… অতঃপর একাকী একজন।
জুলফিকার মনস্থির করেছে, আজকেই বলবে। আলিশাকে সে ভালোবাসে। বছর তিনেক হলো, একসাথে পড়াশুনা, লাইব্রেরিতে বসা, হৈ হুল্লোড় সবই হচ্ছে, ভালোবাসার কথা বলা হচ্ছে না।
আজ জুলফিকারের জন্মদিন। আজকের দিনটা ভালো একটা দিন। আজই বলতে হবে। রোকনের সাথে আলিশা বন্ধুত্বের মাহাত্ম জুলফিকারের মাথায় আসছে না। কাল ক্যাম্পাসে ঢুকেই দেখলো আলিশা গা লাগালাগি করে বসে আছে। জুলফিকারের বুকের উপর দিয়ে বিরাট এক একটা বুলডোজার চলাচল করেছে অনেকক্ষণ। আলিশা এমন এক মেয়ে যার ব্যাপারে আগাম কোনোকিছুই প্রেডিক্ট করা সম্ভব না। থাপ্পড় টাপ্পর দিয়ে বসতে পারে। জুলফিকার মনে মনে প্ল্যান করছে, প্রথমে বলবে, চল কোনো একটা কফি শপে যাই, তোর সাথে জরুরি কথা আছে।
তারপর কফি খেতে খেতে কি বলবে, সেটা নিয়ে মাথায় তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। একবার ভেবেছে, সোজা সাপ্টা বলবে, এই শোন আমি তোকে খুব ভালোবাসি, তুইও কি আমাকে ভালোবাসিস ?
বিছানায় শুয়ে শুয়ে কয়েকবার প্র্যাকটিস করলো। নাহ! কেমন ক্ষ্যাত ক্ষ্যাত শুনাচ্ছে। জুলফিকার ভাবছে, আচ্ছা এরকম বললে কেমন হয়, আলিশা শোন, সারাটা জীবন তোর সাথে কাটাতে চাই। তুই কি বলিস?
যে ডেঞ্জারাস মেয়ে পুরা ইউনিভার্সিটি জানিয়ে দেবে। নইলে এসব নিয়ে হাসি তামশা করবে। জুলফিকারের চেহারা ছবি ভালো, মফস্বল থেকে ঢাকায় পড়তে এসেছে। ইউনিভার্সিটির প্রথম দিন, একটা মেয়ে এসে বললো, তোমার কি ? ঠাণ্ডা লাগছে, এরকম কুঁজো হয়ে আছো কেন ? তারপর বললো ‘ওইইয়ার্ড ‘ বলে ক্লাসে তার পাশেই বসলো। জুলফিকার ইংরেজিতে ভীষণ কাঁচা, সব শব্দের মানে জানেনা। প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি বাবার জমি বিক্রি করে ভর্তি হয়েছে, এরকম
পরিবেশের সাথেও পরিচিত নয়। প্রথম ক্লাসে স্যার কি বললো তার মাথায় কিছুই ঢোকেনি। সময়ের সাথে ধীরে ধীরে ইংরেজিতে লেকচার শুনায় অভ্যস্ত হয়েছে। কাপড় চোপড়, চলনবলন ধীরে ধীরে শহুরে ভাব চলে আসলো, লেখায় পড়ায় সে বরাবরই দারুণ ভালো।
তারপর প্রথম দিন থেকে আলিশার মতো প্রাণবন্ত একজন বন্ধুর মতো পাশে আছে। এই মেয়ে কোনোদিন তার প্রিয়তমা হবে তা সে কল্পনাও করেনি। আজ ভালোবাসার কথা জানানোর পর যদি তাদের প্রেমটা হয়, বাবা মা কে আলিশার ব্যাপারে জানানোর ব্যাপারটাও ভয়াবহ ব্যাপার।
টিশার্ট জিন্স পড়া একটা মেয়েকে মায়ের সামনে নিয়ে গিয়ে যখন বলবে, এই হলো আলিশা। মা তো মনে হয় হাট এ্যাটাক করে ফেলবে। বাবার নিশানা ভালো না, বাবা বন্দুক দিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি করে সবাইকে বোধহয় মেরে ফেলবে। জুলফিকার আর ভাবতে পারছেনা। অসহ্য লাগছে তার। বিছানা ছেড়ে উঠলো সে,
৭/৮ জন মিলে দুই রুমের একটা বাসায় তারা থাকে। ঘুম থেকে উঠেই বাথরুম খালি পাবার মতো ভাগ্য প্রতিদিন থাকেনা।
আজ তার জন্মদিন। তার ভাগ্য ভালো। বাথরুম খালি পাওয়া গেছে। তার রুম মেট অফিসে যাবার জন্য রেডি হচ্ছে। জুলফিকার তাকে বললো, ভাই আপনার বেল্টটা যদি আজকে দিতেন, সন্ধ্যায় এসে দিয়ে দিবো। ধুর মিয়া, একটা বেল্ট কিনতে পারো না, ছিড়া বেল্ট দিয়ে আর কয়দিন চালাইবা। সুন্দর বান্ধবীদের নিয়ে ঘুরবা, সুন্দর করা চলবে না ? আচ্ছা যাও আজকে দিলাম। মাইন্ড ইট এরপর আমার জিনিসপত্র ধার পাবে না। রফিক ভাই পাশের রুমে থাকে, তুলনামূলক ভাবে তিনি উদার মানুষ। বাথরুম সেরে জুলফিকার পাশের রুমে গেলো। ভাই এক হাজার টাকা দেন। মাসের টাকা এলেই দিয়ে দেব। রফিক ভাই আন্তরিক ভাবে শুভেচ্ছা জানালেন, এক হাজার টাকা দিলেন। আর নতুন একটা শেভিং ফোম দিয়ে বললেন, এটা তোর বেটা। প্রতিদিন অন্যের শেভিং ফোম নিয়ে খেচখেচ হয়, আজ থেকে
তোরটা তুই ব্যাবহার করবি. আর টাকা ফেরত দেয়া লাগবে না, তুই যখন বড় চাকরি করবি, তুইও কোনো না কোনো জুলফিকারকে মায়া করবি এটা হলো এক বড় ভাইয়ের উপদেশ। পারবি না ?
