ধারাবাহিক উপন্যাসঃ কুসুম-কুমার

IMG_20221018_090555

পর্ব – ২
একান্নবর্তী পরিবারের ছেলে মিলু। মা বাবা কাকা কাকিমা জ্যেঠা জ্যেঠিমা পিসিমা ঠাকুমা খুড়োতো জেঠাতো ভাই বোন মিলে সে যেন হাটখোলা। সারাক্ষণ হই হট্টগোল লেগেই থাকে। কর্মসূত্রে কেউ কেউ বাড়ির বাইরে থাকলেও তাদের আসা-যাওয়া চলত নিয়মিত।
ছোট্ট মিলুর ভালো লাগে না এত ভীড়। নির্জনতায় নীরবে থাকাটাই যেন তার প্রিয়। মা জ্যেঠিমা ঠাকুরমা পিসিমার চোখ এড়িয়ে সে মাঝে মাঝে চলে যায় বাগানে। গাছেদের মাঝে ঘুরে বেড়ায় একাকী। কখনো বা বাড়ির পাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে অপলকে চেয়ে থাকে সামনের মিশনের দিকে। সেখানে সারি সারি ঝাউগাছ তাকে বড় টানে। আবার কখনো উঠোনের এক পাশে দাঁড়িয়ে উদাস চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।

অবিভক্ত ভারতের পূর্ববাংলার ছোট্ট এক মফস্বল শহর বরিশাল। তারই এক কোণে গ্রামীন পরিবেশে পাঁচ সাত বিঘে জমির ওপর তাদের বিশাল টিনের চাল দেওয়া বাড়ি। চারদিকে ছড়ানো আম-জাম-নারকেল-সুপারী-কাঁঠাল-কলাসহ নাম না জানা অসংখ্য বুনোগাছ আর লতাগুল্ম-ঘাস। বালক মিলুর সাথে এদেরই যেন প্রাণের মিতালী।

পাড়ার সমবয়সীদের সাথে এখনও তার তেমন চেনাজানা হয়নি। কারণ যকৃতের কঠিন অসুখে পড়ে ডাক্তারের পরামর্শে দীর্ঘদিন তাকে বাইরে বাইরে থাকতে হয়েছে। হাওয়া পরিবর্তনের জন্য মা ও মাতামহের সাথে ঘুরে বেড়িয়েছে কলকাতা-দিল্লি-লখনৌসহ পশ্চিমের বিভিন্ন অঞ্চলের স্বাস্থ্যনিবাসে। সে কারণেই হয়তো পড়শি সমবয়সী বা বাড়ির সবার সাথে এখনও সহজ সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। তাছাড়া সে স্বভাবগতভাবেই নির্জনতা প্রিয়।

আজও বর্ষার পড়ন্ত বেলায় যথারীতি মিলু হাঁটতে হাঁটতে উঠোন পেরিয়ে বাগানের দিকে যাচ্ছিল। হঠাৎই চোখে পড়ে – কেউ একজন উঠোনের ঘাসগুলো কাটছে। সেদিকে এগিয়ে যায় মিলু।

আসলে বর্ষাকালে উঠোনে বড়বড় ঘাস জন্মেছে। বাবা কাজের লোক হিসেবে গাঁয়ের গরীব চাষা ফকিরকে ডেকেছেন সেই ঘাস কাটার জন্য। ফকির কাস্তে হাতে পরিস্কার করছে সেই ঘাসগুলো। মিলু ফকিরকে চেনে। বাড়ির নানা কাজবাজ করতে প্রায়ই সে আসে। মিলুর সাথে তার গল্পসল্পও হয় মাঝেমধ্যে। ফকির কাকাকে মিলুর ভালই লাগে। এই তো সেদিন কাজ করতে করতে ফকির মিলুকে কীর্তিনাশা নদীতে নৌকা বাওয়া ও মাছ ধরার গল্প করেছিল। অবাক হয়ে শুনেছিল মিলু। আর ছোট্ট শিশুমনে ইচ্ছে জেগেছিল – নদীতে নৌকো বেয়ে বেড়ানোর আর ফকির কাকার মত মাছ ধরার। কিন্তু চাপা স্বভাবের মিলু মুখ ফুটে বলে নি সে কথা।

ফকির কাকা মিলুকে দেখে বলে – কী গো দাদাবাবু? তুমি এখানে ?
মিলু বলে – ওগুলো অমন করে কেটে ফেলছো কেন? কেটো না কাকা।
– আপনের বাবা যে আমারে আঙিনে সাফছুতোর করতি কইয়ে গেইছেন দাদাবাবু।
– সবুজ সবুজ ঘাসগুলো কি সুন্দর লাগে দেখতে – আর তুমি…
কাতর কণ্ঠে মিলু বলে – না না ঘাসগুলো তুমি কাটবে না।
-চিন্তা কইরবেন না দাদাবাবু, কিছুদিন পরেই আবার নতুন সবুজ কচিঘাস জম্মাবে।
ফকির বোঝানোর চেষ্টা করে মিলুকে ৷
কে শোনে কার কথা?
– না না তুমি কাটবে না ঘাসগুলো। ওরা বুঝি কষ্ট পায় না ?
ছোট্ট মিলুর কষ্ট যেন কমতেই চায় না।

কথাবার্তা শুনে ঠাকুরমা আর জ্যেঠিমা এগিয়ে আসেন।
অনেক বুঝিয়েসুঝিয়ে তারা মিলুকে ঘরে নিয়ে যান।

(চলবে)

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
ধারাবাহিক উপন্যাসঃ কুসুম-কুমার, 5.0 out of 5 based on 1 rating
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

২ টি মন্তব্য (লেখকের ১টি) | ১ জন মন্তব্যকারী

  1. মুরুব্বী : ১৭-১০-২০২২ | ১৬:৩৯ |

    চমৎকার আয়োজন। তন্ময় হয়ে পড়লাম কবি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

    GD Star Rating
    loading...
  2. শংকর দেবনাথ : ১৭-১০-২০২২ | ২১:১১ |

    ধন্যবাদ দাদা

    GD Star Rating
    loading...