সমাজমনস্ক সুকুমার রায় – বহুমুখী প্রতিভার সমন্বয় ৫
সারা জীবন সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় অবাধ বিচরণ করেছেন সুকুমার। গল্প লিখেছেন ৬৭ টি, ৮ টি নাটক, ১২৬ টি প্রবন্ধ, ছড়া ও কবিতা মিলে প্রায় ১২০ এবং এঁকেছেন অজস্র ছবি। মাত্র দশ বছরের সাহিত্য জীবনে এ সংখ্যা বড় কম নয়। তবুও ছড়ায় ছিল তাঁর অনায়াস গতি। অধিকাংশ মানুষই তাঁকে চেনে ‘খাই-খাই’ বা ‘আবোল-তাবোল’ এর অমর সৃষ্টির জন্যে। প্রচন্ড হাস্যরসের প্রবহমান স্রোতের মধ্যেও সুকুমার সমান বাস্তবমুখী। ‘খাই খাই’ কাব্যগ্রন্থ দেখা যাক। বর্ষার বর্ণনা বহু কবি দিয়েছেন কিন্তু তাতে যে কিশোরদের ফুটবল খেলা নষ্ট হয় তা কল্পনাপ্রবণ মনে চট করে আসে না, যা এসেছে তাঁর ক্ষেত্রে (‘বর্ষার কবিতা’)। শোষকের আরেক রূপ দেখি এখানে মাকড়সার ছদ্মবেশে। – “কথার পাকে মানুষ মেরে / মাকড়জীবি ঐ যে ফেরে…” (‘মূর্খ মাছি’)। দরিদ্র শ্রেনীর মাথায় পা রেখে তাদেরকেই ব্যঙ্গ করা যাদের স্বভাব, সেইসব পরগাছাদের তীব্র ব্যঙ্গের কষাঘাত করেছেন তিনি (‘জীবনের হিসাব’)। ‘খাই-খাই’ ছড়ার চব্বিশ এবং তেত্রিশ ও চৌত্রিশ শ্রেনীর পুনর্মিলন করছি, ব্যাখ্যার আবশ্যিকতা আশাকরি হবে না। – “সুদ খায় মহাজনে, ঘুষ খায় দারোগায়” এবং “ভিখারিটা তাড়া খায়, ভিখ নাহি পায় রে / দিন আনে দিন খায়, কত লোকে হায় রে”।
‘আবোল তাবোল’ এর শ্রেষ্ঠ ছড়া কি তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে। এখানে তা আলোচ্য নয়। ‘খিচুড়ি’ এই শ্রেনীর প্রথম ছড়া। এখানে সুকুমার ভাষার কারসাজিতে কাল্পনিক জীবের আমদানি করেছেন। যা তিনি পরবর্তীকালে করেছেন বারংবার। আমলাতন্ত্রের উৎশৃঙ্খলতা বিধৃত আছে ‘গোঁফ চুরি’ র অন্তরালে। তৎকালীন বিবাহ ব্যবস্থাকে ব্যঙ্গ করেছেন ‘সৎপাত্র’ তে। প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে ‘একুশে আইন’ এ। তৎকালীন রাজনীতিতে শাসক সাম্রাজ্যবাদীদের সঙ্গে তথাকথিত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মেকি আপসের মনোভাবকে উপহাস করেছেন ‘বাবুরাম সাপুড়ে’ ছড়ায়। শোষিত দরিদ্র শ্রেনীর প্রতি তাঁর বেদনা আন্তরিক হয়ে উঠেছে ছড়া ‘বুড়ীর বাড়ী’ তে। কুসংস্কার ও কুচিকিৎসার প্রতি হুঁশিয়ারির প্রতীক – ‘হাত গণনা’ ও ‘হাতুড়ে’।
(চলবে)
loading...
loading...
প্রতিটি পর্বের মতো এই পর্বটিও অসাধারণ হয়েছে। এই সৃষ্টি কর্ম তোমার অন্যসব লিখার মতো মাইল ফলক হয়ে থাকবে।
loading...
সমাজমনস্ক সুকুমার রায় …
loading...