিবর্তন করা যাবে না। তাই অযথা কষ্ট করার বা ঝুঁকি নেয়ার দরকার কী?
৩. বিজ্ঞানের সকল দিকের এক সময়ের শ্রেষ্ঠ মুসলিম জাতি গবেষণা বন্ধ করে দিয়ে আজ বিজ্ঞানের সকল েেত্র বিশ্বের অন্য জাতিদের তুলনায় ব্যাপকভাবে পিছিয়ে পড়েছে। যেমন-
ডাক্তারী বিদ্যায় গবেষণার ব্যাপারে তারা মনে করেছে কষ্ট করে গবেষণা করে নতুন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি বা ঔষধ আবিষ্কার করার কী দরকার? রোগ ভাল হবে কি হবে না এটিতো আল্লাহ্ পূর্বে নির্ধারণ করে রেখেছেন।
কষ্ট করে গবেষণা করে উন্নতমানের যুদ্ধাস্ত্র তৈরী করা মুসলিমরা বেদরকারী মনে করেছে। কারণ যুদ্ধের ফলাফলতো পূর্বনির্ধারিত। তাই উন্নত মানের যুদ্ধাস্ত্র থাকলে ফলাফল যা হবে, না থাকলেও ফলাফল তাই হবে।
৪. কোন কোন মু’মিনের বুঝ তাকদীরের প্রকৃত অর্থ ও ব্যাখ্যার কাছাকাছি হলেও বিষয়টি তারা ভালভাবে বুঝে নেননি। ফলে বিষয়টিকে যেমন তারা মনের প্রশান্তিসহকারে বিশ্বাস করতে পারেন না তেমনই অন্য মানুষকে তা যুক্তিগ্রাহ্য করে বুঝাতে পারেন না।
তাই, ইসলামের সকল মূলনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এবং মানব সভ্যতার বর্তমান পর্যায়ের বিজ্ঞানের জ্ঞানের সহায়তায়, তাকদীরের প্রকৃত অর্থ ও ব্যাখ্যা বোধগম্য এবং যুক্তিগ্রাহ্য করে উপস্থাপন করা বর্তমান প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য। আশা করি এর মাধ্যমে তাকদীরের উপর মুসলমানদের বিশ্বাস দৃঢ় হবে এবং তাকদীরে বিশ্বাসের মাধ্যমে আল্লাহ্, মানুষ বা মুসলমানদের দুনিয়া ও আখিরাতে যে কল্যাণ দিতে চেয়েছিলেন তা পাওয়া সম্ভব হবে।
মূল বিষয়
তাকদীর সম্পর্কে নির্ভুল সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হলে প্রথমে কুরআন ও হাদীসে উল্লিখিত তাকদীরের সঙ্গে প্রত্য (উরৎবপঃ) বা পরো (ওহফরৎবপঃ) ভাবে সম্পর্কযুক্ত নিুোক্ত বিষয়সমূহ জানতে, বুঝতে ও সম্পূরক ব্যাখ্যা করতে হবেÑ
১. মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর উদ্দেশ্য।
২. উদ্দেশ্যটির বাস্তবায়ন ইনসাফের ভিত্তিতে হওয়ার নিমিত্তে মানুষের জন্যে আল্লাহপ্রদত্ত নিম্নোক্ত সুযোগ সুবিধাসমূহÑ
ক. করণীয় বা নিষিদ্ধ (সঠিক বা ভুল) বিষয়সমূহ নির্ভুলভাবে মানুষকে জানিয়ে দেয়া,
খ. করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করতে প্রয়োজনীয় জিনিসসমূহ মানুষকে যোগান দেয়া বা মানুষ যাতে তা যোগাড় করে নিতে পারে তার ব্যবস্থা রাখা,
গ. করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করার ইচ্ছা করা এবং সে ইচ্ছা বাস্তবায়ন করার জন্যে চেষ্টা-সাধনা করার ল্েয মানুষকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া।
ঘ. জন্মগতভাবে বা বিনা প্রচেষ্টায় কেউ সুযোগ-সুবিধা বেশি বা কম পেয়ে থাকলে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার সময় তা হিসেবে আনা।
৩. কর্মফল বা পরিণতির জন্যে মানুষই দায়ী।
৪. তাকদীর, সৃষ্টির পূর্বে নির্ধারিত করে রাখা হয়েছে এবং তা অপরিবর্তনীয়।
৫. তাকদীর পরিবর্তন হওয়ার উপায় ও কারণ।
৬. মানুষের বা মহাবিশ্বের সকল কিছুর পরিণতি আল্লাহ সৃষ্টির পূর্বে একটি কিতাবে লিখে রেখেছেন। সবকিছুর পরিণতি ঐ কিতাবে থাকা লিখা অনুযায়ী হবে।
মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর উদ্দেশ্য
তাকদীরের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা বুঝার জন্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর উদ্দেশ্যটি নির্ভুলভাবে জানা ও বুঝা। তাই চলুন প্রথমে সে উদ্দেশ্যটি আল-কুরআন থেকে নির্ভুলভাবে জেনে ও বুঝে নেয়া যাকÑ
তথ্য – ১
اَلَّذِى خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَوةَ لِيَبْلُوَكُمْ اَيُّكُمْ اَحْسَنُ عَمَلأ.
অর্র্থ: তিনি (মহান আল্লাহ) মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যেন পরীা করে নিতে পারেন কে কাজে-কর্মে উত্তম (শ্রেষ্ঠ)। (মুলক : ২)
তথ্য – ২
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلاَئِفَ الْأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ.
অর্র্থ: তিনি তোমাদের পৃথিবীতে তাঁর খলীফা করে পাঠিয়েছেন এবং একজনকে অন্য জনের উপর (বিভিন্ন দিক দিয়ে) শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন, যাতে তোমাদের যাকে যা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী পরীা (যাচাই) করে নিতে পারেন।
(আন’আম : ১৬৫)
তথ্য – ৩
أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُوْلُوْا آمَنَّا وَهُمْ لاَ يُفْتَنُوْنَ.وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللهُ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِيْنَ.
অর্থ: মানুষ কি মনে করেছে যে, ‘ঈমান এনেছি এটুকু বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে? আর তাদের (কর্মের মাধ্যমে) পরীা করা হবে না?’ অথচ আমিতো পূর্বে গত হওয়া সকলকে (কর্মের মাধ্যমে) পরীা করে নিয়েছি। আল্লাহকে তো অবশ্যই (কর্মের মাধ্যমে) জেনে নিতে হবে কে ঈমান আনার দাবীর ব্যাপারে সত্যবাদী, আর কে সে ব্যাপারে মিথ্যাবাদী। (আন-কাবুত : ২,৩)
আল-কুরআনের এ সকল তথ্য এবং তথায় উল্লেখ থাকা এ ধরনের আরো অনেক তথ্য থেকে নিঃসন্দেহে জানা ও বুঝা যায় মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর উদ্দেশ্যটি হচ্ছেÑ‘মানুষকে কর্মের মাধ্যমে তথা করণীয় কাজ করা এবং নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে পরীা নিয়ে ইনসাফ সহকারে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া’।
মহাবিশ্ব সৃষ্টির উদ্দেশ্যটি ইনসাফ ভিত্তিক বাস্তবায়ন হওয়ার নিমিত্তে বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী মানুষের যে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া উচিত
সাধারণ বিবেক-বুদ্ধির আলোকে সহজেই বলা যায় যে, পরীা নেয়ার ভিত্তিতে দেয়া পুরস্কার বা শাস্তি যদি ইনসাফ ভিত্তিক হতে হয়, তবে সে পরীা নেয়া এবং পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার আগে নিুের সুযোগ-সুবিধা চারটি অবশ্যই পূরণ করতে হবেÑ
ক. সঠিক বা ভুল উত্তর কোন্টি তা সঠিকভাবে জানিয়ে দেয়া
কোন্ উত্তরটি সঠিক আর কোন্টি ভুল অর্থাৎ কোন্ কাজটি করণীয় আর কোন্টি নিষিদ্ধ, পরীা নেয়ার আগে সেটি পরীার্থীকে কোন না কোনভাবে অবশ্যই জানিয়ে দিতে হবে। কারণ কোনভাবেই জানতে না পারার দরুন যদি কেউ কোন সিদ্ধ কাজ না করে বা নিষিদ্ধ কাজ করে তবে তাকে শাস্তি দেয়া সাধারণ বিবেক-বিরুদ্ধ।
খ. উত্তর লিখার জন্যে প্রয়োজনীয় সকল জিনিস যোগান (ঝঁঢ়ঢ়ষু) দেয়া
সঠিক বা ভুল উত্তর দিতে তথা করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করতে যে সকল উপায়-উপকরণ লাগে সেগুলো ব্যক্তিকে যোগান দিতে হবে বা সে যেন তা যোগাড় করে নিতে পারে তার সকল সুযোগ বা ব্যবস্থা থাকতে হবে। কারণ তা না হলে সেতো সঠিক বা ভুল উত্তর লিখতে তথা করণীয় বা নিষিদ্ধ কোন কাজ করতে পারবে না।
গ. সঠিক বা ভুল উত্তর দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া ও বাস্তবে তা কার্যকর করার জন্যে চেষ্টা করার ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া
পরীা নিয়ে দেয়া পুরস্কার বা শাস্তি ইনসাফ ভিত্তিক হতে হলে পরীার্থীকে অবশ্যই সঠিক বা ভুল উত্তর দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া এবং সে অনুযায়ী উত্তর লিখার ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। কারণ, কাউকে যদি সঠিক বা ভুল উত্তর লিখতে বাধ্য করা হয়, তবে সেটিকে পরীা নেয়া না বলে বাধ্য করা বলতে হবে। আর বাধ্য হয়ে করা কাজের ভিত্তিতে কাউকে পাস বা ফেল করানো তথা পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া কোন মতেই ইনসাফ সম্মত হতে পারে না। অর্থাৎ মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে থাকা আল্লাহর মহাপরিকল্পনাটি ইনসাফ ভিত্তিক হতে হলে করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া ও সে অনুযায়ী চেষ্টা-সাধনা করার ব্যাপারে মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকতে হবে।
ঘ. জন্মগতভাবে বা বিনাপ্রচেষ্টায় কেউ সুযোগ-সুবিধা বেশী বা কম পেয়ে থাকলে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার সময় তা হিসেবে আনা
একটি পরীায় কিছু পরীার্থীর যদি এমন কিছু দুর্বলতা থাকে যেটি এড়ানো তাদের পে কোনমতেই সম্ভব ছিল না এবং কিছু পরীার্থী যদি ঐ বিষয়গুলোয় বিনা প্রচেষ্টায় শক্তিশালী হয়ে গিয়ে থাকেতবে সাধারণ বিবেক-বুদ্ধি বলে ঐ সকল পরীার্থীকে একই মানদণ্ডে বিচার করে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া কোনমতেই ইনসাফ হবে না। অর্থাৎ বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী ঐ বিষয়গুলো যথাযথভাবে পর্যালোচনায় এনে ফলাফল নির্ণয় করে পুরস্কার বা শাস্তি দিলেই শুধু সে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া ইনসাফ ভিত্তিক হবে।
মানুষের জীবনে এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলো মানুষের নিজ ইচ্ছা ও চেষ্টা অনুযায়ী হয় নাই, অর্থাৎ যেগুলো পরিবর্তন করা মানুষের কর্তৃত্বের বাইরে, যেমন
জন্মের স্থান, কাল, বংশ;
লিঙ্গ,
শারীরিক মূল গঠন, চেহারা ও রং,
মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক মূল গঠন।
এ বিষয়গুলো মানুষ নিজ ইচ্ছা বা চেষ্টা ছাড়া তথা জন্মগতভাবে (ঐবৎরফরঃধৎরষু) পেয়ে থাকে। আবার তা পরিবর্তন করাও তার সাধ্যের (মতার) বাইরে। এ বিষয়গুলোর উপস্থিতি বা অভাবকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন না করে, কর্মের জন্যে সকল মানুষকে একই ল্েয (এড়ধষ) পৌঁছানো নির্দিষ্ট করে দিলে এবং তাতে সফল হওয়া বা না হওয়ার জন্যে একই ধরনের পুরস্কার বা শাস্তি দিলে, সে পুরস্কার বা শাস্তি ইনসাফের ভিত্তিতে দেয়া হবে না। অর্থাৎ কর্মের মাধ্যমে পরীা নিয়ে মানুষকে ইনসাফের ভিত্তিতে পুরস্কার বা শাস্তি দিতে হলে জন্মগতভাবে যে সকল বিষয় সে পেয়েছে বা পায় নাই, তা খেয়াল রেখেই সফল হওয়া না হওয়াকে বিচার করতে হবে এবং সে অনুযায়ী পুরস্কার বা শাস্তি নির্ধারণ করতে হবে। দুনিয়ায় পরীা নিয়ে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে সাধারণত এটি হিসেবে আনা হয় না।
মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে থাকা আল্লাহর উদ্দেশ্যটি ইনসাফ ভিত্তিক বাস্তাবায়ন হওয়ার জন্যে সাধারণ বিবেক-বুদ্ধি নির্ণিত সুযোগ-সুবিধা তিনটি আল্লাহ্ মানুষকে দিয়েছেন তার প্রমাণ
ক. করণীয় ও নিষিদ্ধ কাজ (সঠিক ও ভুল উত্তর) কোন্গুলো তা নির্ভুলভাবে মানুষকে জানিয়ে দেয়া
তথ্য- ১
لآاِكْرَاهَ فِى الدِّيْنِ قَدْ تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَىِّ فَمَنْ يَّكْفُرْ باِلطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ باِللهِ فَقَدِاسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثقَى.
অর্র্থ: ইসলামে কোন জোর-জবরদস্তি নেই। কোন্টা সত্য (করণীয়) আর কোন্টা মিথ্যা (নিষিদ্ধ) তা স্পষ্ট করে (জানিয়ে) দেয়া হয়েছে। এখন যে ব্যক্তি খোদাদ্রোহী শক্তিকে প্রত্যাখ্যান করে আল্লাহর ওপর ঈমান আনলো, সে একটা নির্ভরযোগ্য আশ্রয় গ্রহণ করলো। (বাকারা : ২৫৬)
ব্যাখ্যা: এ আয়াতে মহান আল্লাহ পরিষ্কারভাবে বলেছেন কোনটি ন্যায় ও কোনটি অন্যায় অর্থাৎ কোন্টি করণীয় ও কোন্টি নিষিদ্ধ তা মানুষকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
তথ্য – ২
وَهَدَيْنهُ النَّجْدَيْنَ.
