হাত খোলো মায়মুনা

তোমার মুখ গলে পড়ে সকল অনুবাদের চুমুক
আমি পান করি-ঘোর তেষ্টায়, ক্লান্ত অবসাদে-
আমি তো প্রেমিক হতে পারিনি,
বলতে পারিনি গোলাপের কথা
কেবল বেদনার বাগানে-জন্ম পাওয়া এক কৈশোরত্তীর্ণ যুবক
হাঁটুগেড়ে পৃথিবীর দিকে হামাগুড়ি দেয়-
অথচ তুমি তাহারে ভাবিয়াছ-বাসিফুল!

অথচ প্রকাশ্য দাপিয়ে বেড়ায়-সহসা হৃদয়-
মমতার সুগন্ধ আর মধুর পৌরুষ,
তোমার গতর বেড়ে ওঠা পাড়াজুড়ে, উঠানে-
হৈম হাওয়ার কালিগঞ্জ শহর থেকে মেঘ ভাঙা আকাশ-

বড় হও বালক, আহ!বড় হও; চোখে গভীর সমুদ্র-
যাহার খোঁজে জীবনের জাহাজ ভিড়াইয়াছ
মানবীর দ্বীপে-সে দ্বীপদেশ কি চিনিয়াছ?
এখনও শীতফেরত ঋতুর সোনালি রোদ কাঁথামুড়ি দিয়ে
পড়ে আছে-কুয়াশার পুঁজিবাদী বিছানায়-মোটেও নড়ে না,
ঘুমিয়ে কুয়াশাকাতর-এই বদঅভ্যেস আগত তার রক্ত থেকে;
আমি প্রবেশ করেছি, দেখেছি সব-উৎসব

আমার অশ্রু আমিই পান করি, ক্ষীয়মাণ দেহের দ্রাক্ষাজীবনে
চুমুক লাগিয়ে আর ইতিহাসের সুখীতম দর্শকে পরিণত হয়
ভবিতব্যতার জিভ আলগা-ভাষা, পৃথিবীর মুথাঘাসের মতো
জংলায় ওড়ে এলোমেলো নবারুণ বাতাস
সকল যতিচিহ্ন কাটা ফাগুনপরিচ্ছদ, হেমন্ত ঠোঁটে শিশির ফোঁটা
শ্যাওলায় জলমাংস-অথবা রৌদ্রছুটি, কারোর দুঃখ-ত্রাসে
লুটিয়ে পড়ে আমার অতি কাছে-আহতভঙ্গির মতো; কবিতা ও গান/

আর তুমি হাসো! দু হাতে আগুন, আমি ছাইভস্ম সরিয়ে
দুনিয়ার নাগিনী কাঁটা বিছানো পথে-আমার রক্ত রঙে রূপ খুঁজি-
আঙ্গুলে গেঁথে রাখি প্রতিশ্রুতির শিমুল-পলাশ, কোকিল ডাক;

এখন অনেক কিছু চিনেছি-আপেল কাটা ছুরি, তোমার ভেতরে
গোপন পোষা চরমপন্থীদল ওৎ পেতে বসে থাকা নিন্দুক সংসার
তবু আমার ঠোঁট গেয়েছে অলকা গান তুমি অসাধারণ!
অথচ ছুঁতে পারিনি নাভিকাটা দেহের দুইগোছা ফুল
স্পর্শকাতরে তরতর বেড়ে ওঠা নাতিদীর্ঘ প্রেম, অঙ্গে জড়ানো
স্মৃতির ছিন্নমূল-লজ্জাবতী ঘ্রাণ, আগামীর পরশকাতর-

নিজের গল্প নিজেরে খুঁচিয়ে মারে-তারপর
জাফরানের ক্ষেতে মিশে যাই দারুণ দারুণ কৈশিক কষ্টে,
মৃত্যুর আগে-নরম দেহের কাফন গুছিয়ে, নিদ্রার নিচে-
সুখীতম নীরবতা বুকে টেনে অশ্রুতম বসন্ত ওড়াই-

আমি মরতে গিয়ে তোমার দেখা পেয়েছি পলকের ভেতর
সটান হয়ে শুয়ে আছ, অল্পাংশ ভাবতে ভাবতে দীর্ঘ ভাবনায়
তীব্র হয়ে ওঠে, ত্বকের নিচে রক্তের ফোঁটা, নিজের দিকে তাকায়
শরীর হতে উড়ে যাচ্ছে গহীন রাত ও ভোরবেলা,
হলুদ রোদ্দুরে শাদা বক
তারপর আদিগন্ত পাখির ডানায়-ঝুলভর্তি আকাশ-
দেখো, তোমার পরিচিত মাংসাদি মুখ-নাচোড় সমুদ্রে ভাসে-বিকেল

আমারও ঠোঁট ছিল, হলুদ, লাল, কমলা-
শরীর ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে তোমার মতো মৌন মুখের তিল
ও চোখের কর্ণিয়ায় নড়াচড়া করে আসা উচ্চারণ-
ললিতকল বাতাসে জড়িয়ে যাচ্ছে বকুলমুখো জঙ্গলা গাছ
আমার লজ্জালু পৌরুষ সরব সৌধ অনুভূতি ধরে
অবলীলায় ঢুকে যাচ্ছে-
তোমার উন্মুখ বুকে দুই গোলাপ ফুটে থাকা বাগানে…

