ভার্চুয়াল জগৎ এবং পুরুষালি নোংরামি
বাস্তবে হয়তো কোনো বন্ধু নেই কিন্তু ভার্চুয়াল জগতে সে খুব আনন্দ ও কোলাহলপূর্ণ জীবনযাপন করছে। সে ওই জগতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে নিজেকে। অবচেতন মনেই তার মনের কথাগুলো বলে ফেলছে নিঃসঙ্কোচে। সমস্যা দেখা যাচ্ছে শেষ প্রান্তে। যখন ফিরে আসার সময় নেই। বর্তমানে নারীরা ভার্চুয়াল বেড়াজালে বন্দি হচ্ছে। যা দিন দিন এক খারাপ পরিণতির গল্প হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ভার্চুয়াল সম্পর্ক আসলে অবাস্তব আবেগ অনুভূতির মায়াজালে ঘেরা ঠুনকো সম্পর্ক। যা বাস্তবিক চেতনার উদ্বেগ জাগায় এবং রোমাঞ্চিত করে তবে তা ক্ষণস্থায়ী এবং অলীক ভাবনা মাত্র। যার বাস্তবতা বা পরিণতিই নেই তবু এক নেশার ঘোরের মতো কাজ করে। এটি বাস্তবিক নয় পুরোটাই বায়বীয়। ক্ষণস্থায়ী এ সম্পর্কের ঘোর কেটে যাওয়ার পরে বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয় যার মোকাবিলা অনেক ক্ষেত্রে মুশকিল হয়ে পড়ে। কারণ অবাস্তব সম্পর্কগুলো বাস্তব সম্পর্কগুলো অস্বীকার করে ফলে অনেক সম্পর্ক ভেঙে যায়।
জীবন ও সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গেলে এর সুফলের থেকে কুফলই বেশি প্রতীয়মান হয় সমাজে। কারণ এর কোনো বাস্তবিক ভিত্তিই নেই শুধু ধোঁয়াশায় ঘেরা বেনামি সম্পর্ক। বাস্তব সম্পর্কগুলো ভেঙে সামাজিক ও পারিবারিক ভাঙনের সৃষ্টিই বেশি করে যার প্রভাব আমাদের সমাজে অহরহ হচ্ছে এবং সামাজিক ও মানসিক অবক্ষয় সৃষ্টি করছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে এসবের যেমন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি রয়েছে তেমনি এর ব্যবহারকারীদের মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা ‘অসামাজিক মনোভাব’ উসকে দিতেও এসবের জুড়ি মেলা ভার। ইদানীং বেশ লক্ষ করা যাচ্ছে ফেসবুকে পরিচিত-অপরিচিত অনেকেই ফেসবুকের ‘লাইভ’ অপশনটি ব্যবহার করছেন। এভাবে ‘লাইভ চ্যাট’ করা, ফেসবুক বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলা-মতবিনিময় করা, পরিচিত-অপরিচিতদের সঙ্গে নানা ধরনের মিথস্ক্রিয়ায় জড়ানো এসবের
কোনোটিতেই তেমন আপত্তি নেই। কিন্তু কোনো মেয়ে ইউজার যখন এই ‘লাইভ চ্যাটে’ আসেন তখন সেখানে ‘এমন সব অশোভন, অশ্লীল, রগরগে, আপত্তিকর’ শব্দ ও বাক্যে চ্যাটস্ক্রিন ভরে যায় যে মনটা বিষিয়ে ওঠে। আমরা কতটা ধার্মিক, ভালো, সৎ, চরিত্রবান তারুণ্যের প্রতিনিধিত্ব করছি খোদ দেশে এবং বিদেশে সেটা তখন বেশ স্পষ্ট হয়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লাইভচ্যাটের মেয়েটি সেসব কমেন্ট এড়িয়ে যান কিন্তু তাতেও বিপত্তি কমে না, বরং আরো আপত্তিকর-অশ্লীল শব্দের বান ছুঁড়ে মারা হয় তখন। সবমিলিয়ে ‘লাইভ চ্যাটে’ আসাটা তখন একধরনের বিড়ম্বনা ও বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি করে তার জন্য। কিছুদিন আগের ঘটনা, একটি মেয়ে তার ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে ‘লাইভ চ্যাটে’ এসেছেন হয়তো এই আশায় যে পাশে একজন ‘পুরুষ’ থাকলে, তিনি হয়তো এ ধরনের বিড়ম্বনার কম শিকার হবেন (পুরুষকে নারীর ‘যথার্থ নিরাপত্তাদাতা’ মনে করা আর কী!)। কিন্তু, বিধিবাম! ঘটল উল্টো। বরং, তখন মেয়েটির সঙ্গে তার ছোট ভাইকে জড়িয়েই শুরু হলো নানা ধরনের অসভ্য-অশোভন আচরণ।
কারা এধরনের পরিস্থিতি তৈরি করছে? খেয়াল করলে দেখা যাবে এদের শতভাগই হচ্ছে তরুণ তথা পুরুষতন্ত্রের অদম্য-অনমনীয় প্রতিনিধি। পুরুষতন্ত্রের এই ভোগকাতর-হিংস্র মানসিকতার বিস্তার যেন দিনদিন বেড়েই চলছে। প্রকৃতপক্ষে, প্রযুক্তির যে কোনো ধরনের অগ্রগতির সুফল নারী-পুরুষ সবাই পাবেন এটাই স্বাভাবিক। কিংবা বলা যায় এটা তো এমন নয় যে, ফেসবুকের ওই ‘লাইভ অপশন’ ফিচারটি শুধু পুরুষদের জন্য, নারীদের জন্য নয়! তবে, কবে পুরুষদের বোধোদয় হবে? লাইভ চ্যাটে ‘পুরুষালি ওই বিকৃত থাবা’ থেকে কোন মেয়ে কবে নিস্তার পাবে?
