স্বপ্নহীনের সাপলুডো(একাঙ্ক নাটক)- ৭ম পর্ব
মা – ওই যে বললাম, তোর বাবার এক জেদ ছিল মিথ্যে খবর লিখবেন না। ওই জেদের জন্যেই কাগজের মালিকদের সঙ্গে তোর বাবার বনিবনা হত না। আজ এক খবরের কাগজ তো কাল আর এক। মাঝেমধ্যে আবার কাজ না পেলে বাড়ীতে বসে থাকা। এই করেই সঞ্চয় কোনোদিনও হয় নি। আর তাছাড়া মারা যাওয়ার পরেও তো কোনো ক্ষতিপূরণ পাওয়া গেল না।
জগাই – জানো মা, আমার মনে আছে। কোন সেই ছোটবেলার কথা, তবুও এখনো মনে আছে। বাবা একটা কথা আমাকে প্রায়ই বলতেন, বলতেন জগাই রে লোভ বড় সর্বনেশে। প্রথমে যেটাকে অভাব মনে হয়, পরে সেটা মিটে গেলেও চাহিদা থেকেই যায়। আর তখনই ওই পাঁক থেকেই জন্ম হয় লোভের। বুনো আগাছার মত ওই বিষ ফলের গাছটা আমাদের মস্তিষ্কে, কোষে, দেহের প্রত্যেক কোণে শেকড় ছড়িয়ে দেয়। মাকড়সার মত আঁকড়ে ধরে মানুষকে। মানুষ তখন ছটপট করে, কাঁদে, চিৎকার করে কিন্তু মুক্তি পায় না। আস্তে আস্তে কিনারার শেষে খাদ জেনেও মানুষকে ঐদিকেই এগিয়ে যেতে হয়। মা, বাবা তো লোভ করেন নি! তবে বাবাকে শেষ হয়ে যেতে হলো কেন?
মা – (জগাইকে জড়িয়ে ধরে) কে বললো তোর বাবা শেষ হয়ে গেছেন? ওই কথাগুলো যে এখনো সত্যি।
জগাই – কি জানি!
(বাইরে থেকে কথা বলতে বলতে এক কনস্টেবল ঢোকে। মা বেরিয়ে যায়)
কনস্টেবল – আচ্ছা, এখানে জগাই বাবুর বাড়ী কোনটা বলতে পারেন?
জগাই – কোন জগাইয়ের কথা বলছেন দাদা? এই কাটা ফটিকের ফাটা গলিতে সতের জন জগাই থাকে।
কনস্টেবল – অ্যাঁ! এইটুকু জায়গায় সতের জন জগাই!
জগাই – আজ্ঞে হ্যাঁ। (গড়গড় করে বলে যায়) টাকলু জগাই, রাতকানা জগাই, ভীম জগাই, প্যাঁকাটি জগাই, চুল্লু জগাই, সাট্টা জগাই, লোহা জগাই, কয়লা জগাই, ময়লা জগাই, মেম জগাই, ডিম জগাই…
কনস্টেবল – আরে থামুন…থামুন! ওরে বাপ্রে! মাথা একেবারে ভোঁ ভোঁ করছে। সকালে কি যেন খেয়েছিলাম। পেটটা কেমন যেন করছে। দাঁড়ান, দাঁড়ান… (পকেট থেকে কাগজ বার করে দেখে) হ্যাঁ পেয়েছি। এ হলো আটের বারো ফাটা গলির জগাই।
জগাই – অহ তাই বলুন। আটের বারো তো আমাদেরই বাড়ী। তা আপনি কোন জগাইকে চাইছেন?
কনস্টেবল – কোন জগাই মানে? যাচ্চলে! এ বাড়ীতেও কি ডজন ডজন জগাই থাকে নাকি অ্যাঁ!
জগাই – আজ্ঞে তা নয়। তবে কিনা জগাইয়ের রকমফের আছে।
কনস্টেবল – জগাইয়ের রকমফের!
জগাই – আজ্ঞে হ্যাঁ। আমি হলুম চতুর্থ জগাই।
কনস্টেবল – মানে?
জগাই – আমার বাবা হলেন তৃতীয় জগাই। আমার দাদু দ্বিতীয় জগাই। আর তার বাবা ছিলেন প্রথম জগাই।
কনস্টেবল – লেহ হালুয়া! গুষ্টিশুদ্ধু সকলের নামই জগাই!
জগাই – হ্যাঁ। ঘাবড়ে যাচ্ছেন কেন? প্রথম চন্দ্রগুপ্ত, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত, প্রথম পাণিপথ, দ্বিতীয় পাণিপথ এসব শোনেন নি? না শুনতেই পারেন, পুলিশ তো। এত জানবেন কখন? আপনাদের যা কাজের চাপ!
কনস্টেবল – ও। হুম। তা আপনার নামে ওয়ারেন্ট আছে। থানায় চলুন।
(চলবে)
loading...
loading...
সাত সাতটি অধ্যায়ের সাথেই রয়েছি প্রিয় কবি সৌমিত্র। চলছে যখন চলুক।
loading...