জুলফিকার চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না। রফিক ভাইকে জড়িয়ে ধরলো। রফিক ভাই হোহো করে হাসতে হাসতে বললেন, আরে পাগল যা তোর ইউনিভার্সিটি দেরি হয়ে যাচ্ছে।
জুলফিকার দূর থেকে আলিশা দেখলো। আলিশা হাত নেড়ে নেড়ে রোকন কে কি যেন বুঝাচ্ছে। জুলফিকারের মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। সে কাছে আসতেই ওরা তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানালো। জুলফিকারের মন ভালো হয়ে গেলো। রাজীব গিটার নিয়ে দূরে বসে টুংটাং করছিলো, এখন গাইতে শুরু করলো, সবাই গান শুনছে মন দিয়ে। জুলফিকার আলিশার কাছেই বসে পড়লো। হঠাৎ কি যে হলো, আলিশা নিজের হাতটা আলতো করে জুলফিকারের হাতে রাখলো। জুলফিকারের হৃদয় কেঁপে কেঁপে উঠলো। আলিশা চোখে চোখ পড়তেই এত মিষ্টি করে সে হাসলো, জুলফিকার মনে মনে বললো, ‘তোর জন্য একটা জীবন দিয়ে দিতেই পারি’।
গান শেষে সবাই যার যার ক্লাসে চলে গেলো। রোকন, আলিশা জুলফিকার বসে আছে. তারা আজ ক্লাস করবেনা বোধহয়। জুলফিকার রোকনকে বললো, তুই বসে আছিস কেন? যা ক্লাসে যা। আমার আলিশার সাথে কথা আছে। রোকন মুচকি হাসছে। আলিশা বললো, তোকে একটা কথা বলা হয়নি, ‘রোকনের পরিবার আমাদের পরিবারে প্রস্তাব দিয়েছে। বাবা মা রাজি। আমাদের পড়াশুনা শেষ হলেই বিয়ে। তোকে কেমন সারপ্রাইস দিলাম দেখলি ?’
জুলফিকার কিছুই বলতে পারলো না। বুকের ভেতরটা যেন ফেটে যাচ্ছে, গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। এখান থেকে এই মুহূর্তে থেকে দৌড়ে পালাতে পারলে যেন সে বাঁচতো। জুলফিকার বললো, শরীরটা খুব খারাপ লাগছে। আজ কোথাও যাবো না। তোরা থাক আমি বাসায় গেলাম।
কাউকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে জুলফিকার চলে গেলো …
loading...
loading...
জুলফিকার এর জন্য মনটা বিষণ্ন হলেও এমন সরল লিখা কখনও কখনও ভীষণ ভালো লাগে। ভালো লিখেছেন কবি সাজিয়া আফরিন। ঈদ মোবারক।
loading...
ধন্যবাদ আজাদ ভাইয়া। ঈদ মোবারক।
loading...
জুলফিকারের পাশাপাশি স্বল্প কথায় রফিক চরিত্রটিও খুব সুন্দর ফুটেছে। শুভেচ্ছা রইলো কবি। লেট ঈদ মোবারক।
loading...
ধন্যবাদ কবি সুমন আহমেদ ভাই। ঈদ মোবারক।
loading...
অণুগল্প ভালো হয়েছে কবি বোন সাজিয়া আফরিন।
loading...
ধন্যবাদ কবি সৌমিত্র চক্রবর্তী দা।
loading...
জুলফিকার এর জন্য কষ্ট পেলাম প্রিয় দিদি ভাই।
loading...
অনেক ধন্যবাদ কবি রিয়া রিয়া।
loading...
খুব ভালো লাগলো গল্পটি।
loading...
ধন্যবাদ কবি সাইদুর রহমান ভাই।
loading...
অণুগল্পটি পড়লাম কবি সাজিয়া আফরিন বোন।
loading...
ধন্যবাদ কবি শাকিলা তুবা আপা।
loading...
প্রেম অপ্রেম আর বঞ্চিতের গল্প।
loading...
ঠিক বলেছেন আবু সাঈদ ভাই।
loading...
লিখাটা সত্যি ভালো লেগেছে আজ এই গল্পে সকাল হলো আমার। শুভকামনা সাজিয়া আফরি।
loading...
ধন্যবাদ কবি পারভেজ ভাই।
loading...