এখন আর রেডিও লাগে না। হাতের মোবাইলে প্লে স্টোরে লাখ লাখ অ্যাপস্ এর মধ্যে প্রচুর পারফেক্ট বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ইয়া দেবী সর্বভূতেষু করেই চলেছেন বছরের যে কোনো সময়ে।
আগে লোকেরা বেশী রাত্রি পর্যন্ত জাগতো না। এন্টারটেইনমেন্ট এর গণ্ডী ছিল সীমাবদ্ধ। হলে সিনেমা, রেডিওতে নাটক বা ছায়াছবির আসর কিম্বা বিনাকা গীত মালা আর খবর। ব্যস্। দশটা, সাড়ে দশটা, বড়জোর এগারটার পরে উঁচু ক্লাসের কয়েকজন পড়ুয়া বাদে সবাই ঘুমের দেশে চলে যেত। যে যত তাড়াতাড়ি ঘুমোত সে তত তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে উঠে পড়ত।
এখন সে সবের বালাই নেই। পাঁচ থেকে পঁচানব্বই রাত্রি দুটো, তিনটে অবধি ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, টুইটার, ইউ টিউব, অনলাইন শপিং বোঁ বোঁ করে ঘুরেই চলেছে। হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া কেউই রাত বারোটার বর্ডারের এপারে বিছানার দিকে তাকায় না। ফলে ভোর চারটেয় ঘুম থেকে উঠে মহালয়া শোনার গল্প এখন মিথ।
হরেকরকম অসুবিধা এখন নেই হয়ে গেছে মাইক্রো চিপসের কল্যাণে। রেডিও সারানোর জন্যে মিস্ত্রির দরজায় ধর্ণা দেওয়া নেই। আকাশছোঁয়া দাম দিয়ে চার কিম্বা ছয় ব্যাটারি কেনার হৃদয় বিদারক ধাক্কা নেই।
ইলেকট্রিক্যাল কানেকশনের মাঝপথে নেই হয়ে গিয়ে জিভের তোড়ে ইলেকট্রিক দপ্তরের শ্রাদ্ধ শান্তির সম্ভাবনা নেই। মহালয়া শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়লে হাহুতাশ করতে করতে আরও এক বছর অপেক্ষা করা নেই। চ্যানেল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পারফেক্ট আওয়াজ বার করে আনার যুদ্ধ নেই। মহালয়া থেকেই পূজোর দিন গোনার দিনও ফুরিয়ে আসছে দ্রুত। মফস্বলে এখনো ততটা নয়, বিশেষ করে বড় যান্ত্রিক শহরে মহালয়ার দিনই বড় পূজোর উদ্বোধন হয়ে রাস্তায় নেমে পড়ছে হুজুগে পাবলিক, তাই সেখানে পূজোর দিন গোনার মিষ্টি আনন্দ নেই।
সত্যিই অসুবিধা গুলো প্রায় নেই বললেই চলে। আর এতসব নেই এর ধাক্কায় আনন্দটাও কখন পেছনের দরজা খুলে নেই হয়ে গেছে, সেটা কেউই জানতে পারে নি।
loading...
loading...
জীবন বাস্তবতার সার্থক প্রতিচ্ছবি।
loading...