অর্র্থ: আর উভয় (সঠিক ও ভুল) পথ কি তাকে (মানুষকে) দেখাই নাই?
(বালাদ : ১০)
ব্যাখ্যা: এখানেও আল্লাহ প্রশ্ন করার মাধ্যমে স্পষ্ট করে বলেছেন তিনি মানুষকে সঠিক ও ভুল উভয় পথ তথা উভয় ধরনের বিষয়ই জানিয়ে দিয়েছেন।
তথ্য – ৩
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِىْ اُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِِّلنَّاسِ وَبَيِّنتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ.
অর্থ: রমযান মাস। এ মাসেই কুরআন নাযিল হয়েছে। তা গোটা মানব জাতির জীবন-যাপনের পথনির্দেশ (দানকারী গ্রন্থ)। তা স্পষ্ট পথনির্দেশ এবং (সত্য ও মিথ্যার) পার্থক্যকারী (গ্রন্থ)। (বাকারা : ১৮৫)
ব্যাখ্যা: এখানে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে আল-কুরআন গোটা মানব জাতির জন্যে স্পষ্ট পথনির্দেশ ও সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী। অর্থাৎ কুরআনের মাধ্যমে মানুষকে সকল মূল করণীয় ও নিষিদ্ধ তথা সকল প্রথম স্তরের মৌলিক করণীয় ও নিষিদ্ধ বিষয় জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
অনেক আল-কুরআনের এ ধরনের তথ্য থেকে পরিষ্কারভাবে জানা ও বুঝা যায়, মহান আল্লাহ মানুষকে করণীয় ও নিষিদ্ধ কাজ কোন্গুলো তা জানিয়ে দিয়েছেন। আর তা জানিয়েছেন বা জানার ব্যবস্থা করেছেন নিুোক্ত তিনটি উৎসের মাধ্যমে Ñ
ক. আল-কুরআন,
খ. সুন্নাহ বা হাদীস এবং
গ. মানুষের বিবেক-বুদ্ধি
কুরআনের মাধ্যমে সকল মূল তথা প্রথম স্তরের মৌলিক, অনেক দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক ও কিছু অমৌলিক বিষয় জানানো হয়েছে। সুন্নাহের মাধ্যমে সকল প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক ও অনেক অমৌলিক বিষয় জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আর মানুষের প্রয়োজনীয় যে সকল অমৌলিক বিষয় কুরআন-সুন্নাহের মাধ্যমে স্পষ্ট করে জানানো হয়নি সে গুলিকে বিবেক-বুদ্ধি খাটিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে, আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক নিয়ম হতে, কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে বের করে নেয়ার জন্যে মহান আল্লাহ কুরআন ও সুন্নাহের মাধ্যমে বারবার তাগিদ দিয়েছেন।
খ. করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করতে (সঠিক বা ভুল উত্তর লিখতে) প্রয়োজনীয় সকল জিনিস মানুষকে যোগান দেয়া বা মানুষ যাতে তা যোগাড় করে নিতে পারে তার ব্যবস্থা রাখা
বাস্তব জগতে দেখা যায় ইসলাম সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ যে কোন কাজ করার জন্যে যত জিনিসের প্রয়োজন, প্রকৃতিগতভাবে আল্লাহ তা তৈরী করে রেখেছেন অথবা তৈরী করার সকল উপাদান সৃষ্টি করে রেখেছেন। মানুষ বিবেক-বুদ্ধি বা জ্ঞান-বুদ্ধি খাটিয়ে তা তৈরী করে নিতে পারে। আর এ বিষয়টি মহান আল্লাহ আল-কুরআনের মাধ্যমে নিুোক্তভাবে জানিয়ে দিয়েছেন Ñ
তথ্য – ১
هُوَ الَّذِىْ خَلَقَ لَكُمْ مَافِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا.
অর্থ: তিনি (আল্লাহ) পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা সবই তোমাদের (ব্যবহারের) জন্যে সৃষ্টি করেছেন (করে রেখেছেন)। (বাকারা : ২৯)
তথ্য – ২
وَسَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي السَّموَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مِنْهُ.
অর্র্থ: মহাকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তার সবকিছুকে তিনি (আল্লাহ) নিজের প থেকে (নিজ ইচ্ছায়) তোমাদের (কল্যাণের জন্যে) কর্মে নিয়োজিত করে রেখেছেন। (জাসিয়া : ১৩)
তথ্য – ৩
أَلَمْ تَرَوْا أَنَّ اللهَ سَخَّرَ لَكُمْ مَا فِي السَّموَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَأَسْبَغَ عَلَيْكُمْ نِعَمَهُ ظَاهِرَةً وَبَاطِنَةً.
অর্র্থ: তুমি কি ল্য করনি নভোমণ্ডল ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা সবই আল্লাহতায়ালা তোমাদের কল্যাণের জন্যে নিয়োজিত করে রেখেছেন এবং নিজ থেকে প্রকাশ্য ও গোপন নিয়ামতসমূহ (কল্যাণকর জিনিসসমূহ) তোমাদের জন্যে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন? (লোকমান : ২০)
আল-কুরআনের উল্লিখিত তথ্যসমূহ এবং তথায় উল্লেখ থাকা এ ধরনের আরো অনেক তথ্য এবং বিবেক-বুদ্ধির আলোকে নির্দ্বিধায় বলা যায়Ñ
মহাবিশ্বের দৃশ্যমান ও অদৃশ্য সকল কিছু আল্লাহ মানুষের ব্যবহারের জন্যে সৃষ্টি বা তৈরী করে রেখেছেন,
ঐ জিনিসগুলি হয় ব্যবহার করার উপযোগী করে আল্লাহ তৈরী করে রেখেছেন অথবা আল্লাহর সৃষ্টি করে রাখা উপাদান ব্যবহার করে তা তৈরী করে নেয়ার মতো জ্ঞান-বুদ্ধি মানুষকে তিনি দিয়েছেন,
ঐ জিনিসগুলি মানুষ ইসলাম সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ যেকোন কাজ করার জন্যে ব্যবহার করতে পারে।
গ. করণীয় বা নিষিদ্ধ কাজ করার ইচ্ছা করা এবং সে ইচ্ছা বাস্তবায়ন করার ল্েয চেষ্টা-সাধনা করার ব্যাপারে মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকা
বাস্তবে আমরা দেখি ইসলাম সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ যেকোন কাজ করার ইচ্ছা করা বা সিদ্ধান্ত নেয়া এবং সে ইচ্ছা বা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার জন্যে চেষ্টা-সাধনা করার ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন। আর মহান আল্লাহ যে মানুষকে এ স্বাধীনতা দিয়েছেন তা তিনি আল-কুরআনের মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন নিুোক্তভাবেÑ
ঈমান আনার ব্যাপারে মানুষ স্বাধীন
তথ্য – ১
وَقُلِ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكُمْ قف فَمَنْ شَاءَ فَلْيُؤْمِنْ وَّمَنْ شَاءَ فَلْيَكْفُرْ.
অর্থ:বলে দাও এ মহাসত্য এসেছে তোমাদের রবের নিকট থেকে। এখন যার ইচ্ছা ঈমান আনতে পার, আর যার ইচ্ছা অস্বীকার করতে পার। (কাহাফ : ২৯)
তথ্য – ২
وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَآمَنَ مَنْ فِي الْأَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيْعًا أَفَأَنْتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتَّى يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ.
অর্থ: তোমার রব যদি ইচ্ছা করতেন তবে পৃথিবীর সকলেই ঈমান আনত। তুমি কি লোকদের মু‘মিন হওয়ার জন্যে জবরদস্তি করবে? (ইউনুস:৯৯)
আল-কুরআনের এ সকল তথ্য এবং এ ধরনের আরো অনেক তথ্য থেকে নিঃসন্দেহে জানা ও বুঝা যায় ঈমান আনার ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন। অর্থাৎ ঈমান আনা বা না আনা সম্পূর্ণ মানুষের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।
সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ উভয় ধরনের কাজ করার ব্যাপারে মানুষ স্বাধীন
তথ্য – ১
اِنَّا هَدَيْنَ السَّبِيْلَ اِماَّ شَاكِراً وَّ اِماَّكَفُوْراً.
অর্র্থ: আমি তাদের (মানুষদের) সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছি। এখন ইচ্ছা করলে তারা (তা অনুসরণ করে কল্যাণপ্রাপ্ত হয়ে) শোকরকারী হতে পারে, অথবা তা অস্বীকার করতে পারে (অস্বীকার করে ভুল পথ অনুসরণ করতে পারে)।
(দাহার:৩)
তথ্য – ২
اِنَّ هَذِهِ تَذْكِرَةٌ ج فَمَنْ شَاءَ اتَّخَذَ اِلَى رَبِّهِ سَبِيْلاً.
অর্র্থ: এটা (আল-কুরআনের বক্তব্য) একটি নসিহত বিশেষ। এখন যার ইচ্ছা নিজের রবের পথ অবলম্বন করুক। (দাহার : ২৯)
তথ্য – ৩
فَمَنْ شَاءَ اتَّخَذَ اِلى رَبِّهِ سَبِيْلأ.
অর্র্থ: যার ইচ্ছা হয় আপন প্রতিপালকের পথ অবলম্বন করবে। (মুজাম্মেল : ১৯)
তথ্য – ৪
إِنَّ اللهَ لاَ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ.
অর্র্থ: আল্লাহ অশ্লীল কার্যকলাপ করার নির্দেশ দেন না। (আরাফ : ২৮)
ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ এখানে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন ইসলামের কোন নিষিদ্ধ কাজ তাঁর নির্দেশে হয় না। অর্থাৎ মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী তা সংঘটিত হয়।
তথ্য – ৫
وَمَااُمِرُوْا اِلاَّ لِيَعْبُدُوااللهَ.
অর্র্থ: আল্লাহর ইবাদাত করা ছাড়া তাদেরকে আর কিছু করতে নির্দেশ দেয়া হয়নি। (বাইয়েনা : ৫)
ব্যাখ্যা: এখান থেকেও স্পষ্টভাবে জানা ও বুঝা যায় আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত (দাসত্ব) তথা ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ আল্লাহর নির্দেশে হয় না, মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী হয়।
তথ্য – ৬
وَلَوْشَاءَ اللهُ ماَاَشْرَكُوْا.
অর্র্থ: আল্লাহ যদি চাইতেন কেউ শিরক করতো না। (আনয়াম : ১০০)
ব্যাখ্যা: এখানেও আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি চাইলে মানুষ শিরক করতে পারতো না। অর্থাৎ শিরক (ইসলামের নিষিদ্ধ কাজ) আল্লাহর ইচ্ছা বা আদেশ অনুযায়ী হয় না। তা মানুষের ইচ্ছা ও চেষ্টা অনুযায়ী সংঘটিত হয়।
তথ্য – ৭
وَيَهْدِى اِلَيْهِ مَنْ اَنَابَ.
অর্র্থ: আর যে (ইচ্ছা করে) তাঁর (আল্লাহর) দিকে ফিরে যেতে চায় তাকে তিনি পথ দেখান। (রা’দ : ২৭)
তথ্য – ৮
اِنَّ سَعْيَكُمْ لَشَتَّى. فاَماَّ مَنْ اَعْطَى وَاتَّقَى. وَصَدَّقَ بِالْحُسنَى. فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسرَى. وَاَمَّامَنْم بَخِلَ وَاسْتَغْنَى. وَكَذَّبَ بِالْحُسنَى. فَسَنُيَسِّرُهُ لِلعُسْرَى.
অর্র্থ: আসলে তোমাদের (মানুষের) চেষ্টা বিভিন্ন ধরনের। তাই যে ব্যক্তি (নিজ ইচ্ছায়) সম্পদ দান করল, (আল্লাহর নাফরমানী হতে) আত্মরা করল এবং ন্যায়কে সত্য বলে মেনে নিল, তাকে আমি সঠিক পথে (ইসলামের পথে) চলা সহজ করে দেই (তার ইসলামের পথে চলা সহজ হয়ে যায়)। আর যে (স্বেচ্ছায়) কৃপণতা করল, (আল্লাহ হতে) বিমুখ হল এবং কল্যাণ ও মঙ্গলকে মিথ্যা মনে করল, তাকে আমি বক্র (ভুল) পথে চলা সহজ করে দেই (তার অনৈসলামিক পথে চলা সহজ হয়ে যায়)। (লাইল:৪-১০)
ব্যাখ্যা: আল্লাহ এখানে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন সঠিক বা ভুল পথে চলার সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন। আর মানুষ যখন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজ ইচ্ছামতো কাজ আরম্ভ করে তখন মহান আল্লাহ মানুষকে তার ইচ্ছাকৃত পথে চলা সহজ করে দেন।
আল-কুরআনের এ সকল তথ্য এবং তথায় উপস্থিত থাকা এরকম আরো অনেক তথ্য থেকে পরিষ্কারভাবে জানা ও বুঝা যায় ঈমান আনা বা না আনা এবং ইসলাম সিদ্ধ বা নিষিদ্ধ কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া (ইচ্ছা করা) ও বাস্তবে সে অনুযায়ী চেষ্টা-সাধনা করার ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন।
ঘ. জন্মগতভাবে বা বিনা প্রচেষ্টায় কেউ সুযোগ-সুবিধা বেশী বা কম পেয়ে থাকলে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার সময় তা হিসেবে আনা
পরকালে মানুষের কর্ম বিচার করে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়ার সময় আল্লাহ যে এ বিষয়টি হিসেবে আনবেন তা তিনি জানিয়ে দিয়েছেন নিম্নোক্ত ভাবে-
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلاَئِفَ الْأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ.
