আলেম ভার্সেস আলেম

এখন ওয়াজের মৌসুম শুরু হয়ে গেছে, গ্রাম-গঞ্জ, শহরের জায়গায় জায়গায় ওয়াজের নামে কিছু সুরওয়ালা গায়কের আবির্ভাব হবে, এদের বয়কটের উপযুক্ত সময় এখনই। ধর্ম সম্পর্কে জানার জন্য ওয়াজ মাহফিলে যাওয়ার আগে যার ওয়াজ শুনবেন তাকে জানুন। খোঁজ নিন তার জ্ঞানের পরিধি কতটুকু তারপর যান, অমুক তমুক নাম শুনে চিল্লা ফাল্লা শুনতে আর কমেডি দেখতে যাইয়েন না প্লিজ। আমরা এদের দাওয়াত করি আর এদের মাহফিলে ভীড় করি বলেই এরা ইসলামি জলসাকে নাটকের মঞ্চ বানিয়ে ফেলতেছেন দিনের পর দিন। ওয়াজের স্টেজে রাতভর কমেডি চলে আর এসবের কারণে ইসলামের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মধু আহরণ করতে যেয়ে মগজে বিষ নিয়ে ফিরলে আপনারই বিপদ। এই যুগে মাহফিলে কী হয় সবাই জানার সুযোগ পায়, মূল ধারার মিডিয়ায় না আসলেও এসব সোশ্যাল মিডিয়ায় ঠিকই আসে, ইসলামের প্রতি অনেকের ভুল ধারণা তৈরি হয় এদের কারণেই। সাম্প্রতিক এক মুর্খের কথা শুনে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, এমন মুর্খের কিন্তু অভাব নাই। আমার আপনার দায়িত্ব এদের প্রতিহত করা।
.
অনেকদিন আগে একজন আলেম বলেছিলো যারা সাহিত্য চর্চা করে তারা নাস্তিক, উনি কথাটা যে কিছুটা আমাকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন আমি বুঝেছিলাম৷ তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “হুজুর, সাহিত্য কী আর নাস্তিক কী জিনিস…? কুরআন যে সময় অবতীর্ণ হয়েছিলো সেই যুগে কিসের প্রাধান্য ছিলো বেশি…? সুরা কাউসারের শানে নুযূল কী…? কেনইবা কুরআনের মতো আরেকটি গ্রন্থ বা কুরআনের সুরাগুলোর মতো আরেকটা সুরা অথবা একটা আয়াত তৈরির চ্যালেঞ্জ দেয়া হলো…? কুরআনের কোন গুণের উপর ভিত্তি করে…?”
উনি সঠিক কোন উত্তর দিতে পারেননি। পরে বললাম “হুজুর, কুরআন অবতীর্ণের সময় সাহিত্যের প্রভাব ছিলো বেশি ইতিহাস পড়ে জেনেছি, পৃথিবীতে আর কোন যুগে সাহিত্যের এত বড় প্রভাব ছিলোনা, সেই যুগে কুরআন নাযিল হলো আর মানুষ সেই সময়ের সাহিত্যকে ডিঙিয়ে কুরআনের কাছে নত হলো…! কুরআনের ভিতর সাহিত্যক শক্তি না থাকার কোন প্রশ্নই আসেনা, বরং সেই সময়ের বিখ্যাত কবি ইমরুল কায়েস পর্যন্ত কুরআনের ভিতর যে সর্বোচ্চ সাহিত্যিক ক্ষমতা আছে এবং এমন উচ্চ গুণ সম্পন্ন সাহিত্য চর্চা কোন মানুষের পক্ষে করা সম্ভব নয় সেটা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন, সুরা কাউসারের শানে নুযূল পড়ে জেনেছি। তাহলে সাহিত্য চর্চা করলে কেউ নাস্তিক হয় কিভাবে…?” উনি গরম আচরণ করলেন তারপর তার সাথে আমার আর কোনদিন তর্ক হয়নি।
.
প্রচলিত অর্থে যাদের আলেম বলা হয় তাদের সাথে আমি কখনো তর্কে যাইনা, আমি এমন অসংখ্য প্রচলিত অর্থে বুঝানো আলেমদের সাথে কথা বলেছি, মিশেছি, যাদের ভিতর জ্ঞানের প্রচণ্ড অভাব। এরা মাদ্রাসায় কিছুদিন যাওয়া আসা করেছে, লম্বা জোব্বা-টুপি পরেছে আর কিছু মুখস্থ বিদ্যা আছে এটুকুর কারণে তাদের গর্বের শেষ নাই এরথেকে বেশি অর্জনও এদের নাই। এরা ভাবে জান্নাতে এদের এক পা আরেক পা দুনিয়াতে, এরা আপনাকে ঠাস করে জাহান্নামী বানিয়ে দিবে।
