খুশির পুষি

– আমার পুষি কোথায় মা?
বাড়িতে ঢুকেই উদ্গ্রিবভাবে জানতে চায় খুশি।

দু’দিন আগে বিনা নোটিসে হঠাৎ মামাবাড়ি যেতে হয়েছিল খুশিকে।
ওর বড়মামা এসেছিলেন বেড়াতে। আর একপ্রকার জোর করেই ওকে নিয়ে গিয়েছিলেন সাথে। গরম ছুটি চলছে। তাছাড়া অনেকদিন মামাবাড়িতে পড়ার চাপে যাওয়াও হয়নি ওর। তাই মামা বলতেই খুশির মা-বাবা সহজেই সম্মতি দিয়ে দেন। খুশির পুষিকে নিয়ে একটু দোটানা ভাব থাকলেও শেষপর্যন্ত মামার সাথে যেতে আপত্তি করেনি। কারণ ওদিকেও খুশির একটা টান আছে। সে হলো মামার মেয়ে। পাঁচবছরের মিমিকে দেখার জন্য ওরও মনটা আইডাই করছিল।

একটা দিন খুশির মামাবাড়িতে বেশ আনন্দেই কেটে গিয়েছিল মিমির সাথে খেলা করে। কিন্তু রাতেই ও পুষির অভাব বোধ করতে থাকে। কষ্ট লাগে পুষির জন্য। বাড়িতে স্কুলের সময়টুকু ছাড়া সবসময়ই পুষি খুশির সাথেসাথেই থাকে। এমনকি প্রাইভেট টিউটর পড়াতে এলেও পুষি বসে থাকে খুশির পাশে। রাতে খুশির পাশে শুয়ে গদগদ আনন্দে ঘুমোয়। খাবার সময় খুশির পাশে গিয়ে বসে পড়ে। খুশির দেওয়া খাবার পরম তৃপ্তিতে খায়।

আজ খুশির পীড়াপীড়িতেই মামা খুশিকে আবার ওদের বাড়িতে পৌঁছে দিতে এসেছেন।

-মা, আমার পুষি কোথায়? ওকে তো কোথাও দেখতে পাচ্ছি নে কেন?
ব্যাকুল হয়ে ওঠে খুশি।

যে পুষি খুশির স্কুল থেকে ফেরার অপেক্ষায় বারান্দায় বসে থাকত রাস্তার দিকে চেয়ে। খুশিকে দেখে পেলেই ছুটে যেত কাছে। মিঁউমিঁউ করে ডেকে খুশির পাশে ওর তুলোর মত নরম পশমগুলো ঘষে আদর করে দিত। খুশি দু’দিন পরে বাড়ি ফিরলেও কেন দেখা নেই সেই পুষির?

খুশি পাগলের মত খুঁজতে থাকে পুষিকে। এ’ঘর থেকে সে’ঘর। কিন্ত কোথাও পেল না পুষিকে।
অগত্যা কাঁদোকাঁদো গলায় মাকে বলে- মা, আমার পুষিকে তো কোথাও পেলাম না। ওর কি খারাপ কিছু হয়েছে?

মা এতক্ষণ চুপচাপ মেয়ের অস্থিরতা দেখছিলেন। কিছুই বলছিলেন না। এবার আর কথা না বলে পারলেন না- আছে রে পাগলী, তোর পুষি আছে। কিন্তু তোর উপর ওর বড্ড অভিমান হয়েছে। তাই তোর সামনে আসছে না।

– কোথায় আছে সে?
চঞ্চল হয়ে ওঠে খুশি।

মা বলেন- তুই যাবার পর তোর পুষি একটি দানাও মুখে তোলে নি। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি খাওয়ানোর জন্য। খাবারের সামনে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে আস্তেআস্তে চলে যেত। শুয়ে পড়ত তোর পড়ার টেবিলের উপর। আর আজ সকাল থেকে তো আর ওঠেই নি।

– কই, পুষিকে তো টেবিলের উপর দেখলাম না?
খুশি ব্যস্ততা হয়ে ওঠে।
– না, আজ তোর টেবিলের উপর নয় খাটের নিচে শুয়ে আছে। একটু আগেই ঘর ঝাড় দিতে গিয়েই আমার চোখে পড়েছে।
খুশির মা বলেন।

খুশি একদৌড়ে ছুটে গেল খাটের কাছে। টেনে বের করে কোলে তুলে নিল পুষিকে। আদরে সোহাগে ভরে দিল ওকে।
– পুষি আমার সোনা পুষি। তুই আমার উপর খুব রাগ করেছিস বুঝি?
পুষির চোখ দু’টো জলে ছলছল করে ওঠে। খুশিরও।
– আমারও তোকে ছেড়ে থাকতে খুব কষ্ট হয়েছে রে। তাই তাড়াতাড়ি চলে এলাম। তোকে ছাড়া যে আমি থাকতে পারিনে পুষি।

পুষি বন্ধুকে ফিরে পেয়ে সব মান-অভিমান নিমেষে ভুলে গিয়ে আনন্দে গদগদ সুরে মিঁউমিঁউ করে ডেকে উঠল।

খুশি তার প্রাণপ্রিয় বন্ধু পুষিকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরল।

GD Star Rating
loading...
GD Star Rating
loading...
এই পোস্টের বিষয়বস্তু ও বক্তব্য একান্তই পোস্ট লেখকের নিজের,লেখার যে কোন নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব লেখকের। অনুরূপভাবে যে কোন মন্তব্যের নৈতিক ও আইনগত দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্তব্যকারীর।
▽ এই পোস্টের ব্যাপারে আপনার কোন আপত্তি আছে?

৭ টি মন্তব্য (লেখকের ৩টি) | ৩ জন মন্তব্যকারী

  1. ফয়জুল মহী : ২৪-১০-২০২০ | ১২:৪৮ |

    অনন্য সৃষ্টি, মুগ্ধতা একরাশ প্রিয়  ।

    GD Star Rating
    loading...
    • শংকর দেবনাথ : ২৪-১০-২০২০ | ১৩:৫৫ |

      ধন্যবাদ। শুভকামনা সতত। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

       

      GD Star Rating
      loading...
  2. দীপঙ্কর বেরা : ২৪-১০-২০২০ | ১৮:১২ |

    খুব সুন্দর 

    GD Star Rating
    loading...
    • শংকর দেবনাথ : ২৫-১০-২০২০ | ১২:১৯ |

      মহানবমীর প্রীতি ও শুভেচ্ছা।

      GD Star Rating
      loading...
  3. মুরুব্বী : ২৫-১০-২০২০ | ১১:১৫ |

    ভালো একটি লিখা। শুভেচ্ছা কবি শংকর দেবনাথ।

    GD Star Rating
    loading...
    • শংকর দেবনাথ : ২৫-১০-২০২০ | ১২:২০ |

      মহানবমীর প্রীতি ও শুভেচ্ছা।

      GD Star Rating
      loading...
      • মুরুব্বী : ২৬-১০-২০২০ | ৭:৫৬ |

        ধন্যবাদ কবি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_flowers.gif

        GD Star Rating
        loading...