আমার এক বন্ধু ক্লাস এইটে পড়ার সময় ক্লাস সেভেনের এক মেয়েকে খুব পছন্দ করতো। আমাদের ক্লাসের পিছনেই ছিলো সেভেন ক্লাস আর দুই ক্লাসের মাঝখানে পার্টিশন ছিলো টিনের বেড়ার। আমার বন্ধু সর্বদা ক্লাসের শেষ বেঞ্চে বসতো আর যেখানে বসতো সেখানে খানিকটা টিন কেটে জানালার মতো করেছিলো তাছাড়া বেড়া অনেকটাই ভাঙ্গা ছিলো তখন। আর সেখান দিয়ে ও পিছনের ক্লাসের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মেয়েটাকে দেখতো। যদিও অনেকভাবে মেয়েটাকে বুঝাতে চাইতো কিন্তু মেয়েটা কিছুতেই ওকে পাত্তা দিতোনা। তারপরও ওর সাধ্যমত আমলে লেগেই ছিলো।
.
ঐ সময় লাল রঙের স্প্রিন্ট মোবাইল আসে বাজারে। ২০০৯/১০ এর দিকে যারা মাল্টিমিডিয়া মোবাইল দেখেছেন তারা হয়তো মোবাইলটা সম্পর্কে জানেন। তো আমাদের ক্লাসের এক বন্ধু ঐ মোবাইল একটা কিনে ক্লাসে নিয়ে আসে। মাল্টিমিডিয়া মোবাইল তখন বাজারে একেবারে নতুন। ঐ একটা মোবাইল দিয়েই ক্লাসের সবাই ছবি তোলা, গান শোনা, ভিডিও দেখা ইত্যাদি খুব উৎসাহের সাথে এনজয় করতাম। আমার ঐ বন্ধু ঠিক করলো মোবাইলে মেয়েটার ছবি তুলবে যেমন কথা তেমন কাজ। ও ভাঙ্গা টিনের ফাঁক দিয়ে মেয়েটার ছবি তোলে আর সেটা ঐ মেয়েটা বুঝতে পারে। আমার বন্ধুও বুঝতে পারে যে মেয়েটা বুঝে গেছে। এর কয়েক মিনিটের মাথায় আমাদের গরম হুজুরের কাছে মেয়েটা আমার বন্ধুর নামে বিচার দেয়। এই হুজুরকে সবাই খুব ভয় পেতো আর খুব রাগি ছিলো তাই আমরা সবাই উনাকে গরম হুজুর বলতাম। উনার নাম ছিলো মাওঃ আঃ বারি (হাফি)।
.
এর মধ্যে পিয়ন আঃ আজিজ ভাইয়ের মারফতে জানতে পারি যে, টিফিন পিরিয়ডে বিচার হবে। সবাইতো খুব ভয় পেয়ে যাই, কেউ কেউ ওকে পালিয়ে যাওয়ার বুদ্ধি দিতে থাকে ও বলে আমি যামুনা ও যদি আমারে মাইর খাওয়াইয়া খুশি হয় তবে আমি মাইর’ই খামু। আর মোবাইলটা যার ছিলো সে আগেই ভয় পেয়ে মোবাইল নিয়ে ভেগে যায়। তখন বিপদের আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। কী করবো ভাবতে থাকি, একেকজন একেক বুদ্ধি দিতে থাকে কেউ কেউ মেয়েটার কাছে ওকে মাফ চাইতে বলে। এর মাঝে আমার মনে পড়ে আমাদের মাদ্রাসার কাছেই একটা ফ্লেক্সিলোডের দোকান আছে যেখানে তখন মোবাইলের ক্যাচিংও বিক্রি করা হতো। তো আমি নিজে গিয়ে সেখানে খোঁজ করে ঐ লাল স্প্রিন্ট মোবাইলের ক্যাচিং পাই আর বলি যে, এটা গরম হুজুর দেখতে চাইছে পছন্দ হলে এই মডেলের একটা মোবাইল কিনবে আমাকে পাঠিয়ে দিছে এটা নেয়ার জন্য। গরম হুজুর আবার ঐ দোকান থেকে মাঝে মাঝে বাকিতে ফ্লেক্সিলোড করতে আমাকে পাঠাতো তাই উনার কথা বলি যাতে দোকানদার দেয় কারণ আমাদের কারো কাছে তখন টাকা ছিলোনা।।
.
এরপর টিফিন পিরিয়ডে আমাদের ডাকা হয় আমাদের ক্লাস থেকে আমি, ঐ বন্ধু আরও দুজন যাবার অনুমতি পাই। আর ঐ মেয়ের সাথে ঘটনার সাক্ষী স্বরূপ দু/চারজন মেয়েকেও ডাকা হয়। যথারীতি বিচার শুরু হয় আমি আগেই আমার বন্ধুকে শিখিয়ে দেই তুই কিছু বলবিনা যা করার আমি করবো। ও আমার কথা মতো চুপ থাকে, বিচারের এক পর্যায়ে আগে জানতে চাওয়া হয় মোবাইলটা কার? তখন আমি বলি হুজুর, মোবাইলতো বড় ভাইয়ের আর ওর হাতে যেটা ছিলো সেটাতো ক্যাচিং বড় ভাই কিনে নিয়ে যেতে বলেছে। এইযে দেখুন, এই বলে হুজুরকে লাগানো ক্যাচিংটা দেই (যারা মোবাইলটা সম্পর্কে জানেন তারা এটাও জানেন যে পুরো ক্যাচিংটা লাগালে হুবহু মোবাইল’ই মনে হতো)। হুজুর কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে দেখে বলে আরে এটা দিয়েতো ছবি তোলা যায়না। আমিও বলি জ্বি হুজুর, এটা ক্যাচিং আমার বড় ভাই কিনে নিতে বলছিলো। তখন হুজুর উল্টা মেয়েটাকে ধমক দিয়ে বলে আজাইরা বিচার যেন আর দেওনা। মেয়েটা ভয়ে কাঁদোকাঁদো হয়ে যায় তখন আমার বন্ধু সব বলে দিতে চায়। আমি তখন ওকে ধাক্কা দিয়ে বের করে এনে বলি আর জানি আজাইরা কাম করস না…!!
.
০৭/০৭/২০১৯
loading...
loading...
এই হচ্ছে আমাদের অনেকের যাপিত জীবনের খণ্ডাংশ। শুভেচ্ছা জানবেন প্রিয় লিখক।
loading...
ঠিক বলেছেন আপনি……..
loading...
এই হলো জীবন । শুভ কামনা ।
loading...
ঠিক বলেছেন, এটাই জীবন………
loading...
সেই দিনগুলো খুব সহজ সরল ছিল ভুলেযেতে বসেছি কবি দা
loading...
সেই দিনগুলো কি আসলেই ভোলা যায়……….???
loading...