সরকারি অকর্মণ্যতা আর রাজনৈতিক দলগুলোর উস্কানিতে ১৯৪৬-‘৪৭ সালে ঐ সরকারি হিসেব মতই পাঁচ লক্ষেরও বেশি মানুষ মারা গেছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায়।
আমরা একবারের জন্যও সেই হতভাগ্যদের কথা স্মরণ করিনা।
স্বাধীনতা দিবস এল, চলে গেল ফের। আমরা মাংসভাত খেয়ে, শপিংমলে গিয়ে, আর ভুল সুরে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে একটা পতাকা তুলে একটা ছুটির দিন কাটালাম। অপদার্থ নেতাদের দোষ দিচ্ছি না, মুখে জয়হিন্দ, বন্দেমাতরম্ বললেও এর মানে মুষ্টিমেয় জানে।
ক্রমশঃ আমরা ইয়াংকি কালচারের অকর্মন্য নকলনবীশ হচ্ছি। ফাঁকিবাজ, অর্থলোলুপ, ঘুষখোর, চোর জাতি হচ্ছি আমরা। নিজের মুখের সামনে একটা জাতীয় পতাকার ছবি লাগালেই জাতীয়তাবাদী হওয়া যায় না। দেশ কে সত্যিকারের ভালোবাসতে হলে নিজের মন ও কাজ পরিষ্কার করতে হয়।
খেতু বাগদি ও গোপাল কাহার বেঁচে আছ! সেই যে পতাকা তোলা দেখতে গিয়ে হারিয়ে গেছিলে নির্বীজ জন অরণ্যে, তারপর দীর্ঘ ছিয়াত্তর বছর তোমাদের কথা উচ্চারিত হয় বছরের মাত্র দুটো দিনে। তোমার পরনের সেই ছেঁড়া ফাটা গামছাটা আজও জীবিত আছে খেতু? আর গোপালের তার একলৌতা জীবনের মতই আধময়লা ফ্যাকাশে ধুতি?
আমিও আর পতাকা তোলা দেখতে যাই না এখন। আমি এখন এলইডি বাহাত্তর ইঞ্চি জুড়ে ঘরজোড়া গমগমে হাততালির বুক চিরে সটান পৌঁছে যাই লালকেল্লার চওড়া পাঁচিলে। তোমাদের কথা আমাদের মনেও পড়ে না বিশেষ।
কতদিন যেন না খেয়ে সেদিন মানুষের জঙ্গলে গেছিলে তোমরা? আমরা এখন সকালে পাস্তা, দুপুরে ভুরুভুরে বাসমতী, সন্ধ্যেয় ব্ল্যাক ডগ আর রাতে বিরিয়ানি – রেশমি কাবাব। এখন আর কেউ না খেয়ে মরে না গো হাড়হাভাতে বোকা মানুষের ঝুন্ড।
পেটভর্তি হয়ে গেলে অবসর অবর সময় আমরা দেশ ভক্তির ভজন গাই। আমরা নিজেরাই নিজেকে দেশিকোত্তম উপাধি দিয়ে গলায় পরে নিই তেরঙা চাদর। সেই চাদরে এক এক রঙ এক এক সময়ে উজ্জ্বল হয়ে ছলকে উঠে রাজপথ, মাঠ আল, মাটির কুটির কিম্বা ঝকঝকে খিলান ওয়ালা বাড়ীর মেঝেতে লোহিত কণা আঁকে এন্তার। রাত গভীর হলে নেশার দমকে আমার গলা ভেঙে যায়। দুরকম গলায় চেঁচিয়ে উঠি – হর হর মহাদেও – আল্লাহু আকবর! আমার দুহাত আমার নিয়ন্ত্রণ ছুঁড়ে ফেলে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় মেতে যায়। ওহে বুদ্ধু গোপাল – খেতু, আমরা এখন চাঁদে উপগ্রহ পাঠাই।
শুধু রাত্তির ঝুম হয়ে এলে নেশার প্রথম প্রহর জমে উঠলেই তোমাদের দুজনের কুৎসিত কাটা মুণ্ডু চোখের সামনে দোলে, ঠাঠা করে হাসে, আমাকে বিদ্রুপ করে।
গোপাল কাহার – খেতু বাগদি আজকাল আমি রাতে ঘুমোতে পারি না যে!
loading...
loading...
পতাকা তোলা দেখতে যাই না এখন। আমি এখন এলইডি বাহাত্তর ইঞ্চি জুড়ে ঘরজোড়া গমগমে হাততালির বুক চিরে সটান পৌঁছে যাই লালকেল্লার চওড়া পাঁচিলে। তোমাদের কথা আমাদের মনেও পড়ে না বিশেষ।
loading...