অর্থ: তিনিই (আল্লাহ) তোমাদের পৃথিবীতে প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন এবং একজনকে অন্যজনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন; যেন যাকে যা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী পরীা নিতে পারেন। (আন আম : ১৬৫)
ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ এখানে প্রথমে এ তথ্য জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি জন্মগতভাবে (ঐবৎরফরঃধৎরষু) বিভিন্ন দিক দিয়ে (পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে) একজন মানুষকে অন্য একজন মানুষের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। এরপর তিনি জানিয়ে দিয়েছেন মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে থাকা তাঁর উদ্দেশ্যটি বাস্তবায়ন (কর্মের মাধ্যমে পরীা নিয়ে সকলকে ইনসাফের ভিত্তিতে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া) ইনসাফভিত্তিক হওয়ার জন্যে জন্মগতভাবে যাকে যে যে বিষয় তিনি বেশী বা কম দিয়েছেন সেগুলোকে অবশ্যই যথাযথভাবে বিবেচনায় রাখবেন।
আল-কুরআনের অনেক জায়গায় আল্লাহ বলেছেন তিনি একজন ন্যায় বিচারকারী সত্তা। আর তিনি যে কতবড় ন্যায় বিচারকারী তা পরিষ্কারভাবে বুঝা যায় উপরের আয়াতখানি হতে।
কর্মফল বা পরিণতির জন্যে মানুষই দায়ী হবে কিনা?
বিবেক-বুদ্ধি
বাস্তব জগতে আমরা দেখতে পাই উল্লিখিত তিনটি সুযোগ-সুবিধাসহকারে যে সকল পরীা নেয়া হয় সেখানে ফলাফল তথা পরিণতির জন্যে পরীার্থীই দায়ী থাকে। পরীা গ্রহণকারী কর্তৃপ নয়। আর এটি ১০০% যুক্তিসঙ্গতও।
মহান আল্লাহ যেহেতু কর্মের মাধ্যমে পরীা নেয়ার নিমিত্তে উল্লিখিত সুযোগ-সুবিধা তিনটি যথাযথভাবে মানুষকে দিয়েছেন, তাই ঐ পরীার ফলাফল বা পরিণতির জন্যে মানুষ দায়ী থাকবে- এ কথাটি ১০০% বিবেক বা যুক্তি সংগত। অর্থাৎ কৃত কাজের ফলাফল তথা পুরস্কার বা শাস্তির জন্যে মানুষ দায়ী হবে বা দায়ী থাকবেÑ এ কথাটি ১০০% বিবেক বা যুক্তিসংগত।
আল-কুরআন
তথ্য – ১
وَمَااَصَابَكُمْ مِّنْ مُّصِيْبَةٍ فَبِمَاكَسَبَتْ اَيْدِيْكُمْ.
অর্র্থ: তোমাদের ওপর যে বিপদ আসে, তা তোমাদের নিজ হাতের অর্জন (নিজ কর্মের দোষেই আসে)। (শুরা : ৩০)
তথ্য – ২
ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ.
অর্র্থ: জলে ও স্থলে অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে মানুষের নিজেরই কর্মের দোষে।
(রুম : ৪১)
তথ্য – ৩
وَمَا اَصَابَكَ مِنْ سَيِّئَةٍ فَمِنْ نَفْسِكَ.
অর্র্থ: যা কিছু অশুভ )অকল্যাণ( তোমার হয় তা তোমার নিজের কারণেই (কর্মদোষেই) হয়। (নিসা : ৭৯)
তথ্য – ৪
اِنَّ اللهَ لاَيَظْلِمُ النَّاسَ شَيْئاً وَّلَكِنَّ النَّاسَ اَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُوْنَ .
অর্র্থ: আল্লাহ কখনো মানুষের ওপর জুলুম করেন না বরং মানুষ নিজেই নিজের উপর জুলুম করে (নিজের কর্মদোষেই নিজের উপর জুলুম ডেকে আনে)। (ইউনুস : ৪৪)
তথ্য – ৫
اِنَّ اللهَ لاَيُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوْا مَا بِاَنْفُسِهِمْ.
অর্র্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতণ পর্যন্ত জাতির লোকেরা (কর্মের মাধ্যমে) নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন না করে। (রাদ : ১১)
আল-কুরআনের এ সকল এবং তথায় উল্লেখ থাকা এ ধরনের আরো অনেক তথ্য এবং বিবেক-বুদ্ধির আলোকে তাহলে নিশ্চয়তা দিয়েই বলা যায়, কর্মফল বা পরিণতির জন্যে (দুনিয়ায় ও আখিরাতে) মানুষই দায়ী। আর সে দায়ী করা ১০০% যুক্তিসংগত।
সুধী পাঠক
এ পর্যন্ত আমরা আল-কুরআনের যে তথ্যসমূহ জানলাম তা অত্যন্ত স্পষ্ট এবং সম্পূর্ণ বিবেক-বুদ্ধিগ্রাহ্য। আল-কুরআনের এ তথ্যগুলোর একটিরও উল্লিখিত অর্থ বা ব্যাখ্যা যদি পাল্টিয়ে দেয়া হয় বা অন্যরূপ করা হয় তবেÑ
ইসলামী জীবন বিধান সম্পূর্ণ উল্টে যাবে,
মহান আল্লাহর কর্মের মাধ্যমে মানুষকে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া
ইনসাফ ভিত্তিক হবে না,
মানুষসহ মহাবিশ্ব খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করা হয়েছে বলে সিদ্ধান্ত
দেয়া হবে।
তাই তাকদীরের সাথে প্রত্য বা পরো ভাবে সম্পর্কযুক্ত অথবা অন্য যে কোন কুরআনের আয়াত বা হাদীসের অর্থ ও ব্যাখ্যা অবশ্যই এ পর্যন্তকার উল্লিখিত আল-কুরআনের আয়াতসমূহের অর্থ ও ব্যাখ্যার সম্পূরক হতে হবে, বিরোধী হওয়া চলবে না। অর্থাৎ আল-কুরআনের কোন আয়াত বা কোন নির্ভুল হাদীসের অর্থ বা ব্যাখ্যা অবশ্যই এমন হওয়া চলবে না যেখান থেকে এ ধারণা হয় যে, কৃত কাজের ফলাফল বা পরিণতির ব্যাপারে Ñ
মানুষের ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার কোন গুরুত্ব নেই বা
মানুষ দায়ী নয়।
অন্য কথায় আল-কুরআনে অন্য সকল আয়াত বা সকল নির্ভুল হাদীসের অর্থ ও ব্যাখ্যা এমন হতে হবে যেন কৃত কাজের ফলাফল বা পরিণতির জন্যেÑ
মানুষের ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার যথাযথ গুরুত্ব থাকে এবং
সে জন্যে মানুষকে দায়ী করে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া যুক্তিসঙ্গত হয়।
‘তাকদীর সৃষ্টির পূর্বে নির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছে এবং তা অপরিবর্তনীয়’Ñকুরআন ও হাদীসের এ ধরনের বক্তব্য এবং তার সরল অর্থ
চলুন প্রথমে কুরআন ও হাদীসের এ ধরনের বক্তব্য এবং তার সরল অর্থ সরাসরি জেনে নেয়া যাক Ñ
আল-কুরআন
তথ্য – ১
وَخَلَقَ كُلَّ شَىْءٍ فَقَدَّرَه تَقْدِيْرًا.
সরল অর্র্র্থ: এবং তিনি সকল জিনিস সৃষ্টি করেছেন এবং তার তাকদীর নির্দিষ্ট করেছেন। (ফোরকান : ২)
তথ্য – ২
وَالَّذِىْ قَدَّرَ فَهَدَى.
সরল অর্থ: তিনি কদর (তাকদীর) নির্দিষ্ট করেছেন। পরে পথ দেখিয়েছেন (জানিয়ে দিয়েছেন) (আল’আলা : ৩)
তথ্য – ৩
إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ.
সরল অর্থ: আমি প্রতিটি জিনিসকে কদর (তাকদীর) সহ সৃষ্টি করেছি।
(কামার:৪৯)
তথ্য – ৪
اِنَّ اللهَ بَالِغُ اَمْرِهِ , قَدْ جَعَلَ اللهُ لِكُلِّ شَىءٍ قَدْراً .
সরল অর্থ: আল্লাহ স্বীয় কাজকে সম্পন্ন না করে ান্ত হন না। আল্লাহ সকল জিনিসের কদর (তাকদীর) নির্ধারিত করে রেখেছেন। (তালাক: ৩)
তথ্য – ৫
وَلَكِنْ يُنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَا يَشَاءُ.
সরল অর্থ: এবং তিনি (রিজিক) নিজ ইচ্ছামত তৈরী করা কদর (তাকদীর) অনুযায়ী অবতীর্ণ করেন। (শুরা:২৭)
তথ্য-৬
وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ. وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتَّى عَادَ كَالْعُرْجُونِ الْقَدِيمِ. لاَ الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلاَ اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ.
সরল অর্থ: সূর্য স্বীয় গন্তব্যস্থলের দিকে এগিয়ে চলেছে। এটি মহাপরাক্রান্ত মহাজ্ঞানীর নির্ধারিত তাকদীর। চাঁদের কদরের মনজিলও আমি ঠিক করে দিয়েছি; এক সময় সে আবার তার প্রথম বক্র দশায় প্রত্যাবর্তন করে; সূর্যের সাধ্য নেই যে চাঁদকে ধরে। রাতেরও সাধ্য নেই সে দিনের আগে চলে আসে। সকলেই পরিক্রম করছে একই শূন্যলোকে। (ইয়াসিন:৩৮-৪০)
আল-হাদীস
তথ্য – ১
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ كَتَبَ اللهُ مَقَادِيْرَ الْخَلاَئِقِ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِخَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ قَالَ وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ.
(رواه مسلم)
সরল অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির পাঁচ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তাঁর সকল সৃষ্টির ‘তাকদীর’ লিখে রেখেছেন, হুজুর (সা.) বলেন তখন আল্লাহর আরশ ছিল পানির উপর। (মুসলিম)
তথ্য – ২
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (ص) : اِنَّ اَوَّلَ مَا خَلَقَ اللهُ الْقَلَمَ، فَقَالَ لَهُ اُكْتُبْ ، قَالَ : مَااَكْتُبُ؟ قَالَ: اُكْتُبِ الْقَدَرَ، فَكَتَبَ مَا كَانَ وَماَ هُوَ كَائِنٌ اِلَى الْاَبَدِ. رواه الترمذى وقال هَذا حديثٌ غريبٌ اِسنادًا.
অর্থ: হজরত উবাদা বিন ছামেত (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন আল্লাহ তায়ালা প্রথমে যে বস্তু সৃষ্টি করেছেন তা হল কলম। এরপর তিনি কলমকে বললেন, লিখ। কলম বলল, কী লিখব? আল্লাহ বললেন, ‘কদর’ (তাকদীর) লিখ। সুতরাং কলম যা ছিল এবং যা অনন্তকাল ধরে হবে তা লিখল।(তিরমিজী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন হাদীসটি গরীব)
তথ্য – ৩
وَعَنْ اِبْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (ص) كُلُّ شَىْءٍ بِقَدَرٍ حَتَّى الْعَجْزَ وَالْكَيِّسَ . رواه مسلم.
সরল অর্থ: ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন- সকল জিনিস কদর (তাকদীর) সহকারে (সৃষ্টি) হয়েছে, এমনকি বুদ্ধি দুর্বল ও প্রখর হওয়ার বিষয়টিও। (মুসলিম)
তথ্য – ৪
وَعَنْ اَبِىْ خُزَامَةَ عَنْ اَبِيْهِ قَالَ قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! اَرَأَيْتَ رُقَىً نَسْتَرْقِيْهَا وَدَوَاءً نَتَدَاوَى بِهِ وَتُقَاةً نَتَّقِيْهَا هَلْ تَرُدُّ مِنْ قَدَرِ اللهِ شَيْئًا؟ قَالَ: هِىَ مِنْ قَدَرِ اللهِ. رواه احمد والترمذى وابن ماجة.