রাত্রে ঘুম নেই, পরশকাতর জাগে-সদ্য মনের শাসনে বহু বিরহ
বালক চোখের পরে-চাবুক মারি, নিজের শরীরে-
জখমের রক্তে ঝড় নামে নিলামের জানালায়;
তাকিয়ে দেখি-
আকাশে নাভিকাঁপা চাঁদ টুকরো টুকরো মেঘ পান করছে
আর ক্লান্ত মুসাফির বুকেপিঠে তুলে নিয়েছে তোমার শ্রীমুখ
আগুনাভ চাঁদের হাট পেরিয়ে চলেছে হৃদয় গোছানো দেশে
আমার টুটিচেপে অনাবৃত্ত কুসুমে জেগে দেখা-রূপের বাজারসদাই;

আমাকে খুন হতে বলেছ, হলুদ মালটা কাটা ছুরি দিয়ে-
সরিষা খেতের মতো পড়ে থাকা বৈকাল ডেকে যায়
নিশ্চুপ অভাগা আলপথে, ঘাসেরা কাতরায়-

তারপর ঘাসফড়িং সাঁতরায় চরমপন্থী নির্বোধ ভেবে-
কেবল আমারও তো মানুষ হবার ইচ্ছে ছিল, অবুঝ পাগল হতে
দীপন্বিত অনন্তের কাছে-ফাল্গুনের করিডোরে, রূপকথা পৃথিবী;
তোমার লজ্জানত কোমরে আধুনিক চাষের বিশ্বাস রচনা করেছি-
তুমি ভাবতে পারো-এ সব
কিছু মানুষের ধর্ম-বিচিত্র চাষ, জাগরকাটা অভ্যাস, ধরো, চেনা গন্ধ-

ঘর এঁকেছি, আমার মতো মানুষ দিয়ে-একদিন এসো,
দেখে যেয়ো-ইতিহাসের সুখীতম ব্যক্তি পরে আছে
বোধিবৃক্ষের ফাঁসি-তোমাকে জিতিয়ে দেবার শিল্প গুছিয়ে-
বহুদিনের স্মৃতি, আমি তো তোমাকে বুঝতে শুনতে
রূপালি ঢেউ পার করেছি-জীবনের শাস্ত্র ইতিহাসে যখন যৌবন তাথৈ

আমার বুক ফাটিয়ে বাহির করি সোহাগের নিদারুণ সংসার,
অদূরে দেখা হেরে যাওয়ার গল্প, নিষেধের বাণী-তুমি বিতর্কিত
আহা! মানুষও পেরেছে শিকার হতে পরম কপাল ভেঙে,
আমি তাকাতে পারিনি-খারাপের দিকে, মন হতে আলো টেনে ধরি
অমানবিক ধর্মে, নিষ্ঠুর কর্মে-অথচ তোমার ভেতরে পুষেছ অন্ধকার-

আলো চেয়েছিল, তোমার কালিগঞ্জ শহরে পৌঁছোবার-
পথের আঁচল ধরে-ধূলির বাকলে জমে ওঠা নিমতলী বাজার,
এখনও চোখ আমার বুর্জ অট্টালিকার মতো তাকায়-
খুব বেশী অদূরে নও, নাকের ডগায় যেমনটা মায়মুনা নিঃশ্বাস-

স্বপ্নের জ্বরে আমার মেরুদণ্ড কাঁপায়, শরীর কাঁপায়-
গোপন ভাষাগুলোও জানে-ওষ্ঠঠোঁটের নিচে অনন্ত
নভোনীল আমাকে ডাকে, তুমি এসো পিছু পিছু, সহজ করে
এসে দেখো-মিথ্যে আমিও নই, আমার আঁতুড়ঘরে
প্রকাশ্য তুমি-গোপন তুমি, তোমার উন্মুল জমিনে
আমার নির্মিত চোখ চাষাবাদ জানে-চাঁদ কাঁধে যুবক হেঁটে যাচ্ছে-

এই ভোরে-এই নিশিতসলিলে কি চাইব! কাফন দিও।
পরিহাসের অনুভূতি, অভিমানের কোনায় কোনায়
তোমার যাদুকরী অবহেলা জমে ওঠে, আমার হেরে যাওয়া-ইতিকথা
স্বপ্ন গোছানো বিস্তর পরিমাপ, নিদারুণ ক্ষত-অসমাপ্ত কাঠামো,
চোখ যেন রাতের তারা হয়ে যায়, দিন তো ভাঙনের অট্টহাসি-
আমি বড় হতে চাই, তোমার আঁচল ওড়ানো-অবশিষ্ট সমাজে,
রূপরেখা সংসার-অঙ্গপারে, হাত খোলো নিপুণ জমিনের ধুলোক্ণা।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২৯-০২-২০২০ | ২০:০৪ |

    এখনও শীতফেরত ঋতুর সোনালি রোদ কাঁথামুড়ি দিয়ে
    পড়ে আছে-কুয়াশার পুঁজিবাদী বিছানায়-মোটেও নড়ে না,
    ঘুমিয়ে কুয়াশাকাতর-এই বদঅভ্যেস আগত তার রক্ত থেকে;
    আমি প্রবেশ করেছি, দেখেছি সব-উৎসব।

    দীর্ঘ একটি কবিতা। অসাধারণ এই উপহার দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ কবি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...
  2. ফয়জুল মহী : ০১-০৩-২০২০ | ১৮:২১ |

    ভালো লাগলো

    GD Star Rating
    loading...