পর্ব-১
অসতো মা সদ্গময়
তমসো মা জ্যোতির্গময়
মৃত্যোর্মামৃতং গময়। –
বাবার ভরাট গলায় উপনিষদের আবৃত্তি শুনতে শুনতে ঘুম ভাঙে মিলুর। শুয়ে শুয়েই দেখে – মা পাশে নেই। প্রতিদিনের মত তিনি সূর্য ওঠার আগেই উঠে পড়েছেন – বুঝতে পারে। আড়মোড়া খেয়ে বিছানায় বসে। বাবার দিকে তাকায়। তিনি পাশের খাটে যোগাসনে বসে একমনে আওড়ে চলেছেন মন্ত্র। ছোট ভাই আশোক তখনও আঘোরে ঘুমচ্ছে ৷ ছোট্ট মিলু আস্তে আস্তে খাট থেকে নেমে পড়ে। ধীর পায়ে বাবান্দায় আসে। চোখ দু’টো রগড়ায়। হঠাৎ তার চোখে পড়ে ভোরের সূর্যের সোনালী আভা গাছগাছালির পাতার ফাঁক দিয়ে বারান্দায় এসে পড়েছে। মুগ্ধ হয়ে সেদিকে তাকায়। এগিয়ে যেতে থাকে বারান্দার পুবকোণের দিকে।
হঠাৎ ভেসে আসে মায়ের কন্ঠস্বর। বড় মিষ্টি মায়ামাখা সেই কণ্ঠ।
তুমি নির্মল কর মঙ্গল করে
মলিন মর্ম মুছায়ে ৷ –
প্রার্থনা সঙ্গীতটি গুনগুন করে গাইতে গাইতে স্নান সেরে এলোচুলে মা বারান্দায় উঠছেন।
মিলু একবার মায়ের দিকে তাকায়। মা-ও তাকান ছেলের দিকে। গান থামিয়ে বলেন- উঠে পড়েছ ?
মিলু কোনো উত্তর দেয় না। সে যেন মায়ের কথা শুনতেই পায়নি। গুটিগুটি পায়ে পুব-বারান্দার চৌকাঠে গিয়ে বসে ৷ মা-ও আর কোনো প্রশ্ন না করেই ঘরের ভেতরে চলে যান ৷
ছোট্ট মিলু গাছপালা ভরা সামনের বাগানের দিকে তাকায়। পাতার ফাঁক গলে আসা ভোরাই আলো মৃদু হাওয়ায় যেন নেচেনেচে বেড়াচ্ছে সারা বারান্দায়।
অবাক বিস্ময় চোখে মেখে চুপচাপ বসে সেই অপরূপ দৃশ্য দেখতে থাকে মিলু। হঠাৎ তার কানে ভেসে আসে ঘু.ঘু শব্দ। দৃষ্টি ফেরায়। দেখে দুটো ঘুঘু পাখি ভীত পায়ে হেঁটে হেঁটে খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে। কয়েকটা শালিক দোয়েল চড়ুই ওড়াউড়ি করছে। অন্যদিকে গুল্মঝোঁপের পাশে একটা ডাহুকী দুটো ছানা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মুগ্ধ হয়ে বসে বসে দেখতে দেখতে ছোট্ট মিলুর উদাসী মনটা কোথায় যেন হারিয়ে যায়।
খেয়ালই করতে পারে না – কখন তার ঠাকুরমা এসে পাশে দাঁড়িয়েছেন।
ও দাদুভাই –
কানে যায় না ঠাকুরমার ডাকও।
ঠাকুরমাও তার আদরের নাতির এই ভাবলুতাকে ভাঙতে চান না। তিনিও চুপচাপ তার পাশে বসে পড়েন।
কিছুক্ষণ পরে ঘর থেকে বৌমার ডাক কানে আসে- মা মিলুকে নিয়ে আসুন।
এবার ঠাকুরমাকে বাধ্য হয়েই ধ্যান ভাঙতে হবে নাতির। গায়ে স্নেহের হাত রেখে ডাকেন – দাদুভাই ও দাদুভাই মা ডাকছেন। এখন যে উঠতে হবে। হাত মুখ ধুঁতে হবে। কিছু খেতে হবে। চলো।
মিলু কোনো কথা না বলেই বাধ্য ছেলের মত উঠে পড়ে।
(চলবে)
loading...
loading...
প্রথম পাঠেই ভালো লাগলো লিখাটি। আশা করবো লিখাটি নিয়মিত করবেন। খুশি হবো। ধন্যবাদ।
loading...
জীবনানন্দ দাশের ছোটবেলা নিয়ে জীবন নির্ভর এই উপন্যাসটি পূর্ন কবার ইচ্ছে আছে ৷ দেখি পা পারি কিনা ৷
loading...
এভাবেই এগিয়ে যাবেন এই প্রত্যাশা।
loading...