সরল অর্থ: হজরত আবু খোজামা তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। আমি একদিন রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম : হুজুর, আমরা যে মন্ত্র পাঠ করে থাকি, ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করে থাকি বা বিভিন্ন উপায়ে আমরা যে আত্মরার চেষ্টা করে থাকি, তা কি তাকদীরের কিছু প্রতিরোধ করতে পারে? হুজুর বললেন, তোমাদের ঐ সকল চেষ্টাও আল্লাহ (নির্ধারিত) তাকদীরের অন্তর্গত।
(আহমদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
তথ্য – ৫
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَسْأَلِ الْمَرْأَةُ طَلاَقَ أُخْتِهَا لِتَسْتَفْرِغَ صَحْفَتَهَا وَلْتَنْكِحْ فَإِنَّ لَهَا مَا قُدِّرَ لَهَا.رواه البخارى
সরল অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, নিজে বিয়ে করার জন্যে কোন নারী যেন তার বোনের (অপর নারীর) তালাক না চায়। কেননা তার জন্যে তাকদীরে যা নির্ধারিত আছে তাই সে পাবে। (বুখারী)
তাকদীর বা কদর শব্দ ধারণকারী এধরনের আরো অনেক বক্তব্য কুরআন ও হাদীসে থাকতে পারে বা আছে।
কুরআন ও হাদীসের তাকদীর বা কদর শব্দ ধারণকারী বক্তব্য- সমূহের প্রচলিত অসতর্ক অর্থ ও ব্যাখ্যা এবং তার পর্যালোচনা
প্রচলিত অর্থ বা ব্যাখ্যায় তাকদীর বা কদর শব্দের অর্থ ধরা হয়েছে ভাগ্য, ফলাফল, নিয়তি বা পরিণতি। আর এ অর্থ ধরে বক্তব্যসমূহের যে ব্যাখ্যা মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে চালু হয়েছে তা হল, মানুষের
কৃত সকল কাজের একটিমাত্র ফলাফল বা পরিণতি,
মৃত্যুর একটিমাত্র সময় ও কারণ এবং
একটিমাত্র চূড়ান্ত পরিণতি তথা বেহেশত বা দোযখ প্রাপ্তি,
এক কথায় মানুষের সকল বিষ
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ২:৫৬
৩১২৬ বার পঠিত১১ ২টি মন্তব্য ০টি উত্তর
১. ০২ রা জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১১:৩৯ ০
তাহান বলেছেন: (মূল পোষ্ট সম্পূর্ন ডকুমেন্টের স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাকী অংশ মন্তব্য আকারে নিম্নে দেওয়া হল)
মানুষের ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার কোনই গুরুত্ব থাকে না,
কর্মের ফলাফল বা পরিণতির জন্যে মানুষকে দায়ী করা যায় না,
বেহেশত বা দোযখ প্রাপ্তি মানুষের আমলের উপর নির্ভরশীল থাকে না,
আমল তথা কাজের ভিত্তিতে মানুষকে বেহেশতের পুরস্কার বা দোযখের শাস্তি দেয়া ইনসাফ বা যুক্তিভিত্তিক হয় না। অর্থাৎ মানুষসহ মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর মহাপরিকল্পনাটি ইনসাফ ভিত্তিক হয় না।
আল্লাহর মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য (আল্লাহর সন্তুষ্টিকে সামনে রেখে কুরআনে বর্ণিত সকল ন্যায়ের বাস্তবায়ন ও অন্যায়ের প্রতিরোধের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ করা) বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। কারণÑ
দুষ্ট লোকেরা ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ করবে এবং ইসলাম সিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকবে এটি বলে যে- আমরা যা করছি ভাগ্যে আছে বলেইতো করছি।
সাধারণ মু’মিনরা কষ্টসাধ্য, বিপদসংকুল বা ত্যাগ স্বীকার করা লাগে, এমন ধরনের আমল থেকে ভাগ্যের দোহাই দিয়ে দূরে থাকবে।
কোন কোন আয়াতের বক্তব্য অর্থবোধক হয় না। যেমন
সূরা আল-আলার ৩ নং আয়াতের বক্তব্য হবে আল্লাহ ভাগ্য নির্দিষ্ট করেছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন। তথ্যটি বাস্তবভিত্তিক নয়। কারণ আল্লাহ ভাগ্য জানিয়ে দেননি।
সূরা ইয়াসিনের ৩৮ ও ৩৯ নং আয়াতের বক্তব্য হবে সূর্য ও চাঁদের ভাগ্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। সূর্য ও চাঁদের ভাগ্য কথাটি অর্থবোধক হয় না।
বক্তব্যসমূহের সঠিক অর্থ ও ব্যাখ্যা
আরবী কদর (تقدير) বা তাকদীর (قدر) শব্দের অনেক অর্থ হয়। তবে তার মধ্যে পুস্তিকার আলোচ্য বিষয়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত দু’টি অর্থ হচ্ছে-
ফলাফল, নিয়তি, পরিণতি বা ভাগ্য এবং
কোনকিছু পরিচালিত বা সংঘটিত হওয়ার বিধি-বিধান, আইন কানুন, নিয়ম-নীতি বা পদ্ধতি।
কদর বা তাকদীর শব্দের এ দুটি অর্থের কোন্টি, কুরআন ও হাদীসের আলোচ্য তথ্যগুলোতে উল্লিখিত কদর বা তাকদীর শব্দটির অর্থ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে তা নির্ভর করবে কোন্ অর্থটি গ্রহণ করলে বক্তব্যগুলো হতে বের হয়ে আসা তথ্য কুরআন ও হাদীসের অন্য সকল বক্তব্যের সম্পূরক হবে, বিরোধী হবে না তার উপর।
বক্তব্যসমূহে উল্লিখিত কদর (قدر) বা তাকদীর (تقدير) শব্দের অর্থ যদি পরিচালিত বা সংঘটিত হওয়ার বিধি-বিধান, আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি বা পদ্ধতি ধরা হয় তবে যে তথ্য বের হয়ে আসে তা হচ্ছে Ñ
১. মানুষের কৃত সকল কাজের ভাল বা মন্দ ফলাফল, জীবন-মৃত্যু, বেহেশত বা দোযখ প্রাপ্তি এবং
২. মহাবিশ্বের অন্য সকল সৃষ্টির মধ্যে সংঘটিত হওয়া সকল ঘটনাÑদুর্ঘটনার ব্যাপারে,
মহান আল্লাহ্, সৃষ্টির শুরুতে পৃথক পৃথক বিধি-বিধান আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি তথা প্রাকৃতিক আইন (ঘধঃঁৎধষ খধ)ি তৈরী করে রেখেছেন এবং তা মানুষ বা অন্যকোন সৃষ্টির পে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। মানুষের জীবনে এবং মহাবিশ্বে সংঘটিত হওয়া সকল ঘটনা-দুর্ঘটনা আল্লাহর তৈরী ঐ প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী সংঘটিত হয়। মানুষের কৃত কাজের ব্যাপারে ঐ প্রাকৃতিক আইনে যথাযথ গুরুত্বসহকারে অন্তর্ভুক্ত আছে Ñ
১. মানুষের ইচ্ছা, কর্মপ্রচেষ্টা, ধৈর্য, দৃঢ়তা, নিষ্ঠা, সাহসিকতা, ত্যাগ, একতা, সংঘবদ্ধতা ইত্যাদি সহ,
২. আল্লাহর নির্দিষ্ট ও জানা কিন্তু মানুষের অজানা বা জানা অসংখ্য বিষয়।
তাই মানুষের কোন কাজ করে সফল বা ব্যর্থ হওয়ার সামগ্রিক পদ্ধতি হচ্ছে Ñ
সফল হওয়ার পদ্ধতি
নিজ ইচ্ছায়, জেনে বা না জেনে ঐ কাজে আল্লাহর তৈরী করে রাখা সফল হওয়ার প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী চেষ্টা-সাধনা করা।
ব্যর্থ হওয়ার পদ্ধতি
নিজ ইচ্ছায়, না জেনে বা জেনে ঐ কাজে আল্লাহর তৈরী করে রাখা ব্যর্থ হওয়ার প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী চেষ্টা-সাধনা করা।
তাই কুরআন ও হাদীসের আলোচ্য বক্তব্যসমূহকে তথায় উপস্থিত থাকা কদর (قدر) বা তাকদীর (تقدير) শব্দের অর্থ, আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন (ঘধঃঁৎধষ খধ)ি ধরে ব্যাখ্যা করলে, যে তথ্য বের হয়ে আসে, তা কুরআন ও হাদীসের পূর্বে উল্লিখিত তথ্যসমূহ ও অন্য সকল তথ্যের সম্পূরক বা পরিপূরক হয়, বিরোধী হয় না। কারণ সে তথ্যে Ñ
১. কার্য সম্পাদনের ব্যাপারে মানুষের ইচ্ছা, কর্মপ্রচেষ্টা, ধৈর্য, দৃঢ়তা, নিষ্ঠা, ত্যাগ, সাহসিকতা, একতা, সংঘবদ্ধতা ইত্যাদির যথাযথ ভূমিকা বা গুরুত্ব থাকে,
২. কর্মফলের জন্যে মানুষকে দায়ী করা যাবে বা মানুষ দায়ী থাকবে,
৩. আমলের ভিত্তিতে পরীা নিয়ে বেহেশতের পুরস্কার বা দোযখের শাস্তি দেয়া ইনসাফ ভিত্তিক হবে। অর্থাৎ মহাবিশ্ব সৃষ্টির পেছনে আল্লাহর মহাপরিকল্পনা ইনসাফ ভিত্তিক হবে,
৪. সকল ঘটনা-দুর্ঘটনা আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন (যা অন্য কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না) অনুযায়ী হবে বলে আল্লাহর ইচ্ছার শ্রেষ্ঠত্ব থাকবে।
সুতরাং কুরআন ও হাদীসে কদর (قدر) বা তাকদীর(تقدير) শব্দ ধারণকারী বক্তব্যসমূহের অর্থ ও ব্যাখ্যা করতে হবে শব্দ দুটির অর্থ, আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন ধরে। অন্য কথায় ঐ বক্তব্যসমূহের সেই অর্থ বা ব্যাখ্যাই শুধু ইসলামে গ্রহণযোগ্য হবে যেখানে কদর বা তাকদীর শব্দের অর্থ ধরা হবে আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন।
তাকদীর শব্দের অর্থ আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন ধরলে পূর্বোল্লিখিত কুরআন ও হাদীসের শব্দদু’টি ধারণকারী ও আরো কিছু বক্তব্যের যে অর্থ ও ব্যাখ্যা দাঁড়াবে
আল-কুরআন
وَخَلَقَ كُلَّ شَىْءٍ فَقَدَّرَهُ تَقْدِيْرًا.
অর্থ: এবং তিনি সকল জিনিস সৃষ্টি করেছেন এবং তার প্রাকৃতিক আইন নির্দিষ্ট করেছেন।
তথ্য-২
وَالَّذِىْ قَدَّرَ فَهَدَى.
অর্থ: তিনি প্রাকৃতিক আইন নির্দিষ্ট করেছেন। পরে পথ দেখিয়েছেন (জানিয়ে দিয়েছেন)। (আল’আলা : ৩)
ব্যাখ্যা: তিনি সকল জিনিসের জন্যে প্রাকৃতিক আইন পূর্ব থেকেই নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। ঐ প্রাকৃতিক আইনের অনেকগুলো কুরআন ও সূন্নাহের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। আর বাকিগুলো চিন্তা-গবেষণার মাধ্যমে বের করে নেয়ার জন্যে মহান আল্লাহ্ কুরআন ও সূন্নাহের মাধ্যমে বারবার তাগিদ দিয়েছেন।
তথ্য-৩
إِنَّا كُلَّ شَىْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ.
অর্থ: আমি প্রতিটি জিনিসকে প্রাকৃতিক আইনসহ সৃষ্টি করেছি। (কামার:৪৯)
তথ্য-৪
إِنَّ اللهَ بَالِغُ اَمْرِهِ، قَدْ جَعَلَ اللهُ لِكُلِّ شَىْءٍ قَدْرًا.
অর্থ: আল্লাহ স্বীয় কাজকে সম্পন্ন না করে ান্ত হন না। আল্লাহ সকল জিনিসের প্রাকৃতিক আইন নির্ধারিত করে রেখেছেন। (তালাক : ৩)
তথ্য-৫
وَلَكِنْ يُّنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَّايَشَاءُ.
অর্থ: এবং তিনি (রিজিক) নিজ ইচ্ছামত তৈরী করা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী অবতীর্ণ করেন। (শুরা:২৭)
তথ্য-৬
وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ذَلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ. وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ حَتَّى عَادَ كَالْعُرْجُوْنِ الْقَدِيْمِ. لاَ الشَّمْسُ يَنْبَغِي لَهَا أَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلاَ اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُوْنَ.
অর্থ: সূর্য স্বীয় গন্তব্যস্থলের দিকে এগিয়ে চলেছে। এটি মহাপরাক্রান্ত মহাজ্ঞানীর নির্ধারিত প্রাকৃতিক আইন। চাঁদের মনজিলও আমি প্রাকৃতিক আইনের মাধ্যমে ঠিক করে দিয়েছি এক সময় সে আবার তার প্রথম বক্র দশায় প্রত্যাবর্তন করে; সূর্যের সাধ্য নেই যে চাঁদকে ধরে। রাতেরও সাধ্য নেই সে দিনের আগে চলে আসে। সকলেই পরিক্রম করছে একই শূন্যলোক। (ইয়াসিন : ৩৮-৪০)
আল-হাদীস
তথ্য-১
অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির পাঁচ হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তাঁর সকল সৃষ্টির প্রাকৃতিক আইন লিখে রেখেছেন। হুজুর (সা.) বলেন তখন আল্লাহর আরশ ছিল পানির উপর।
(মুসলিম)
তথ্য-২
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ قَالَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللهُ الْقَلَمَ فَقَالَ اكْتُبْ فَقَالَ مَا أَكْتُبُ قَالَ اكْتُبِ الْقَدَرَ مَا كَانَ وَمَا هُوَ كَائِنٌ إِلَى الْأَبَدِ.
অর্থ: হজরত উবাদা বিন ছামেত (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন আল্লাহ তায়ালা প্রথমে যে বস্তু সৃষ্টি করেছেন তা হল কলম। এরপর তিনি কলমকে বললেন, লিখ। কলম বলল, কী লিখব? আল্লাহ বললেন, প্রাকৃতিক আইন লিখ। সুতরাং কলম যা ছিল এবং যা অনন্তকাল ধরে হবে তা লিখল (তার সবকিছুর প্রাকৃতিক আইন)।
(তিরমিজী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন হাদীসটি গরীব)
তথ্য – ৩
وَعَنْ اِبْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ (ص) كُلُّ شَىْءٍ بِقَدَرٍ حَتَّى الْعَجْزَِ وَالْكَيِّسَ . رواه مسلم.
অর্থ: ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন সকল জিনিস প্রাকৃতিক আইনসহকারে (সৃষ্টি) হয়েছে। এমনকি বুদ্ধি দুর্বল ও প্রখর হওয়ার বিষয়টিও।
(মুসলিম)
তথ্য – ৪
وَعَنْ اَبِىْ خُزَامَةَ عَنْ اَبِيْهِ قَالَ قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! اَرَأَيْتَ رُقَىً نَسْتَرْقِيْهَا وَدَوَاءً نَتَدَاوَى بِهِ وَتُقَاةً نَتَّقِيْهَا هَلْ تَرُدُّ مِنْ قَدَرِ اللهِ شَيْئًا؟ قَالَ: هِىَ مِنْ قَدَرِ اللهِ. رواه احمد والترمذى وابن ماجة.
