১৯২৯ এ বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দার পিছনে যে কারণগুলি ছিল তা আগে কিছুটা বলেছি। ইউরোপের সবচেয়ে বড় দেশ রাশিয়ার জারতন্ত্রের উচ্ছেদ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, ফ্লু মহামারী, একের পর এক বিপর্যয়। বস্তুত পৃথিবীর ক্ষমতার মেরু পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে আগের সুবিধা ভোগকারী দেশগুলো ক্রমশই নিজেদের বাণিজ্যিক জমি হারাচ্ছিল। এর ফলে তাদের দেশের মাথাপিছু আয় যেমন কমে যাচ্ছিল তেমনই বৃহৎ পুঁজি মালিকরা ক্রমাগত লোকসানের খপ্পরে পড়ে যাচ্ছিল। ওইসব দেশগুলিতে বাণিজ্যিক বৃদ্ধির মাত্রা শূণ্যের নীচে নেমে আসছিল। ফলস্বরূপ বিশ্বজুড়ে শুরু হয়ে গেল আর্থিক মন্দা। ১৯২৯ থেকে ১৯৩৯ দশ বছর ধরে এই ভয়াবহ মন্দায় একের পর এক বড় বাণিজ্য সংস্থা বন্ধ হয়ে গেল। বেকারত্ব বেড়ে যাওয়ার ফলে বাড়তে থাকলো জন বিক্ষোভ, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, খাদ্য সংকট, আর দেশগুলোর মাথাদের অবস্থা সামলানোর প্রয়াসে ঘন ঘন বৈঠক। কিন্তু সমাধান কিছুতেই যখন হচ্ছিল না তখনই আরেক উন্মাদ জার্মানির হিটলার ও ক্ষমতালোভী মুসোলিনি তাদের দেশের কিছু অংশের মানুষের স্বার্থে ঘোষণা করে দিল যুদ্ধের। রে রে করে উঠলো ইউরোপের এতদিনের উন্নত দেশগুলো। একে তাদের দেশের অবস্থা খারাপ, তার ওপরে হিটলারের জার্মানি তাদের অংশের বাণিজ্যিক জমি দখল করে নিলে তাদের অবস্থা আরও সঙ্গীন হয়ে উঠবে এই আশংকায় ইউরোপের বাকি দেশ জড়িয়ে পড়ল যুদ্ধে। অবশ্য তাদের এ ছাড়া অন্য গতি ছিল না।
হিটলারের প্রবল অত্যাচারী নাৎসী বাহিনী অস্ট্রিয়া থেকে এক এক করে তাদের দেশগুলি দখল করার উদ্দেশ্যে এগিয়ে চলেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দীর্ঘ বর্ণনা এই প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য নয়। কিছু আজকের পরিস্থিতি বোঝাতে গেলে যে সামান্য আলোচনা দরকার আমি সেটুকুই শুধু এখানে করব। প্রথমে আমেরিকা ও রাশিয়া সেই যুদ্ধে নিরপেক্ষ ছিল। রাশিয়ার সঙ্গে জার্মানির যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পাদিত ছিল আগেই। কিন্তু সেই আগ্রাসী যুদ্ধের লোভ ছড়িয়ে গেল। জার্মানি ও ইতালির পরে অক্ষশক্তিতে যোগ দিল তুরস্ক ও জাপান। তুরস্কের যোগ দেওয়ার পিছনে উদ্দেশ্য ছিল ইউরোপের উন্নত দেশগুলির আগ্রাসন থেকে বেরিয়ে আসা। আর জাপানের উদ্দেশ্য একইভাবে ব্রিটেন ও আমেরিকা অধিকৃত চীনের আগ্রাসন থেকে বেরোনো। হিটলার ইউরোপের ছোট ছোট দেশগুলিতে সাফল্য পাওয়ার পরে রক্তের গন্ধ পাওয়া হিংস্র জন্তুর মত আরও পাওয়ার লোভে ভুল করে বসল। সেটা হলো অনেকগুলো ওয়ার ফ্রন্ট খুলে ফেলা। একদিকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ অন্যদিকে আফ্রিকার দেশগুলোর উপনিবেশ দখলের উদ্দেশ্যে সেখানে যুদ্ধ শুরু। কিন্তু সবচেয়ে বিপর্যয়কারী ভুল হলো রাশিয়া আক্রমণ।
যে দুর্ভেদ্য রাশিয়াকে নেপোলিয়ন দখল করতে পারেন নি, যে রাশিয়ার সঙ্গে তাদের যুদ্ধবিরতি চুক্তি ছিল, সেই রাশিয়া আক্রমণ করার হঠকারিতা করল হিটলার। অন্যদিকে তারই শরিক জাপান আমেরিকা
