বিগত শতকের গোড়ার থেকেই বদলে যাচ্ছিল আর্থসামাজিক ব্যবস্থার সমীকরণ। পাল্টে যাচ্ছিল সেই প্রাচীন সিল্ক রুট নীতির বাণিজ্যিক গতিপথ। প্রাচীন রাশিয়াতে অভ্যুত্থান, ইউরোপের দেশগুলোতে একের পর এক বিভিন্ন শাখায় আবিষ্কার, ক্রমশঃ অবক্ষয়িত সামন্তবাদের শ্বাস উঠতে শুরু করেছিল। তখনই বিশ্বজুড়ে আবার একটা মহামারীর কবলে পড়ল মানুষ।
“The 1918 influenza pandemic was the most severe pandemic in recent history. It was caused by an H1N1 virus with genes of avian origin. Although there is not universal consensus regarding where the virus originated, it spread worldwide during 1918-1919. In the United States, it was first identified in military personnel in spring 1918. It is estimated that about 500 million people or one-third of the world’s population became infected with this virus. The number of deaths was estimated to be at least 50 million worldwide with about 675,000 occurring in the United States.”
সদ্য চার বছর ধরে চলা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে। ১৮৫৫ র বিধ্বংসী প্লেগ দেখেছি পৃথিবী। যা সামলাতে প্রায় পঞ্চাশ বছর লেগেছিল। কিন্তু তার ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই সামন্তবাদের প্রতি ধাক্কা এবং সেই সীমানা দখলের লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ল তখনকার ঔপনিবেশিক বিশ্ব। জার্মানিকে কেন্দ্র করে ইউরোপের সব দেশ, আমেরিকা, এশিয়ার কিছু দেশ জড়িয়ে গেল যুদ্ধে। চার বছর তিন মাস দু সপ্তাহ ধরে চলা যুদ্ধের ফল জার্মানির পরাজয়।
কিন্তু সীমানা দখল বা সম্পদ দখলের এই যুদ্ধের ধাক্কা সামলানোর আগেই আছড়ে পড়ল স্প্যানিশ ফ্লু নামের জীবাণু। কাতারে কাতারে মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল। আর একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে গেল উন্নত দেশগুলোর অর্থনৈতিক কাঠামো। একে সামাল দেওয়ার জন্য চললো একের পর এক পরিকল্পনা। নতুন উপনিবেশ করার জায়গা আর নেই। সুতরাং পরাজিতের সম্পত্তি দখল করে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা। অথচ সব আশার আগুনে জল ঢেলে দিয়ে ১৯৩২ থেকে পৃথিবী পড়ল ভয়ঙ্কর আর্থিক মন্দার কবলে।
‘The Great Depression lasted from 1929 to 1939 and was the worst economic downturn in history. By 1933, 15 million Americans were unemployed, 20,000 companies went bankrupt and a majority of American banks failed.’
এই লেখা যখন লিখছি তখন একটা যুদ্ধের দামামা বেজে গেছে। ঝলসে উঠছে রাত ও দিনের আকাশ। না আমাদের দেশে নয়। কিন্তু আজকের গ্লোবালাইজেশনের যুগে পৃথিবীর কোনো এক প্রান্তে যুদ্ধ বাধলে তার প্রভাব সারা গোলোক জুড়েই পড়ে। এখানেও পড়বে। আর সেদিনও তাই পড়েছিল উন্নত দেশগুলোর বাজারে।
সত্যি বলতে কি, ক্রমাগত সংকুচিত হয়ে আসা বাজার উন্নত দেশগুলোর অর্থব্যবস্থাকে তছনছ করে দিয়েছিল সেদিন। একদিকে ইউরোপের সবচেয়ে বড় দেশ রাশিয়া তার বাজারে নিষিদ্ধ করেছিল উন্নত দেশের প্রবেশ। অন্যদিকে উপনিবেশগুলোতে ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ, স্বদেশ প্রিয়তার ধোঁয়া উন্নত দেশের সামগ্রী বিক্রি সীমাবদ্ধ করে দিচ্ছিল। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যবসা অস্ত্র বিক্রি, তারপর ক্রমান্বয়ে গাড়ি বিক্রি, ওষুধ বিক্রি, কাপড় বিক্রি প্রায় তলানিতে ঠেকে গেছিল সেদিন। আর এক দিকে হিটলারের মত এক উন্মাদের একই ধরনের অর্থনৈতিক উন্নতি কামনার লোভ মস্ত সুযোগ এনে দিল উন্নত দেশদের। সামন্ততান্ত্রিক প্রভাব তখন প্রায় শূন্য। দেশের সব ধরনের সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে ক্রমবর্ধমান পুঁজিবাজার। ফলে আর্থিক মন্দা সামাল দেবার জন্য সৃষ্টি হলো আরেকটা বিশ্বযুদ্ধের।
সেদিনের সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ আজকের রাষ্ট্রসংঘের মতই ধৃতরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়েছিল। সত্যি বলতে কি বরাবর এটাই দেখা গেছে যে সব রাষ্ট্রের এই মিলিত সংঘ আসলে শক্তিশালী দেশের স্বার্থে তাদের অঙ্গুলিসঞ্চালনে চলে। আর তাই সেদিন সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের কিছুই করার ছিল না। যুদ্ধ হলো। উন্মাদ হিটলারের পতন হলো। পৃথিবীর তিন চতুর্থাংশ দেশ তখন বিধ্বস্ত সব দিক থেকেই। আবারও সেই আগের ভাগাভাগি। আবারও দুর্বল দেশের ওপরে সবলের লুট। সব ঠিক চলছিল। বাদ সাধলো ফের সেই আর্থিক মন্দা।
(চলবে)
loading...
loading...
দুর্বল দেশের ওপরে সবলের লুট। সব ঠিক চলছিল। ফের সেই আর্থিক মন্দা।
loading...