ঘুম থেকে উঠেই আজ মনে হলো, আজ মন ভালো থাকার দিন। বিশেষ কোনো কারণ নেই। হয় না মাঝে মাঝে, অদ্ভুত ভালো লাগা জড়িয়ে থাকে সারাটা বেলা … ইচ্ছে করছে উড়ে উড়ে ঘুরে আসি আমার প্রিয় বাংলাদেশ।
বাবা নিশ্চয়ই ফজরের নামাজ পড়তে উঠেছে, আমি মনে মনে উঁকি দিলাম ছোট বোনের রুমে। কি বিচ্ছিরি, হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে; মুখ খানা দেখলে মনে হয়, পৃথিবীর সকল সুখের ছায়া পড়েছে এই মুখে। নজর লেগে যেতে পারে ভেবে আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম। তারপর গেলাম মেঝো ভাইয়ের রুমে, যত্রতত্র ছড়িয়ে আছে বই খাতা।
আমার রুমের সোজাসুজি রুমটাই আমার আদরের ছোট ভাইয়ের রুম। আহা! কি সরল সুন্দর মুখখানা। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম, গায়ের চাদর টেনে দিলাম, পর্দা ঠিক করে দিলাম, কিছুতেই কল্পনার জগৎ থেকে বের হতে ইচ্ছে হচ্ছে না।
আমি বাবার পাশে গিয়ে বসলাম। বাবা মোনাজাতে। চুপচাপ বসে থাকলাম, নামাজ শেষ করে বাবা আমাকে ফুঁ দিয়ে দিলেন।
জায়নামাজ ভাঁজ করতে করতে বললেন, পায়ে সেন্ডেল নেই কেন !! আমি মাথা চুলকিয়ে বললাম, খুঁজে পাচ্ছি না। বাবা নিয়ম মাফিক বকলেন, তোমাদের কোনো ডিসিপ্লিন নেই, ঘুম থেকে উঠে পরিপাটি হবার কথা, না ডেঙ ডেঙ করে ঘুরে বেড়াচ্ছ. যাও চিরুনি নিয়ে আসো, আমি মাথা আঁচড়ে দিচ্ছি। ব্রেকফাস্ট করে সোজা পড়ার টেবিলে। লেখা পড়ার বালাই নেই, একটার চেয়ে একটা গাধা। আমি বাবা হয়ে দ্বিধায় পরি, কে কার চাইতে বড় গাধা, জীবন কঠিন জায়গা, এখানে হেলা ফেলা করা মানে, ভবিষৎ অন্ধকার। আমি কি বলি না বলি তোমাদের কানে কথা কথা গুলো কি ঢুকে ? বেকুবের দল, এই বাড়ির নাম ইডিয়েল হাউস না দিয়ে, দেয়া উচিত ছিল বেকুবের কারখানা। ভুল হয়েছে বিরাট ভুল।
এই ধরণের বকুনিতে আমার চোখে সব সময় জল আসতো। বুক ভেঙ্গে কান্না পেতো। আজ কি যে হলো, আনন্দে চোখে পানি আসছে। ইচ্ছে হচ্ছে বলেই ফেলি, বাবা কতকাল দেখি না, কেমন আছো তুমি ? আমাকে কি মনে পরে ? বেকুব বলে, কেউ আর বকে না। জীবন নিয়ে কথা বলে, কেউ আর তোমার মতো বকে না।
বাবা, প্লিজ একটু বকা দাও, একবার ফোন করো। একবার জিজ্ঞেস করো, কেমন আছি আমি !! সব মান অভিমান ভুলে দেখো কেমন করে জাপ্টে পরি তোমার বুকে সেই ছোট্ট বেলার মতো।
তুমি না হয় নতুন একটা সাইকেল কিনে দিয়ে মান ভাঙিও ঠিক আগের মতো। না হয় আজ বিকেলে নিয়ে এসো সেভোয়ের চকলেট পেস্ট্রি। বাবা, তুমি জানলেও না দূরে সরতে সরতে আমি কতটা দূরের হয়ে গেছি। তোমরাই তো মেয়ে অভিমানটাও তোমারি মতো। বাবা, তোমার নাতিদের নাস্তা দিতে হবে। যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না তবু যেতে হবে বাস্তবে। দেখো বাবা, ধীরে ধীরে আমার চুলে পাক ধরেছে, দেখো তোমার বকুনি ছাড়াই পায়ে সেন্ডেল পরে আছি !!