অর্থ: হজরত আবু খোজামা তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। আমি একদিন রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম : হুজুর, আমরা যে মন্ত্র পাঠ করে থাকি, ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা করে থাকি বা বিভিন্ন উপায়ে আমরা যে আত্মরার চেষ্টা করে থাকি, তা কি ফলাফলের কিছু প্রতিরোধ করতে পারে? হুজুর বললেন, তোমাদের ঐ সকল চেষ্টাও আল্লাহ (নির্ধারিত) প্রাকৃতিক আইনের অন্তর্গত।
(আহমদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
ব্যাখ্যা: এ হাদীসখানির মাধ্যমে রাসূল (সা.) জানিয়ে দিয়েছেন মানুষের বিভিন্ন ধরনের চেষ্টার ফলাফল নির্ভর করবে ঐ চেষ্টা প্রচেষ্টা আল্লাহ নির্ধারিত সফল, না ব্যর্থ হওয়ার প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী করা হচ্ছে তার উপর।
তথ্য – ৫
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ يَقُولُ قَالَ رَجُلٌ يَارَسُولَ اللهِ أَعْقِلُهَا وَأَتَوَكَّلُ أَوْ أُطْلِقُهَا وَأَتَوَكَّلُ … … … رواه الترمذى
অর্থ: আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলÑ হে আল্লাহর রাসূল! আমি উটকে বেঁধে রেখে তাওয়াক্কুল করব, না ছেড়ে দিয়ে তাওয়াক্কুল করব? তিনি বললেন, উটকে আগে বেঁধে রাখ, তারপর (আল্লাহর উপর) তাওয়াক্কুল (ভরসা) কর। (তিরমিযী)
ব্যাখ্যা: রাসূল (সা.) এখানে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন উট হারিয়ে না যাওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর উপর ভরসা করতে হলে তথা আল্লাহর সাহায্য পেতে হলে প্রথমে উটকে ভালভাবে বাঁধতে হবে। অর্থাৎ রাসূল (সা.) এ হাদীসখানির মাধ্যমে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, কোন কাজ বা বিষয়ে সফল হতে হলে প্রথমে আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন অনুসরণ করে কাজটি যথাসাধ্যভাবে পালন করতে হবে। তারপর আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইতে হবে। আর আল্লাহর নিকট সাহায্য চাওয়া দরকার এজন্যে যে তাঁর করে রাখা প্রাকৃতিক আইন যথাযথভাবে অনুসরণে ছোটখাট কোন ভুল-ভ্রান্তি থাকলে (যা সাধারণত থাকে) আল্লাহ যেন তা শুধরিয়ে দেন।
তথ্য – ৬
عَنْ عُمَرَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ (ص) يَقُوْلُ لَوْ اَنَّكُمْ تَتَوَكَّلُوْنَ عَلَى اللهِ حَقَّ تَوَكُّلِهِ لَرُزَِْقْتُُمْ كَمَا يُرْزَقُ الطَّيْرُ تَغْدُوخِمَاصًا وَتَرُوْحُ بِطَانًا.(رواه الترمذى)
অর্থ: উমার (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি, তোমরা যদি আল্লাহর উপর এমনভাবে ভরসা কর যেমনটি করা উচিত, তবে তিনি এমনভাবে তোমাদের জীবিকা দিবেন যেমনভাবে দেয়া হয় পাখীদের। সকালে পাখীরা খালি পেটে বের হয়ে পড়ে আর সন্ধ্যায় ফিরে আসে ভরা পেটে। (তিরমিযি)
ব্যাখ্যা: খাবার পাওয়ার জন্যে পাখীরা সকালে চেষ্টায় বেরিয়ে পড়ে এবং আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী চেষ্টা করে। ফলে বিকালে তারা ভরা পেটে বাসায় ফিরে। এ হাদীসখানির মাধ্যমে রাসূল (সা.) পাখীদের উদাহরণ দিয়ে তাই জানিয়ে দিয়েছেনÑ এ পৃথিবীতে জীবিকা পাওয়া তথা কোন কাজে সফল হওয়ার পদ্ধতি হচ্ছে আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী প্রথমে যথাসাধ্য চেষ্টা করা; তারপর সে চেষ্টায় থাকা ভুল-ভ্রান্তি শুধরিয়ে দেয়ার জন্যে আল্লাহর উপর ভরসা করা তথা আল্লাহ নিকট সাহায্য চাওয়া।
তথ্য – ৩
ক. হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার ঔষধ সৃষ্টি করেননি। (বুখারী, মুসলিম)
খ. হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন Ñ রাসূল (সা.) বলেছেন, সকল রোগের জন্যে চিকিৎসা (ঔষধ) আছে। যখন সঠিক ঔষধ রোগের জন্যে প্রয়োগ করা হয় তখন রুগী আল্লাহর ইচ্ছায় সেরে ওঠে। (মুসলিম)
গ. উসমান ইবনে শারীক (রা.) বলেন, একদিন আমি রাসূল (সা.) এর সাথে ছিলাম। তখন কিছু আরব এসে রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করল ‘হে আল্লাহর রাসূল, আমরা কি রোগের জন্য ঔষধ গ্রহণ করব?’ উত্তরে রাসূল (সা.) বলেন, ‘হে আল্লাহর বান্দারা, তোমরা ঔষধ গ্রহণ করবে। আল্লাহ এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার ঔষধ সৃষ্টি করেননি, শুধু একটি রোগ ব্যতীত।’ তারা জিজ্ঞাসা করল ‘সেটি কী?’ তিনি বললেন ‘সেটি হল বার্ধক্য।’ (আবুদাউদ, তিরমিজি, নাসাই, ইবনে মাজাহ)
ঘ. যায়েদ ইবনে আসলাম (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) এর সময় একব্যক্তি আহত হয় এবং তার তে পচন ধরে। রাসূল (সা.) লোকটির চিকিৎসার জন্যে বনি আনসার গোত্র থেকে দু‘জন ডাক্তারকে ডেকে পাঠান। রাসূল (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে কে অপোকৃত ভাল চিকিৎসক? তারা উত্তরে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সা.), চিকিৎসায় কি ভালÑখারাপ আছে?’ যায়েদ (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বললেন Ñ ‘যিনি রোগ পাঠিয়েছেন তিনি ঔষধও পাঠিয়েছেন’।
(মুয়াত্তা)
সম্মিলিত ব্যাখ্যা
রোগ, ঔষধ, চিকিৎসা নেয়া বা না নেয়া, ভাল-খারাপ ডাক্তার ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কিত রাসূল (সা.) এর উল্লিখিত হাদীসসমূহ থেকে জানা ও বুঝা যায়Ñ আল্লাহ প্রত্যেক রোগের সাথে তার ঔষধও সৃষ্টি করে রেখেছেন। আর একটি রোগ, কোন্ ঔষধ, কী মাত্রায় প্রয়োগ করলে নিরাময় হবে তা আল্লাহ নির্ধারিত করে, চিকিৎসার প্রাকৃতিক আইনে তথা চিকিৎসার তাকদীরে অন্তর্ভুক্ত করে রেখেছেন। ডাক্তার যদি নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয় (উরধমহড়ংরং) করে সঠিক ঔষধটি প্রয়োজনীয় মাত্রায় প্রয়োগ করতে পারে তবে রোগ অবশ্যই নিরাময় হবে। যে ডাক্তার ঐ কাজগুলো যতো নির্র্ভুলভাবে করতে পারবে সে তত ভাল ডাক্তার হবে। তাই রোগ হলে যেমন ভাল ডাক্তারের নিকট যেয়ে চিকিৎসা নিতে হবে, তেমনই আল্লাহর নিকট দোয়া করতে হবে তিনি যেন ঐ ডাক্তারের প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী রোগ নির্ণয় ও সঠিক ঔষধ প্রয়োগ করার পদ্ধতিতে ছোট-খাট ভুল থাকলে তা শুধরিয়ে দেন।
তাকদীর তথা আল্লাহর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন জানা, বুঝা বা বের করার উপায়
মহান আল্লাহ হচ্ছেন মানুষের সর্বাধিক কল্যাণকামী সত্তা। মহাবিশ্বের সকল কিছু তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষের কল্যাণের জন্যে। মানুষের জীবনের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য, বিচার, ব্যবসা-বাণিজ্য, যুদ্ধ, সন্ধি, আন্তর্জাতিক ইত্যাদি সকল দিকের তৈরী করে রাখা প্রতিটি প্রাকৃতিক আইন যদি আল্লাহ মানুষকে নিজ জ্ঞান-বুদ্ধি বা গবেষণার মাধ্যমে বের করে নিয়ে পালন করতে বলতেন তবে মানুষের দুঃখের কোন সীমা থাকত না। তাই মহা দয়ালু আল্লাহ মানুষের জীবনের সকল দিকের তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে স্পষ্ট করে বলেছেন নিুোক্তভাবেÑ
তথ্য -১
وَالَّذِىْ قَدَّرَ فَهَدَى.
অর্থ: তিনি (আল্লাহ) প্রাকৃতিক আইন (কদর বা তাকদীর) নির্দিষ্ট করেছেন। এর পর পথ দেখিয়েছেন (জানিয়ে দিয়েছেন)। (আলÑআলা : ৩)
তথ্য -২
وَهَدَيْنَاهُ النَّجْدَ يْنِ .
অর্থ: আর উভয় (সঠিক ও ভুল) পথ আমি কি তাদের (মানুষকে) দেখাই নাই? (বালাদ : ১০)
ব্যাখ্যা: এখানে আল্লাহ প্রশ্নের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন যে তাঁর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী একটি কাজে সফল হওয়া ও ব্যর্থ হওয়ার উভয় পথই মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
আল-কুরআনের এ ধরনের আরো অনেক তথ্যের মাধ্যমে আল্লাহ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন তিনি মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন। আর এই জানানোর কাজটি তিনি করেছেন তিনভাবে, যথাÑ
ক. কিতাবের মাধ্যমে
কিতাবের মাধ্যমে তিনি জানিয়েছেন মানুষের জীবনে প্রতিটি দিকের সকল প্রথম স্তরের মৌলিক বিষয়, কিছু দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক বিষয় ও দু-একটি অমৌলিক বিষয়। প্রথম স্তরের মৌলিক বিষয় হচ্ছে আল্লাহর কিতাবের মূল বিষয়গুলো। এর একটিও বাদ গেলে মানুষের পুরো জীবন সরাসরি ব্যর্থ হবে। দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক বিষয় হচ্ছে প্রথম স্তরের মৌলিক বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন পদ্ধতির মৌলিক বিষয়। এর একটি বাদ গেলে তার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রথম স্তরের মৌলিক বিষয়টি ব্যর্থ হবে। তাই আবার মানুষের পুরো জীবন ব্যর্থ হয়। অমৌলিক বিষয় হচ্ছে সেগুলো যার সবকটিও বাদ গেলে মানুষের জীবন ব্যর্থ হবে না তবে তাতে কিছু অপূর্ণতা থাকবে। আল্লাহর কিতাবের সর্বশেষ সংস্করণ হচ্ছে আল-কুরআন।
খ. নবী-রাসূল (সা.) গণের সূন্নাহের মাধ্যমে
সুন্নাহ এর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বাকী থাকা দ্বিতীয় স্তরের মৌলিক বিষয় ও অসংখ্য অমৌলিক বিষয়। তবে এখানে আল্লাহর কিতাবে উল্লিখিত সকল বিষয়ও উপস্থিত আছে।
গ. মানুষের বিবেক ও জ্ঞান-বুদ্ধির মাধ্যমে
যে সকল প্রাকৃতিক আইন আল্লাহর কিতাব বা রাসূলের সুন্নাহে সরাসরি উল্লিখিত হয় নাই, সেগুলোকে কিতাব ও সুন্নাহের আলোকে বিবেক-বুদ্ধি খাটিয়ে তথা চিন্তা-গবেষণা করে বের করে নিয়ে কাজে লাগানোর জন্যে, কুরআন ও সুন্নাহের মাধ্যমে আল্লাহ বারবার মানুষকে তাকিদ দিয়েছেন।
মানুষের কর্মপদ্ধতিতে ত্র“টি থাকার কারণে তাকদীর অনুযায়ী যে পরিণতি হওয়ার কথা তা পরিবর্তন হওয়া বা করা সম্ভব কি না
কোন কাজের ১০০% সঠিক ফলাফল হওয়ার জন্যে আল্লাহর জানা কিন্তু মানুষের অজানা ও জানা অসংখ্য বিষয় (ঋধপঃড়ৎ) রয়েছে। তাই মানুষ দ্বারা যে কোন কাজ সম্পাদনে ত্র“টি থাকাটাই স্বাভাবিক। ঐ ত্র“টির জন্যে আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইনে স্বাভাবিকভাবে একটি ফল নির্ধারিত বা লিখা আছে। ঐ ফলাফলটি অধিকাংশ েেত্র কাজটির ১০০% সঠিক ফলাফলের নিচে থাকবে। চলুন এখন কুরআন ও হাদীসের আলোকে পর্যালোচনা করা যাক, মানুষের ত্র“টির কারণে প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী কৃত কাজের স্বাভাবিক যে ফল হওয়ার কথা ছিল তা পরিবর্তন হওয়া বা করা সম্ভব কি না
আল-কুরআন
তথ্য-১
إِنَّ رَبَّكَ فَعَّالٌ لِّمَا يُرِيْدُ.
অর্থ: নিশ্চয়ই তোমার রব যা ইচ্ছা তা করার মতা রাখেন। (হুদ : ১০৭)
ব্যাখ্যা: আল-কুরআনের অনেক জায়গায় মহান আল্লাহ এই বক্তব্যটি রেখেছেন। এ বক্তব্য থেকে বুঝা যায়, যেকোন বিষয় পরিবর্তন করার মতা আল্লাহর আছে এবং দরকার হলে তিনি তা করেন। আর ‘যে কোন বিষয়ের মধ্যে’ তাকদীর, কর্মফল বা পরিণতিও অন্তর্ভুক্ত।
তথ্য-২
وَمَا اَصَابَكُمْ مِّنْ مُصِيْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ اَيْدِيْكُمْ وَيَعْفُوْا عَنْ كَثِيْرٍ.
অর্থ: তোমাদের উপর যে সকল বিপদ-আপদ আসে তা তোমাদের নিজেদের কর্মফল এবং অনেক বিপদ তিনি নিজে মা করে দেন (সংঘটিত হতে দেন না)। (শুরা-৩০)
ব্যাখ্যা: মহান আল্লাহ প্রথমে এখানে পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন দুনিয়ায় মানুষের উপর যে বিপদ-আপদ আসে তা তাদের নিজেদের কৃত কর্মের ফল হিসেবে আসে। অর্থাৎ আল্লাহ এখানে প্রথমে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, না জানার কারণে পদ্ধতিতে ত্র“টি রেখে কাজ করার জন্যে অথবা নিজ ইচ্ছায় ভুল বা খারাপ কাজ করার কারণে তাঁর তৈরী প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী যে সকল বিপদ আসার কথা, তার অনেকগুলো তিনি মাফ করে দেন তথা আসতে দেন না। তাই এখান থেকেও বুঝা যায় কর্মের ফল বা পরিণতি আল্লাহ দ্বারা পরিবর্তন হওয়া সম্ভব।
তথ্য-৩
وَمَا يُعَمَّرُ مِنْ مُعَمَّرٍ وَلاَ يُنْقَصُ مِنْ عُمُرِهِ إِلاَّ فِي كِتَابٍ.
