পর্ব -৪
রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে পত্রিকা পড়ছে মিলু। সন্ধ্যায় মায়ের কাছে দুভাই পড়াশুনো সেরে কিছুক্ষণ ঠাকুরমার এক ছোটভাই মামাদাদুর ঘরে গিয়ে গল্প করে এসেছে। ঠাকুর মায়েরা যখন বিক্রমপুর ছেড়ে এখানে চলে আসেন বাপ মা মরা এই মামাদাদুও তার দিদি-জামাইদাদার সাথে চলে আসেন। ঠাকুরমার থেকে বয়সে অনেক ছোট এই মামাদাদুকে ঠাকুরমা পুত্র স্নেহে বড় করে তুলেছেন। সহজ সরল বোকা বোকা স্বভাবের মানুষটি পুরোপুরিই এই পরিবারের উপর নির্ভরশীল। ঠাকুরমা তার ভাইকে অনেক চেষ্টা করেও বিয়ে করাতে পারেননি। সেই দাদুর সাথে দুষ্টুমি করে বড় মজা পায় মিলু।
বিকেলে বাবা স্কুল থেকে ফিরে মায়ের হাতে মুকুল পত্রিকাটি দিয়ে বলেছিলেন – কুসুম প্রায় একযুগ পরে তোমার আর আমার লেখা একসঙ্গে মুকুলে বেরিয়েছে। তোমার কবিতা আর আমার প্রবন্ধ।
মা হেসে বলেন- তাই? কই দেখি।
বাবার হাত থেকে পত্রিকাটি নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখতে লাগলেন।
বাবা বললেন – মনে আছে ? যে বছর আমাদের বিয়ে হয়ে ছিল সে বছরও একটা সংখ্যায় তোমার আমার লেখা একসঙ্গে ছাপা হয়েছিল।
– তোমার সে কথা মনে আছে?
মা মুচকি হেসে পত্রিকাটি পড়ার টেবিলে রাখলেন। বললেন – রাতে দেখব ক্ষণ। রান্না ঘরে অনেক কাজ পড়ে রয়েছে।
বাবা বললেন – তোমার সাথে আমার কিছু জরুরী আলোচনা আছে। কিন্তু এখন আমারও সময় নেই। এক্ষুনী বের হতে হবে। ব্রাহ্মসমাজের মিটিং রয়েছে। আসতে একটু রাত হতে পারে।
– আচ্ছা ওখানে কি বাবা আসবেন?
কুসুম কুমারী জানতে চান।
সত্যানন্দ বলেন- আসার কথা তো আছে।
-যদি আসেন তো আসতে বলো তো। একবার বাপের বাড়ি যেতে হবে। এবার মহিলা সমিতির মিটিংটা ভাবছি ও বাড়িতেই ফেলব।
– আচ্ছা
বেরিয়ে গেলেন সত্যানন্দ। কুসুমকুমারীও চলে গেলেন নিজের কাজে।
তখন বিছানায় বসে বসে মিলু মা বাবার কথাগুলো শুনেছিল। পত্রিকাটি পড়ার লোভও জেগেছিল মনে।
মায়ের লেখাটি গভীর আগ্রহে পড়ে ফেলে মিলু। কী অদ্ভূত এক মায়াময় লেখা। তারও মনে ইচ্ছে জাগে মায়ের মত কবিতা লিখতে।
খেয়ালই করেনি বাবা কখন ঘরে ঢুকেছেন। জামা কাপড় ছাড়তে ছাড়তে বলেন-কী রে? তুই এখনো ঘুমোস নি?
– না বাবা। এই পত্রিকাটি পড়ছি।
বাবা আর কোনো কথা না বলে পাশে নিজের খাটে গিয়ে বসেন।
একটু পরে ঘুমন্ত অশোককে কোলে নিয়ে কুসুমকুমারী ঘরে ঢোকেন। অশোক এতক্ষণ ঠাকুরমার ঘরেই ছিল। ছেলেকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে স্বামীকে বলেন- কতক্ষণ এসেছো?
– কিছুক্ষন আগে। তোমার বাবাকে বলে এসেছি। কাল হয়তো আসবেন।
– আচ্ছা। আমি কিন্তু ও বাড়ি গিয়ে এবার সপ্তাহ খানেক থাকব। তুমি গিয়ে আমাদের নিয়ে আসবে।
– ঠিক আছে। তাই হবে।
পত্রিকার পাতায় চোখ রেখে মিলু মা বাবার কথাবার্তা শুনছিল। মামাবাড়ি যাবার কথা শুনে মনটা আনন্দে ভরে ওঠে। বড় মামার সাথে তার ভারি ভাব। মামার সাথে ঘোরাঘুরি হবে। গল্প হবে – ভালই কাটবে কটা দিন মিলুর।
কুসুমকুমারী স্বামী কাছে এগিয়ে গিয়ে বললেন – বলছি মিলুর ফোর ক্লাসের বই শেষ হয়েছে। এবার ওকে স্কুলে ভর্তি করা যায়।
– আমিও তোমাকে সেটাই বলব ভাবছিলাম। ওকে এবছর আমাদের স্কুলেই ফাইভে ভর্তি করে দেব। নতুন ক্লাস শুরুর তো এখনও দুতিন মাস বাকি আছে। এ কটা দিন তুমি ইংরেজিটার দিকে একটু নজর দাও।
– আচ্ছা
স্কুলে যাবার কথা শুনে মিলুর মনের ভেতর এক অন্যতর খুশির আবেগ খেলা করে যায়।
কুসুমকুমারী নিজের খাটে এসে মিলুর কাছ থেকে পত্রিকাটি নিয়ে উল্টাতে লাগলেন।
কিছুক্ষণ পরে সত্যানন্দ আবার বললেন – কুসুম, মনমোহনের ইচ্ছে ব্রহ্মবাদীর আগামি সংখ্যায় যেন তোমার একটা গদ্য থাকে।
– হ্যাঁ উনি আমাকেও বলেছেন। ভাবছি পৌরাণিক কাহিনি গিয়ে একটা গল্প লিখব।
– বাহ খুব ভাল হবে।
loading...
loading...
অনুপম রচনা শৈলী পড়লাম। আমার কাছে ভালো লেগেছে মি. শংকর দেবনাথ।
প্রত্যাশা থাকবে নিজের লিখার পাশাপাশি আপনার সহ-ব্লগারদের পোস্টেও আপনার মন্তব্য থাকবে। মন্তব্য এবং প্রতি-মন্তব্যে ব্লগিং হোক আনন্দময়। ধন্যবাদ।
loading...
ধন্যবাদ
loading...