গত কিছুদিনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যস্ততা শেষে অবশেষে মিলেছে মুক্তি। অফিস থেকে শুভকামনা সহ বিদায় নিয়ে আসলাম পড়ন্ত বিকালে। আগামী কয়েকদিনের জন্য বেকার জীবন। কত পরিকল্পনা ছিল কয়েকদিনের বেকার জীবন নিয়ে। কিন্তু টিপটিপ বৃষ্টিতে ভিজে ঘরে ফিরতে ফিরতে মনটা উদাস হল। সন্ধ্যার পর দেখলাম আমার কিছু ভাল লাগছে না, অনেক কিছুই করার আছে তবু কিছু যেন করার নেই। উদাস ভাব দূর করতে চা বানালাম সাথে কবিতায় মন দিলাম। জানি এ কবিতা পড়লে মন আরো উদাস হবে তবুও পড়ি। চা টা ভাগ করতে না পারলেও কবিতাতো ভাগ করতেই পারি সবার সাথে। প্রয়াত কবি সৈয়দ শামসুল হক এর ‘পরানের গহীন ভিতর’ আমার খুব প্রিয় একটা সিরিজ। সেখান থেকেই কিছু কবিতা সবার জন্য।
জামার ভিতর থিকা যাদুমন্ত্রে বারায় ডাহুক,
চুলের ভিতর থিকা আকবর বাদশার মোহর,
মানুষ বেবাক চুপ, হাটবারে সকলে দেখুক
কেমন মোচর দিয়া টাকা নিয়া যায় বাজিকর।
চক্ষের ভিতর থিকা সোহাগের পাখিরে উড়াও,
বুকের ভিতর থিকা পিরীতের পুন্নিমার চান,
নিজেই তাজ্জব তুমি একদিকে যাইবার চাও
অথচ আরেক দিকে খুব জোরে দেয় কেউ টান।
সে তোমার পাওনার এতটুকু পরোয়া করে না,
খেলা যে দেখায় তার দ্যাখানের ইচ্ছায় দেখায়,
ডাহুক উড়াইয়া দিয়া তারপর আবার ধরে না,
সোনার মোহর তার পড়ে থাকে পথের ধুলায়।
এ বড় দারুণ বাজি, তারে কই বড় বাজিকর
যে তার রুমাল নাড়ে পরানের গহীন ভিতর।।
– পরানের গহীন ভিতর – ১
আমি কার কাছে গিয়া জিগামু সে দুঃখ দ্যায় ক্যান,
ক্যান এত তপ্ত কথা কয়, ক্যান পাশ ফিরা শোয়,
ঘরের বিছান নিয়া ক্যান অন্য ধানখ্যাত রোয়?
অথচ বিয়ার আগে আমি তার আছিলাম ধ্যান।
আছিলাম ঘুমের ভিতরে তার য্যান জলপিপি,
বাঁশির লহরে ডোবা পরানের ঘাসের ভিতরে,
এখন শুকনা পাতা উঠানের পরে খেলা করে,
এখন সংসার ভরা ইন্দুরের বড় বড় ঢিপি।
মানুষ এমন ভাবে বদলায়া যায়, ক্যান যায়?
পুন্নিমার চান হয় অমাবস্যা কিভাবে আবার?
সাধের পিনিস ক্যান রঙচটা রদ্দুরে শুকায়?
সিন্দুরমতির মেলা হয় ক্যান বিরান পাথার?
মানুষ এমন তয়, একবার পাইবার পর
নিতান্ত মাটির মনে হয় তার সোনার মোহর।।
– পরানের গহীন ভিতর – ৪
আমারে তলব দিও দ্যাখো যদি দুঃখের কাফন
তোমারে পিন্ধায়া কেউ অন্যখানে যাইবার চায়
মানুষ কি জানে ক্যান মোচড়ায় মানুষের মন,
অহেতুক দুঃখ দিয়া কেউ ক্যান এত সুখ পায়?
নদীরে জীবন কই, সেই নদী জল্লাদের মতো
ক্যান শস্য বাড়িঘর জননীর শিশুরে ডুবায়?
যে তারে পরান কই, সেই ব্যাক্তি পাইকের মতো
আমার উঠানে ক্যান নিলামের ঢোলে বাড়ি দ্যায়?
যে পারে উত্তর দিতে তার খোঁজে দিছি এ জীবন,
দ্যাখা তার পাই নাই, জানা নাই কি এর উত্তর।
জানে কেউ? যে তুমি আমার সুখ, তুমিই কি পারো
আমারে না দুঃখ দিয়া? একবার দেখি না কেমন?
কেমন না যায়া তুমি পারো দেখি অপরের ঘর?-
অপর সন্ধান করে চিরকাল অন্য ঘর কারো।।
-পরানের গহীন ভিতর – ৮
কি কামে মানুষ দ্যাখে মানুষের বুকের ভিতরে
নীল এক আসমান- তার তলে যমুনার ঢল,
যখন সে দেখে তার পরানের গহীন শিকড়ে
এমন কঠিন টান আচানক পড়ে সে চঞ্চল?
কিসের সন্ধান করে মানুষের ভিতরে মানুষ?
এমন কি কথা আছে কারো কাছে না কইলে নাই?
সুখের সকল দানা কি কামে যে হইয়া যায় তুষ?
জানি নাই, বুঝি নাই, যমুনারও বুঝি তল নাই।
তয় কি বৃক্ষের কাছে যামু আমি? তাই যাই তয়?
বনের পশুর কাছে জোড়া জোড়া আছে যে গহীনে?
