গোধূলির গান
সে আমারে দিয়েছিনু গান
স্বযতন ভরে,
আমি তারে দিতে চেয়েছিনু এই মুল্যহীন প্রাণ!
তাহার আপন দুটি কড়ে,
নিলে না সে অবহেলা করে ।
বললে
কিইবা এমন দিয়েছি তোমায় ?
এ তো নয় একাই তোমার
গেয়েছিনু আনমনে,
যখন তুমি ও ছিলে অন্য সবার সনে ।
আমি
মুখোশ
আমার একটা মুখোশ আছে
আঁধার হলে খুলি,
যখন দিনের আলো ফোটে
মুখের উপর তুলি ।
আমার একটা মুখোশ আছে
একলা হলেই খুলি,
যেথায় দেখি জন-বসতি
সেথায় মুখে তুলি ।
আমার একটা মুখোশ আছে
ঠাণ্ডা মাথায় ভুলি,
মেজাজ খানা বিগড়ে গেলে
হঠাৎ টেনে খুলি ।
আমার একটা মুখোশ আছে
যা
প্রশ্ন
আমার একটা প্রশ্ন ছিল
উত্তর পাইনি কোনোদিন ।
আমার কিছু প্রশ্ন আছে
যার উত্তর মেলেনা কারো কাছে ।
তবু আমি নিশ্চুপে উত্তর খুঁজে যাই
পাই না যদিও,
তবুও আজন্ম প্রশ্নেরা তাড়া করে যায় আমাকে ।
কিন্তু আজ আমি ভীষণ ভীত !
ভয় পাই প্রশ্ন করতে, যদি ওরা ভয়ংকর হয়
ভয় পাই উত্তর খুজতেও,
সীমানা
আমরা সবসময় দূরে দূরে থাকি,
আরও সত্যি করে বললে
আমিই সব সময় বহু দূরে থাকি।
কেননা আকাশ থেকেই সমগ্র ভূমন্ডল
একই সাথে দেখা যায় সবটুকু !
সময় পরিভ্রমনের সাথে সাথে ।
অথবা পাহাড়ের সুউচ্চ চুড়া থেকে
একটু তাকালে নীচে, বহুদূরে !
শুধু এ মর্তালোক নয় আকাশ ও বদলে যায় যেন ।
আর গভীর
প্রকৃতি এবং সময়
এখানে সকলই স্থবির
কালের সূচনা যেই থেকে
সেই থেকে যেন এই প্রকৃতির নীড় ।
অথচ রাত, ভোর, সকাল, দুপুর
সকলই আবর্তিত, তবু অবিকল
শুধু এই জলের নূপুর ।
তবে কি ? আহা ! এমন সকাল
বদলে নিজেকে বারে বারে
জন্ম দিয়েছে শুধু,
নিকটদূর
যদি দূরে থাকো
শত সহস্র আলোক বর্ষ
নক্ষত্র রাজির চেয়েও দূরতর
কোন এক প্রানহীন গ্রহে,
তবে প্রাণপনে চাই শুধু
অতি ক্ষীণ রশ্মি ধারায়
অতৃপ্ত অবগাহন !
যদি কাছে আসো
এমনকি সবচেয়ে নিকটতম স্পষ্ট দৃষ্টির চেয়েও বেশী নিকটতর
তবে প্রানপনে চাই শুধু মুক্তি
তোমা হতে বহুদূরে,
যদিও নেশায় বুদ্ হয়ে থাকি
কোন এক গভীরতর ঘোরে
এ কেমন অসহনীয়
একটা স্বপ্ন চুরি হয়ে যায়
রাতের আধারে,
একটা দূর্বল জাতি
বেঘোরে ঘুমায়
মস্তিষ্কে অবাঞ্ছিত উত্তাপ নিয়ে ।
মাঝরাতে ঘুমভেঙ্গে যায়-
জেগে উঠে শরীর তার
আদিম কামনা নিয়ে,
অতঃপর আবার বেঘোরে ঘুম
তৃপ্ত ক্লান্ত শরীর
এবং ঘুমন্ত মস্তিস্ক নিয়ে ।
ভোর হয়, জেগে উঠে শরীর আবার
কিন্তু জাগে না মগজ তার,
কেননা বহুকাল কেটে গেছে-
মগজ ধোলাই আর সম্মোহনে,
চুরি
তোমার বহু দূরে চলে যাওয়া
অতঃপর সেই দূর্গম দূরত্ব !
কি করে সে নিজেই নিজেকে অকস্মাৎ হাওয়ায় মেলালো
এবং তোমাকে করে দিল নিকটতমা আমার এতটাই যেন !
