পর্ব -৬
সকালে একপ্রস্থ মামার সাথে ঘুরে এসেছে মিলু। প্রথম হেমন্তের সকাল। কাঁচাসোনা রোদের নরম পরশ নিতে নিতে ওরা পৌঁছে গিয়েছিল কীর্তনখোলার তীরে। উছলে পড়া নদীর ওপারের মাঠভরা সোনার বরণ পাকা ধান। মিলু মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করে সেই অনাবিল রূপ সৌন্দর্য্য।
স্টীমারঘাট পেরিয়ে নদীর পাড় ধরে হাঁটতে হাঁটতে মিলু বলে – মামা নদীটার নাম কীর্তনখোলা হয়েছে কেন জানো ?
– ঠিক জানি না। তবে যেটুকু শুনেছি নদীর পার ঘেঁষেই শহরের সবচেয়ে পুরনো যে হাটটি রয়েছে – সেখানে নাকি এক সময় মাঝে মাঝে কীর্তনের উৎসব হতো। সেই থেকে এই নদীর নাম হয়তো কীর্তনখোলা হয়েছে। কীর্তনখোলার নাম একসময় নাকি জলসিঁড়ি ছিল।
– জলসিঁড়ি : বাহ ভারি সুন্দর নাম তো।
মিলুর নামটা খুব পছন্দ হয়েছে। আমি নদীটিকে জলসিঁড়িই বলব। এত সুন্দর নাম থাকতে কীর্তনখোলা বলব কেন?
– আচ্ছা তাই বলিস।
মিলু মনে মনে বারবার জলসিঁড়ি নামটা বলতে লাগল।
মিলুর জলসিড়ি নামটা খুব পছন্দ হয়েছে বুঝে মামা বললেন – জানিস ঝালকাঠির ওদিকে আর একটা নদীরও ওরকম সিড়ি দিয়ে নাম আছে।
অতি উৎসাহে মিলু বলল- কী নাম তার?
– ধানসিঁড়ি।
বাহ বাহ দারুণ সুন্দর নাম। ধানসিড়ি। জলসিড়ি। ধানসিঁড়ি।
কয়েকবার সুর করে করে আউড়ে নিল নাম দুটি। তারপর বলল – মামা আমাকে তুমি একদিন ধানসিঁড়ি নদীটা দেখাতে নিয়ে যাবে। নাম শুনেই দেখতে খুব ইচ্ছে করছে নদীটাকে।
– ঠিক আছে। যাব একদিন। ওদিকেই তো তোর মামির বাপের বাড়ি।
*****
বাড়ি ফেরার পথে একটি বাঁশবনের পাশে মিলু হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে। বলে – মামা দেখ ঐ টা কী?
-কোনটা?
-ঐ যে লতার মত গাছটায় থোকাথোকা দেখাচ্ছে।
মিলু আঙুলের ইশারায় মামাকে দেখায়।
– ও, ওটা তো কুঁচফল। নিবি ? দাঁড়া। তুলে দিচ্ছি।
মামা বাগানের দিকে এগিয়ে গিয়ে কয়েকটা ফল পেড়ে এনে দিলেন ভাগ্নের হাতে।
লালকালো রঙের কুঁচফল পেয়ে মিলু খুব খুশি।
আরো খানিকটা এগোনোর পর একটা বেতবাগানের কাছে এসে মিলুর মামা বললেন – গাছে এক থোকা বেতফল পেকেছে মনে হচ্ছে।
– বেতফল ? মিলুর মনে বিস্ময়।
– হ্যাঁ। পেড়ে আনি।
– মামা সাবধানে যেও। গাছে তো কাটা ভরা।
-জানি।
মামা খুব সাবধানে ছিঁড়ে আনলেন এক গুচ্ছ পাকা বেতফল।
– এগুলো কি খাওয়া যায়? – মিলু জানতে চায়।
-হ্যাঁ। বাড়ি চল। তারপর …
******
এখন বাড়ি এসে সেই কুঁচ আর বেতফল নিয়ে বারান্দায় বসেছে মিলু। পাশে জড়ো হয়েছে মামাতো ভাইবোনেরা। মিলুর প্রায় সমবয়সী মামাতো বোন খুন্তি। যার ভাল নাম লীলাময়ী। সে দুটো কুঁচ হাতে নিয়ে বলে – এই দুটো আমি নেব মিলুদা ?
খুন্তির দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে মিলু বলে – বাড়ি যাবার আগে সবগুলোই তোমাকে দিয়ে যাব।
খুন্তি খুশি হয়ে মিলুর কাছে সরে বসে বলে- তুমি খুব ভাল মিলুদা।
মা এসে বললেন – ওগুলো এখন রাখো। কত বেলা হল দেখেছো। সেই সকাল থেকে তো মামা ভাগনে মিলে আগান বাগান ঘুরে বেড়াচ্ছো। পেটে কিছু দিতে হবে না কি?
আশেপাশে তাকিয়ে দেখে আবার বলেন- তোর মামা কোথায়?
– মিলু মায়ের কোনো কথাই যেন শুনতে পায়নি। কুঁচ আর বেতফল ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কেবলই দেখে যাচ্ছে।
মিলুর দাদামশায় চন্দ্রনাথবাবু গান গাইতে গাইতে বাড়ি ঢুকলেন। বারান্দায় ওদের হাতে কুঁচ ও বেতফল দেখেই গেয়ে উঠলেন-
কুঁচবরণ কইন্যার দেহি কাজলবরণ কেশ
বেশ বেশ বেশ –
আহা বেশ বেশ বেশ।
মরা মাইনষের চোইখ্যের মতন দেইখতা রে ব্যাত ফল
চোইখো আহে জল –
আহা চোইখো আহে জল।
মিলুর মা কুসুমকুমারীর বাবা চন্দ্রনাথ দাশ একজন নামকরা হাসির গানের গীতিকার ও স্বভাব কবি। কথায় কথায় যেন তার ছন্দ নাচে। শব্দে শব্দে মিল যেন অনাবিল আনন্দে ঝরে পড়ে তার মুখ থেকে।
মিলুর মামা বাড়ি ফিরে এলে তাদের সবাইকে খেতে দিলেন মিলুর মামিমা।
খেতে বসে মামা বললেন – মিলু আজ তোকে সাঁতার শেখাতে নিয়ে যাব। সে পুকুরে কলার ভেলাও আছে। তাতেও চড়তে পারবি।
– কী মজা। আমি সাঁতার শিখব। ভেলায় চড়বো।
মিলুর আনন্দ আর দেখে কে ?
আলোকও দাদার দেখাদেখি আধো আধো বোলে বলল – আমিও দাব মামা।
মিলুর মা হেসে বলেন- আর তুমিও পারো দাদা। যেমন মামা তেমন হয়েছে তার ভাগ্নে।
(চলবে)
loading...
loading...
ধারাবাহিক উপন্যাসের খণ্ডাংশ পড়ে সত্যিকারার্থেই মুগ্ধতা হলাম মি. শংকর দেবনাথ। গুড লাক।
loading...
অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ দাদা ৷
ভালোয় থাকুন৷ আলোয় থাকুন |


loading...