স্বপ্নহীনের সাপলুডো(একাঙ্ক নাটক)- ১১শ পর্ব
(মঞ্চে সেই প্রথম দৃশ্য। বিচারক, উকিল ও জগাই।)
বিচারক – হুম, ব্যাপারটা বোঝা গেল।
উকিল – হুম, বোঝা গেল।
বিচারক – তাহলে শুরু করা যাক।
উকিল – হ্যাঁ হুজুর, কারবাই শুরু হোক।
বিচারক – কি বললেন?
উকিল – আজ্ঞে কারবাই। বিশুদ্ধ হিন্দী, রাষ্ট্রভাষা স্যার। টিভি তে উকিলরা বলে দেখেছি স্যার।
বিচারক – হুম ঠিক আছে, ঠিক আছে। তাহলে আসামী জগাই ওরফে চতুর্থ জগাই আপনি কি আপনার অপরাধ স্বীকার করছেন?
জগাই – অন্যায়টা যে কি করলাম তাইই জানতে পারলাম না এখনো!
উকিল – (একটা কাগজ দেখে পড়তে থাকে) আসামী জগাই ওরফে চতুর্থ জগাই, পিতা জগমোহন মিত্তির ওরফে তৃতীয় জগাই নিবাস আটের বারো কাটা ফটিকের ফাটা গলি, গত পাঁচই জুন রাত্রি প্রায় দুটোয় আসামীর বাড়ীতে পাঁচজন চোর একত্রে ঢোকে ও সর্বস্ব চুরি করে। আজ সাতমাস অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও আসামী এই বিষয়ে থানা বা প্রশাসনকে কিছুই অবগত করান নাই। চোরেরাও ধরা পড়ে নাই। আসামীর এবম্বিধ দুঃসাহসিক আইন লঙ্ঘনের কারনে তাহাকে দন্ডবিধির চারশত একুশ নম্বর ধারার একশত চার নম্বর উপধারার তিনশত বাহান্নর গ উপ উপধারা অনুসারে আদালতে তলব করা হইয়াছে।
বিচারক – ব্যাপারটা বুঝেছেন? কি মারাত্মক অপরাধ আপনি করেছেন! আপনার বাড়ীতে ভয়ঙ্কর রকমের চুরি হয়ে গেল। আপনি কোথায় তৎক্ষণাৎ থানায় ডাইরি করবেন, ছুটোছুটি করবেন, কান্নাকাটি করবেন, মাথার চুল ছিঁড়ে চীৎকার করবেন ওগো আমার সব চলে গেল রে…, প্রতিবেশীদের ঘুম আলটপকা ভাঙিয়ে টেনে আনবেন আপনার বাড়ীতে! তা না, আপনি দিব্যি চেপে গেলেন! আশ্চর্য! এভাবে চোরেদের উৎসাহ আর ওই ইয়ে কি যেন বলে ইয়ে… অনুপ্রেরণা জোগালেন। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, প্রশাসনের বিরুদ্ধে এ তো মারাত্মক ষড়যন্ত্র!
জগাই – না মানে স্যার…
বিচারক – স্যার ট্যার ছাড়ুন। আপনি তো অদ্ভুত মানুষ! সাধারণ লোকে যা করে আপনি তা তো করলেনই না উপরন্তু পরমসুখে বারান্দায় বসে চপ মুড়ি খাচ্ছিলেন!
জগাই – চপ মুড়ি নয় স্যার বাফুমু।
বিচারক – ওই একই ব্যাপার। আপনি একবারও ভাবলেন না দেশের দশের কতবড় কলঙ্ক আপনি ঘটিয়ে তুললেন?
জগাই – না, মানে স্যার শুনুন…!
বিচারক – শুনব। শুনব বলেই তো পুলিশ আপনাকে গ্রেপ্তার করে হাজির করেছে। সরকারি উকিল মশাই, আপনি কি ক্রশ করবেন?
উকিল – বলুন, যাহা বলিব সত্য বলিব, সত্য বই মিথ্যা বলিব না।
জগাই – কি মুস্কিল! আমি এমনিতেই সত্য ছাড়া বলিনা। আমার বাবার শিক্ষা।
উকিল – আঃ! আপনাকে যা বলতে বলা হচ্ছে তাই বলুন।
জগাই – বেশ সত্য ছাড়া মিথ্যা বলব না। কিন্তু আপনিও বলবেন না বলুন!
উকিল – কি! এটা আমার জন্যে নয়, আপনার জন্যে।
জগাই – অহ! বা রে আজব নিয়ম!
উকিল – হ্যাঁ, তাহলে এবার বলুন জগাইবাবু আপনি ঠিক কিভাবে এতবড় ব্যাপারটা চেপে গেলেন? বলুন তো!
জগাই – না মানে…
উকিল – মানে টানে নয়। স্পষ্টাস্পষ্টি বলুন আপনি ঠিক কি ভেবে এই মারাত্মক ঘটনাটা হজম করে গেলেন? ভাবা যায়! স্বাধীন দেশের নাগরিক আপনি। দেশে গণতন্ত্র আছে, আদালত আছে, থানা আছে, পুলিশ আছে, আপনি সেসবকে অগ্রাহ্য করলেন কিভাবে?
(চলবে)
loading...
loading...
মঞ্চে বসে আছি যেন। এগিয়ে যাক। অভিনন্দন প্রিয় কবি সৌমিত্র।
loading...