অস্থিমজ্জায় পৌষের কম্পমান শীতের অনুভূতি,
কিম্বা গ্রীষ্মের উলম্ব সূর্যের দুঃসহ উত্তাপে প্রাণ ত্যাগী তৃষ্ণায় নয় ।
বরং তা যেন জ্বর হয়ে বয়ে যায়
আমার
নাটাই ঘুড়ি
আপনরা পর হয়ে যায় এভাবেই
যেভাবে দেখছি তোমায়,
একটু একটু করে
দূরে চলে যেতে !
আফসোস নেই কোন
কেননা আমিতো জানি
কি করে টানতে হয় সুতো,
কি করে ছাড়তে হয় ঘুড়ি
তার অবারিত সীমানার মাঝে !
কিন্তু জানোনা তুমি
কেমনটা বাধা পড়ে আছো,
সে কথা নাটাই শুধু জানে
তুমি আর উড়ে উড়ে যাবে কোন খানে
একদা নীরবতা ভাঙ্গতেই অতিশয় উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলাম !
মৌনতা যেন মুক করে তুলেছিল আমার সমগ্র সত্তাকে
এবং আমি এতটা বধির হয়ে গিয়েছিলাম যেন,
পৃথিবী এবং সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডের কোথাও কোন শব্দ ছিল না আমার জন্য ।
কোন ভাষা ছিল না কোন কিছু বুঝবার কিংবা বোঝাবার,
নির্ঝরের নি:শব্দ উৎপত্তি অত:পর
(একটি অরাজনৈতিক কবিতা)
দিন দুপুরে গভীর রাতে
চারিদিকে চলছে যখন
যুদ্ধ, বোমা, চাপাতি আর গুলি,
নিজের কাজে ব্যস্ত ভীষন
প্রতিক্রিয়ায় নইতো কৃপন
আমি কি আর গা বাঁচিয়ে চলি ?
বর্ণ এবং জাতীভেদে
মানুষ যখন মরছে কেঁদে
নিজের জাতই সবার সেরা বলি,
মনের মাঝে শান্তি নিয়ে
নিজের সমাজ রক্ষা করি
আমি কি আর গা বাঁচিয়ে চলি ?
দেশের
নামঞ্জুর প্রেম
তোমাকে যতবারই
বলেছি ভালোবাসি
উহার সব ভূল
সব ভূল !
চেয়েও যাহা কিছু
পারিনি বলতে
তাহাই নির্ভূল
নির্ভূল !
মুখেতে বলে বলে
হয়না ভালোবাসা
এটাই সত্য
সত্য !
না বলে বুক ফাটে
তোমার চৌকাঠে
এ নহে কথ্য
কথ্য !
বুঝিয়া লও যদি
বুকেতে এক নদী
উত্তাল স্রোতধারা
স্রোতধারা !
মুখেতে বলে বলে
বলাটি শেষ হলে
হবনা দিশেহারা
দিশেহারা !
তারচেয়ে সেই ভালো
বলাটি নাই হলো
থাকুক মনে মনে
মনে
আমার সকল যুদ্ধ যখন তোমার সাথে
কি আর সাধ্য যুদ্ধ করার শূন্য হাতে ?
অস্ত্র গুলো রখলে জমা অস্ত্রাগারে
কেউ কি তখন সেনাপতির ধারটি ধারে ?
যতই সাজাই গোলাবারুদ রনক্ষেত্র
বৃষ্টি যখন ভিজিয়ে যায় তোমার নেত্র
আমি তখন শূন্য মাঠে বজ্রাহত !
কেউ
সব কথা শেষ করে দিতে পারি
অহর্নিশি বলে বলে বলে,
অথবা কিচ্ছুটি না বলেই
নিমেষেই কেটে দিতে পারি সব কথার শিকড় ।
কথারা শষ্য দানার মত
উর্বর হয় যবে মনের জমিন
অনুকুল আলো, হাওয়া, জলে,
কথারা শেকড় ছাড়ে
হৃদয় অতলে ।
এবং কথার গাছ ডাল পালা নিয়ে
বেড়ে ওঠে কচি, গাঢ় সবুজে সবুজে ।
কথারা
কথারা ফুল হয়ে ফোটে
কথারা সুবাস ছড়ায়,
কথারা কলি থেকে ঝরে পড়ে কভূ
কথারা ধুলায় লুটায় ।
কথারা টক, ঝাল, মিষ্টি, তেতো
কথারা পাকা কিবা কাচা,
কথারা কথা নয় কখনও কখনও
কথারা ঠিক করে মরা কিবা বাঁচা ।
১০ ডিসেম্বর, ২০১৬