অর্থ: কোন বয়স্ক ব্যক্তির আয়ু দীর্ঘায়িত হোক বা কারোর আয়ু হ্রাস পাক তা একটি কিতাবে লিখিত থাকেই। (ফাতের : ১১)
ব্যাখ্যা: এ আয়াত থেকে সহজেই জানা ও বুঝা যায় মানুষের আয়ু প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী বাড়ে বা কমে। আর কী কী বিষয় (ঋধপঃড়ৎ) মিলিত হলে আয়ু বাড়বে বা কমবে, তা আল্লাহ একটি কিতাবে লিখে রেখেছেন। তবে এই বৃদ্ধির একটি শেষ সীমা আছে যার পর প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী কারো আয়ু আর বড়ে না। এ কথাটিই বলা হয়েছে সূরা মুনাফিকুনের ১০ ও ১১ নং আয়াতে এবং আরো অনেক জায়গায় এভাবে-
وَأَنْفِقُوا مِنْ مَا رَزَقْنَاكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ أَحَدَكُمْ الْمَوْتُ فَيَقُولَ رَبِّ لَوْل أَخَّرْتَنِي إِلَى أَجَلٍ قَرِيبٍ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُنْ مِنْ الصَّالِحِينَ.وَلَنْ يُؤَخِّرَ اللهُ نَفْسًا إِذَا جَاءَ أَجَلُهَا.
সরল অর্থ: এবং আমি তোমাদের যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় (যখন মৃত্যু উপস্থিত হবে তখন) বলবে- হে আমার রব, আমাকে আরো কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি দান-সদ্কা করতাম এবং সৎকর্মশীলদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতাম। কিন্তু ব্যক্তির (মৃত্যুর) নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হয় তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেন না।
ব্যাখ্যা: আল্লাহ্ এখানে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যে তাঁর সৃষ্ট প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী আয়ুর একটি শেষ সীমা আছে। ঐ শেষ সীমায় কেউ পৌঁছে গেলে তিনি আয়ু আর বাড়ান না তথা তাঁর তৈরী প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী আয়ু আর বাড়ে না। তখন তার মৃত্যু অবধারিত হয়।
আল-হাদীস
তথ্য-১
عَنْ أَبِي مُوسَى قَالَ قَامَ فِينَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ فَقَالَ إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ لَا يَنَامُ وَلَا يَنْبَغِي لَهُ أَنْ يَنَامَ يَخْفِضُ الْقِسْطَ وَيَرْفَعُهُ يُرْفَعُ إِلَيْهِ عَمَلُ اللَّيْلِ قَبْلَ عَمَلِ النَّهَارِ وَعَمَلُ النَّهَارِ قَبْلَ عَمَلِ اللَّيْلِ حِجَابُهُ النُّورُ وَفِي رِوَايَةِ أَبِي بَكْرٍ النَّارُ لَوْ كَشَفَهُ لَأَحْرَقَتْ سُبُحَاتُ وَجْهِهِ مَا انْتَهَى إِلَيْهِ بَصَرُهُ مِنْ خَلْقِهِ. رواه مسلم
অর্থ: হজরত আবু মুসা আশ’আরী (রা.) বলেন, এক দিন রাসূলুল্লাহ (সা.) পাঁচটি কথা নিয়ে আমাদের মধ্যে দাঁড়ালেন এবং বললেনঃ ‘১. আল্লাহ তা‘আলা কখনো ঘুমান না, ২. ঘুমানো তাঁর পে সাজেও না, ৩. তিনি দাঁড়ি-পাল্লা উঁচু-নিচু করেন, ৪. বান্দাদের রাত্রের আমল দিনের আমলের পূর্বে এবং দিনের আমল রাত্রের আমলের পূর্বে তাঁর নিকটে পৌঁছান হয় এবং ৫. তাঁর (তিনি ও তাঁর সৃষ্টির মধ্যে) পর্দা হচ্ছে নূর (জ্যোতি)। যদি তিনি এই পর্দা সরিয়ে দিতেন তা হলে তাঁর চেহারার নূর সৃষ্টির যে পর্যন্ত পৌঁছাত সমস্তকেই জ্বালিয়ে দিত’।
(মুসলিম)
ব্যাখ্যা: ‘আল্লাহ দাঁড়ি-পাল্লা উঁচু-নিচু করেন’ কথাটির অর্থ হচ্ছে তাঁর সৃষ্ট তাকদীর তথা প্রাকৃতিক আইনে যা ঘটার কথা ছিল সেটি তিনি পরিবর্তন করেন।
তথ্য – ২
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يَدُ اللهِ مَلْأى لاَ تَغِيضُهَا نَفَقَةٌ سَحَّاءُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ أَرَأَيْتُمْ مَا أَنْفَقَ مُنْذُ خَلَقَ السَّمَاءَ وَالْأَرْضَ فَإِنَّهُ لَمْ يَغِضْ مَا فِي يَدِهِ وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ وَبِيَدِهِ الْمِيزَانُ يَخْفِضُ وَيَرْفَعُ. رواه البخارى
অর্থ: হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন Ñ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন Ñ ‘আল্লাহ তায়ালার হাত (ভাণ্ডার) সদা পূর্ণ, রাতদিন অবিরাম মুষলধারে বর্ষণকারী দানও তা কমাতে পারে না। যখন হতে তিনি আসমানÑজমিন সৃষ্টি করেছেন, তখন থেকে কত না দান করে আসছেন অথচ সে দান তাঁর হাতে যা আছে তার কিছুই কমাতে পারে নাই। (সৃষ্টির পূর্বে) তাঁর আরশ পানির উপর ছিল। তাঁর হাতেই রয়েছে দাঁড়ি-পাল্লা। তিনি তা উঁচু বা নিচু করে থাকেন।
ব্যাখ্যা: পূর্বের হাদীসখানির ন্যায় এ হাদীসখানি থেকেও জানা ও বুঝা যায় আল্লাহ তাঁর সৃষ্ট প্রাকৃতিক আইনে যা ঘটার কথা ছিল তা কম বেশী করেন বা করতে পারেন।
কুরআন ও হাদীসের উল্লিখিত তথ্যসমূহ থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় মানুষের ভুলের জন্যে আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী স্বাভাবিকভাবে যে খারাপ ফলাফল হওয়ার কথা তা আল্লাহর মাধ্যমে পরিবর্তন হওয়া সম্ভব।
প্রাকৃতিক আইন তথা তাকদীর অনুযায়ী, কৃতকর্মের স্বাভাবিক ফলাফলকে আল্লাহ যে সকল কারণে পরিবর্তন করেন
কর্মপদ্ধতির ভিত্তিতে মানুষের কৃতকাজের প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী যে স্বাভাবিক ফলাফল হওয়ার কথা তা শুধু মহান আল্লাহ পরিবর্তন করতে পারেন। মানুষের নিজের পে স্বাধীনভাবে তা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। আল্লাহ যে সব কারণে ঐ ফলাফল পরিবর্তন করেন তা হচ্ছে Ñ
১. নিজ ইচ্ছায় মানুষকে তি বা বিপদ থেকে বাঁচানো
এ কথাটি আল্লাহ পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন পূর্বে উল্লিখিত (পৃষ্ঠা নং ৩৯) সূরা শুরার ৩০ নং আয়াতের মাধ্যমে।
২. তাঁর কাছে করা মানুষের দোয়া
তাঁর নিকট করা দোয়ার কারণে আল্লাহ যে মানুষের কর্মের ফল বা পরিণতি পরিবর্তন করেন তা কুরআন ও হাদীসের নিুের তথ্য থেকে জানা যায় Ñ
আল-কুরআন
وَاِذَا سَاَلَكَ عِبَادِىْ عَنِّىْ فَاِنِّىْ قَرِيْبٌ. اُجِيْبُ دَعْوَةَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ.
অর্থ: আমার বান্দা যদি তোমার নিকট আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে তবে বলে দাও আমি তাদের অতি নিকটে। কবুল করে নেই প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা যদি আমার নিকট প্রার্থনা করা হয়।
(বাকারা-১৮৬)
ব্যাখ্যা: এখান থেকে পরিষ্কারভাবে জানা ও বুঝা যায় যথার্থভাবে করা দোয়ার কারণে আল্লাহ মানুষের কর্মফল বা পরিণতি পরিবর্তন করেন। প্রতিটি কাজে মানুষের ভুল-ত্র“টি থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই কৃতকাজের ভুল-ত্র“টি মা করে আল্লাহ যাতে ভাল ফলাফল দেন সে জন্যে আমাদের সকলের তাঁর নিকট কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করা উচিত।
আল-হাদীস
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ تَعَوَّذُوا بِاللهِ مِنْ جَهْدِ الْبَلاَءِ وَدَرْكِ الشَّقَاءِ وَسُوءِ الْقَضَاءِ وَشَمَاتَةِ الأَعْدَاءِ.
অর্থ: আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা ভয়াবহ বিপদ, দুর্ভাগ্যের অতল গহ্বর, মন্দ ফায়সালা এবং শত্র“র আক্রমণ থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কর।
(বুখারী)
ব্যাখ্যা: এ হাদীসখানিতে রাসূল (সা.) সকল ধরনের বিপদ থেকে রা পাওয়ার জন্যে অর্থাৎ কর্মপদ্ধতির দুর্বলতার জন্যে আল্লাহ নির্ধারিত প্রাকৃতিক আইনে (তাকদীর) যে বিপদ-আপদ আসার কথা তা থেকে রা পাওয়ার জন্যে, আল্লাহর নিকট দোয়া করতে বলেছেন। দোয়ার মাধ্যমে বিপদ-আপদ তথা পরিণতি পরিবর্তন হয় বলেই রাসূল (সা.) দোয়া করতে বলেছেন।
যে উপায়ে আল্লাহ কর্মের ফলাফল বা পরিণতি পরিবর্তন করেন
সভ্যতার বর্তমান স্তরে এসে তথা রিমোট কন্ট্রোল (জবসড়ঃব ঈড়হঃৎড়ষ) এর জ্ঞান মানুষের আয়ত্তে আসার পর, মহান আল্লাহর তাকদীর তথা প্রাকৃতিক আইন পরিবর্তন করার উপায়টি বুঝা সহজ হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে আমরা দেখছি বিজ্ঞানীরা একটি পরিচালনাপদ্ধতি স্থির করে সে পদ্ধতি অনুসরণ করে মানুষবিহীন রকেট মহাশূন্যে পাঠান। রকেট সে পরিচালনা পদ্ধতি অনুযায়ী চলতে থাকে। কিন্তু পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের নিকট একটি রিমোট কন্ট্রোল থাকে যার সাহায্যে তারা পৃথিবীতে বসেই ঐ পরিচালনা পদ্ধতি পরিবর্তন করতে পারেন এবং বাস্তবে দরকার হলে তা করেনও।
মহান আল্লাহও প্রাকৃতিক আইন তৈরী করে মানুষসহ মহাবিশ্বের সকল কিছুকে ঐ আইন অনুযায়ী চলা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি প্রয়োজনবোধে রিমোট কন্ট্রোল (জবসড়ঃব ঈড়হঃৎড়ষ) এর মাধ্যমে ঐ আইন পাল্টানোর মতা নিজের কাছে রেখেছেন এবং প্রয়োজন মতো তা করেনও। মহান আল্লাহ তাঁর রিমোট কন্ট্রোল মেশিনটির কথা নিুোক্তভাবে জানিয়ে দিয়েছেনÑ
بَلْ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ كُلٌّ لَهُ قَانِتُونَ. بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَإِذَا قَضَى أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ.
অর্থ: প্রকৃত ব্যাপার হল আকাশ ও পৃথিবীর সকল জিনিসই আল্লাহর মালিকানার বস্তু। সবই তাঁর (অতাৎণিক বা তাৎণিক) আদেশানুগত (ইচ্ছানুগত)। তিনি মহাকাশ ও পৃথিবীর স্রষ্টা। তিনি যখন কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন তখন বলেন ‘হও’। আর অমনি তা হয়ে যায়। (বাকারা : ১১৬, ১১৭)
ব্যাখ্যা: এখানে প্রথম আয়াতে জানিয়ে দেয়া হয়েছে মহাবিশ্বের সকল কিছু আল্লাহর অতাৎণিক বা তাৎণিক ইচ্ছার অনুগত। অতাৎণিক ইচ্ছাটি হচ্ছে তাঁর তৈরী করে রাখা প্রাকৃতিক আইন তথা তাকদীর। দ্বিতীয় আয়াতখানিতে আল্লাহ তাঁর তাৎণিক ইচ্ছা প্রয়োগ করার উপায়টি জানিয়ে দিয়েছেন। আর তা হচ্ছে ‘হও’ বলা। অর্থাৎ আল্লাহ ‘হও’ (كُنْ) নামক রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে তাঁর তৈরী করা প্রাকৃতিক আইন যেমন পরিবর্তন করতে পারেন তেমনই তিনি তা দ্বারা নতুন কিছু সৃষ্টি করতে বা ঘটাতেও পারেন।
আল্লাহ তাঁর ‘হও’ (كُنْ) নামক রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে কোন কাজ বা বিষয়ের ফলাফল, পরিণতি বা গুণাগুণ পাল্টিয়ে দেয়ার একটি সুনির্দিষ্ট প্রমাণ আল-কুরআনের নিুোক্ত তথ্যের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন Ñ
قُلْنَا ينَارُ كُوْنِى بَرْدًا وَّسَلمًا عَلَى اِبْرَاهِيْم.