.
অথচ প্রচলিত অর্থে এদের আলেম বলা হলেও আল্লাহর ভাষায় কারা আলেম সেটা অনেকেরই অজানা। আল্লাহর ভাষায় আলেম তারাই যারা আল্লাহকে বেশি ভয় করে, আল্লাহ বলেন, “আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আলেমরাই কেবল তাঁকে (আল্লাহ) ভয় করে।” (সুরা ফাতির, আয়াতঃ ২৮) এটা সরল অনুবাদ, আপনি এই বাক্যের অর্থ কী বুঝলেন…? আলেমরা আল্লাহকে বেশি ভয় করে, এর মানে যাদের ভিতর আল্লাহর ভয় আছে তারাই আলেম। আল্লাহর প্রতি ভয় কখন তৈরি হবে…? যখন আপনি আল্লাহর পরিচয় পাবেন…? আল্লাহর পরিচয় আপনি কখন পাবেন…? যখন আপনি জ্ঞানার্জন করবেন ও জ্ঞানীদের সাহচর্যে থাকবেন। অথচ প্রচলিত অর্থে আলেম বলতে আমরা বুঝি যার মাদ্রাসার সনদ আছে। বিষয়টা একাধারে ভ্রান্ত এবং হাস্যকর ধারণা। এটা সমাজে এতবেশি প্রচলিত যে তা দূর করা সম্ভবপর নয়।
.
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, সূচনা লগ্ন থেকেই এক শ্রেণির তথাকথিত বুদ্ধিহীন বুদ্ধিজীবীরা ইসলামের সমালোচনা করে আসছে, ইসলামের আইনের ভুল ধরার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে, বারবার বলছে যে ইসলামে প্রচুর অসঙ্গতি আছে। আমাদের দাবী ইসলাম পরিপূর্ণ, এতে কোন অসঙ্গতি নেই, সাইন্টিফিক দিক থেকেও নির্ভেজাল। তবে এরা কিভাবে এসব বলে…? এর পিছনে অনেকগুলো কারণ থাকলেও অন্যতম একটি কারণ হলো ইসলামের সুমহান আদর্শ, ইসলামের মৌলিকত্ব আমরা তাদের সামনে উপস্থাপন করতে পারিনি এসব মূর্খদের কারণে বরং এরা ইসলামকে হাসির বস্তু বানিয়ে ফেলেছে।
.
আমাদের বোকামির দ্বারা আমরা ইসলামের সমালোচনাকারীদের প্রকারান্তে সহযোগিতা করতেছি। জ্ঞানার্জনের শেষ নেই, যতই আপনি সত্যের জ্ঞান আহরণ করবেন ততই আপনার মাঝে আল্লাহ ভীতি পয়দা হবে, ততই আপনি আলেম হয়ে উঠবেন। কেবল জানলেই যদি আলেম হওয়া যেতো তবে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের মাঝেও প্রচুর আলেম আছে।
.
মূল বিষয় হলো ইসলামে জ্ঞানার্জনের এত গুরুত্ব অথচ আমরা কুরআন মুখস্থ করি এটুকুই শেষ। না বোঝলাম এখানে কী বলা হলো, না বোঝলাম এর ভাবগত অর্থ না পেলাম এর ভিতরের রস। এদিকে আজীবন শুধু বলে গেলাম কুরআনে সব আছে অথচ বড় বড় উদ্ভাবন ও আবিষ্কার করতেছে অন্যরা, পরে ঠিকই বলতেছি এগুলো কুরআন থেকেই করে…!!
হাস্যকর না…???
মুসলিম জাতির উচিত জ্ঞান বিজ্ঞানের শাখা প্রশাখায় আবার বিচরণ করা, আমাদের অতীত সুন্দর ছিলো…
.
০৬/১২/২০২১

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
আলেম ভার্সেস আলেম, 5.0 out of 5 based on 1 rating
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২ টি মন্তব্য (লেখকের ১টি) | ১ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১২-১২-২০২১ | ১৭:১৩ |

    মুসলিম জাতির উচিত জ্ঞান বিজ্ঞানের শাখা প্রশাখায় আবার বিচরণ করা, আমাদের অতীত সুন্দর ছিলো। এখানেই সর্বৈব সত্য বিরাজ করছে। শুভকামনা রইলো আপনার জন্য। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    GD Star Rating
    loading...