শীতসুবাদে
নলেন গুড়। শব্দটার মধ্যেই আপসে ফুরফুরে সুগন্ধি একঝলক হাওয়া। আমি আবার একে খেজুর গুড়ও বলি। আসলে ছোটবেলায় ভাবতাম নলেন বোধহয় কোনো অপ্রাকৃত মিষ্টি জাতীয় জিনিসের নাম। দুটোকে মেলানো যেত না কিছুতেই। তবে সেই স্বাদ, সেই গন্ধ এখন আর তেমন করে পাই না। সেই মালভূমির দেশ থেকে সমতলের গঙ্গার পলিমাটির দেশে যখন আসতাম, ভোরের আলো ছুঁই ছুঁই অন্ধকারে বিছানায় মশারি ফাঁক করে একটা গ্লাস এগিয়ে আসতো। কনকনে ঠান্ডা অথচ পৃথিবীর সবচাইতে মিষ্টি আর অদ্ভুত স্বর্গীয় গন্ধের সেই গ্লাসের ভেতরে টলমল করত সদ্য জিরেন কাটের রস। আলো ফুটতে না ফুটতেই উড়তাম। কোত্থেকে কিছু অচেনা কালো মুসকো লোক এসে বাড়ির সীমানা পাঁচিলের বাইরের বাগানে বিশাল কড়াইয়ে ক্রমাগত বিশাল হাতা ঘুরিয়ে চলত। আর ওমনি সেই আশ্চর্য সোনালি আভায় মোড়া হালকা চকলেট রঙের তরলের মধ্যে থেকে সাঁ করে নাকের ভুলভুলাইয়া পেরিয়ে একমাথা কালো চুলে ঘেরা ছোট্ট বাক্সে সারেগামা গাইতে গাইতে সেঁদিয়ে যেত এক ভালো গন্ধের একঝাঁক রেশমি সুতো। এখনকার মতো চালাক হয়নি সেই পৃথিবীর মানুষেরা। চিনির ভেজাল দিয়ে নলেন খুনের বুদ্ধি সেইসব মাথামোটা লোকদের ছিলনা। আমাদের ছোট্ট মুঠোয় এককুচি পাটালি পেয়ে নাচতে নাচতে ফিরতাম কিম্বা দে ছুট্ গঙ্গার পাড়ে। বেলা সামান্য বাড়লে মিষ্টি নলেন রোদ্দুর ঘুঙুর বাজিয়ে হাঁক দিত, “সন্যাসী ময়রার নলেন মাখা সন্দেএএএএশ…”!
loading...
loading...
জীবনের চেনা অথচ বর্তমান বাস্তবতায় কঠিন এই সুখ-স্বপ্ন।
ভালো থেকো প্রিয়বরেষু কবি সৌমিত্র। শুভ থাক দিন।
loading...