অর্থ: আমি বললামÑ‘হে আগুন, শান্তিদায়ক ঠাণ্ডা ‘হও’ ইব্রাহীমের জন্যে।’
(আম্বিয়া:৬৯)
ব্যাখ্যা: আগুনের জন্যে নির্দিষ্ট তাকদীর তথা প্রাকৃতিক আইন হচ্ছে পুড়িয়ে ফেলা বা পুড়িয়ে দেয়া। কিন্তু আগুনের সে তাকদীরকে তার দ্বারা পরিবর্তন হওয়ার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ও উপায় আল্লাহ এ আয়াতের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন।
নমরুদ যখন পুড়িয়ে মারার জন্যে ইব্রাহীম (আ.) কে আগুনের মধ্যে নিপে করল তখন তাঁর ‘হও’ নামক রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে মহান আল্লাহ ঐ আগুনকে ইব্রাহীম (আ.) এর জন্যে আরামদায়ক ঠাণ্ডায় পরিবর্তন হতে নির্দেশ দিলেন। আর সাথে সাথে ঐ বিশেষ স্থানের আগুন দাহ্য মতা হারিয়ে আরামদায়ক ঠাণ্ডায় রূপান্তরিত হয়ে গেল। এখান থেকে বুঝা যায় সকল বিষয়ের তাকদীর তথা প্রাকৃতিক আইন আল্লাহ ‘হও’ (كُنْ) নামক রিমোট কন্ট্রোলের (জবসড়ঃব ঈড়হঃৎড়ষ) মাধ্যমে পরিবর্তন করতে পারেন এবং প্রয়োজন হলে করেন।
মানুষ ও মহাবিশ্বের সকল কিছুর পরিণতি, মহান আল্লাহ একটি কিতাবে লিখে রেখেছেন। সবকিছুর পরিণতি ঐ লিখা অনুযায়ীই হবে- কুরআন ও হাদীসের এ ধরনের বক্তব্যের অসতর্ক ও প্রকৃত ব্যাখ্যা
প্রথমে চলুন কুরআন ও হাদীসের ঐ ধরনের বক্তব্যগুলোর কয়েকটি জেনে নেয়া যাক Ñ
আল-কুরআন
তথ্য- ১
مَا اَصَابَ مِنْ مُصِيْبَةٍ فِى الْاَرْضِ وَلاَ فِىْ اَنْفُسِكُمْ اِلاَّ فِىْ كِتَابٍ مِّنْ قَبْلِ اَنْ نَبْرَاَهَاطاِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيْرٌ . لِّكَيْ لاَ تَأْسَوْا عَلَى مَا فَاتَكُمْ وَلاَ تَفْرَحُوْا بِمَاآتَكُمْطوَاللهُ لاَيُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُوْرٍ.
অর্থ: পৃথিবীতে বা তোমাদের উপর আসা কোন বিপদ এমন নাই যা সৃষ্টির পূর্বে একটি কিতাবে লিখা নাই। আল্লাহর পে এটি অতীব সহজ। তোমাদের এ তথ্য জানানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে Ñ তিগ্রস্ত হলে তোমরা যেন হতাশাগ্রস্ত না হও এবং আল্লাহ কোন কিছু তোমাদের দান করলে গর্বিত না হও। আল্লাহ কোন অহংকারী ও দাম্ভিককে পছন্দ করেন না। (হাদিদ-২২,২৩)
তথ্য- ২
قُلْ لَنْ يُصِيبَنَا إِلاَّ مَا كَتَبَ اللهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا وَعَلَى اللهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ.
অর্র্থ: (তাদের) বল, (ভাল-মন্দ) কিছুই আমাদের হয় না শুধু সেগুলো ব্যতীত যা আল্লাহ আমাদের জন্যে লিখে রেখেছেন। তিনি আমাদের সহায়। আর মু’মিনদের কেবল আল্লাহর উপরই ভরসা করা উচিত। (তওবা-৫১)
ন: তথ্য- ৩
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ اَنْ تَمُوْتَ إِلاَّ بِاِذْنِ اللهِ كِتَابًا مُؤَجَّلاً.
অর্র্থ: কোন প্রাণী আল্লাহর অনুমতি ছাড়া মৃত্যুবরণ করে না। (আর তা) নির্দিষ্ট কিতাবে লিখা রয়েছে। (আল-ইমরান-১৪৫)
তথ্য- ৪
وَمَا تَحْمِلُ مِنْ أُنْثَى وَلاَ تَضَعُ إِلاَّ بِعِلْمِهِ وَمَا يُعَمَّرُ مِنْ مُعَمَّرٍ وَلاَ يُنْقَصُ مِنْ عُمُرِهِ إِلاَّ فِي كِتَابٍ إِنَّ ذَلِكَ عَلَى اللهِ يَسِيرٌ.
অর্র্থ: কোন স্ত্রীজাতীয় প্রাণী এমন গর্ভধারণ করে না এবং এমন কোন সন্তান প্রসবও করে না, যা আল্লাহর জানা নেই। কোন দীর্ঘজীবীর আয়ু দীর্ঘায়িত হোক বা কারো আয়ু হ্রাস পাক তা একটি লিপিতে লিখিত থাকেই। আল্লাহর জন্যে এটি খুবই সহজ। (ফাতের-১১)
তথ্য- ৫
يَقُولُونَ لَوْ كَانَ لَنَا مِنْ الْأَمْرِ شَيْءٌ مَا قُتِلْنَا هَاهُنَا قُلْ لَوْ كُنْتُمْ فِي بُيُوتِكُمْ لَبَرَزَ الَّذِينَ كُتِبَ عَلَيْهِمْ الْقَتْلُ إِلَى مَضَاجِعِهِمْ ج
অর্র্থ: তারা বলে আমরা যদি কিছু কলা-কৌশল খাটাতে পারতাম তাহলে এখানে খুন হতাম না। তুমি বলে দাও, তোমরা যদি নিজেদের ঘরেও থাকতে তবুও যাদের মৃত্যু লিখা ছিল তারা তাদের নিহত হওয়ার স্থানের দিকে আপনা থেকেই পৌঁছে যেত। (আল-ইমরান- ১৫৪)
আল-হাদীস
তথ্য- ১
عَنْ عَبْدِاللهِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ (رض) قَالَ حَدَّثَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ الصَّادِقُ الْمَصْدُوقُ قَالَ إِنَّ أَحَدَكُمْ يُجْمَعُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا ثُمَّ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ يَكُونُ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ يَبْعَثُ اللهُ مَلَكًا فَيُؤْمَرُ بِأَرْبَعٍ بِرِزْقِهِ وَأَجَلِهِ وَشَقِيٌّ أَوْ سَعِيدٌ فَوَاللهِ إِنَّ أَحَدَكُمْ أَوِ الرَّجُلَ يَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا غَيْرُ بَاعٍ أَوْ ذِرَاعٍ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيَدْخُلُهَا وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا غَيْرُ ذِرَاعٍ أَوْ ذِرَاعَيْنِ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ فَيَدْخُلُهَا. رواه البخارى
অর্র্থ: আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, বিশ্বাসী ও বিশ্বস্ত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকেই আপন আপন মাতৃগর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত শুক্রবিন্দুরূপে জমা থাক। তারপর ঐরূপ চল্লিশ দিন ‘আলাক’ এবং এরপর ঐরূপ চল্লিশ দিন ‘মুদগাহ’ রূপে থাক। তারপর আল্লাহ তা’আলা একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন এবং তাঁকে রিযিক, মউত, দুর্ভাগ্য ও সৌভাগ্য - এ চারটি ব্যাপার (লিপিবদ্ধ করার জন্যে) নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি আরও বলেন, আল্লাহর কসম! তোমাদের মাঝে যে কেউ (অথবা বলেছেন কোন ব্যক্তি) জাহান্নামীদের আমল করতে থাকে, এমন কি তার এবং জাহান্নামের মাঝে কেবলমাত্র এক হাত বা এক গজের ব্যবধান থাকে। এমন সময় লিখাটি তার ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে আর তখন সে জান্নাতীদের আমল করা শুরু করে দেয়। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে। আর এক ব্যক্তি বেহেশ্তীদের আমল করতে থাকে, এমন কি তার ও জান্নাতের মাঝে কেবলমাত্র এক গজ বা দু’গজের ব্যবধান থাকে, এমন সময় ঐ লিখাটি তার উপর প্রাধান্য বিস্তার করে আর অমনি সে জাহান্নামীদের আমল শুরু করে দেয়। ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। (বুখারী ও মুসলিম)
তথ্য- ২
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ وَكَّلَ بِالرَّحِمِ مَلَكًا يَقُولُ يَا رَبِّ نُطْفَةٌ يَا رَبِّ عَلَقَةٌ يَا رَبِّ مُضْغَةٌ فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَقْضِيَ خَلْقَهُ قَالَ أَذَكَرٌ أَمْ أُنْثَى شَقِيٌّ أَمْ سَعِيدٌ فَمَا الرِّزْقُ وَالْأَجَلُ فَيُكْتَبُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ.رواه البخارى
অর্র্থ: আনাস ইবনে মালিক (রা.) সূত্রে নবী করীম (সা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আল্লাহ তা’আলা রেহেমে (মাতৃগর্ভে) একজন ফেরেশতা নিয়োজিত করেছেন। তিনি বলেন, হে প্রভু! এটি ‘ফোঁটা’। হে প্রভু! এটি ‘আলাক’। হে প্রভু! এটি ‘মুদগাহ’। আল্লাহ তা’আলা যখন তাঁর সৃষ্টি পরিপূর্ণ করতে চান, তখন ফেরেশতা বলেন, হে প্রভু! এটি নর হবে, না নারী? এটি হতভাগ্য হবে, না ভাগ্যবান? তার জীবিকা কী পরিমাণ হবে? তার আয়ুষ্কাল কী হবে? তখন (আল্লাহ তা’আলা যা নির্দেশ দেন) তার মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায় ঐ রূপই লিপিবদ্ধ করা হয়।
তথ্য- ৩
অর্র্থ: হজরত আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) বলেন, একদিন রাসূলে করীম (সা.) দু’হাতে দুটি কিতাব নিয়ে বের হলেন এবং বললেন, ‘তোমরা জান এই দু’টি কিতাব কী? আমরা বললামঃ জী না, কিন্তু আপনি যদি আমাদের বলে দেন। তখন হুজুর আপন ডান হাতের কিতাবের প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, এটি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প হতে একটি কিতাব, এতে সমস্ত বেহেশতীর নাম, তাদের বাপ-দাদাদের নাম ও বংশ পরিচয় রয়েছে। এবং এতে কখনো বেশীও হবে না এবং কমও না। অতঃপর তাঁর বাম হাতের কিতাবের প্রতি ইঙ্গিত করে বললেনঃ এটাও আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের প হতে একটি কিতাব। এতে দোজখীদের নাম, তাদের বাপ-দাদাদের নাম ও বংশ পরিচয় রয়েছে। এদের শেষ ব্যক্তির নামের পরও সর্বমোট একুন করা হয়েছে। সুতরাং এতেও কখনো বেশী এবং কম করা যাবে না।
তখন সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেনঃ যদি ব্যাপার এরূপ চূড়ান্ত হয়ে গিয়েই থাকে, তবে আমলের কী দরকার হুজুর? উত্তরে রাসূল (সা.) বললেনঃ তোমরা সত্য পথে থেকে ঠিকভাবে কাজ করতে থাক এবং আল্লাহর নৈকট্যলাভের তথা সকল কাজে নির্ধারিত ১০০% সঠিক ফলাফলের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা কর। কেননা, বেহেশতী ব্যক্তির অন্তিম কাজ বেহেশতীদের কাজই হবে, (পূর্বে) সে যে আমল করে থাকুক না কেন। এইরূপে দোজখী ব্যক্তির অন্তিম আমল দোজখীদের আমলই হবে (পূর্বে) সে যে আমলই করে থাকুক না কেন।’ অতঃপর তিনি নিজের দুই হাতে ইশারা করলেন এবং কিতাব দুটিকে (নিজের পিছনের দিকে) ফেলে দিয়ে বললেনঃ তোমাদের পরোয়ারদেগার আপন বান্দাদের সকল বিষয় (যথাযথভাবে) শেষ করেছেন। একদল বেহেশতে যাবে। একদল দোজখে যাবে। (তিরমিজী)
তথ্য- ৪
অর্র্থ: আলী (রা) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, একদা আমরা নবী (সা.) এর সঙ্গে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন তাঁর সঙ্গে ছিল একটি লাঠি, যা দিয়ে তিনি মাটি খুঁড়ছিলেন। তিনি তখন বললেনঃ তোমাদের মাঝে এমন কোন ব্যক্তি নেই যার ঠিকানা জাহান্নামে বা জান্নাতে লিপিবদ্ধ করা হয়নি। লোকদের ভিতর থেকে এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তা হলে (এর উপর) নির্ভর করব না? তিনি বললেনঃ না, বরং আমল কর। কেননা, প্রচেষ্টাকৃত কাজে সফল হওয়া সকলের জন্যে সহজ করা হয়েছে। এর পর তিনি তিলাওয়াত করলেনঃ
فَاَمَّا مَنْ اَعْطَى وَاتَّقى. (বুখারী)
আলোচ্য বক্তব্যসমূহের অসতর্ক ব্যাখ্যা
আলোচ্য কুরআন ও হাদীসের বক্তব্যসমূহের অসতর্ক ব্যাখ্যা থেকে যে তথ্য মুসলমান সমাজে ব্যাপকভাবে চালু হয়েছে তা হচ্ছে-
১. আল্লাহ একটি কিতাবে আগে থেকে লিখে রেখেছেন Ñ
প্রত্যেক মানুষের সকল কাজের একটিমাত্র ফল,