বাবা, ও বাবা ভালো থেকো। না হয় দূর থেকেই তোমার হাত খানা আমার মাথায় রেখো।
অদ্ভুত ভালোলাগায় আচ্ছন্ন ছিলাম এতক্ষণ। পৃথিবীর কোনো সুখের সাথে এই সুখের তুলনা হয় না। বাস্তবে ফিরে বুঝলাম, আহারে আমার আদুরে শৈশব, কতটা পেছনে ফেলে এসেছি, কত মধুর ছিল বাবার বকুনি।
loading...
loading...
অসম্ভব আকুতি ভরা এই স্মৃতিকথা। মনটা হাহাকার করে উঠলো কবি সাজিয়া আফরিন।
loading...
আমার শুভেচ্ছা জানবেন সুমন ভাই।
loading...
ফিরে পাওয়া আমার আদুরে শৈশব। লিখাটি পড়ে আমারও তাই মনে হয়েছে বোন সাজিয়া আফরিন। এভাবে শব্দ আর অনুভুতিতে জীবনের একাংশ অবলোকন এবং ফিরে পাওয়া শব্দটিকেই সার্থক করে তুলেছে। শুভেচ্ছা রইলো আগামী সময়ের জন্য। ধন্যবাদ।
loading...
সুন্দর বলেছেন। সালাম নিন আজাদ ভাই।
loading...
বাবা'কে কে না মিস করে বোন সাজিয়া আফরিন !! অদ্ভুত সুন্দর হয়েছে লেখা।
loading...
আদাব কবি সৌমিত্র চক্রবর্তী দা।
loading...
একেই বলে স্মৃতির আঁধার থেকে ফিরিয়ে আনা খণ্ড অলংকার।
loading...
শুভেচ্ছা আবু সাঈদ আহমেদ ভাই।
loading...
অবচেতন হলেও আপনি আপনার ফিরে পাওয়া আদুরে শৈশব পেয়েছেন দিদি ভাই। আমিও খুঁজি ফিরি, পাই না।
ভাল থাকুন অনেক ভাল থাকুন।
loading...
অনেক ধন্যবাদ কবি রিয়া আপা।
loading...
অনেক ভালো লাগলো … সালাম ও শ্রদ্ধা জানবেন ।
loading...
ধন্যবাদ ভাই।
loading...
শৈশব মানে হারিয়ে ফেলা কিছু স্মৃতি।
যা বিস্মৃতি অতল তলে তলিয়ে গেলেও
আবাব মানসপটে ভেসে ওঠে।
শৈশব মানে ফেলে আসা দিন গুলি।
যে দিনগুলি আর ফিরে আসবে না।
যে স্মৃতি আজও শুধু কাঁদায়।
ব্যথা আর বেদনা মাখা দিনগুলি
হারিয়ে যায় অজানা স্মৃতির পাতায়।
সুন্দর লিখেছেন কবি। আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
সাথে থাকবেন, পাশে রাখবেন।
জয়গুরু!
loading...
সুন্দর মন্তব্য কবি ভাই। খুশি হলাম।
loading...
আপা, খুব ভাল লাগল লেখাটা। আমার শৈশবে ফিরে যেতে খুব ইচ্ছে করে আপা।
loading...
ধন্যবাদ হৃদয় রহমান ভাই। মাঝে মাঝে শৈশবে ফিরে যাওয়া উচিত আমাদের সকলের।
loading...
লেখনী শক্তির গুনে কাল্পনিক কেও জীবন্ত মনে হলো। আপনার আবেগ সত্যিই আমাকেও ছুঁয়ে গেলো।



loading...
আপনার প্রশংসায় খুশি হলাম ভাই।
ধন্যবাদ।
loading...
অনেক ভাল লাগল কবি আপুু
loading...
শুভ সকাল, সকাল টা শুরু করলাম আপনার লেখা পড়েই। সত্যি কেদে দিলাম চোখ দুটি ভিজে গেলো। শুভ কামনা রইলো।
loading...
শৈশব স্মৃতি সবসময় ই নস্টালজিক, লেখকের স্মৃতির সাথে সাথে পাঠকের ও নিজের জানালা খুলে যায় !! হারিয়ে যাওয়া যায় তেপান্তরে।
অনেক অনেক ভালোলাগা
loading...
স্মৃতির স্মারক
ভালোলাগলো
loading...
কবি আফরিন আপু এতক্ষণ খেয়াল হলো এটা আমার নয় আপনার হারিয়ে যাওয়া আদুরে শৈশবের টুকরো টুকরো স্মৃতির মাঝে হারিয়ে ছিলাম কিছুক্ষণ। আমার মনে হয়েছে এ সব কিছুই আমার কথা ছিল। প্রিয় বাবার কথা মনে পড়তেই এ চোখে পানি এসে গেল। শুভেচ্ছা নিন।
loading...