এদেশ ওদেশ ৭

(শুরু করেছি ভারত – বাংলাদেশ – পাকিস্তানের ময়নাতদন্তমূলক নিবন্ধ “এদেশ ওদেশ”। লেখাটি আগে এক‌টি কাগজে প্রকাশিত হয়েছিল। পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। কিন্তু আমার মনে হয় ২০১৫ সালে লেখা এই নিবন্ধ এখনো প্রাসঙ্গিক। আজ সপ্তম পর্ব।)

এদিকে ভারত রাষ্ট্রে তখন রাজনৈতিক ঝড়ের আসন্ন পূর্বাভাস। স্বাধীনতার পরে যখন একে একে স্বপ্ন ঝরে পড়তে শুরু করলো স্বভাবতই মানুষ বিমুখ হতে শুরু করলো শাসকদের থেকে। বহু প্রতিশ্রুতি দেখা গেল শুধুই মিথ্যাচার।

ল্যাম্পপোষ্টে একজনও মজুতদারকে ঝোলানো হলো না, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস হাতছাড়া হতে শুরু হলো, সম্পদ জমতে শুরু করলো চরম ধনীদের সিন্দুকে। সুভষের মতো নিবেদিতপ্রাণ বিপ্লবীকে দেশে ফিরলে ইংরেজের হাতে তুলে দেওয়ার ঘৃণ্য মুচলেকা দেওয়ার কথা প্রকাশ্যে এসে গেল। অপুষ্টি, দারিদ্র্য, অশিক্ষা বাড়তে লাগলো হু হু করে।

ষাটের দশকে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত ঘা মারলো দু দুখানা যুদ্ধ। পাকিস্তানের সঙ্গে জিতলেও চীনের কাছে হেরে ভারতখন্ড তাদের হাতে তুলে দিয়ে মাথা নীচু করে পিছিয়ে আসতে হলো। যুদ্ধ পরবর্তী যাপনচিত্র হয়ে উঠলো ক্রমশঃ ঘন কালো।

মারা গেলেন দুজন খ্যাতনামা প্রধানমন্ত্রী। জওহরলাল নেহরু এবং লালবাহাদুর শাস্ত্রী। কংগ্রেসের মধ্যে ক্ষমতা দখলের উদগ্র লোভ আবার প্রকাশ্যে এসে গেল। দিল্লীর মসনদ দখলের চেষ্টায় সব দুষ্কর্ম বৈধতা পাচ্ছিল।

সমস্ত বাধা সরিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের পিছু হটিয়ে ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতা দখল করলেও পরিস্থিতির বিশেষ পরিবর্তন না হয়ে আরো অধগামী হতে থাকলো।

ঠিক এই সময়েই পরপর দুবার ভাগ হয়ে গেল কমিউনিস্ট পার্টি শুধুমাত্র আদর্শগত বিরোধের মাশুল দিয়ে। নরম, মধ্য ও চরমপন্থার বিরোধের সুযোগে শাসক কংগ্রেস তাদের ধ্বংস করতে উদ্যত হলো। কিন্তু মানুষ অপ্রত্যাশিত ভাবে মধ্যপন্থী কমিউনিস্টদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠতে শুরু করলো।

৬৮ র বর্দ্ধমান প্লেনামে বিকল্প দলিল পেশ করে চারু মজুমদারের চরমপন্থী গোষ্ঠী হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করলো। অন্যরা তাদের এই কাজকে হঠকারিতা আখ্যা দিলেও যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে গেল এই মতাদর্শ। আগুন জ্বলার আগে বাতাস তখন থমকে দাঁড়িয়ে।

অবস্থা সামাল দিয়ে নিজের অপ্রতিহত শাসনদন্ড প্রতিষ্ঠার জন্য ইন্দিরার তখন দরকার ছিল একটা ঝড়ের। অথচ সমগ্র উপমহাদেশ তখন কাঁপছে স্থিতিশীল সুশাসনের অভাবে। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই ৭০ এর নির্বাচন হলো পাকিস্তানে। জনরায়ে ব্যাপক হার সেখানকার শাসকেরা মেনে না নিয়ে নির্বাচনের রায় ভন্ডুল করে পূর্ব অংশে সর্বার্থে মিলিটারি শাসন জারীর কুচেষ্টা করে লেলিয়ে দিল আলবদর, রাজাকার ও আর্মি। তছনছ হয়ে গেল সামাজিক, অর্থনৈতিক বন্ধন। কাতারে কাতারে শরনার্থী পালিয়ে আসতে শুরু করলো এপারে।

এমনিতেই এপার বাংলার অর্থনীতি ভারতের সাথে জুড়েই তখন বিপর্যস্ত। তার ওপর এত বিপুল পরিমাণে শরনার্থীর চাপে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠলো।

এপারের বাঙালি কিন্তু অসীম সহ্যশক্তি নিয়ে জায়গা ছেড়ে দিতে লাগলো তাদের। কমিউনিস্ট পার্টিরা তাদের সমর্থনে পাশে দাঁড়াল। কিন্তু পরিকাঠামোর অভাবে শিবির গুলোতে হানা দিতে লাগলো মহামারী, ক্ষুধা। প্রচুর মানুষ মারা গেল এপারে এসেও। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এতদিন চুপ করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিল, নড়েচড়ে বসতেই হলো তাদের এবার।

(আবার কাল)

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এদেশ ওদেশ ৭, 5.0 out of 5 based on 1 rating
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২ টি মন্তব্য (লেখকের ০টি) | ২ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ২৫-০৪-২০২২ | ১০:৫৫ |

    স্বাধীনতার পরে যখন একে একে স্বপ্ন ঝরে পড়তে শুরু করলো স্বভাবতই মানুষ বিমুখ হতে শুরু করলো শাসকদের থেকে। বহু প্রতিশ্রুতি দেখা গেল শুধুই মিথ্যাচার। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Frown.gif.gif

    GD Star Rating
    loading...
  2. নিতাই বাবু : ২৫-০৪-২০২২ | ১৮:০৬ |

    আপনার লেখা পোস্ট পড়ে অনেককিছুই জানা হলো, দাদা। আশা করি ভালো থাকবেন। 

    GD Star Rating
    loading...