আক্রমণ করে আরেক ভুল করল। পৃথিবীর দুই সুপার পাওয়ার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় একদিকে যেমন যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ল সারা বিশ্ব জুড়ে, অন্যদিকে হিটলারের জার্মানির অন্তিম ক্ষণের সূচনা হয়ে গেল। এখন প্রশ্ন হলো এই যুদ্ধে লাভ হলো কার?
‘This study analyzes the important increase in the rate of profit which occurred in the United States during World War II. The gap between the predepression trend line, from 1900 to 1929, and the postwar line, from 1946 to 1989, is estimated as a shift of 15.8% in absolute terms (to be compared with an average of 29.0% over the whole period). Using a production function analysis, we demonstrate that this transformation can be explained by an acceleration in the rate of “autonomous progress” between 1930 and 1945. We identify a sudden and nonneutral discontinuity in the process of technical change, characterized by an autonomous substitution of equipment for structures.’
কিছু বোঝা গেল? ১৯৩৯-১৯৪৬ গ্রেট ডিপেসন থেকে লাভজনক অবস্থায় উত্তরণ কিভাবে সম্ভব হলো? বিশেষ করে যুদ্ধের এত ক্ষয়ক্ষতি সামলে? সাধারণ্যে এত কূটকচালি পোষায় না, তাই কেউ যুদ্ধের অন্তর্নিহিত কারণ বুঝতে পারে না। বিংশ শতক থেকে যুদ্ধ বাজার নিয়ন্ত্রিত এক ঘটনা মাত্র। সেটা না জেনেই মানুষ দু হাত তুলে যুদ্ধ সমর্থন করতে থাকে।
‘An additional reason for contributing to the growth of the financial base and the accelerating flow of gold as an immediate consequence of the outbreak of war in Europe was that Britain and its allies paid for war materials and other supplies that sent gold domestically. United States. These two factors led to a strong expansion of the financial base and funding.’
আশাকরি আর বিস্তৃত কিছু বলার থাকবে না। উপরের এই রিপোর্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই। যাইহোক, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে ক্ষমতার পটপরিবর্তন হয়ে গেল পৃথিবীতে। পৃথিবী হলো ক্ষমতার দুই মেরু বিশিষ্ট গ্রহ। আগেকার বিভিন্ন শক্তির খেয়োখেয়ি থাকলো না। ইউরোপ তার ক্ষমতার রাজমুকুট হারালো। এবারে তাদের হতে হলো আমেরিকার অনুগামী। পাশাপাশি রাশিয়া থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নে উত্তরিত বিশালতম দেশটি গড়ে তুললো আরেক স্বতন্ত্র শক্তি। তার অনুগামীর সংখ্যাও বহু। শুরু হয়ে গেল ধনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের ঠান্ডা লড়াই।
(চলবে)
loading...
loading...
একদিকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ অন্যদিকে আফ্রিকার দেশগুলোর উপনিবেশ দখলের উদ্দেশ্যে সেখানে যুদ্ধ শুরু। কিন্তু সবচেয়ে বিপর্যয়কারী ভুল হলো রাশিয়া আক্রমণ।
loading...