যা পারে জবাব দিতে, গিয়া দেখি শূণ্য তার পাড়া,
একবার নিয়া আসে আকালের কঠিন সময়,
আবার ভাসায় ঢলে খ্যাতমাঠ শুকনার দিনে,
আমার আন্ধার নিয়া দেয় না সে একটাও তারা।
– পরানের গহীন ভিতর – ১৪
তোমারে যে ভালোবাসে এর থিকা আরো পাঁচগুন
আল্লার কসম আমি দিমু তারে এই জামাখান,
আমার কলম আমি দিমু তারে, শরীলের খুন
দোয়াত ভরায়া দিমু, অনুরোধ খালি একখান-
সে য্যান আমার থিকা আরো ভালো পদ্য লেখে আর
যাদুমন্ত্রে রূপার শিকল হাতে দিতে পারে তার।
তোমারে যে ভালোবাসে এর থিকা আরো দশগুন
আল্লার কসম আমি দিমু তারে এই বাড়িখান,
আমার উঠান আমি দিমু তারে, শীতের আগুন-
নিজেই সাজায়া দিমু, অনুরোধ খালি একখান-
সে য্যান আমার থিকা আরো ভালো নিদ্রা যায় আর
তারেই নিকটে পায় কথা যার নিকটে থাকার।
নচেৎ নষ্টামি জানি, যদি পাছ না ছাড়ে আমার,
গাঙ্গেতে চুবান দিয়া তারে আমি শুকাবো আবার।।
– পরানের গহীন ভিতর – ২৯
loading...
loading...
আপনার প্রিয় কবি এবং প্রিয় কবিতাদের সাথে আমাদেরও মুগ্ধতা জড়িয়ে আছে।
শুভেচ্ছা জানবেন শ্রদ্ধেয় নীল সঞ্চিতা। মাঝে মাঝে তব দেখা পাই …
youtu.be/kSUrNG9UjXA
loading...
প্রিয় গান ভাগ করে নেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই।
loading...
loading...
কবিতা পড়লাম (সবগুলা না)। পইড়া ভাল্লাগসে।
আপনেরে ধইন্না দিলাম। কবিতা দিসেন সের লাইগা।
বাকিগুলা পরে পইরা নিমু। এহন জ্যাম দেহি।
loading...
দ্যাহেন, জ্যাম দ্যাহেন। ঢাকা শহরে এটাও একটা উপভোগ করার বিষয়!
loading...
পরানের গহীন ভিতর-১১
কি আছে তোমার দ্যাশে? নদী আছে? আছে নাকি ঘর?
ঘরের ভিতরে আছে পরানের নিকটে যে থাকে?
উত্তর সিথানে গাছ, সেই গাছে পাখির কোটর
আছে নাকি? পাখিরা কি মানুষের গলা নিয়া ডাকে?
যখন তোমার দ্যাখা জানা নাই পাবো কি পাবো না,
যখন গাছের তলে এই দেহ দিবে কালঘুম,
যথন ফুরায়া যাবে জীবনের নীল শাড়ি-বোনা
তখন কি তারা সব কয়া দিবে আগাম-নিগুম?
আমার তো দ্যাশ নাই, নদী নাই, ঘর নাই, লোক,
আমার বিছানে নাই সোহাগের তাতের চাদর,
আমার বেড়ায় খালি ইন্দুরের বড় বড় ফোক,
আমার বেবাক ফুল কাফনের ইরানী আতর।
তোমার কি সাধ্য আছে নিয়া যাও এইখান থিকা,
আমার জীবন নিয়া করো তুমি সাতনরী ছিকা।
loading...
দীলখুশ মিঞার পক্ষ থেকে আপনাকে লাল গোলাপের শুভচ্ছা।
হাই হ্যালো।
প্রথমে বলে রাখি সৈয়দ হকের কবিতা আমার বেশ পছন্দের। তার সেরা লেখা থেকে চুম্বক অংশটুকু যা আপনার পছন্দ আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন।
ধ ন্য বা দ।
আমার মনে একটা প্রশ্ন জাগে পুরান কবিদের নয়, এ দশকের কোন কবির কবিতা আপনার ভাল লাগে?
যদি ভাল লাগে তা হলে কোন কথা নাই, যদি না থাকে তবে দুইটি কথা আছে, কেন নেই বলে আপনি মনে করেন?
আপনি কি ভাল মানের পাঠক নন?
আপনার কল্যাণ হোক।
loading...
আমি ভাল মানের পাঠক কিনা তা নিয়ে কখনো বিশ্লেষণে যাই নি। আমি আমার জীবনটাকে যেভাবে সহজ করে দেখি সেভাবেই কোন কিছু পড়ি। সে গদ্যই হোক আর পদ্য। যে লেখা আমার কল্লনালোকে দোলা দেয়না সে লেখা আমার ভাল লাগেনা। এবার তা সাহিত্য বিশারদদের মতে যতই উৎকৃষ্ট হোক না কেন। আর তাই রবীন্দ্রনাথ থেকে শব্দনীড়ের মামুনুর রশীদ সবার লেখা থেকেই আমি আমার ভাল লাগাটুকু খুঁজে বের করার চেষ্টা করি।
আপনারও কল্যাণ হোক।
loading...
কি আর কই আফা! শব্দনীড়ের কবিতার উতসবে আনন্দে উল্লাসে কাটবে সময়!
loading...
ক্ষ্যাপেছেন নাকি? ভাবছেন শব্দনীড়ের এত কবিতার মাঝে এ আবার অন্যের কবিতা নিয়ে আসছে!
loading...