বোন…!
জীবনে এই একটা সম্পর্কের অভিজ্ঞতা কখনো হয়নি আমার। তবে অনেকের জীবনে বোনের প্রভাব, স্নেহ, ভালোবাসা দেখে কতদিন আর কতরাত যে মন খারাপ করে কাটিয়েছি জানিনা, কখনো কখনো কেঁদেছিও। এইতো কয়েক বছর আগেও আম্মার সাথে বোন নিয়ে ঝগড়া করতাম। সবার বোন আছে আমার কেন নেই ? আম্মা হাসতো আর বলতো তাড়াতাড়িই বোন এনে দেবে যদি তাকে অনেক আদর করি এই শর্তে আর আব্বা বলতো পালক বোন এনে দেবে। এখন বড় হয়েছি তাই এসব আর বলিনা।
.
যখন আমি ক্লাস সিক্সে পড়তাম তখন আমার এক ক্লাসমেটের বাড়িতে যেতাম মাঝে মাঝেই। দেখতাম ওর বড় বোন ওর জন্য কোনদিন আম ভর্তা করে রেখে দিতো, কোন দিন বড়ই বা জলপাই। তাছাড়া ওর স্কুল ড্রেস ওর বোনই ধুয়ে আয়রন করে রাখতো। কোনদিন সময় না থাকলে খাইয়ে দিতো আর টিফিন রেডি করে রাখতো তাছাড়া ওর হাত খরচের টাকাও ওর বোন দিতো। এতো গেলো স্নেহের কথা আবার অকারণে ঝগড়া করাটাও চোখে পড়তো, সম্পূর্ণ দোষ ভাইয়ের থাকলেও বকা খেতো বোনটা আর আশ্চর্যের বিষয় যে, সে মেনেও নিতো এমনকি কোন প্রতিবাদ বা প্রতিরোধও করতোনা অথচ যেখানে বোনটার এক থাপ্পড়ের উপর কিছু করতে হতোনা সেখানে হামেশাই বোনটাই মার খেতো কিন্তু কখনোই ছোট ভাইটাকে মারতোনা। চোখের সামনে ওর বড় বোনের আদর দেখতাম, ঝগড়ার মাঝেও একটা বিশাল স্নেহের আকাশ ছিলো। সেই স্নেহগুলো ঠিক অন্যরকম, অন্যভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে সেগুলোকে।
.
এছাড়া আরেক বন্ধুর ছোট বোনের প্রতি ভালোবাসাটাও উল্লেখ করার মতো। একবার আমরা পিকনিকে যাই আমার ঐ বন্ধু ওর বোনের জন্য অনেকগুলো খেলনা কিনেছিলো আর আমি কিনতে পারিনি কারণ কাকে দেবো ? তখন আমার ছোট কোন কাজিনও ছিলোনা। তবে ওকে পছন্দ করে দিয়েছিলাম আর মনে মনে কষ্ট পেয়েছি এই ভেবে যে, যদি আমারও ছোট একটা বোন থাকতো।
.
এরপর যখন কলেজে গেলাম তখনও এমন অনেক ভাইয়ের জীবনে বোনদের ভালোবাসাটা অন্যরকমভাবে প্রতিফলিত হতে দেখেছি। সব কথা যেন অকপটে বোনের কাছে বলা যায়, গোপনীয়তা যেন একমাত্র বোনের কাছে এসেই ঠাঁই পায়, কিন্তু আমি আমার মনের কথা অভিভাবক স্বরূপ কাউকে বলতে পারিনি বড় বোন না থাকায়। অনেক দোষত্রুটি বোনের কারণে হাওয়া হয়ে যেতে দেখেছি অনেকের। একবার আমরা কয়েকজন ক্রিকেট খেলা নিয়ে ঝগড়া করেছিলাম তারপর আমার এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে লুকিয়েছিলাম। যখন বিচারটা ওদের বাড়ি পর্যন্ত গেলো তখন ওর বোন অনেককিছু বলে বিষয়টা মিটমাট করে দিলো। ওকে ঘরে রেখেই বললো আজকে আসুক হারামজাদা ওর ঠ্যাং ভাঙ্গমু, অথচ বাদীপক্ষ চলে গেলে ওকে শুধু শাসিয়ে দিলো আর কিছুই করলোনা এমনকি আমাদের সবাইকে মুড়ি ভর্তা করে খাওয়ালো সেদিন। দূরে কোথাও গেলে বোনের বারবার খোঁজ নেয়া দেখেছি তবে এগুলো অন্যদের জীবনে দেখা।
.
কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক আমি বিশ্বাস করি ভাই আর বোন কখনো এক না। ভাইয়ের সাথে খুব একটা বন্ধুত্ব হতে দেখিনি কারো জীবনে আর নিজের জীবনেতো নয়ই, নিজের ভাই থাকলেও আমার থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত সে। ভাইয়ের সাথে সর্বোচ্চ যেটা হয় সেটা সাময়িক মিল। ভাইয়ে ভাইয়ে অনেক মিল থাকলেও বছর কয়েক পরেই জমিজমা নিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধ হতে দেখেছি কতশত তার কোন হিসেব নেই কিন্তু বোনের সাথে বোনের বা ভাইয়ের সম্পর্কটা স্বার্থের কারণে হতে বা ভাঙ্গতে দেখিনি কখনো।
.
নিজের বোন বলতে কয়েকটা কাজিন আছে তবে কোন এক অজানা কারণে ওরা আপন করে নিতে পারেনি আমাকে। এইতো একবার এক কাজিনের কাছে চিপস চেয়েছিলাম সে বলেছিলো তুমি কি আমার আসল ভাই? তোমারে দিমুনা (যদিও না বুঝেই বলেছিলো তবে কথাটায় গভীরে আঘাত পেয়েছিলাম)। বাবা আর চাচাদের মধ্যে সামান্য ঝগড়া বা কথা কাটাকাটি কাদের বাড়িতে হয়না? এসবের কারণে অনেক সময় ওরা আমার কাছেও আসেনা।
সে যাই হোক এসব ব্যপারে আমি অভিমান করেও করিনা কারণ লাভ নেই।
.
আজ সকালে এক কাজিন কোথা থেকে কিছু খেঁজুর এনেছে জানিনা। আমার সামনে দিয়ে যাচ্ছে আর আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে খেঁজুরগুলো খাচ্ছে। আমি কেন জানিনা বাচ্চাদের মতো চেয়ে বসলাম কিন্তু ও দিবেনা। অনেক জোরাজুরির পরও রাজী হলোনা। পরে পাঁচ টাকা দিয়ে এই একটা খেঁজুর কিনে নিলাম ওর থেকে…!
.
২৭/০৬/২০১৯
loading...
loading...
আপনার অনুভব ভীষণ ফীল করলাম এক পাঠক হিসেবে একদম নিজের মতো করে মাথায় নেবার চেষ্টা করলাম। ঠিকঠাক উঠে এসেছে সময়ের কথা। গুড জব কবি।
loading...
ধন্যবাদ মুরুব্বী……..
loading...
নন্দিত অনুভূতিই প্রকাশ
loading...
অনেক ধন্যবাদ………
loading...
বোনদের আদর বড় রহস্যময়
loading...
আমি আপনার সাথে একমত………
loading...