ভয়ঙ্কর প্রভাবগুলো
* কারো সঙ্গে অপ্রয়োজনে কথোপকথনে বন্ধুত্বের সম্পর্ক থেকে প্রেমের সম্পর্কে পরিণত হয়। কিন্তু আদৌ সেটা প্রেম নয় বরং একটা ধোঁকার সম্পর্ক। তবু এই বায়বীয় সম্পর্কে জড়িয়ে অনেককে প্রতারিত হচ্ছে।
* বিবাহিত নারী পুরুষও এই ভার্চুয়াল জগতে নিজের অজান্তেই অস্বীকৃত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে ফলে স্বামী স্ত্রী দ্বন্দ্ব কলহ লেগেই থাকে। এই মোহের সম্পর্কগুলো বাস্তব সম্পর্ক মিথ্যা করে দেয় আর মিথ্যা সম্পর্কগুলোই প্রাধান্য পায়।
* কখনো আবার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। একসময় ভার্চুয়াল বন্ধুমহল আড্ডার নাম করে একে অন্যের ঠিকানা নিয়ে নিচ্ছে। প্রায়ই আড্ডা চলছে হঠাৎ একদিন একা পেয়ে হাত পা বেঁধে সব লুট করে সর্বশান্ত করে দিচ্ছে আবার প্রমাণ মুছে ফেলতে গুম হত্যাও করছে অহরহ। সিরিয়াল কিলার, লুট, ডাকাতি, চুরি অধিকাংশ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ভার্চুয়াল জগতের ভয়ঙ্কর কিছু পরিণতির অংশ।
* শুধু এ সম্পর্কই না, ব্যাখ্যাতীত কিছু সম্পর্কও আছে যার আদৌ কোনো বাস্তবতা নেই আছে শুধু অসুস্থ বিনোদন, আবেগ আর অনুভূতি। যার কোনো বাস্তবিক ভিত্তি বা পরিণতি নেই! তবু যুবসমাজ এর কবলে ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
loading...
loading...
যে নোংরা সে তো নোংরামি করবেই তা সে জলে স্থলে বা অন্ত্রীক্ষে যেখানেই হোক। সুন্দর শিক্ষনীয় পোস্ট! এই পোস্ট পড়েও যদি কারো মতিভ্রম দূর হয় তবুও সার্থক এই সাবধান বাণী। ধন্যবাদ এবং ভালবাসা আপুমনি।











loading...
ভয়ঙ্কর প্রভাবগুলো সংখ্যায় অধিক। অহরহ বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হচ্ছি।
loading...
ভার্চুয়াল জগৎ এবং পুরুষালি নোংরামি কখনও থামবার বলে মনে হয় না। সমাজের গড়ন ধরণ বদলেছে বলে যত দাবিই আমরা করি না কেনো; কিছু ভাইরাস রয়েই যায়।
loading...
ক্ষণস্থায়ী এ সম্পর্কের ঘোর কেটে যাওয়ার পরে বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয় যার মোকাবিলা অনেক ক্ষেত্রে মুশকিল হয়ে পড়ে। কারণ অবাস্তব সম্পর্কগুলো বাস্তব সম্পর্কগুলো অস্বীকার করে ফলে অনেক সম্পর্ক ভেঙে যায়। যুবসমাজ এর কবলে ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সঠিক বলেছেন সুরাইয়া নাজনীন বোন।
loading...
নিজের মাঝে চুরামী থাকলে সেটা কে আগে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে- আগে বুঝতে হবে ভার্চুয়াল কি? না বুঝে অশ্লালীন সম্পর্ক করলে ত সমস্যায় হবে- এতটা সম্পর্ক হয় দু‘জনার মাধ্যমে।
loading...
ভার্চুয়ালিটি অনেক কিছুই অসভ্যতার দিকে নিয়ে গিয়েছে । তবে সম্পর্ক স্থাপনে অনিয়ম অনেক । ধন্যবাদ আপনাকে ।
loading...