সকলের মৃত্যুর একটিমাত্র সময় ও কারণ,
প্রত্যেকের জন্যে বেহেশত বা দোযখের কোন একটি ঠিকানা।
২. ঐ লিখন মানুষের চেষ্টা-সাধনা দ্বারা একটুও পরিবর্তন হয় না।
পূর্বে উল্লিখিত (৩০ ও ৩১ নং পৃষ্ঠা) ‘তাকদীর’ শব্দ ধারণকারী কুরআন ও হাদীসের বক্তব্যসমূহের অসতর্ক ব্যাখ্যা যে সকল কারণে ইসলামে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, আলোচ্য বক্তব্যসমূহের উল্লিখিত ব্যাখ্যাও সেই একই কারণে ইসলামে কোন মতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
বক্তব্যসমূহের প্রকৃত বা গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা
বক্তব্যসমূহের সঠিক ব্যাখ্যা করা ও বুঝার জন্যে, যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে তা হচ্ছে Ñ
ক. পূর্বে উল্লিখিত কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধির তথ্যের মাধ্যমে আমরা জেনেছি কোন একটি কাজের চূড়ান্ত ফলাফল বা পরিণতির পথে অসংখ্য পরিবর্তনশীল (ঠধৎরধনষব) বিষয় বা উপাদান (ঋধপঃড়ৎ) আছে। যেমন Ñ
১. মানুষের ইচ্ছা ও তার বিভিন্ন ধরন,
২. কর্মপ্রচেষ্টা ও পদ্ধতি এবং তার বিভিন্ন ধরন,
৩. ধৈর্য, নিষ্ঠা, সাহসিকতা, ত্যাগ ইত্যাদি ও তার বিভিন্ন ধরন,
৪. মানুষের দ্বারা আল্লাহর নিকট করা দোয়া ও তার বিভিন্ন ধরন এবং
৫. আল্লাহর নির্ধারিত করে রাখা ও জানা কিন্তু মানুষের অজানা বা জানা অসংখ্য বিষয়।
খ. ঐ অসংখ্য পরিবর্তনশীল (ঠধৎরধনষব) বিষয়ের একটি পরিবর্তন হয়ে গেলে একটি কাজের ফল বা পরিণতি পরিবর্তন হয়ে যায়।
গ. অসংখ্য পরিবর্তনশীল বিষয় পরিবর্তিত (চবৎসঁঃধঃরড়হ ঈড়সনরহধঃরড়হ) হয়ে একটি কাজের ভাল বা মন্দ অসংখ্য ফল বা পরিণতি হতে পারে।
ঘ. প্রতিটি মানুষের ডি.এন.এ কোড (উঘঅ ঈড়ফব) ভিন্ন এবং ঐ উঘঅ এর ভিত্তিতে প্রতিটি মানুষ জন্মগতভাবে কিছু বিশেষ শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক গঠন পায়। প্রতিটি মানুষের ঐ উঘঅ ঈড়ফব এবং জন্মগতভাবে পাওয়া বিশেষ শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক গঠনের কথা আল্লাহর জানা আছে।
ঙ. আল্লাহ আলোচ্য বক্তব্যসমূহে কোথাও বলেননি তিনি উল্লিখিত কিতাবে প্রত্যেক কাজ বা বিষয়ের একটিমাত্র ফল বা পরিণতি লিখে রেখেছেন।
তাই পূর্বে উল্লিখিত কুরআন, হাদীস ও বিবেক-বুদ্ধির সকল তথ্যের সাথে সংগতি রেখে আলোচ্য বক্তব্যসমূহের যে ব্যাখ্যা ইসলামে গ্রহণযোগ্য হবে তা হচ্ছে Ñ
উঘঅ এর ভিত্তিতে নির্দিষ্ট করে মানুষের জন্মগতভাবে পাওয়া শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক গঠনের সঙ্গে,
কার্য সম্পাদনের পথে উপস্থিত থাকা সকল পরিবর্তনশীল (ঠধৎরধনষব) বিষয় বা বস্তু ব্যবহার করে যত ধরনের ভাল বা মন্দ ফলাফল হওয়া সম্ভব, একজন মানুষের প্রতিটি কাজের সে সকল ধরনের ফলাফল,
বেঁচে থাকা বা মৃত্যু হওয়ার ব্যাপারে প্রযোজ্য সকল পরিবর্তনশীল (ঠধৎরধনষব) বিষয় ব্যবহৃত হয়ে প্রতিটি মানুষের মৃত্যু ঘটার সম্ভবপর সকল উপায়, সময় ও স্থান,
আমল, ওজর, অনুশোচনা, উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টা, তওবা ইত্যাদি সকল পরিবর্তনশীল বিষয়ের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতির উপর ভিত্তি করে একজন মানুষ যে সকল অবস্থায় বেহেশ্ত এবং যে সকল অবস্থায় দোযখ পাবে তার সকল অবস্থা,
মহান আল্লাহ একটি কিতাবে আগে থেকেই লিখে রেখেছেন। আর যেহেতু আল্লাহ সকল পরিবর্তনশীল (ঠধৎরধনষব) বিষয় নির্ভুলভাবে বিবেচনা করে এবং তিনকালের (অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ) জ্ঞানসহকারে তা লিখেছেন তাই ঐ লিখায় একজন মানুষের জীবনের প্রতিটি বিষয়ের ব্যাপারে যতগুলো অবস্থান বা ফলাফল লিখা আছে তার বাইরে কোন অবস্থান বা ফলাফল ঘটবে না বা মানুষ ঘটাতে পারবে না। অর্থাৎ প্রতিটি বিষয়ে সকল পরিবর্তনশীল জিনিস ব্যবহার করে ব্যক্তি মানুষ যে অবস্থায় বা ফলাফলেই পৌঁছাক না কেন, ঐ কিতাবে তা লিখা পাওয়া যাবে বা লিখা আছে। আলোচ্য আয়াত ও হাদীসসমূহের ব্যাখ্যা এরকম হলে তা পূর্বে আলোচনাকৃত আল-কুরআনের সকল বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্যশীল হয়। কারণ তা হলে-
১. মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ও কর্মপ্রচেষ্টা প্রয়োগের সুযোগ ও মূল্য থাকবে। তাই মানুষ কর্মফলের জন্যে দায়ী থাকবে।
১. তাকদীর তথা আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইন অনুযায়ী সকল বিষয় সম্পাদন হওয়ার কারণে তা আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ীই হবে।
২. মহান আল্লাহর মহাবিশ্বের সকল কিছুর নিখুঁত জ্ঞান থাকার ফলেই তা লিখে রাখা সম্ভব হয়েছে স্বীকার করে তৌহীদের অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ের স্বীকৃতি দেয়া হবে।
তাই আলোচ্য আয়াত ও হাদীসসমূহের এ ব্যাখ্যাটিই শুধু ইসলামে গ্রহণযোগ্য হবে। আল্লাহ যে একটি কাজের ১০০% সঠিক ফলাফলটিসহ, সঠিক ও ভুল উভয় দিকের সম্ভবপর সকল ফলাফল ঐ কিতাবে লিখে রেখেছেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় কুরআন ও হাদীসের নিম্নোক্ত তথ্য থেকে
আল-কুরআন.
অর্র্থ: কোন বিষয় সম্বন্ধে কখনও এরকম বল না যে আমি আগামীকাল সে কাজটি করব। (তুমি কিছুই করতে পার না) যদি আল্লাহ তা না চান। ভুলবশত এরূপ বলা হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে তোমার রবের স্মরণ করবে আর বলবেÑআশা আছে আমার রব ঐ ব্যাপারে (১০০%) সঠিক পথটির নিকটবর্তী পথের দিকে আমাকে পথ দেখাবেন। (কাহাফঃ ২৩, ২৪)
ব্যাখ্যা: আল্লাহ এখানে রাসূল (সা.) কে একটি কাজের ১০০% সঠিক পথটির কাছাকাছি থাকা অবস্থানের জন্যে পথ দেখাতে তাঁর নিকট আশা তথা দোয়া করতে বলেছেন। এখান থেকে বুঝা যায় কুরআন ও হাদীসের আলোচ্য বক্তব্যসমূহে উল্লেখ থাকা কিতাবে, সঠিক ও ভুল উভয় দিকের সকল পরিবর্তনশীল জিনিস (ঋধপঃড়ৎ) গ্রাহ্যে এনে, একটি বিষয় বা কাজের সম্ভবপর সকল ধরনের ভাল বা খারাপ ফলাফল আল্লাহ্ লিখে রেখেছেন।
আল-হাদীস.
অর্থ: আমল কর এবং নিজের সাধ্য মত সর্বাধিক সংখ্যক সঠিক কাজ করার চেষ্টা কর এবং সত্যের কাছাকাছি থেক। জেনে রেখ, কোন ব্যক্তিকে শুধু তার আমল জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারবে না।
সাহাবায়ে কিরামগণ রাসূল (সা.) এর বক্তব্য শুনে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), আপনার আমলও কি পারবে না? তিনি উত্তর দিলেন-
অর্থ: না, আমিও না, যদি না আমার রব তাঁর রহমত দ্বারা আমাকে আচ্ছাদিত করেন। (বুখারী, মুসলিম, আহমদ)
ব্যাখ্যা: আমলের ব্যাপারে অত্যন্ত বাস্তব যে কথাটি রাসূল (সা.) হাদীসখানির শেষে উল্লেখ করেছেন, সে কথাটি দিয়ে ব্যাখ্যা শুরু করলে পুরো হাদীসখানা বুঝতে সহজ হবে।
হাদীসখানির শেষে রাসূল (সা.) বলেছেন, নিখুঁতভাবে সকল আমলে সালেহ পালন করে পৃথিবীর কেউই এমনকি তিনিও জান্নাতে যেতে পারবেন না। কারণ, সকলের জীবনেই কোন না কোন আমল করার ব্যাপারে কিছু না কিছু খুঁত থাকবেই। আর ঐ খুঁত আল্লাহ মাফ করে দিলেই শুধু জান্নাত পাওয়া সম্ভব হবে।
তাই হাদীসটির প্রথমে রাসূল (সা.) বলেছেন, যত বেশি সংখ্যক আমল ঈমানের দাবি অনুযায়ী পালন করা সম্ভব তা যথাযথভাবে করার চেষ্টা অবশ্যই করতে হবে। আর যখন কোন আমল, বাধ্য হয়ে ছাড়তে হবে তখন সত্যের কাছাকাছি থাকতে হবে। অর্থাৎ কোন আমল ছাড়ার জন্যে গুনাহ না হওয়ার যে সীমারেখা আল্লাহ জানিয়ে দিয়েছেন তার কাছাকাছি তথা প্রায় সমান বা মাঝামাছি গুরুত্ব বা পরিমাণের ওজর, অনুশোচনা ও উদ্ধার পাওয়ার চেষ্টাসহ তা ছাড়তে। কারণ ঐ রকম কাছাকাছি থাকলে আল্লাহ রহমত করে তাদের গুনাহ দুনিয়া বা আখিরাতে কোন না কোনভাবে মাফ করে দিবেন।
‘জন্ম, মৃত্যু ও বিবাহ বিষয় তিনটি পূর্ব নির্ধারিত’
বহুলপ্রচারিত কথাটির সঠিক পর্যালোচনা
মুসলিম সমাজে জন্ম, মৃত্যু ও বিবাহ বিষয়গুলো পূর্বনির্ধারিত কথাটি ব্যাপকভাবে চালু আছে এবং প্রায় সবাই তা বিশ্বাসও করে। তাই চলুন এবার এ বিষয়টি পর্যালোচনা করা যাক
যে বিষয়টি পূর্বনির্ধারিত অর্থাৎ যে বিষয়ে মানুষের ইচ্ছা ও কর্ম প্রচেষ্টার কোন ভূমিকা নেই সেটি সঠিকভাবে করতে পারা বা না পারার দরুন পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া যুক্তিসঙ্গত নয়। এটি সাধারণ বিবেক-বুদ্ধির আলোকে সহজ বোধগম্য একটি কথা। তাই বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী
বিষয় তিনটি যদি পূর্বনির্ধারিত হয় তবে তার কোনটি সঠিকভাবে পালন করা বা না করার ভিত্তিতে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া যুক্তিসঙ্গত হবে না।
বিষয় তিনটি যদি পূর্বনির্ধারিত না হয়ে থাকে তবে তার প্রত্যেকটি
সঠিকভাবে পালন করা বা না করার ভিত্তিতে পুরস্কার বা শাস্তি দেয়া
যুক্তিসঙ্গত হবে।
কুরআন ও হাদীস অনুযায়ী দেখা যায়
জন্মের স্থানের ভিত্তিতে মানুষের পুরস্কার বা শাস্তির বিধান নেই। অর্থাৎ মুসলিমের ঘরে বা মক্কা শরীফে জন্ম হলে যেমন পুরস্কার নেই, তেমনই পতিতার ঘরে বা হিন্দুস্থানে জন্ম হলে কোন শাস্তি নেই।
আত্মহত্যা করলে ইসলামে কঠিন শাস্তির বিধান আছে।
হিন্দু মেয়ে মুসলিম না বানিয়ে বিয়ে করলে শাস্তির বিধান আছে।
এর কারণ হল-
জন্মের স্থান ও সময় পূর্বনির্ধারিত। মানুষের ইচ্ছা ও কর্মপ্রচেষ্টার এ ব্যাপারে কোন ভূমিকা নেই।
মুত্যুর কারণ ও সময় পূর্বনির্ধারিত নয়। মানুষের ইচ্ছা ও প্রচেষ্টার
সেখানে ভূমিকা আছে।
বিবাহ পূর্বনির্ধারিত নয়। মানুষের ইচ্ছা ও প্রচেষ্টার এখানেও ভূমিকা আছে।
শেষ কথা
তাকদীর সম্পর্কিত কুরআন-হাদীসে উপস্থিত থাকা আপাত বিপরীতধর্মী বক্তব্য নিয়ে নিষ্ঠাবান মুসলিমদের মনে মনে যে দ্বন্দ্বে পড়তে হয় বা দুষ্ট লোকদের টিটকারীমূলক বক্তব্য নিয়ে যে দুরবস্থায় পড়তে হয়, আশা করি তা নিরসনে পুস্তিকাটি সহায়ক হবে। এর ফলস্বরূপ আশা করা যায় মুসলিম জাতি তাকদীর তথা আল্লাহর তৈরী প্রাকৃতিক আইনের সাথে তাদের ইচ্ছাশক্তি ও কর্মপ্রচেষ্টার যে সম্পর্ক, সেটি ভাল করে বুঝে নিয়ে জীবনের সকল দিকে কর্মপ্রচেষ্টা যথাযথভাবে বাড়িয়ে দিবে। আর এর চূড়ান্ত ফলস্বরূপ পূর্বের ন্যায় তারা আবার পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ বা বিজয়ী হতে পারবে ইনশাআল্লাহ্।
ভুল-ত্র“টি ঈমানদারীর সাথে ধরিয়ে দেয়ার অনুরোধ রেখে এবং সঠিক হলে ঈমানদারীর সাথে তা গ্রহণ করে শুধরিয়ে নেয়ার ওয়াদা রেখে এবং আপনাদের দোয়া চেয়ে শেষ করছি। আল্লাহ্ হাফেজ!
সমাপ্ত
loading...
loading...
কোন মন্তব্য নেই